২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নির্বাচন ঘিরে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে নোংরামি

-

নিবাচন ঘিরে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে চলছে অকথ্য নোংরামি। গুণী শিল্পীদের মানহানি, গঠনতন্ত্র তোয়াক্কা না করে নতুন সদস্য নেয়া, কারো ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে সহযোগী সদস্য করা, নির্বাচনী প্যানেল গঠন নিয়ে যড়যন্ত্র, অসচ্ছল শিল্পীদের টাকা নিয়ে বিরোধ এবং সর্বশেষ চিত্রনায়িকা মৌসুমীকে অপমানসহ একের পর এক বিতর্কিত ঘটনা সমিতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সর্বশেষ নিরুপায় হয়ে নির্বাচন কমিশনার নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত শিল্পীদের সমিতিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নয়। এটা সব শিল্পীর সাথে বন্ধুত্ব বাড়ানোর প্লাটফর্ম। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর আগে রাজ্জাক, আলমগীর, ইলিয়াস কাঞ্চন, মাহমুদ কলি, রুবেল, মান্নাসহ অনেকেই শিল্পী সমিতির নেতৃত্বে ছিলেন। তাদের সময়ে সংগঠন নিয়ে এত অনিয়ম কিংবা অভিযোগ ছিল না। সমিতিতে সবার আলোচনার বিষয় ছিল নিত্যনতুন ছবি। কিন্তু বর্তমানে সিনেমার চরম দুর্দিনে শিল্পী সমিতি এ শিল্পের সঙ্কট সমাধানে ভূমিকা না রেখে মূল কাজের বাইরে নির্বাচন নিয়ে নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছে।
সমিতির বর্তমান কমিটির দিকে অভিযোগের অঙুল তুলে অনেকে অভিযোগ করেছেন, শুরু থেকেই বর্তমান কমিটি সময়মতো নির্বাচন না দিয়ে বিতর্ক তৈরি করেন। এ নিয়ে চাপের মুখে একপর্যায়ে নির্বাচনের ঘোষণা দেয়। এর পরই একের পর এক অসহিষ্ণু ঘটনা ঘটতে থাকে। নির্বাচনে মিশা-জায়েদ ও মৌসুমী-তায়েব প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই মৌসুমীর প্যানেল থেকে তায়েব সরে দাঁড়ান। মৌসুমীকে না জানিয়ে মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিনে তিনি উধাও হয়ে যান। পরে বাধ্য হয়ে মৌসুমী সভাপতি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। এরপর সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভায় আয় ব্যয়ের হিসাব নিয়ে নায়ক রিয়াজ কথা বলতে চাইলে তাকে কথা বলতে দেয়া হয়নি। এরপর বাধ্য হয়ে তিনি সভাস্থল ত্যাগ করেন।
এ ঘটনার পর কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র না মেনে নিয়ম ভেঙে নতুন সদস্য নেয়া ও অনেক ভোটারকে তাদের ভোটাধিকার বাতিল করে সহযোগী সদস্য করার অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় অনেককে হুমকি দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ আসে। যদিও বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বিদায়ী শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান। এ ঘটনায় দুইজন সদস্য নির্বাচন স্থগিত চেয়ে নির্বাচন কমিশনারের কাছে আবেদন করেন।
সর্বশেষ গত সোমবার সন্ধ্যায় শিল্পী সমিতির ভেতরে খল অভিনেতা ড্যানিরাজের হাতে অপমানিত হন জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা ও সভাপতি পদপ্রার্থী মৌসুমী। মৌসুমী অভিযোগ করেন এ সময় তার সাথে বাগি¦তণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন ড্যানিরাজ। একপর্যায়ে তিনি মৌসুমীকে ধাক্কা মারেন। ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইলিয়াস কাঞ্চন প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু, শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানকে নিয়ে আলোচনায় বসেন। সেখানে ড্যানিরাজ কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চান। এরপর মৌসুমী অভিযোগ করেন তাকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দিতে প্রতিপক্ষ এসব ঘটাচ্ছে। এ ঘটনায় চলচ্চিত্রের নায়ক-নায়িকা ও পরিচালকেরা বিস্মিত হন। চলচ্চিত্রপাড়ায় ছি ছি পড়ে যায়। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে কঠোর অবস্থানে যান প্রধান নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, ‘একটা নির্বাচনকে ঘিরে শিল্পীদের দুর্নাম হবেÑ এটা আমি ভাবতেও পারিনি। কিন্তু সেটাই হচ্ছে। মৌসুমীর সাথে ড্যানিরাজ বাজে আচরণ করেছেন। আমি এটা মানব না কিছুতেই। এখানে চলচ্চিত্রের শিল্পী সমাজের ইমেজ জড়িত। তাই নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আমাকে কঠোর হতেই হলো। ইলিয়াস কাঞ্চন জানান, নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত শিল্পী সমিতির ভেতরে শিল্পীদের আনাগোনা নিষেধ। তিনি বলেন, নির্বাচনী নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচনের দিন পর্যন্ত সমিতির ভেতর আড্ডাবাজি, চা খাওয়া বা ভোটের প্রচারণা করা যাবে না। কেউ নিয়ম ভাঙলে আমি ব্যবস্থা নেবো।’


আরো সংবাদ



premium cement