২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

খুলনায় বিএনপি জোটের প্রার্থী নির্ধারণে জট বাঁধতে পারে

৬ আসনের ৫টি চায় শরিকরা
-

খুলনায় আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতিতে আওয়ামী লীগ যতটা এগিয়ে আছে, ঠিক ততটা পিছিয়ে আছে বিএনপি। আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি শেষে দলের কর্মীরা এখন ভোটের প্রচারণা শুরু করেছেন। বিপরীত অবস্থা বিএনপির। দলের কর্মীরা গ্রেফতার আতঙ্কে এখনো আতঙ্কে প্রকাশ্য তৎপরতা থেকে দূরে থাকছেন। আর নেতারা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের দাবিতে বিভিন্ন দফতরে স্মারকলিপি প্রদান ও সংবাদ সম্মেলন করতে ব্যস্ত রয়েছেন। নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ ও সময় কোনোটাই পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় খুলনার ৬টি সংসদীয় আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করাও বিএনপির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জোটগত নির্বাচনের জন্য খুলনার ৬ আসনে বিএনপির যেমন ভালো প্রার্থী আছে, আবার শরিক দলগুলোও ৫টি আসন তাদের প্রার্থীর পক্ষে ছেড়ে দেয়ার দাবি জানাবে বলে জানা গেছে।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের বিভিন্ন সূত্রে আলাপ করে জানা গেছে, ৬টি আসনের মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক জেএসডি ৩টি ও নাগরিক ঐক্য একটি এবং ২০ দলের শরিক জামায়াতে ইসলামী দুটি আসনে ও খেলাফত মজলিস একটি আসনে তাদের প্রার্থী দিতে চাইছে। ইতোমধ্যে তারা কেন্দ্রের মাধ্যমে জোটের শীর্ষ নেতাদের এ ব্যাপারে জানিয়েছেন এবং দাবি আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনায় ২০ দলীয় জোটের শরকিদের মধ্যে বিএনপি, জামায়াত, বিজেপি, খেলাফত মজলিস, জাগপা ও মুসলিম লীগ রাজনীতিতে সক্রিয়। ২০০১ ও ২০০৮ সালের জোটগত নির্বাচনে খুলনার ৬টি আসনের মধ্যে ৪টিতে বিএনপি এবং দু’টিতে জামায়াত প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। জেলার সর্বত্র এ দু’টি দলের কমিটি আছে এবং কর্মী-সমর্থক রয়েছে। অন্য দিকে ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের মধ্যে জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যের কমিটি আছে। তবে তাদের তৎপরতা ঘরোয়া সভার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। দলগুলোর জেলা কমিটি কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে তাদের সুপারিশ পাঠিয়েছে। সেই সুপারিশের ভিত্তিতে জোটের কাছে আসন বরাদ্দ চাইবে দলগুলো।
জেএসডির জেলা কমিটির সভাপতি আ ফ ম মহসীন জানিয়েছেন, দলের প্রধান আ স ম আবদুর রব খুলনায় জনসভা করতে এসে ৩টি আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছিলেন। সেভাবে খুলনা-২ আসনে নগর কমিটির সভাপতি লোকমান হাকিম, খুলনা-৩ আসনে আ ফ ম মহসীন এবং খুলনা-৬ আসনে জেলা সাধারণ সম্পাদক কাউসার সানার পক্ষে মনোনয়ন চাওয়া হয়েছে। নাগরিক ঐক্য খুলনা-৩ আসনে প্রার্থী দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে দলের একটি সূত্র জানায়। এ দিকে খুলনা-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী মহানগর সভাপতি সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম মঞ্জু। তিনি জনপ্রিয়ও বটে। খুলনা-৩ আসনে এবার বিএনপির প্রার্থী হতে চান সাবেক এমপি বয়োবৃদ্ধ নেতা কাজী সেকান্দার আলী ডালিম, কেন্দ্রীয় নেতা রকিবুল ইসলাম বকুল, মহানগর কমিটির যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম ও সাংগঠনিক সম্পাদক ফখরুল আলম এবং আরিফুর রহমান মিঠু।
খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কমিটির নায়েবে আমির মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন জানান, খুলনা বিভাগের ৩৭টির মধ্যে, খুলনা-৪ আসনটি আমরা চেয়েছি। আমি নিজেই সেখানে প্রার্থী হতে চাই। বিষয়টি জোটের নেতাদেরকে জানানো হয়েছে। খুলনা-৪ আসনে বিএনপির দুই শক্তিশালী প্রার্থী হচ্ছেন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল ও কেন্দ্রীয় নেতা শরীফ শাহ কামাল তাজ। খুলনার এ ৩টি আসন শরিকদের ছেড়ে দেয়া বিএনপির জন্য সহজ হবে না। এ ছাড়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটার আধিক্যসম্পন্ন খুলনা-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী কখনো জয়ী হননি বলে সেখানে জোট শরিকদের কারো আগ্রহ নেই। তবে সেখানে বিএনপির জেলা সেক্রেটারি আমীর এজাজ খান প্রার্থী হবেন বলে সবার ধারণা।
খুলনা ৫ ও ৬ আসন নিয়ে টানাটানি আছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে। জামায়াতের মহানগর শাখার একটি সূত্র জানায়, ২০০১ সাল থেকেই এ দুই আসনে জামায়াত নির্বাচনী কাজ করছে। তারা এ দু’টি আসনে জোটের মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী। খুলনা-৫ আসনে দীর্ঘ দিন ধরে আওয়ামী লীগের প্রাধান্য ভেঙে ২০০১ সালে জামায়াতের নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার এমপি হন। এবারো তিনি সেখানে প্রার্থী হবেন। ইতোমধ্যে তিনি রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এ আসনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা ড. মামুন রহমান, জেলা শাখার সহসভাপতি ডা: গাজী আবদুল হক ও ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান খান আলী মনসুর দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। খুলনা-৬ আসনে অধ্যক্ষ রুহুল কুদ্দুস ২০০১ সালসহ দুইবার এমপি নির্বাচিত হন। তিনি অসুস্থ থাকায় এবার দলের খুলনা মহানগর আমির মাওলানা আবুল কালাম আজাদ সেখানে প্রার্থী হবেন। তিনিও রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। আবার এ আসনের জন্য বিএনপির জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা, ডা: আবদুল মজিদ ও এস এম রফিকুল ইসলাম দলীয় মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। কয়রা উপজেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট মোমরেজুল ইসলামও সেখানে দলের প্রার্থী হতে চান।
শরিকদের দাবি প্রসঙ্গে বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও নগর বিএনপি সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা ফ্রন্ট ও জোট শরিকদের নিয়ে সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে সব কাজ করছি। প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে জাতীয় প্রয়োজনে ও বৃহত্তর ঐক্যের জন্য কিছু ত্যাগ স্বীকার করতে আমরা প্রস্তুত। তবে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে সংগঠন ও ভোটারদের কাছে প্রার্থী ও দলের গ্রহণযোগ্যতা এবং জোটের পক্ষে আসনে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনার বিষয়ও আমাদেরকে ভাবতে হবে। তবে এ নিয়ে তেমন জটিলতা হবে না। মনোনয়নপত্র নেয়ার পর আবার জোটের বৈঠকে করেই প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement