২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ

চাকরিবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ
-

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতনবৈষম্য নিরসনের দাবি করা এবং গত ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে সংবাদ সম্মেলন অংশ নেয়া সহকারী শিক্ষক ও শিক্ষক নেতাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এর আগে গত ১১ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পাঁচ দফা নির্দেশনাসংবলিত অনুরূপ আরেকটি আদেশ দিয়েছেন বিভাগীয় উপপরিচালক প্রাথমিক শিক্ষা, জেলা ও থানা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারদের। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) মাধ্যমে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাতে মাঠপর্যায়ের ওই অফিসগুলোতে তদারকি বৃদ্ধির জন্য ‘কন্ট্রোল রুম’ চালুর নির্দেশনা দিয়ে আরো বলা হয়েছে, প্রতিদিন শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতি ও কর্মস্থল ত্যাগের প্রতিবেদন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারদের ডিপিই এবং মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করতে হবে।
অন্য দিকে গোপালগঞ্জের এক সহকারী শিক্ষক নেতা নিজেকে ‘প্রধানমন্ত্রীর পিএস’ পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন জেলায় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারদের নিজ মোবাইল থেকে ফোন করে ওই তারিখে সংবাদ সম্মেলন অংশ নেয়া সহকারী শিক্ষক নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে অবহিত করার নির্দেশ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত ১১ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো: আব্দুল ওয়াহেদ স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে বলা হয়েছে, ১১ সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তিযুক্ত কারণ ছাড়া কোনো সহকারী শিক্ষক বিদ্যালয় ও কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকতে পারবেন না, শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিতি ও কর্মস্থলে অবস্থান নিশ্চিত করতে, যুক্তিযুক্ত কারণ ছাড়া কোনো শিক্ষক বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত বা কর্মস্থল ত্যাগ করলে তাৎক্ষণিকভাবে গণকর্মচারী (নিয়মিত উপস্থিতি) অধ্যাদেশ ১৯৮২ এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা কোনো প্রকার আইন পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত না হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ প্রদান করতে হবে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক মহাজোটের একাংশ গত ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর সেগুনবাগিচায় স্বাধীনতা হল মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পরের গ্রেডে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকদের বেতনস্কেল নির্ধারণে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা। তারা ১৯ সেপ্টেম্বর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ এবং বেতনবৈষম্য নিরসন চান। অন্যথায় ২০ সেপ্টম্বর থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষকেরা প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ কামনায় গণস্বাক্ষর করবেন এবং ২৫ সেপ্টেম্বর গণস্বাক্ষরের কপিসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারকলিপি পেশ করার কথা জানান ওই সংবাদ সম্মেলনে। এরপরও দাবি আদায় না হলে তারা আবারো মহাসমাবেশ করার পরিকল্পনার কথা বলেন এবং তারা নির্বাচনের আগে বেতন বৈষম্য নিরসন চান।
সংবাদ সম্মেলনের পরের দিনই ১৩ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) শেখ জসিম উদ্দির আহাম্মেদ স্বাক্ষরিত অপর এক আদেশে, সাত বিভাগীয় উপপরিচালক প্রাথমিক শিক্ষা এবং জেলা ও থানা-উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারদের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, গত ১২ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের কয়েকটি অনিবন্ধিত সংগঠন তাদের পেশাগত দাবি-দাওয়া নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষকেরা সরকারের প্রচলিত নিয়মনীতির কোনো রূপ ব্যতয় ঘটিয়ে থাকলে সে বিষয়ে যথাযথ পর্যায়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অনুরোধ করা হলো।
মন্ত্রণালয় ও ডিপিইর অফিস থেকে ওই দুইটি আদেশের পর সারা দেশের সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে এ ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক সহকারী শিক্ষক নয়া দিগন্তকে জানান। সহকারী শিক্ষকদের ফেসবুক পেইজেও এ ব্যাপারে নানা মন্তব্য করতে দেখা গেছে শিক্ষকদের। সহকারী শিক্ষক নেতাদের অনেকেই নয়া দিগন্তকে বলেন, সহকারী শিক্ষকদের দাবি অযোক্তিক নয়, মন্ত্রীও স্বীকার করেন। কিন্তু সহকারী শিক্ষক নেতাদের একাংশ যাদের বড় পরিচয় শিক্ষকের চেয়ে দলীয় কর্মী ও নেতার মতো, তারাই মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ে দলীয় পোশাক পরিধান করে, অন্য শিক্ষকনেতাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছেন এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছেন নীতিনির্ধারকদের। সহকারী শিক্ষক নেতাদের যে অংশ ‘বৈষম্য নিরসনের দাবি করছেন’ তাদের সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করার অপচেষ্টা করছেন। সহকারী শিক্ষক নেতাদের যে অংশ ‘বৈষম্য নিরসনের দাবি করছেন’ তাদের সবাই বর্তমান সরকারের আমলেই নিয়োগপ্রাপ্ত এবং সুনামের সাথে প্রতিষ্ঠানে পাঠদান করে আসছেন। বিপরীত দিকে, যারা কুৎসা রটাচ্ছেন তারা নিয়মিত কর্মস্থলে অনুপস্থিত না থাকার এবং মন্ত্রণালয়ে ও ডিপিইতে এসে নানা ধরনের তদ্বীরে ব্যস্ত থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে ।
শিক্ষক নেতারা জানান, ডিপিইওরা মন্ত্রণালয় ও ডিপিইর কাছ থেকে পর পর দুইটি নির্দেশনা এবং সর্বশেষে ‘প্রধানমন্ত্রীর পিএস’ পরিচয় দিয়ে মোবাইল ফোন থেকে আদেশ পাওয়ার পর আতঙ্কে রয়েছেন।
অপর দিকে, ‘প্রধানমন্ত্রীর পিএস’ পরিচয়দানকারী গোপালগঞ্জের সহকারী শিক্ষক নেতা নোয়াখালী সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ আরো অনেক জেলায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বরাত দিয়ে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ওই একই মোবাইল নম্বর থেকে ডিপিইও, টিইওগণকে ফোন করে নির্দেশ দিয়েছেন।
ওই তিন জেলার ডিপিইওদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা বলেন, এ ধরনের কোনো নির্দেশ বা আদেশ এখন শেষ হয়ে গেছে। এটা এখন নেই। আরো একাধিক ডিপিইও এ নয়ে কথা বলতেই অপারগতা প্রকাশ করেছেন।
জানা গেছে, যে মোবাইল ফোন থেকে ডিপিইওদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সে শিক্ষক নেতার নাম হচ্ছে আসাদুজ্জামান। তাকে এ ব্যপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর লিখিত আদেশে নিয়োগপ্রাপ্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। কেউ এ ব্যাপারে ভুল শুনতে পারেন। আমি ‘প্রধানমন্ত্রীর পিএস’ পরিচয় দিইনি। তিনি এ নিয়ে পরে তার সাথে সাক্ষাতের অনুরোধ জানান।


আরো সংবাদ



premium cement