০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`


রানুর চোখের রহস্যে মিসির আলী মিসিং

রানুর চোখের রহস্যে মিসির আলী মিসিং - সংগৃহীত

‘দেবী’ ছবিটা মুক্তির আগে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে মিসির আলী এবং রানু চরিত্র নিয়ে। জয়া আহসান ও চঞ্চল চৌধুরী একসাথে বসে সাক্ষাতকার দেওয়ার সময় জানতে চাওয়া হয়েছিল, মিসির আলী আর রানু চরিত্রে অভিনয়ের সময় দুজনের মধ্যে হিডেন কোন প্রতিযোগিতা ছিল কিনা?

প্রথমে উত্তর দিয়েছিলেন জয়া; ‘না, আমার কাছে কোন সময়ই চরিত্র নিয়ে প্রতিযোগীতা থাকে না। যখন যে চরিত্রে অভিনয় করার জন্য মনস্থির করি তখন সেটা সুন্দরভাবে তুলে ধরার কাজে মনোনিবেশ করি। আর ‘দেবী’ চলচ্চিত্রে সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করেছি মিসির আলীকে পাঠক এবং দর্শকদের সামনে তাদের চিন্তার মতো করে প্রকাশ করতে।’

এই প্রকাশের ক্ষেত্রে সিনেমায় মিসির আলীর চেয়ে রানু বেশি সফল। পর্দায় যে সিক্যুয়েন্সে জয়ার উপস্থিতি দেখা গেছে, প্রতিবারই মনে হয়েছে, এটাই হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসের প্রকৃত রানু। বাবা- মা মারা যাওয়ার পর খালার বাড়িতে থাকার সময় এক বয়স্ক ব্যক্তি দ্বারা কিশোরী রানু যে নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। সেই অনুভূতি প্রতিনিয়ত তাকে যে ভঙ্করভাবে তাড়া করে তা সিনেমার রানুর প্রতিটা কার্যকলাপে উপন্যাসের মতোই প্রকাশ পায়। বিশেষ করে একটি দৃশ্যে রানু যখন দেওয়ালের সাথে মাথা রেখে হাত-পা দেবীর মতো করে রাখে, তখন মনে হয়েছিল রানুকে কেউ বেঁধে ঝুলিয়ে রেখেছে উপরে।

আরেকটি দৃশ্যে রানু যখন একা বাসায় সেলাই মেশিন চালাতে থাকেন, গট-গট শব্দের সাথে হঠাৎ শোনা যায়, রানু-রানু বলে আড়াল থেকে কেউ ডাক দিচ্ছে। ভয়ঙ্কর এই পরিবেশের মধ্যে রানুর যে চাহনি তা পরিবেশকে আরো ভীতিকর করে তুলে। এছাড়া সবকিছু বলে দিতে পারার রানুর যে আলাদা ক্ষমতা সেটাও ফুটে উঠেছে চমৎকার ভাবে।

কিন্তু সবচেয়ে আলোচিত মিসির আলী চরিত্রটা সেভাবে ফুটে উঠেনি। এজন্য দায় নিতে হবে পরিচালক অনম বিশ্বাসের পাশাপাশি চঞ্চল চৌধুরীকেও। কারণ তিনি প্রশ্নের উত্তরে বেশ সাবলীলভাবে বলেছিলেন, ‘আমার আগে মঞ্চে এবং টেলিভিশনে মিসির আলী চরিত্রে অভিনয় করেছেন আরো তিনজন। ওনারা অনেক ভালো অভিনেতা। কিন্তু আমি তাদের কারো মিসির আলী চরিত্র দেখিনি, দেখার চেষ্টাও করেনি। কারণ আমি আমার মতো মিসির আলী করার চেষ্টা করেছি।’

নিজের মতো করার আত্মবিশ্বাস অবশ্যই প্রশংসনীয়। কিন্তু দেবীর মিসির আলীকে দেখে ধাক্কা খেতে হয়েছে। ছবির শুরুতে উপন্যাসের মিসির আলীকে পাওয়ার যে ইঙ্গিত ছিল বাকী ছবিতে তা অনুপস্থিত ছিল। মিসির আলীর চিন্তার যে ধরণ, কথা বলার যে ভঙ্গি চঞ্চল সেখানে খুব ভালো নম্বর পাবেন না। ছবির একটি দৃশ্যে রানুর স্বামি আনিস সাহেব মিসির আলীকে তার বাসায় দাওয়াত করেন। বাসার ভৌতিক রহস্য খোঁজে বের করতে। পরের কোন সিক্যুয়েন্সে মিসির আলী রানুর বাসা থেকে কি উদঘাটন করেছেন তা উপস্থাপন করা হয়নি।

এসবদিক বিবেচনায় ‘দেবী’ ছবিকে এককথায় বলা যায়, রানুর চোখের রহস্যে মিসির আলী মিসিং হয়েছে। এছাড়া ছবির ব্যাপ্তি আরো বাড়ানো যেতো। কারণ ১ ঘণ্টা ৪৪ মিনিটের ছবিটি দর্শকের প্রত্যাশাকে তৃপ্ত করতে পারেনি। ছবির সাউন্ড, লাইট, মেকাপ আর ভিএফএক্স ভালো ছিল। কিন্তু কিছু জায়গায় হলিউড ছবির মতো কাটাকাটির দৃশ্য সংযোজন করা হয়েছে যা অন্যরকম হতে পারতো।


আরো সংবাদ



premium cement