২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জোসনা-কাঞ্চনের বোঝাপড়া এখনো হৃদ্যতাপূর্ণ

চোখের সীমানায় না থাকলেও দুই নায়ক-নায়িকার মধ্যে আন্তরিকতার কোন অভাব ছিল না - সংগৃহীত

গত রোববার অভিনেত্রী অঞ্জু ঘোষ যখন সংবাদ সম্মেলন করছিলেন তখন পাশের চেয়ারে ছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন। মাইক্রোফোন সামনে নিয়ে দীর্ঘ দিন দেশের বাইরে থাকার অভিজ্ঞতা এবং বাংলা চলচ্চিত্রের বর্তমান হাল অবস্থা বর্ণনা করছিলেন তিনি। কিন্তু ওইদিন সংবাদ সম্মেলনে হাজির হওয়া সংবাদ কর্মীদের কৌতুহলের কেন্দ্রে ছিল বেদের মেয়ে জোসনা খ্যাত অভিনেত্রীর সাথে কাঞ্চনের সাক্ষাতের বিষয়টি।

অঞ্জু ঘোষের তথ্যনুযায়ী ১৯৯৬ সালে মাত্র দুইদিনের জন্য ঢাকা থেকে কলকাতায় গিয়ে ফেসে যাওয়ায় আর দেশে ফেরা হয়নি তার। কিন্তু কাঞ্চনের সাথে তার দেখা নেই তারও এক বছর আগে থেকে। সেই  হিসেবে জোসনা-কাঞ্চনের দেখা হয়েছে প্রায় ২৩ বছর পর।

এই সময়ের মধ্যে দুজন-দুজনকে অনুসন্ধ্যান করেছেন অনেক কিন্তু দেখা হয়নি একবারও। কাঞ্চন বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে তার খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করেছি। তিন-চারবার কলকাতায় গিয়েছিলাম অন্যকাজে তখনও অঞ্জুর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। তবে অঞ্জু বললেন, সঠিক জায়গায় নক করা হলে কোন না কোনভাবে হয়তো খোঁজ পাওয়া যেতো। অবশ্য অভিনেত্রী স্বীকার করেছেন নিজের লুকিয়ে থাকার কথাও। তিনি বলেন, কলকাতায় বসবাস শুরুর পর থেকে অধিকাংশ সময় কাঁটানো হয়েছে যাত্রাপালায় কাজ করে। সিনেমা বাদ দিয়ে যাত্রায় কাজ করছি এই খবরটা খুব বেশি প্রচারণায় আসুক সেটা আমি নিজেই চাইনি। একারণেই কারো সাথে যোগাযোগ ছিল না। তবে মাঝে মাঝে যখন বাংলাদেশীদের সাথে দেখা হতো, তখন চলচ্চিত্রের সবার কথাই জিজ্ঞাসা করতাম, ইলিয়াস কাঞ্চনের কথাও।

দুজনের কথায় এটা স্পষ্ট যে, দীর্ঘ দিন দেশ ও চোখের সীমানায় না থাকলেও দুই নায়ক-নায়িকার মধ্যে আন্তরিকতার কোন অভাব ছিল না। সংবাদ সম্মেলন শেষে দুজনের চাহনিতেও সেটা স্পষ্ট হয়েছে। যার প্রমান উপড়ের ছবিটি।

ওই সংবাদ সম্মেলনের পর প্রযোজক নাদের চৌধুরী ‘জোসনা কেন পরবাসে’শিরোনামে একটি ছবি নির্মানের ঘোষণা দেন। যেখানে ইলিয়াস কাঞ্চন ও অঞ্জুকে অভিনয় করার আহ্বান জানানের হয়েছে। দুজনেই সম্মতি দিয়েছেন। উভয়েই বলেছেন, ভালো চিত্রনাট্য হলে কাজ করতে আপত্তি নেই।

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, আমাদের সময় চলচ্চিত্রে সহশিল্পীদের প্রতি যে আন্তরিকতা ছিল এখন সেটা দেখা যায় না। আমরা যখন শুটিং করতে সেটে যেতাম তখন পুরো ইউনিটের মধ্যে একটা পারিবারিক আমেজ কাজ করতো। একজন আরেকজনের খবর নিতাম। ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ছবিটি দেশব্যাপী আলোড়ন তোলার পর আমাদের পুরো ইউনিটের মধ্যে আনন্দের রোল বয়ে গিয়েছিল। সেই স্মৃতি এখনো আমাকে রোমাঞ্চিত করে। এ কারণেই ওই ছবির নায়িকা অঞ্জু ঘোষকে মিস করতাম।

কাঞ্চন বলেন, ‘গত রোববার আমার জরুরী একটা কাজ ছিল, সেটা বাদ দিয়ে আমি এফডিসিতে ছুটে এসেছিলাম। আমার মনে হয় সহকর্মীদের প্রতি এই ভালোবাসা থাকাটা অনেক বেশি দরকার।’

আরো পড়ুন : ২৩ বছর পর নায়ক-নায়িকার দেখা
আলমগীর কবির ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২১:০৭

সর্বাধিক ব্যাবসা সফল বাংলা ছবির অন্যতম হলো ‘বেদের মেয়ে জোসনা’। তাই সঙ্গত কারণেই এই ছবির পাত্র-পাত্রী নিয়ে কৌতুহল একটু বেশি। ইলিয়াস কাঞ্চন আর অঞ্জু ঘোষ একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। জনপ্রিয়তা ও পেয়েছেন। কিন্তু ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ছবি তাদের নিয়ে গেছে জনপ্রিয়তার অন্য উচ্চতায়। এই কারণে ১৯৮৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিটি নিয়ে দর্শকদের নানা জিজ্ঞাসা।

দীর্ঘ ২২ বছর পর গত বৃহস্পতিবার শিল্পী সমিতির আমন্ত্রণে বাংলদেশে এসেছেন অঞ্জু ঘোষ। সেদিনই জানিয়ে ছিলেন রোববার (৯ সেপ্টেম্বর)বিএফডিসিতে সংবাদ সম্মেলন করবেন এবং জানাবেন দীর্ঘদিন দেশে না থাকার নেপথ্য গল্প। আর এই গল্পের কথা ধরেই সামনে আসে ইলিয়াস কাঞ্চনের নাম। অঞ্জু ঘোষের সংবাদ সম্মেলনে কী তিনি থাকবেন? উত্তরটা পাওয়া গেল রোববার সংবাদ সম্মেলন থেকেই। নায়িকার ঠিক পাশের চেয়ারেই বসেছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। সেখানেই তিনি জানালেন, ‘অঞ্জু ২২ বছর পর দেশে এলেও আমার সাথে দেখা হয়েছে ২৩ বছর পর’। এই সময়টায় একবারের জন্যও যোগাযোগ হয়নি তাদের মধ্যে।

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘অঞ্জুর সাথে আমাদের দেখা নেই ২৩ বছর ধরে। দুদিন (রোববার) আগে জায়েদ খান হঠাৎ করে ফোনে ধরিয়ে দিয়ে বলল কথা বলেন। আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি। গলাটাও ঠিক চিনতে পারিনি। তারপর যখন বুঝতে পারলাম আমি অঞ্জুর সঙ্গে কথা বলছি, তখন চোখে পানি চলে এলো। অনেক বছর পর কথা হচ্ছে, এটা মনে ছিল না। অনেকক্ষণ আমরা কথা বলেছি। সে অনেক কথা। আসলে এত কথা জমা হয়ে আছে, তা বলে শেষ করা যাবে না।’

না দেখো দীর্ঘ এই সময়ে ইলিয়াস কাঞ্চন অনেকবার চেষ্টা করেছেন অঞ্জুর সাথে যোগাযোগ করার কিন্তু কোনভাবেই সম্ভব হচ্ছিল না। এ প্রসঙ্গে কাঞ্চন বলেন,‘আমি আসলে সব সময়ই তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোনো ঠিকানা পাইনি। আমি নিজের কাজে এর মধ্যে বেশ কয়েকবার কলকাতায় গিয়েছি। তখনো তার কথা বারবার মনে হয়েছে। কিন্তু তার কোনো ঠিকানা বা নম্বর আমি জোগাড় করতে পারিনি। যে কারণে আসলে দেখা হয়নি।’

অঞ্জুর সঙ্গে বন্ধুত্বকে স্মরণ করে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘আসলে আমরা তো বেশ কিছু কাজ একসঙ্গে করেছি, আর চলচ্চিত্রের কাজটা যেহেতেু ইউনিট বেঁধে করা হয়, তাই প্রত্যেকের সাথেই সুন্দর বন্ধুত্ব থাকে। শুটিংয়ে সময় অনেক গল্প তৈরি হয়, যেগুলোর মূল্য শুটিং করার সময় না থাকলেও বহু বছর পর যখন ছবিটি দেখি, তখন চোখের সামনে ভেসে ওঠে আর গল্পগুলো মূল্যবান হয়ে ওঠে। তখন কথা বলতে ইচ্ছে করে, কিন্তু যোগাযোগ করার মাধ্যম না থাকলে কীভাবে কথা বলব? তবে মনে মনে অনেক কথাই হয়ে যায়।’

এদিকে দীর্ঘ দিন পর ইলিয়াস কাঞ্চনকে কাছে পেয়ে অঞ্জু ঘোষও বেশ উচ্ছসিত। তবে যেহেতু সংবাদ সম্মেলনে তাই তিনি কথা বলেছেন বেশ ফরমাল ভাবে। তিনি বলেন, ‘আমরা আগেও পরিশ্রম করেছি, এখনো করে যাবো। মাতৃভূমিতে এসে মনে হলো তীর্থে পা রেখেছি। কোন দিন কারো ওপর আমার ক্ষোভ ছিল না। আমি বাংলাদেশ ছেড়ে যাইনি। শিল্পীরা কেমন আছে দেখতে এসেছি।’

বিএফডিসিতে অঞ্জুর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান, খলঅভিনেতা আহমেদ শরীফ, চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, চিত্রনায়িকা অঞ্জনা, শাহনূর প্রমূখ।

বাংলা চলচ্চিত্রের বর্তমান হাল অবস্থা নিয়ে অঞ্জু বলেন,‘সিনেমা এখন সবার কাছ থেকে দূরে সরে গেছে। সবাই এখন সিরিয়াল দেখে। ছবির মানুষগুলো দূরে সরে গেছে। কষ্ট লাগছে। আমাদের সময় সিনেমাকেই ঘর-সংসার মনে হতো। একটা সময় ছিল শুটিং স্পটই সব ছিল।’ সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমি কোন বাধা মানি না। সব বাধা পেরিয়ে আমি এগিয়ে যাই। ভালো গল্প পেলে আমরা কাজ করবো। সাংবাদিকরাই আমাদের দু’টো হাতকে একত্র করে। দর্শক এবং শিল্পীদের মধ্যে সংযোগ তৈরি করে।’

ইলিয়াস কাঞ্চন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা যখন একসাথে কাজ করেছি। সব সময় যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করেছি। কখনো মনে হয়নি আমরা পরিবারের বাইরের মানুষ। চলচ্চিত্রে এমন একজন সহকর্মী পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার।’

এদিকে দুজনকে নিয়ে আবারো চলচ্চিত্র নির্মানের ঘোষণা দিয়েছেন প্রযোজক নাদের খান। তিনি বলেন, আগামি মাসেই এই ছবির চুক্তি হবে। এজন্য অঞ্জু ঘোষও বাংলাদেশে আসবেন। ছবির নাম হবে ‘জোসনা কেন পরবাসে’।

২২ বছর আগে, ১৯৯৬ সালে দেশ ছাড়েন অঞ্জু ঘোষ। তখন থেকেই কলকাতায় বসবাস করছেন এই নায়িকা। কলকাতায় বেশ কিছু চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন তিনি। অঞ্জুর প্রকৃত নাম অঞ্জলি। ১৯৭২ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের মঞ্চনাটকে অভিনয় করেন। ১৯৮২ সালে চলচ্চিত্র নির্মাতা এফ কবির চৌধুরী চলচ্চিত্রে আনেন তাকে। অঞ্জুকে নিয়ে তৈরি করেন ‘সওদাগর’। এরপর ১৯৮৯ সালে ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ তাঁকে এনে দেয় তুমুল জনপ্রিয়তা। ঢালিউডে প্রায় ৫০টি ছবির অভিনেত্রী তিনি।

 


আরো সংবাদ



premium cement
মধুখালীর পঞ্চপল্লীতে ২ ভাইকে হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ শ্রীলঙ্কাভিত্তিক এয়ারলাইন্স ফিটসএয়ারের ঢাকা-কলম্বো সরাসরি ফ্লাইট চালু রোহিঙ্গা ইস্যুতে একসাথে কাজ করবে ঢাকা-ব্যাংকক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইলি হামলায় আহত শিশুর মুখে ২০০ সেলাই বিষখালীতে মৎস্য বিভাগের অভিযান : জেলে নিখোঁজ, আহত ২ দক্ষিণ এশিয়ার যে শহরগুলোর তাপমাত্রা এখন সর্বোচ্চ গাজীপুরে দাঁড়িয়ে থাকা কাভার্ডভ্যানে অটোরিকশার ধাক্কায় হতাহত ৫ চৌগাছায় সিদ কেটে স্বর্ণের দোকানে চুরি দুর্নীতির মামলায় কৃষিমন্ত্রীকে আটক করল ইউক্রেন মোরেলগঞ্জে কৃষককে পিটিয়ে হত্যা দেবীগঞ্জে হিট স্ট্রোকে প্রাইভেটকার চালকের মৃত্যু

সকল