২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মামলার রায়ের দিনে নুসরাতের কবরে ফুটন্ত গোলাপ

মামলার রায়ের দিনে নুসরাতের কবরে ফুটন্ত গোলাপ - সংগৃহীত

বৃহস্পতিবার বহুল আলোচিত সোনাগাজীর মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এতে অধ্যক্ষ সিরাজসহ ১৬ আসামিকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত।

এলাকাবাসী জানায়, রায়ের দিনে নুসরাতের কবরে বাঁশের বেড়ায় ফুটন্ত সাদা ও লাল গোলাপের ছবি দেখা গেছে, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে গেছে। রায়ের দিনে ফেসবুকে কবরের পাশে ফুটন্ত গোলাপের ছবি নিয়ে নুসরাতের জন্য জান্নাত কামনা করেছেন এলাকাবাসী।  তারা বলছেন, ‘ফুল ফুটেছে রাফির কবরে, ফেনীর আদালত থাকবে সারাদেশের মানুষের নজরে।’

নুসরাত জাহান রাফিকে নির্মমভাবে পুড়িয়ে হত্যা করার পর সারাদেশের মানুষ তাকিয়ে আছেন বিচারকের আদেশের দিকে। রায় ঘোষণা করবেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ।

নুসরাত মারা যাওয়ার ৬ মাস পর আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করা হলো।

ন্যায় বিচারের প্রত্যাশায় প্রতীক্ষার প্রহর গুণেছে নুসরাতের পরিবার। মাদরাসা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদ করতে গিয়ে তার অনুসারীদের দেয়া আগুনে পুড়ে জীবন দিতে হয়েছে নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী নুসরাতকে। সারা দেশের মানুষ নুসরাত হত্যার প্রতিবাদে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছিল এই রায়ের দিনের জন্য।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে ২৪ অক্টোবর রায়ের দিন ধার্য করেন বিচারক মামুনুর রশিদ। বিচার কাজ শুরুর ৬১ কার্যদিবসে মামলাটি চূড়ান্ত রায়ের কার্যক্রম শেষ করা হয়। ইতিমধ্যে এই মামলায় ৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে ৮৭ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।

নুসরাতের পরিবার ও বাদি পক্ষের আইনজীবীরা আদালতের কাছে ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। অন্যদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা আসামিদের কে নির্দোষ দাবি করে খালাস প্রত্যাশা করেছেন।

নিহত নুসরাতের মা শিরিন আক্তার অধ্যক্ষসহ ১৬ আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি আশা করে বলেন, ‘নুসরাত হত্যার রায়ের মাধ্যমে অপরাধীরা যেন আর কোনো অপরাধ করার সাহস না পায়। এ রায় যেন দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে।’

মামলার বাদী নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের ন্যায় বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা আশা করি ন্যায় বিচার পাব।’

অভিযোগপত্রভুক্ত ১৬ আসামি হলেন- সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আবদুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আবদুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিল।

১৬ জন আসামির মধ্যে ১২ জন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, নুসরাত জাহান রাফি সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন। ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে এর আগে ওই ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে। নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দেয়া হয়। পরে ৬ এপ্রিল মাদরাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা পরীক্ষা কেন্দ্রের ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা তুলে না নেয়ায় তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় বলে মৃত্যুশয্যায় বলে গেছেন নুসরাত। টানা ৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল রাতে সে মারা যায়।

নুসরাত হত্যা ঘটনায় ৮ এপ্রিল নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। সূত্র : ইউএনবি।


আরো সংবাদ



premium cement