২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

টেকনাফ উখিয়ায় নির্বাচনী লড়াইয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে রোহিঙ্গা ইস্যু

টেকনাফ ও উখিয়ায় ৩০টি শিবিরে ১১লাখের বেশি রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু রয়েছে - সংগৃহীত

বাংলাদেশে কক্সবাজারের টেকনাফ এবং উখিয়ায় এবার নির্বাচন হবে মূলত রোহিঙ্গা ইস্যুতে। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো অনিশ্চিত হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নির্বাচনে অন্যতম ইস্যু হিসেবে সামনে চলে আসছে।

একইসাথে লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর কারণে নির্বাচনের আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়েও রয়েছে এক ধরণের সংশয়। টেকনাফ এবং উখিয়া নিয়ে গঠিত কক্সবাজার-৪ আসনে ভোটার রয়েছে ২ লাখ ৬৪ হাজার।

উখিয়ায় কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের পাশেই কলেজ শিক্ষার্থী শামসুল আলমের বসতবাড়ি।

সেই গত বছরের অগাস্ট মাসে যখন মিয়ানমার থেকে পালিয়ে রোহিঙ্গারা দলে দলে আসতে থাকে, তখন শামসুল আলম নিজের বাড়ির আঙিনায় এবং আশেপাশের এলাকায় অসহায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন।

কিন্তু সেই আশ্রয় দীর্ঘ সময় হওয়ায় এখন তাদের স্থানীয় লোকজনের জীবন যাত্রার ওপর একটা চাপ তৈরি হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সে কারণে তিনি রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রশ্নে প্রার্থী এবং দলগুলোর প্রতিশ্রুতির দিকে নজর রাখছেন।

তিনি বলেন,‘প্রথমে মানবতার খাতিরে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়েছিলাম। পরে দেখা যাচ্ছে, এরা এসে আমাদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। অনেক ধরণের সমস্যা, তরিতরকারি থেকে শুরু করে গাড়ি ভাড়া-সবকিছু দ্বিগুণ হয়েছে। রোহিঙ্গারা স্থায়ীভাবে থাকলে আমাদের সমস্যা।’

স্থানীয় মানুষ নিজেদের সংখ্যালঘু ভাবছে

টেকনাফ ও উখিয়ায় স্থানীয় মানুষের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ লাখ। তারাই এখন ১১লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর কাছে সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে। যদিও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে টেকনাফ ও উখিয়ার ৩০টি আশ্রয়শিবিরে রাখা হয়েছে।

কিন্তু লাখ লাখ শরণার্থীকে সামাল দেয়া সহজ বিষয় নয়।

রোহিঙ্গারা শিবিরের বাইরে লোকালয়ে এসে সস্তায় শ্রম দিয়ে সেখানকার শ্রমবাজার দখল করে নিয়েছে। দ্রব্যমূল্যসহ সবক্ষেত্রেই প্রভাব পড়েছে। স্থানীয় লোকজনের বড় অংশের মাঝে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

টেকনাফে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওয়াহিদা বেগম বলছিলেন, এই ইস্যুতে তারা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে স্পষ্ট অঙ্গীকার চান।

তিনি বলেন,‘রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের জীবনে অনেক বেশি প্রভাব পড়েছে। সেটা হচ্ছে, প্রথমে দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেছে। গাড়িভাড়া বলেন, সবখানেই কিন্তু অনেক প্রভাব পড়েছে।’

ওয়াহিদা বেগম তাঁর ক্ষোভ ধরে রাখতে পারলেন না। তিনি বললেন,‘রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের জীবনযাত্রার মানটা একবারে নিম্নমানের হয়ে গেছে। আমরা সংখ্যালঘু হয়ে যাচ্ছি। আমরা অঙ্গীকার চাই, রোহিঙ্গারা তাদের দেশ বর্মাতেই চলে যাক।’

সহানুভূতিও আছে অনেকের মাঝে

টেকনাফের একটি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের কাছে সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম রয়েছে।

নাফ নদী পাড়ি দিয়ে মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা প্রথমে এই গ্রামে এসে আশ্রয় পেয়েছিল। গ্রামটির মানুষ তাদের বাড়ির উঠান, স্কুল এবং খালি জায়গাসহ সর্বত্রই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন।

সেই গ্রামের অনেক মানুষ এখনও রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতিশীল।

তাদের বক্তব্য হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয় লোকজনের কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে স্থানীয় লোকজনকেও ত্রাণ সহায়তাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাহায্য করা হয়েছে।

তবে মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার ব্যাপারে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে কোনো মতপার্থক্য নেই।

তাদের আশ্রয় যে দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যাচ্ছে, মিয়ানমারে তাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়টি যে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে, এর প্রভাব নিয়েই স্থানীয় লোকজনের মাঝে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

ফলে আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী এবং দলগুলোর কাছে তারা তাদের উদ্বেগের বিষয়ে বক্তব্য চান।

দলগুলো বা প্রার্থীরা রোহিঙ্গা ইস্যুকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন?

প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি প্রার্থীর সমর্থনে গণসংযোগ, সমাবেশসহ নির্বাচনী প্রচারণায় ঘুরে ফিরে রোহিঙ্গা ইস্যুতেই বক্তব্য আসছে।

বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা এবং বিতর্কের কারণে এবার মনোনয়ন পাননি।

তবে তাঁর স্ত্রী শাহীন আকতার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন।

তার পক্ষে দলটির স্থানীয় একজন নেতা মোঃ শাহ আলম বলছিলেন, মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার বিষয়টি সারাবিশ্বে প্রশংসা পেয়েছে। এই বিষয়গুলোর সাথে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর সরকারের উদ্যোগের কথাও তারা ভোটারের কাছে নিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন,‘এটা ছোট ইস্যু নয়, অনেক বড় একটা ইস্যু। ১১লাখের বেশি মানুষকে লালন করা সহজ কথা নয়। এই মানবিক বিষয়গুলো আমরা তুলে ধরছি। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর চেষ্টাতো সরকার করছে। নির্বাচনের পর নতুন সরকার সেই চেষ্টা এগিয়ে নেবে। এই বিষয়টিও আমরা ভোটারদের কাছে তুলে ধরছি।’

আর বিএনপি প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরীর প্রতিশ্রুতির অগ্রাধিকারের তালিকাতেই আছে শরণার্থীদের দ্রুত ফেরত পাঠানোর বিষয়।

দলটির স্থানীয় নেতা সরওয়ার জাহান চৌধুরী বলছিলেন, ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করতে না পেরে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে তারা মনে করেন। এটাই তাদের মূল বক্তব্য।

তিনি বলেন,‘যারা রোহিঙ্গা এবং যারা আমরা স্থানীয় আছি, তাদের মধ্যে ভিতরে ভিতরে কিন্তু একটা বিভাজন সৃষ্টি হয়ে গেছে। এই রোহিঙ্গাদের তাদের অধিকার নিয়ে তাদের দেশে ফেরত পাঠাবো। এটি একটি অন্যতম ইস্যু হিসেবে আমরা আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে দিয়েছি স্থানীয়ভাবে।’

নির্বাচনের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রশ্নেও রোহিঙ্গা শরণার্থীরা ইস্যু হয়েছে

ভোটের দিনে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা কোনো সমস্যা তৈরি করতে পারে কিনা, সেই প্রশ্নও অনেকে তুলছেন।

টেকনাফের একজন সমাজসেবক অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী সংশয় প্রকাশ করে বলেন,‘নির্বাচনে এদের দ্বারা আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিও হতে পারে। অবনতি হতে পারে মানে, ভোটের দিনে এরা গোপনে জাল ভোট দিতে যেতে পারে। এরা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডেও জড়িত হতে পারে কারণ এদের মাঝে সন্ত্রাসী গ্রুপও আছে।’

অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আরও বলেন,‘রোহিঙ্গারা অন্যদের দ্বারা ব্যবহারও হতে পারে। ভোটের সময়তো পক্ষ প্রতিপক্ষ সবাইতো এই সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করতে পারে।’

স্থানীয় প্রশাসন এবং সেখানে দায়িত্বপালনকারী সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারাও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোর নেতাদের সাথে ইতোমধ্যেই কয়েকদফা বৈঠক করেছে।

শিবিরগুলোতে নজারদারি বাড়ানো হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে ভোটের আগে ও পরে রোহিঙ্গাদের শিবিরের বাইরে যাওয়া-আসা নিষিদ্ধ করেছে।

রোহিঙ্গাদের একজন নেতা মোহাম্মদ নূর বলছিলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনে রোহিঙ্গারা যাতে কোনোভাবে জড়িত না হয়, শিবিরগুলোর মসজিদে মসজিদে সেই বক্তব্য তুলে ধরা হচ্ছে।

তিনি বলেন,‘এরমধ্যে জিওসি আমাদের বিভিন্ন ক্যাম্পের চেয়ারম্যান এবং রোহিঙ্গা নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানে আমাদের বলে দেয়া হয়েছে, আমাদের রোহিঙ্গারা নির্বাচনের আগে শিবিরের বাইরে অন্য কোথাও যাইতে পারবে না। কোনো মিছিলে কেউ যাইতে পারবে না। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের সাথে আপনাদের কোনো সম্পৃক্ততা নাই। ক্যাম্পে সবাইকে এগুলো বলে দিতে বলেছে ঐ বৈঠক থাকি।’

তিনি আরো বলেন,‘এসব আমরা শিবিরগুলার মসজিদে মসজিদে ইমাম সাহেবেদের মাধ্যমে বার বার বলে দিচ্ছি।’

আওয়ামী লীগ, বিএনপির বাইরে অন্য দলগুলোর প্রচারণাতেও রোহিঙ্গা ইস্যু অগ্রাধিকার পাচ্ছে।

এই আসনে অন্য প্রার্থীরা হলেন, জাতীয় পার্টির আবুল মনজুর, ইসলামী আন্দোলনের মোহাম্মদ শোয়াইব, ইসলামী ঐক্যজোটের রবিউল হোছাইন এবং মুসলিম লীগের সাইফুদ্দিন খালেদ।


আরো সংবাদ



premium cement
দক্ষিণ ভারতে কেন কাজ করেনি বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের নতুন আংশিক কমিটি বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসায় বিনিয়োগ সম্ভাবনা অন্বেষণে থাইল্যান্ডের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান ট্রাম্পের বিচার নিয়ে বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট চুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত, ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত আমদানি ব্যয় কমাতে দক্ষিণাঞ্চলের সূর্যমুখী তেলের আবাদ পাকুন্দিয়ায় গানের আসরে মারামারি, কলেজছাত্র নিহত আবারো হার পাকিস্তানের, শেষ সিরিজ জয়ের স্বপ্ন পাটকেলঘাটায় অগ্নিকাণ্ডে ৩ দোকান পুড়ে ছাই ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা শুরু দোয়ারাবাজারে পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীকে হত্যা : স্বামীর আমৃত্যু কারাদণ্ড

সকল