২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নিকট প্রতিবেশি থেকে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী

শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক (ধানের শীষ) ও ডা. দীপু মনি ( নৌকা) - ছবি: সংগৃহীত

চাঁদপুর-৩ (সদর ও হাইমচর) আসনটি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে অনেক নাটক তৈরি হয়েছিল। অবশেষে নেতাকর্মীদের চাওয়া-পাওয়াকে গুরুত্ব দিয়ে এ আসনে বিএনপির চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির জেলা আহ্বায়ক শেখ ফরিদ আহমেদ। এতে নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঙ্গাভাব তৈরি হয়েছে। শুক্রবার দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চূড়ান্ত মনোনয়নপত্র শেখ ফরিদের হাতে তুলে দেন।

একই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বর্তমান এমপি ও দেশের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদকে দায়িত্বও পালন করছেন।

ডা. দীপু মনি ও শেখ ফরিদ দুজনে পরস্পর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও উভয়ের মধ্যে একটি বেশ মিল রয়েছে। তারা দুজনেই জেলা শহরের একই এলাকার বাসিন্দা। দীপু মনি নতুন বাজার এলাকায় জে এম সেনগুপ্ত সড়কের উত্তর পাশে তিন তলা বাড়িতে থাকেন। যদিও বেশির ভাগ সময়ই তিনি রাজধানীতে থাকেন। প্রতি সপ্তাহে তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় সফরে আসেন। আর একই সড়কের ঠিক দক্ষিণ পাশে বিশাল বাংলো রয়েছে শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের। সেখানেই তিনি থাকেন। ব্যবসায়ী মানিক বিগত আন্দোলন সংগ্রামে নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি নেতাকর্মীদেরকে সার্বক্ষণিক সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন।

চাঁদপুরের স্থানীয় লোকজন বলেন, এ আসনের প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ডা. দীপু মনি ও ফরিদ আহমেদ মানিক এ–বাড়ি, ও–বাড়ির বাসিন্দা। একজনের বাড়ি থেকে অপর জনকে দেখা যায়। রাজনৈতিক কোন বৈরিতা না থাকলেও তাদের মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা রয়েছে।

এ আসনে বিএনপি থেকে প্রাথমিকভাবে সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সাংসদ রাশেদা বেগম, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক সরকার, গণফোরামের জেলা সভাপতি সেলিম আকবর ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা এস এম আলমকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। এতে বেশ হতাশ হয়ে পড়েন বিএনপির নেতাকর্মীরা। অবশেষে তাদের চাওয়া-পাওয়ারই জয় হয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা।

জেলা যুবদলের একজন নেতা বলেন, শেখ ফরিদ আহমেদ বিএনপির চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়া দলের নেতা–কর্মীদের মধ্যে চাঙাভাব বিরাজ করেছে। তিনি মনোনয়ন না পেলে চাঁদপুরে বিএনপিতে বিপর্যয় নেমে আসতো। আর তার প্রভাব জেলার অন্য আসনগুলোতে কিছুটা হলেও পড়ত।

চাঁদপুর-৩ আসনটি বিএনপির ঘাঁটি বলে মনে করা হয়। এ আসন থেকে বিএনপির সাবেক এমপি জি এম ফজলুল হক একাধিকবার নির্বাচিত হয়েছেন। স্বাধীনতার পর এখানে আওয়ামী লীগ কখনো নির্বাচিত হতে পারেনি। ২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত জেলায় মোট ছয়টি সংসদীয় আসন ছিল। এরপর একটি আসন কমিয়ে পাঁচটি আসন করা হয়।

২০০৮ সালে এ আসন থেকে ডা. দীপু মনি প্রায় ৮৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিএনপির জি এম ফজলুল হককে হারিয়ে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও বিনাভোটে তিনি পুননির্বাচিত হন। তবে এবার হিসেব-নিকেশ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন ভোটাররা।

ভোটাররা বলেন, দীপু মনি সাংসদ হওয়ার পর চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলায় নদীভাঙন রোধসহ বেশকিছু উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড হয়েছে। তবে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির তৃণমূল নেতা ও জেলার আহবায়ক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক প্রার্থী হওয়ায় তীব্র প্রতিযোগিতার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিএনপিতে এই আসনে কোন আভ্যন্তরীণ কোন্দল নেই। বিএনপিসহ জোটের নেতাকর্মীরা সবাই ধানের শীষ প্রতীকের জন্য একযোগে মাঠে নামার জন্য প্রস্তুত আছে। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের মধ্যে আভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে। এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক সুজীৎ রায় নন্দী। তিনি বিগত দশ বছর ধরে এলাকায় নিয়মিত যাতায়াত করছেন। তৃণমূলে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও শক্ত প্রার্থী ছিলেন। তিনি মনোনয়ন না পাওয়ায় দলের নেতাকর্মীরা কিছুটা হলেও হতাশ।


আরো সংবাদ



premium cement