২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রাকৃতিক সুইপার খ্যাত ‘শকুন’ কি বিলুপ্তির পথে?

এরকম শকুন আর সচরাচর দেখা যায় না। - ছবি: সংগৃহীত

পিরোজপুরের ভান্ডারিয়াসহ দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চলে এখন আর শকুনের দেখা মিলছেনা। প্রকৃতির সুইপার খ্যাত শকুন দেখা যায় না বললেই চলে। এক সময় শকুন বেশি দেখা যেত উপজেলার কঁচা ও পোঁনা নদীর চরে। উপকূলের বড় বড় গাছের মগডালে দেখা মিলত পাখিটি। শুধু পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া নয়, সারা দেশেই এখন শকুন প্রজাতির পাখিটির আর দেখা মিলছে না।

বন্য প্রাণী ও পাখি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শকুনের জাত রক্ষা করা না গেলে কয়েক বছরের মধ্যে প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাবে এই শকুন। তখন বই ও ছবি দেখে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের চেনাতে হবে। প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে এখনো কোনোভাবে টিকে আছে সরুঠোঁট প্রজাতির শকুন।

শকুন মৃত পশু-পাখি খেয়ে পরিবেশ দূষণ কমায়। একই সঙ্গে অ্যানথ্রাক্সসহ বিভিন্ন রোগের জীবাণু ছড়ানোর হাত থেকেও পরিবেশকে রক্ষা করে শকুন। এ কারণে একে বলা হয় প্রকৃতির সুইপার’। দেশে ২০০ প্রজাতির পাখি হুমকির মধ্যে রয়েছে আর গোটা পৃথিবীতে ২৩ প্রজাতির শকুন থাকলেও বাংলাদেশে দেখা যায় মাত্র সাত প্রজাতির। বর্তমানে দেশে এ প্রাণীটি বিলুপ্ত প্রায়।

জানা গেছে, ৮০ দশকে ভান্ডারিয়াসহ দক্ষিনাঞ্চলে নদনদীর চরে দল বেঁধে আসত শকুনের ঝাঁক। এ ছাড়া ১৯৭১ সালের বিভিন্ন সময়ে কঁচা নদে ভেসে আসা লাশের ওপর বসত ধূসর শকুন। গরু মহালের আকাশে ছায়া ফেলে চক্কর দিত শকুন-শকুনিরা। শকুন অশুভ তো নয়ই, হিংস্রও নয়। চিল, ঈগল বা বাজপাখির মতো শিকারিও নয়। এটা আমাদের পরিবেশের পরম বন্ধু। মৃত পশু খেয়ে শকুন আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে। শকুন কখনোই জীবিত মানুষকে আক্রমণ করে না।

প্রখর দৃষ্টিশক্তির অধিকারী পাখিটি বটগাছ, কড়ইগাছ, শিমুল, বাঁশঝাড়, দেবদারু গাছে বাসা বানাত। এদের দৃষ্টি এতটাই প্রখর যে, অনেক উঁচু থেকেও এরা মাটি বা পানির ওপরে থাকা লাশ দেখতে পায়।

এ পাখি একসঙ্গে ১৫ থেকে ২০টি ডিম পাড়ে। তিন সপ্তাহ তা দেওয়ার পর বাচ্চা ফোটে। এর স্বাভাবিক আয়ুষ্কাল ২৫ বছর। তিন থেকে চার ফুট উচ্চতার হয় এ পাখি। দেশে দু’শ’ প্রজাতির পাখি হুমকির মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শকুনও। ক্রমাগত কমছে শকুনের সংখ্যা। সত্তরের দশক থেকে এ পর্যন্ত শকুন হ্রাসের পরিমাণ ৯৮ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মৃত পশুর মাংস শকুনের কোনো ক্ষতি করে না। কিন্তু ডাইক্লোফেনাক দেয়া হয়েছে এমন মৃত পশুর মাংস খেলে কিডনি নষ্ট হয়ে ২-৩ দিনের মধ্যে শকুনের মৃত্যু ঘটে। এ কারণে গত তিন দশকে উপমহাদেশে ৯৭% শকুন মারা গেছে।

 

আরো পড়ুন:  বিলুপ্তির পথে জাতীয় পাখি দোয়েল

মো: আমিনুল ইসলাম কাঁঠালিয়া (ঝালকাঠি), ০৯ জুলাই ২০১৮


এক সময়ে গ্রাম-গঞ্জের মাঠে-ঘাটে, বনে-জঙ্গলে, গাছে গাছে জাতীয় পাখি দোয়েলসহ বিভিন্ন ধরনের পাখি দেখা যেত। কিন্তু কালের আবর্তে এখন আর চিরচেনা সেই তেমন পাখি দেখা যায় না। পাখির কলরব বনে জঙ্গলে গাছে পাখি দেখার সেই অপরূপ দৃশ্যপট পাল্টে যাচ্ছে। এখন আর চোখে পড়ে না।

বনাঞ্চলের পরিবেশ দূষণ, নির্বিচারে গাছ কাটা, জমিতে কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার, পাখির বিচরণ ক্ষেত্র ও খাদ্য সঙ্কট এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিলুপ্তির পথে দোয়েলসহ দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন পাখি।

কাঁঠালিয়ায় দক্ষিণ চেঁচরী গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আলহাজ মো: রেজাউল করিম বলেন, কয়েক বছর আগেও মানুষের ঘুম ভাঙতো পাখির ডাকে। তখন বোঝা যেত ভোর হয়েছে। পাখির কলকাকলিই বলে দিত এখন সকাল, শুরু হক দৈনন্দিন কর্মব্যস্থতা।
কিন্তু এখন যেন পাখির ডাক হারিয়ে গেছে, এখন গাছ-গাছালিতে পাখির ডাক নেই। মো: কামাল হোসেন হাওলাদার বলেন, দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্মৃতির সাথে জড়িত সেসব পাখির ডাক ও সুর মানুষকে মুগ্ধ করত, সেই পাখিই ক্রমান্বয়ই হারিয়ে যেতে বসেছে। বিশেষ করে দোয়েল পাখির এখন আর দেখাই মিলছে না।

কয়েকজন বয়স্কলোকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দোয়েল, ময়না, কোকিল, শালিক, চড়াইসহ বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির পাখি গ্রামাঞ্চলের বিলে-ঝিলে, ঝোপে-ঝাড়ে, গাছের ডালে, বাগানে কিংবা বাড়ির আঙ্গিনার ডালে বসে তার সুরের ধ্বনিতে মুগ্ধ করে।
এই পাখির শীষ এখন আর শোনা যায় না। সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যায় বাঁশ ঝাড়ে আমের ডালে, সজিনা গাছে, বাড়ির ছাদে যে পাখি দেখা যেত, সেই পাখি আর চোখে পড়ে না।
তবে কমসংখ্যক টিয়া, ঘুঘু, কাক, মাছরাঙ্গা, ইত্যাদি পাখি শহর, গ্রাম-গঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেলেও জাতীয় পাখি দোয়েল তেমন আর মানুষের চোখে পড়ে না। তাই পাখিপ্রিয় অনেক শৌখিন মানুষের বাড়ির খাঁচায় বন্দী করে পাখি পালন করতে দেখা যায়। 

পাখি পালক মো: জলিল খান বলেন, দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বিলুপ্তির পথে। নতুন প্রজন্ম ওই পাখি দেখতে পান না। তাই বাধ্য হয়ে বাড়িতে বসেই বেশ কিছু প্রজাতির পাখি পালন করেছি। যাতে করে নতুন প্রজন্ম পাখি সম্পর্কে জানতে পারে।

সচেতন মহল মনে করেছেন, নদীভাঙনের ফলে ফসলি জমিতে উঠছে ঘরবাড়ি, তা ছাড়া জনসংখ্যা প্রভাবেও কোথাও না কোথায়ও প্রতিদিন নতুন নতুন ঘরবাড়ি তৈরি হচ্ছে। এতে গাছ কেটে বন উজাড় করে পাখিদের আবাসস্থল ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে।

মো: জাকির হোসেন বলেন, জমিতে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় পাখি মরে যাচ্ছে, আবার খাদ্য সঙ্কট ও আবাসস্থল কমে যাওয়ায় পাখি বংশ বিস্তার করতে পারছে না, এতে কমে যাচ্ছে পাখি। তাই পরিবেশ রক্ষা জরুরি বলে মনে করছেন তারা।
বেশি মুনাফার আশায় বনে চোরা শিকারিরা বিভিন্ন ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করে বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে শিকারের হাত থেকে বাঁচাতে জীবন রক্ষায় পাখি অন্যত্র চলে যাচ্ছে। অনেক সময় তাদের হাতে মারাও যাচ্ছে পাখি। অথচ প্রশাসনের তেমন কোনো তৎপরতা নেই।

এ বিষয়ে কাঁঠালিয়া উপজেলা বন কর্মকর্তা মো: আলমগীর হোসেন বলেন, শীত মওসুমে পাখি শিকারের কিছু বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটে থাকে। এ ছাড়া অন্য সময় তেমন শিকার হয় না। তিনি বলেন, বন্যপ্রাণী ও পশু পাখি আবাসস্থলে সামান্য খাদ্যের সঙ্কট থাকলেও উপকূলের বন রক্ষায় বন বিভাগ তৎপর রয়েছে। বন রক্ষা হলে পশু-পাখি, বন্যপ্রাণীও রক্ষা হবে।
এ দিকে কৃষি জমিতে মাত্রারিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণসহ, উপকূলের বন ও পরিবেশ রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে জাতীয় পাখি দোয়েলসহ দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন পাখির দেখা মিলবে না বলে মনে করেছেন পরিবেশবাদীদের।

 


আরো সংবাদ



premium cement
‘ফ্রি ভিসার গল্প’ আর শূন্য হাতে ফেরা লাখো শ্রমিক নোয়াখালীতে প্রবাসীর স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়ে চাঁদা আদায় দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না : কাদের আশুলিয়ায় বাঁশবাগান থেকে নারী পোশাক শ্রমিকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার মিয়ানমারের কর্মকর্তারা ফেরত গেলেন, কিন্তু রোহিঙ্গা সঙ্কট কি আরো জটিল হচ্ছে দিনাজপুরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষ, চালক-হেলপার নিহত মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ সখীপুরে বৃষ্টির জন্য অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা দক্ষিণ ভারতে কেন কাজ করেনি বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের নতুন আংশিক কমিটি বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসায় বিনিয়োগ সম্ভাবনা অন্বেষণে থাইল্যান্ডের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

সকল