২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


মৌলভীবাজার-২ আসনে চা শ্রমিকেরা বড় ফ্যাক্টর ষ

-

মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে ব্যক্তি নয়, প্রতীক আর চা শ্রমিকেরাই নির্বাচনে ব্যবধান গড়ে দেয়। এই আসনে বিগত ১০টি সংসদ নির্বাচনের মধ্যে আওয়ামী লীগ তিনবার, জাতীয় পার্টি তিনবার, স্বতন্ত্র প্রার্থী দুইবার, মুসলিম লীগ একবার এবং ১৯৯৬ সালের ১৫ আগস্ট সংবিধান রক্ষার নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী বিজয়ী হন।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার-২ আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ৪১ হাজার ১৬১। এর মধ্যে ২৩টি চা বাগানে চা শ্রমিকের ভোট প্রায় ৪১ হাজার। এই আসনে বিগত ১০টি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তিনবার বিজয়ী হয়। এ ছাড়া ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টি এবং ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সংবিধান রক্ষার নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী বিজয়ী হন। ১৫ ফেব্রুয়ারির ওই নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদে আওয়ামী লীগসহ সব দলের দাবি অনুযায়ী নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস হয়।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নবাব আলী ছারওয়ার খান নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল জব্বার বিজয়ী হন। ১৯৮৬ সালে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুসলিম লীগের প্রার্থী এ এন এম ইউসুফ ৩৩ হাজার ৩৮৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। সেই নির্বাচনে এক হাজার ১৩৫ ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আব্দুল জব্বার পরাজিত হন। তিনি পেয়েছিলেন ৩২ হাজার ২৫৩ ভোট। ১৯৮৮ সালে চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০১৪ সালের মতো একদলীয় ভোটে জাতীয় পার্টি প্রার্থী নওয়াব আলী আব্বাছ খান বিজয়ী হন। তবে নব্বইয়ের পটপরিবর্তনের পর ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত স্মরণাতীতকালের সবচেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নওয়াব আলী আব্বাছ খান বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ পান ৪৫ হাজার ৫২৬ ভোট।
কিন্তু ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সংবিধান রক্ষার ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী এম এম শাহীন নির্বাচিত হন। বিএনপি সরকার তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস করেই সংসদটি ভেঙে দিলে তিন মাস পর ১২ জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ১২ হাজার ৫৯০ ভোট বেশি পেয়ে এ আসনে বিজয়ী হন। সেই নির্বাচনে সুলতান পেয়েছিলেন ৫২ হাজার ৫৮২ ভোট। ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এম শাহীন ছয় হাজার ৮৬৪ ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হন। বিজয়ী এম এম শাহীন পেয়েছিলেন ৭৮ হাজার ৬৬৭ ভোট। সেই নির্বাচনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর পেয়েছিলেন ৭১ হাজার ৮০৩ ভোট। আর ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নওয়াব আলী আব্বাছ খান স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এম শাহীনকে পরাজিত করে তৃতীয় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বিরোধীদলবিহীন একতরফা ও প্রায় ভোটারশূন্য দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০ হাজার ৮৭১ ভোট পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আব্দুল মতিন এমপি নির্বাচিত হন। পরে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে তাই প্রতীকই ফ্যাক্টর। এখানে এখন নৌকার কাণ্ডারি এম এম শাহীনের ব্যক্তিগত ইমেজ, চা শ্রমিক ভোট ব্যাংক এবং আওয়ামী লীগের দলীয় ভোট যুক্ত হলে নৌকার প্রার্থীর বিজয় অনেকটা সুনিশ্চিত হবে। এই আসনে সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্ররা জোটবদ্ধ হলে নৌকার বিজয় ঠেকানো মুশকিল হবে বলে আওয়ামী লীগমনা ভোটাররা মনে করেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement