২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিএসএমএমইউতে নিয়োগ পেতে প্রোভিসিকে অবরুদ্ধ করে রাখে ছাত্রলীগ

বিএসএমএমইউতে নিয়োগ পেতে প্রোভিসিকে অবরুদ্ধ করে রাখে ছাত্রলীগ - সংগৃহীত

নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের প্রতিবাদে এবং দ্রুত নিয়োগের দাবীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের চিকিৎসক নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসিকে (শিক্ষা) কয়েক ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। একই সাথে চিকিৎসকেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শণ করে। চিকিৎসকদের একটি অংশ বলছেন, পরীক্ষা ছাড়াই নিয়োগ পাওয়ার দাবীতে তারা প্রোভিসিকে অবরুদ্ধে করেছেন।

আবার কেউ বলছেন, দ্রুত নিয়োগ দেয়ার দাবীতে বিক্ষোভ করছেন। চিকিৎসকদের একটি অংশ বলছেন, এর আগে অনেক মেডিক্যাল অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে অনিয়ম করে। আবার চিকিৎসকদের আরেকটি অংশ অভিযোগ করেন যে উপর মহল থেকে বিশাল অংকের অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দেয়ার একটি প্রক্রিয়া চলছিল। তা বন্ধ করার জন্যই নবীন চিকিৎসকেরা প্রোভিসিকে অবরুদ্ধ করে রাখে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি পরিস্কার করা হচ্ছে না।

বুধবার দুপুরে থেকে তারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে চাকরি প্রার্থীরা মিছিল সহকারে ভিসির কার্যলয়ে যায় এবং প্রোভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমানকে তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সুত্র জানায়, গত মঙ্গলবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তার প্রেক্ষিতে বুধবার বেলা ১২টার দিক থেকে প্রায় চার শতাধিক চাকরি প্রত্যাশী ক্যাম্পাসে জড়ো হতে থাকে। পরে মিছিল সহকারে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে। এক পর্যায়ে বেলা ২টার দিকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের দিকে যায় এবং ভিসির কার্যালয়ের সামনে গিয়ে দ্রুত নিয়োগের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় অবশ্য ভিসি অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়–য়া তার কার্যলয়ে ছিলেন না। ভিসির অনুপস্থিতিতে প্রোভির্সি (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমানের কার্যালয় অবরুদ্ধ করে চিকিৎসকেরা। দুপুর দুইটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে বিক্ষুব্ধ চিকিৎসকেরা।

তবে প্রোভিসি অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমান এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাননি। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে
আমি কোন কথা বলবো না। যা বলার ভিসি স্যার বলবেন’।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়–য়া গতকাল বিকাল চারটায় বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত রাউন্ড শেষ করে দুপুরে (গতকাল বুধবার) বিসিপিএস’র উদ্দেশ্যে রাওনা করি। গাড়ি মগবাজার ফ্লাইওভারের ওপর ওঠার পর খবর পাই চাকরি প্রার্থীরা প্রশাসন ভবনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে এবং প্রোভিসিকে (শিক্ষা) অবরুদ্ধ করে রেখেছে। অধ্যাপক ডা. কনক বলেন, প্রোভিসির কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা ছিলেন। তাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আশা করছি অল্প সময়ে তারা বেরিয়ে আসবেন।

বিক্ষোভকারী চিকিৎসকদের কয়েকজন বলেন, এখানে দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন সময়ে কিছু কিছু নিয়োগ হলেও সেগুলো তদবিরের মাধ্যমে হয়েছে। এ কারণে ২০১৬ সাল থেকে নতুনদের নিয়োগের জন্য দাবি জানানো হচ্ছে। এরপর ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করা ছাত্রলীগের শিক্ষার্থীরা তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসক নিয়োগে অনুরোধ জানায়।

দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য তাকেও কয়েক ঘন্ট অবরুদ্ধ করে রাখে ছাত্রলীগের চিৎিসক নেতা-কর্মীরা। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিনি চাকরি প্রার্থীদের নিয়োগ প্রদানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন। ২০১৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর স্বাচিপের চাকরি প্রত্যাশী জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে অধ্যাপক কামরুলের আলোচনা হয়। তিনি তাদের আশ্বস্ত করেছিলেন এই বলে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনে দুইশ’ চিকিৎসক নিয়োগের পূর্বসিদ্ধান্ত রয়েছে।’

তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক কামরুল হাসান খান দুই সপ্তাহের মধ্যে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দেয়ার আশ্বাস দিয়ে নিয়োগ প্রত্যাশী ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের হাত থেকে রেহাই পেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন কয়েক জন চাকরী প্রত্যাশী চিকিৎসক। পরে অবশ্য ২০১৭’র ১ অক্টোবর ২০০ জন মেডিকেল অফিসার চেয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে মেডিকেল অফিসার পদে ১৮০ জন এবং মেডিকেল অফিসার (ডেন্টাল সার্জারী) পদে ২০ জনকে নিয়োগের বিষয় উলে¬খ করা হয়। চলতি মাসের ২৭ সেপ্টেম্বর নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু অদৃশ্য কারণে ২৫ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার নিয়োগ পরীক্ষা স্থগীত করে কর্তৃপক্ষ। বিক্ষোভরত চিকিৎসকেরা জানান, নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের বিরুদ্ধে তারা বিক্ষোভ করছিলেন।

পরিস্থিতি সম্পার্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়েল প্রক্টর অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোজাফফর আহমেদ বলেন, ম্যাডাম অবরুদ্ধ রয়েছেন। আমারা ম্যাডোমের সঙ্গে আছি। যারা ম্যাডামকে অবরুদ্ধ করেছে তারাও চিকিৎসক, আমাদের ছাত্র। আমার তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। আশাকরছি তাদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পারবো।


আরো সংবাদ



premium cement