১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলকদ ১৪৪৫
`


পুরস্কার

-

আমির হোসেনের বয়স ৫০ পেরিয়েছে। এই বয়সে যতটুকু অসুস্থ থাকার কথা, ঠিক ততটুকু তিনি সুস্থই। যদিও প্রেশারের ওষুধ ছাড়া তাকে আর কোনো ধরনের ওষুধ খেতে হয় না। মানুষ হিসেবে বরাবরই তিনি রোমান্টিক। ভালো গান গাইতে পারেন। ছবি আঁকার হাতও ভালো। দাবা খেলাটাও যথেষ্ট পারেন। এসব গুণের পাশাপাশি আমির হোসেনের বড় গুণ হলোÑ তিনি চমৎকার কবিতা লিখতে জানেন। ছোটবেলার অভ্যাস সেটি। যুবক বয়সের লেখা প্রায় ২০০টিরও বেশি কবিতা তার ডায়েরির পাতায় লেখা আছে। দুঃখের কথা হলোÑ তার এসব কবিতা কোথাও ছাপা হয়নি। শুধু ডায়েরিতে লিখে রেখেছেন। পত্রিকায় ছাপানোর উপযোগী সেসব কবিতা তিনি কখনো পত্রিকায় পাঠাননি, লেখা পাঠানোর নিয়মকানুন জানা ছিল না বলে। তবে বিগত চার বছর ধরে আমির হোসেনের কবিতা দেশের বিভিন্ন মানুষ পড়তে পেরেছে ফেসবুকের কল্যাণে। তার নাতি রাফি তাকে একটা ফেসবুক আইডি খুলে দিয়েছে চার বছর আগে। ফেসবুকটা ভালো উপভোগ করেন আমির হোসেন। অতীতের লেখা সেসব ডায়েরি খুলে নিজের লেখা বিশ-ত্রিশ বছর আগের কবিতাগুলো তিনি ফেসবুকে পোস্ট করেন। ফলে ফেসবুকের সেসব কবিতা পাঠের প্রচুর পাঠকও সৃষ্টি হয়ে গেছে এই চার বছরে। ফ্রেন্ডলিস্টের বন্ধুরা আমির হোসেনের সেসব কবিতার একনিষ্ঠ পাঠক-ভক্ত। কমেন্টগুলো পড়লে তিনি এসব বুঝতে পারেন।
২.
হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছেন আমির হোসেন। তিন দিন আগে তাকে এখানে ভর্তি করানো হয়েছে। সাথে আছেন তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম। আমির হোসেন গুরুতর অসুস্থ। তার কিডনিজনিত সমস্যা। চিকিৎসার জন্য দেড় লাখ টাকার মতো লাগবে। এত টাকা তার নেই। একমাত্র সন্তান ওহাব বাজারের ছোটখাটো মুদি ব্যবসায়ী। নাতি রাফি টিউশনি করে সংসারের অভাব কিছুটা দূর করলেও অভাব পিছু ছাড়ছে না সংসার থেকে।
মৃত্যুর হাতছানি মানুষকে ভীত করে তোলে। আমির হোসেন বাঁচতে চান অনেক দিন। শেষ পর্যন্ত ফেসবুকে তার জটিল রোগের চিকিৎসার সাহায্য চেয়ে তিনি লিখেছেনÑ ‘আমি কিডনি সমস্যায় নিয়ে প্রাইম হাসপাতালে ভর্তি আছি। আপনারা পারলে আমাকে আর্থিকভাবে সাহায্য করুন। কৃতজ্ঞ থাকব।’
আশ্চর্য, আমির হোসেনের এ পোস্ট ফেসবুকে দেখেও কেউ কোনো সাড়া দিচ্ছে না। পোস্ট করার তিন ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। অথচ এখন যদি তিনি কোনো কবিতা পোস্ট করতেন, সাথে সাথে অনেকে কবিতার ভালো লাগাÑমন্দ লাগা জানিয়ে মন্তব্য করত।
৩.
সন্ধ্যাবেলায় আমির হোসেনকে দেখতে রাজপুতের মতো একটি ছেলে হাসপাতালে এসেছে। আমির হোসেন এই ছেলেকে চিনতে পেরেছেন। ছেলেটি তার ফেসবুকের। নাম শুভ। শুভর দিকে তাকিয়ে আমির হোসেন মৃদু করে তাকাতেই শুভ আমির হোসেনকে পা ছুঁয়ে সালাম করল। কিছুক্ষণ কথা বলার পর শুভ আমির হোসেনকে যে একটি সত্য ঘটনা বলল, তা শুনে আমির হোসেন অবাক হয়ে গেলেন। শুভ নত কণ্ঠে বলল, ‘এবারের বইমেলায় আমার একটি কবিতার বই বের হয়েছে। ফাল্গুন প্রকাশনীতে আমার কবিতার বইটি ছিল এবারের বেস্ট সেলার। পাঠকের চাহিদার কারণে প্রকাশক বইটির তৃতীয়বার মুদ্রণও করেছেন। এমনকি প্রকাশক নিজেও কবিতাগুলো দারুণভাবে পছন্দ করেছেন। বইটির এত বিক্রি দেখে প্রকাশক গতকাল আমাকে দশ হাজার টাকা পুরস্কার দিয়েছেন।’ এসব শুনে আমির হোসেন বললেন, ‘তাহলে নিশ্চয়ই তোমার লেখার হাত ভালো।’ কিন্তু শুভ বলল, ‘না। আমি লিখতে পারি না। বইটিতে যে কবিতাগুলো, সব আপনার লেখা। আমি আপনার ফেসবুক থেকে সেসব কবিতা সংগ্রহ করে পাণ্ডুলিপি বানিয়ে নিজের নামে বই বের করেছি। এ কথা কেউ জানে না। সবাই জানে কবিতাগুলো আমার লেখা। আজ ফেসবুকে আপনার অসুস্থতার কথা জেনে আমার কষ্ট লাগল। তাই প্রকাশকের আমাকে দেয়া দশ হাজার টাকা আমি আপনার জন্য নিয়ে এসেছি। আপনার চিকিৎসার জন্য। এই পুরস্কারের আসল মালিক আপনি।’ বলেই শুভ পকেট থেকে টাকাগুলো বের করে আমির হোসেনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, ‘আমাকে ক্ষমা করুন। আপনার কবিতা চুরি করে নিজের নামে বই করে আমি খুব অন্যায় করেছি।’ আমির হোসেন শুভকে কী বলবেন, বুঝতে পারছেন না।
আমিশাপাড়া, নোয়াখালী


আরো সংবাদ



premium cement