২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

লি কুয়ানের দেশে

-

ছোট্ট একটি দ্বীপদেশ। দেশটি পরিচিত ছিল জেলেদের গ্রাম হিসেবে। তখনো এখানকার মানুষের নেশা ও পেশাই ছিল মাছ ধরা। মাত্র ৫২ বছরের ব্যবধান। এই গ্রাম এখন আধুনিকতার আইকন। যার নেপথ্যে কারিগর ছিলেন আধুনিক সিঙ্গাপুরের স্বপ্নদ্রষ্টা লি কুয়ান। লি কুয়ান নেই, কিন্তু তার সিঙ্গাপুর যেন নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা সফটওয়্যারে সেট করা অটোমেশন। সিঙ্গাপুর ভ্রমণের উদ্দেশে খুলনা প্রেস ক্লাবের ২০ সদস্যের টিমের সাথে ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যাত্রা শুরু করলাম। সিঙ্গাপুর দেশটির জীবনযাত্রা ব্যয়বহুল। তারপরও আধুনিক প্রযুক্তি আর বিলিয়নিয়ারদের শহর দেখতে আগ্রহের কমতি ছিল না। ৯ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৮টায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে প্রায় ৪ ঘণ্টা পর দুপুর সাড়ে ১২টায় সিঙ্গাপুরের চাংগি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছলাম। সুন্দর গোছানো, চোখ ধাঁধানো ফিটিংসসহ আধুনিক বিমানবন্দরের সব সুবিধা এখানে রয়েছে। ইমিগ্রেশন সেরে রওনা হলাম নির্ধারিত হোটেল পার্ক সভরিনের উদ্দেশে। পথে যেদিকে তাকাই সে দিকেই সাজানো, পরিপাটি ও পরিকল্পিত। সবুজের সমারোহ আর বর্ণিল ফুলের মন মাতানো ডিসপ্লে। বিমানবন্দর থেকে হোটেলে নামার আগ পর্যন্ত মনে হলো পুরো সিঙ্গাপুর যেন বাগান আর ফুলের নগরী।
রাস্তার দু’ধারে সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা আর্কিটেকচারাল ডিজাইনের সুউচ্চ ভবন। চার দিকে শোভাবর্ধনকারী গাছ-গাছালি, আর লতাগুল্ম পাতাবাহারে ভরপুর। চলার পথে মনে হচ্ছিল পুরো রাস্তাটাই সাবান দিয়ে কেউ ধুয়ে রেখেছে। সিঙ্গাপুরের আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ। প্রতিদিনের বৃষ্টি শহরের সব ধুলো-ময়লা পরিষ্কার করে দেয়। পরিচ্ছন্ন একটি শহর। শত শত ব্র্যান্ডেড গাড়ি। কোনো হর্ন বাজে না, নেই কোনো জ্যাম, নেই ওভারটেক করার প্রবণতা। জেব্রা ক্রসিংয়ে পথচারী না থাকলেও গভীর রাতে গাড়ি থেমে যাচ্ছে। খুবই ভদ্র একটি জাতি। নিয়মের বাইরে কিছুই করে না।
সিঙ্গাপুরকে বলা হয় সিংহের শহর বা লায়ন সিটি। বাস্তবে গোটা সিঙ্গাপুরে একটা সিংহের দেখা পেলাম না। তবে আশ্চর্যের বিষয়, ওপরের সিঙ্গাপুর থেকে পাতাল সিঙ্গাপুর আরো আধুনিক। প্রতিটি রেলস্টেশন প্রায় চার-পাঁচ শ’ মিটার গভীরে। সাথে বৃহৎ শপিংমল। এমনভাবে প্লানিং করা, যাতে যাত্রীরা প্রয়োজনীয় শপিং করতে পারেন। সিঙ্গাপুরে ট্যাক্সিক্যাবগুলোতে ভাড়া অনেক বেশি হওয়ায় যাতায়াতের সবচেয়ে কম খরচ পাতাল ট্রেন। মাটির নিচে প্রায়ই তিনটি লেয়ারে ট্রেন চলাচল করে। সব কিছু অটোমেশন। ট্রেনে ভ্রমণ করতে লাগে স্মার্টকার্ড, যা কিনা বুথ থেকে টাকার বিনিময়ে নিতে হয়। প্রতি দুই থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে ট্রেন পাওয়া যায়।
সিঙ্গাপুরের রাত মানেই রঙিন আলো আর অনিন্দ্য সৌন্দর্য। উঁচু উঁচু বিল্ডিংগুলো মনে হয় কাচ আর লাইট দিয়ে তৈরি। ভ্রমণের প্রথম দিনেই লেজার শো আর মিউজিক্যাল ফাউন্টেন উপভোগ করতে রাতে পাতাল ট্রেনে চড়ে পৌঁছলাম মেরিনা বে রিসোর্টে। এর ৫৭ তলা পুরোটা জাহাজের আকৃতিতে করা। পুরো বিল্ডিংয়ের ইন্টেরিয়র আর আর্কিটেকচারাল ডিজাইন সত্যিই অসাধারণ। ৫৫ তলার হোটেলটির ওপরে জাহাজ আকৃতির অংশটুকু পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু সুইমিং পুল। এখানেই রয়েছে সাত তারকা শেফসমৃদ্ধ সাতটি আন্তর্জাতিক মানের রেস্তোরাঁ। আছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আউটলেট। রাতের আঁধারে আলো ঝলমলে স্থাপনাগুলোর প্রতিচ্ছবি পানিতে পড়ে এক চমৎকার আবহ তৈরি করে। যতক্ষণ ইচ্ছে থাকতে পারেন এখানে। এটির অবস্থান ফুলারটন হোটেলের ঠিক বিপরীতে। শপিংমলের সামনেই রয়েছে বিশাল নদী। লেজার আর মিউজিক্যাল ফাউন্টেন এখনো চোখে ভাসে। সিঙ্গাপুর নদীর পাড় ধরে চলে আসি মারলায়ন পার্কে। এখানে ঢুকতে কোনো টিকিট লাগে না। এখানে একটি মূর্তি রয়েছে, যার শরীরের পুরো অংশ মাছের মতো আর মুখ সিংহের মতো। শ্বেতপাথরের ঝরনা। অনবরত পানি পড়ছে। এটি সিঙ্গাপুরের মূল আকর্ষণ। যাকে সিঙ্গাপুরের আইকন বলা হয়। প্রতিদিন প্রায় ২৫-৩০ হাজার দর্শনার্থীর পদভারে মুখরিত হয় মেরিনা বে স্যান্ডস।
মন ভুলিয়ে দেয় সেন্তোসা আইল্যান্ড। অনেক মজা হলো সেন্তেÍাসায়। সমুদ্রের মাঝে গড়ে তোলা বিনোদন কেন্দ্র সেন্তোসা সবচেয়ে বড় দ্বীপ। দর্শনার্থীদের জন্য এখানে রয়েছে ইউনিভার্সেল স্টুডিও, টাইগার স্কাই টাওয়ার, বাটারফ্লাই পার্ক, আন্ডার ওয়াটার ডলফিন লগোন, ফোরডি অ্যাডভেঞ্চার ল্যান্ড, ওয়েভ হাউজ সেন্তোসা, আইফ্লাই সিঙ্গাপুর, ভিভো সিটি থেকে সেন্তোসা মনোরেল ও ক্যাবল কার। রয়েছে সমুদ্রসৈকত। এখানেও সেন্তেÍাসা মারলিয়ন বা সিংহমূর্তি রয়েছে। এখানে নেমে আমরা ক্যাবল কার যোগে সেন্তোসায় ঢুকলাম। তারপর হেলমেট পরে দুইবার আঁকাবাঁকা উঁচু-নিচু পথে মিনিকার চালানো এবং খোলা ক্যাবল কারে আকাশে চড়া সবাই খুব উপভোগ করলাম। গ্যাস বেলুনের মতো ক্যাবল কার থেকেও পুরো শহর আর বন্দর দেখা যায়। সেন্তোসা আইল্যান্ডের মূল আকর্ষণ ইউনিভার্সেল স্টুডিও। অসাধারণ এই থিমপার্কের প্রবেশমূল্য ৭৪ ডলার। প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। তবে ঢুকলে রাইড ফ্রি।
সেন্তোসার আরেক আকর্ষণ লক্ষাধিক প্রজাতির সামুদ্রিক মাছের এক একটি বিশালাকার স্বচ্ছ জলাধার সি অ্যাকুরিয়াম। ৮০ মিটার দীর্ঘ অ্যাক্রিলিক টানেলের ভেতর দিয়ে ২৫০ প্রজাতির প্রায় তিন হাজার সামুদ্রিক প্রাণীর সাঁতার কেটে ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য উপভোগ করলাম।
সিঙ্গাপুরে ইন্ডিয়ানদের অবস্থান ভালো। বিশেষ করে তামিলদের। রোববার সিঙ্গাপুরের সাপ্তাহিক বন্ধের দিন এখানে কর্মরত বাংলাদেশীরা জড়ো হয় মোস্তফা সেন্টার ও লিটল ইন্ডিয়াতে। সিঙ্গাপুরে পৃথিবী খ্যাত শপিংমল আছে। তবে কম খরচ ও সাধ্যের মধ্যে কেনাকাটার জন্য লিটল ইন্ডিয়া ও মোস্তফা সেন্টারের মার্কেটগুলো জনপ্রিয়। মুস্তাফা সেন্টার পুরোপুরি ঘুরে দেখতে সারা দিন লেগে যাবে। হেন জিনিস নেই যা এখানে পাওয়া যায় না। দামও তুলনামূলক নাগালের মধ্যে। এসব দৃশ্য দেখে শুধু আফসোস! কবে আমরা সিঙ্গাপুরের সমমনা হবো, অথচ সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশের জন্ম সমসাময়িক।

 


আরো সংবাদ



premium cement
৪৬তম বিএসএস প্রিলি পরীক্ষা : শুরুতেই স্বপ্ন ভঙ্গ ৮১ শিক্ষার্থীর মরুর উষ্ণতায় ক্ষতির মুখে কৃষি ছেলেদের কারণে বিপাকে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির দুই বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে ফ্রান্স, ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে সফরে যাচ্ছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ড সফরকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক বললেন প্রধানমন্ত্রী লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী যুবক নিহত এখনো শেষ হয়নি বিতর্কিত আউটের রেশ, ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ মুশফিকের ‘ফ্রি ভিসার গল্প’ আর শূন্য হাতে ফেরা লাখো শ্রমিক নোয়াখালীতে প্রবাসীর স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়ে চাঁদা আদায় দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না : কাদের

সকল