নতুন মিশনে তুরস্ক
- ডেইলি সাবাহ
- ০৭ আগস্ট ২০১৮, ০৬:৪৩
বিভিন্ন আঞ্চলিক সমস্যা ও সঙ্কট নিরসনে একটি অলিখিত জোটের আদলে যৌথভাবে উদ্যোগ নিচ্ছে তুরস্ক, রাশিয়া, জার্মানি ও ফ্রান্স। বিশেষ করে সিরিয়া ও ইরাক সমস্যার সমাধানে সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী এই চারটি দেশ উদ্যোগ নিচ্ছে। পাশাপাশি এই অঞ্চলের আঞ্চলিক সঙ্কটের সাথে কার্যত সংশ্লিষ্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানকে এই উদ্যোগের বাইরে রাখা হয়েছে।
এই চারটি দেশের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, আঞ্চলিক বিষয়গুলোতে নিজেদের মধ্যে মতের অমিল থেকে মতৈক্য বেশি রয়েছে। সিরিয়া ও পাশের বিস্তৃত অঞ্চলে সঙ্কট নিরসনের লক্ষ্যে তুরস্ক, রাশিয়া, ফ্রান্স ও জার্মানির সিনিয়র প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর ইস্তাম্বুলে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সঙ্কট নিরসনে এই চারটি দেশ নিজেদের অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি কাজে লাগিয়ে কিভাবে কাজ করতে পারে সেটাই এই সম্মেলনে আলোচনা করা হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের যৌথ উদ্যোগ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ এবং এই ঘটনার মাধ্যমে নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও প্রতিরক্ষা ইস্যুতে নতুন জোট গঠনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ইবনে খালদুন ইউনিভার্সিটির একজন বিশেষজ্ঞ তালহা কোস বলেন, ‘এই সম্মেলনটি হবে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। সঙ্কট নিরসনের স্থায়ী সমাধান ও পদক্ষেপ নিয়ে এখানে আলোচনা করা হবে।’
গত ২৮ জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ব্রিকস সম্মেলনে অংশগ্রহণের সময় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান প্রথম এই সম্মেলনের কথা ঘোষণা করেন। ওই সময় এরদোগান বলেন যে, ইরাকসহ আরো অনেক সঙ্কটের সমাধানের ব্যাপারে এই চারটি দেশ একসাথে কাজ করবে।
আঙ্কারার সেন্টার ফর ইরানিয়ান স্টাডিজের উপ-প্রধান হাক্কি উইগুর বলেন, ‘অর্থনৈতিক ও সামরিকভাবে শক্তিশালী এই চারটি দেশ বৈঠকে বসার মাধ্যমে বিশ্বকে এই বার্তা দেয়া হবে যে, আঞ্চলিক শক্তিগুলো বিভিন্ন সঙ্কট সমাধানের ব্যাপারে সক্রিয় রয়েছে।’ এই চারটি শক্তিশালী রাষ্ট্র এবারই প্রথম এই ধরনের বৈঠক করছে বলেও জানান তিনি।
অন্য দিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বৈঠক আয়োজন করায় এই বিষয়ের প্রতি অনেকের মনোযোগ আকর্ষণ হয়েছে। কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা অবশ্য মার্কিন প্রশাসনের সাথে বিভিন্ন ইস্যুতে এই চারটি দেশের সাম্প্রতিক দ্বন্দ্বের কথা বলেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জার্মানি ও ফ্রান্স বেশ কিছুদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে যে, তাদের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসন সাম্প্রতিক সময়ে অনেক খামখেয়ালিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তুরস্ক ও রাশিয়াও যুক্তরাষ্ট্রের বিতর্কিত সিদ্ধান্তগুলোকে স্বাগত জানায়নি।
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন দেশের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং শত্রু বা মিত্র সবার সাথে হুমকির সুরে কথা বলার দিকে ইঙ্গিত করে সাকারিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বিশেষজ্ঞ কামাল ইনাত বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি ও সমস্যা মোকাবেলা করে কিভাবে আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করা যায়, ইস্তাম্বুল সম্মেলনে সেই বিষয়েও আলোচনা করা হবে। তিনি বলেন, ‘যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খামখেয়ালিপূর্ণ কাজের মাধ্যমে জার্মানি ও ফ্রান্সকে বিরক্ত করছে, তারপরও নেতৃত্বের ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের বিকল্প হিসেবে তারা কী চিন্তা করছে এটা অনুমান করা কঠিন।’ ইনাত অবশ্য জোর দিয়ে বলেন, প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ট্রাম্প বিদায় না নেয়া পর্যন্ত জার্মানি ও ফ্রান্স ধৈর্য ধরতে আগ্রহী। তারপরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও দেশ দু’টির বৈঠকে অংশগ্রহণ করার বিষয়ে বোঝা যায় যে, তারা ওয়াশিংটনের প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করতে আগ্রহী। কোস বলেন, চার দেশের এই বৈঠকে অংশ নেয়ার ব্যাপারে এর আগে তুরস্কের কিছু সমস্যা থাকলেও সম্পর্ক এখন স্বাভাবিক হচ্ছে। বিভিন্ন ইস্যুতে ইউরোপীয় দেশগুলো সরাসরি তুরস্কের সাথে কাজ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা