২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সিসিক নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ৪৩ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি

সিসিক নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ৪৩ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি - ছবি : সংগৃহীত

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ৪৩ নেতা-কর্মীকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে বিএনপি। তাদের মধ্যে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মো: ছালাহ উদ্দিন রিমনও রয়েছেন। বাকিদের মধ্যে ৩৮ জন পুরুষ কাউন্সিলর ও চারজন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন।

সোমবার (৫ জুন) রাতে কেন্দ্র থেকে সিলেট মহানগর বিএনপির কাছে বহিষ্কারের আদেশ আসে।

এ তথ্য নিশ্চিত করে মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, সিলেট সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া ৪৩ জনকে বিএনপি থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, দলের সিদ্ধান্ত না মেনে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় ৪১ নেতা-কর্মীকে প্রথমে দল শোকজ করেছে। কিন্তু তারা শোকজের কোনো জবাব দেননি। এরপর কেন্দ্রে আরো দু’জনের নাম পাঠানো হয়। সব মিলিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়া সিলেটের ৪৩ নেতাকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে।

সোমবার বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা বহিষ্কারাদেশে বলা হয়েছে, ‘সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আপনি প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করার কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব সন্তোষজনক নয়। আপনার নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত গত ১৫ বছর ধরে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে করা গুম, খুন ও নিপীড়নের শিকার হয়েছে এমন পরিবারসহ গণতন্ত্রকামী জনগোষ্ঠীর আকাঙ্ক্ষার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা। দলীয় গঠনতন্ত্রের বিধান অনুযায়ী প্রাথমিক সদস্যপদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হলো। এবং গণতন্ত্র উদ্ধারের ইতিহাসে আপনার নাম একজন বেইমান, বিশ্বাসঘাতক ও মীরজাফর হিসেবে উচ্চারিত হবে।’

আজীবন বহিষ্কৃতদের মধ্যে রয়েছেন মেয়র প্রার্থী ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য ছালাউদ্দিন রিমন।

সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে যারা বহিস্কৃত হয়েছেন- সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ তৌফিকুল হাদি (১ নম্বর ওয়ার্ড), মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ফরহাদ চৌধুরী শামীম (৬ নম্বর ওয়ার্ড), ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য নজরুল ইসলাম মুনিম (১৪ নম্বর ওয়ার্ড), ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য এবিএম জিল্লুর রহমান উজ্জল (১৮ নম্বর ওয়ার্ড), ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুর রকিব তুহিন (২১ নম্বর ওয়ার্ড), মহানগর মহিলা দলের সভাপতি অ্যাডভোকেট রুকশানা বেগম শাহনাজ (২৫ নম্বর ওয়ার্ড), জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক উসমান হারুন পনির, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা গোলাম মোস্তফা কামাল, গউছ উদ্দিন পাখি, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলওয়ার হোসেন নাদিম, ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য মুফতি কমর উদ্দিন কামু (১ নম্বর ওয়ার্ড), ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান মিঠু (৩ নম্বর ওয়ার্ড), ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক আহবায়ক মো: কামাল মিয়া (৫ নম্বর ওয়ার্ড), ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য খালেদ আকবর চৌধুরী (৫ নম্বর ওয়ার্ড), আমিনুর রহমান খোকন (৫ নম্বর ওয়ার্ড), শাহেদ সিরাজ (৫ নম্বর ওয়ার্ড), ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো: সাইদুর রহমান জুবের (১০ নম্বর ওয়ার্ড), ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য আব্দুর রহিম মতছির (১১ নম্বর ওয়ার্ড), ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য মুজিবুর রহমান (১৫ নম্বর ওয়ার্ড), জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক সালমান চৌধুরী শাম্মী, ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি মামুনুর রহমান মামুন (২৩ নম্বর ওয়ার্ড), এমসি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি বদরুল আজাদ রানা (২২ নম্বর ওয়ার্ড), ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য হুমায়ুন কবির সুহিন (২৪ নম্বর ওয়ার্ড), ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি সেলিম আহমদ রনি (২৬ নম্বর ওয়ার্ড), জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী আব্বাস, বরইকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির সহসাধারণ সম্পাদক জাবেদ আমিন সেলিম, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক রাজু মিয়া, বরইকান্দি ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি সানর মিয়া, টুলটিকর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো: আব্দুল মুকিত, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট হেদায়েত হোসেন তানবীর, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য দুলাল আহমদ, জেলা বিএনপি নেতা দেলওয়ার হোসেন জয়, মহানগর ছাত্রদলের সহসভাপতি আব্দুল হাছিব, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপির সহক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সম্পাদক সুমন আহমদ সিকদার, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপি নেতা সাহেদ খান স্বপন, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপি নেতা ইউনুস মিয়া বরইকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক নেতা নুরুল ইসলাম মাসুম।

এছাড়াও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে বহিষ্কৃত হয়েছেন- জেলা মহিলা দলের সভাপতি সালেহা কবির শেপী, মহানগর মহিলা দলের সহসভাপতি রুহেনা বেগম মুক্তা, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সিলেট ইউনিটের সদস্য অ্যাডভোকেট জহুরা জেসমিন, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি কামরুন নাহার তান্নি (সংরক্ষিত ওয়ার্ড ৬)।

এর আগে গত শনিবার (৩ জুন) বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী পৃথকভাবে এসব শোকজ নোটিশ ইস্যু করেছেন। শোকজ নোটিশে বলা হয়, ‘১৫ বছর ধরে অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপিসহ জনগণ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে খালেদা জিয়া দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর ধরে কারাভোগ করছেন। বিএনপি এই অবৈধ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অথচ দলের সদস্য হয়ে ব্যক্তিস্বার্থ চিন্তা করে দলীয় বড় সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করেছেন। সুতরাং কেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে না, তার কারণ দেখিয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লিখিত জবাব দলের কেন্দ্রীয় দফতরে জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হলো।’

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, বিএনপি বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাচ্ছে না। কিন্তু সিলেটে যারা দলের সিদ্ধান্ত আমান্য করে প্রার্থী হয়েছিলেন তাদের বিএনপি আজীবন বহিষ্কার করেছে।

২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত চারবার নির্বাচন হয়েছে। ২০০৩ সালে প্রথম নির্বাচনে বিজয়ী হন বদর উদ্দিন কামরান; ২০০৮ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনেও তিনি মেয়র নির্বাচিত হন কারাগার থেকে। ২০১৩ সাল থেকে মেয়র পদে আছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। তবে এবার তিনি দলের সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচনে প্রার্থী হননি।

উল্লেখ্য, আগামী ২১ জুন পঞ্চমবারের মতো সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে।


আরো সংবাদ



premium cement