২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পশ্চিমবঙ্গে নতুন নিয়োগ দুর্নীতি, আবারো সমস্যায় মমতা ব্যানার্জির দল

পশ্চিমবঙ্গে নতুন নিয়োগ দুর্নীতি, আবারো সমস্যায় মমতা ব্যানার্জির দল। - ছবি : সংগৃহীত

পশ্চিমবঙ্গে যখন স্কুলশিক্ষক দুর্নীতি নিয়ে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস এমনিতেই অস্বস্তিতে, তার মধ্যেই নতুন এক দুর্নীতির কথা জানতে পেরেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। নতুনভাবে সামনে আসা এই দুর্নীতি হয়েছে রাজ্যের বেশ কয়েকটি পৌরসভায় অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ করে, এমনটাই অভিযোগ।

নতুন এই দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তৃণমূল কংগ্রেস ও দলটির নেত্রী মমতা ব্যানার্জির অস্বস্তি বেড়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

তৃণমূল কংগ্রেস দল বলছে, তারা কোনো ধরনের দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবে না। কিন্তু একই সাথে তারা অভিযোগ তুলেছে যে বিগত বামফ্রন্টের আমলেও দুর্নীতি করে অনেক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ হয়েছে, তারও তদন্ত হোক।

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হয়ে ইডির হেফাজতে আছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চ্যাটার্জিসহ মোট ছয়জন।

ইডি জানিয়েছেন, নগদ ও যত স্থাবর সম্পত্তি উদ্ধার হয়েছে এখন পর্যন্ত, তার মূল্য প্রায় ১১১ কোটি টাকা।

ওই দুর্নীতির তদন্ত চালাতে গিয়েই নতুন এক দুর্নীতি- পৌরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির খোঁজ পেয়েছে তারা।

পৌরসভায় নিয়োগ দুর্নীতি কিভাবে জানা গেল?
কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রনালয়ের তদন্ত শাখা ইডি জানিয়েছে, তারা স্কুলশিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির একটি সূত্র ধরে অয়ন শিল নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে কিছু নথি উদ্ধার করেছে। যার মাধ্যমে রাজ্যের বেশ কিছু পৌরসভায় অর্থের বিনিময়ে চাকরি দেয়া হয়েছে বলে তারা মনে করছে।

তদন্তকারী সংস্থা বলছে, শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ দুর্নীতির একটি মামলায় তারা অয়ন শিল নামে এক দালালকে গ্রেফতার করেছে। তারা আগে গেফতার হওয়া শান্তনু ব্যানার্জি এবং অয়ন শিলের বাড়ি, অফিসসহ নয়টি জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছে।

ইডি জানিয়েছে, ওই তল্লাশি চালাতে গিয়ে তারা এমন গুরুত্বপূর্ণ নথি পেয়েছে, যা থেকে বিভিন্ন পৌরসভায় যে বেআইনি নিয়োগ হয়েছে, তার তথ্য পাওয়া গেছে।

গ্রেফতার হওয়া তৃণমূল কংগ্রেস নেতা শান্তনু ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠ অয়ন শীল। তার একটি নিয়োগ পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা সংস্থা আছে। দক্ষিণ বঙ্গের ছয়টি পৌরসভায় বিভিন্ন স্তরে নিয়োগের জন্য ওই সংস্থাটিকে দায়িত্ব দেয়া হয় বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছে। সেই চাকরিগুলোই অর্থের বিনিময়ে, পরীক্ষার খাতা জালিয়াতি করে, কখনো আবার রাজনৈতিক চাপ দিয়ে বিক্রি করতেন অয়ন শিল, এমনটাই জানা যাচ্ছে।

বেআইনিভাবে নিযুক্তদের সংখ্যা কয়েক হাজার হতে পারে বলে তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান।

নতুন নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে কী বলছে তৃণমূল কংগ্রেস?
তৃণমূল কংগ্রেস দাবি করছে যে তারা দুর্নীতির সাথে কেনো দিন আপস করেনি এবং দলের মহাসচিব ও মন্ত্রীসভায় দ্বিতীয় সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও পার্থ চ্যাটার্জিকে দল আর মন্ত্রীসভা থেকে সরিয়ে দিয়েছে।

তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র ও কলকাতা পৌর সংস্থার নির্বাচিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তি বলেন, এখন নতুন করে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে, তাকে কোথাও এনডর্স করতে যায়নি তৃণমূল কংগ্রেস।

তার কথায়, ‘দুর্নীতি যে সময়েই হোক সেটা দুর্নীতিই। ২০১১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত যদি দুর্নীতি হয়ে থাকে, তাহলে ১৯৯০ থেকে ২০১০/১১- এই সময়ের দুর্নীতির কেন তদন্ত করছে না ইডি? আমরা তো জানতে পারছি এই চাকরি বিক্রির ঘটনায় অয়ন শিলকে কিভাবে সিপিএম হুগলি জেলায় শিক্ষা সংক্রান্ত কাজে ব্যবহার করেছিল। তার বাড়ি থেকে তো ২০০৯ সালের চাকরি পরীক্ষার খাতা উদ্ধার হয়েছে।’

তিনি আরো অভিযোগ করছেন, ১৯৯৭ সালের আগে যত চাকরি হয়েছে, সব সিপিআইএমের সর্বক্ষণের কর্মী বা তাদের পরিবারের সদস্যদের হয়েছে। ভারতের প্রধান হিসাবপরীক্ষক কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের রিপোর্টেও তার উল্লেখ আছে।

ঘটনাচক্রের বামফ্রন্ট আমলে যে দুর্নীতি করে চাকরি হয়েছে, সেই অভিযোগ এত দিন পরে কেন তোলা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা।

তারা বলছেন, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি ও সর্বশেষ পৌরসভায় নিয়োগ দুর্নীতি সামনে আসার পরে এখন ক্ষমতাসীন দল জানতে পারল যে আগের আমলে দুর্নীতি হয়েছে?

সিপিআইএম পলিটব্যুরো সদস্য সুজন চক্রবর্তির স্ত্রীও বেআইনি পথে একটা কলেজে চাকরি পেয়েছিলেন বলে পাল্টা অভিযোগ করছে তৃনমূল কংগ্রেস।

সুজন চক্রবর্তী বলছেন, ‘সরকারের কাছে তো সব তথ্য আছে যে কে কবে চাকরি পেয়েছে, তাদের যোগ্যতা কী ছিল। সেই সব তালিকা করে একটা শ্বেতপত্র প্রকাশ করুক না সরকার।’

বাম নেতারা বলছেন, একের পর এক দুর্নীতিতে দলের নেতারা জড়িয়ে যাওয়ায় যেভাবে অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসকে, সেদিক থেকে দৃষ্টি ঘোরাতেই এ ধরণের পুরনো অভিযোগ তোলা হচ্ছে।

‘সততার প্রতীক’ মমতা ব্যানার্জির ভাবমূর্তিতে কালির দাগ?
তৃণমূল কংগ্রেস দীর্ঘদিন ধরেই মমতা ব্যানার্জির নামের আগে ‘সততার প্রতীক’ কথাটি লিখত প্রচারের সময়ে।

নিম্ন মধ্যবিত্ত এলাকায় টিনের চালের বাড়িতে তার অতি সাধারণ জীবনযাপন, সাধারণ শাড়ি-হাওয়াই চপ্পল পড়ে ঘোরা- এসবই তার সৎ ভাবমূর্তি তৈরি করেছিল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক আশিস ঘোষ বলছিলেন, মমতা ব্যানার্জির যে ভাবমূর্তি ছিল, সেটা এখন প্রশ্নের মুখে। একই সাথে তার ভাইপো অভিষেক ব্যানার্জির ভূমিকাও। তাই আজকাল কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের কোনো প্রচারে আর ‘সততার প্রতীক’ কথাটা লেখা হয় না।

মমতা ব্যানার্জি সবসময়ে সাদা শাড়ি পরেন, সেই শাড়িতে কি প্রতীকী ভাবে হলেও তাহলে কালির ছিটে লাগছে?

তৃণমূল কংগ্রেস মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তি অবশ্য বলছেন, ‘একদমই নয়।’

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
‘ফ্রি ভিসার গল্প’ আর শূন্য হাতে ফেরা লাখো শ্রমিক নোয়াখালীতে প্রবাসীর স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়ে চাঁদা আদায় দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না : কাদের আশুলিয়ায় বাঁশবাগান থেকে নারী পোশাক শ্রমিকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার মিয়ানমারের কর্মকর্তারা ফেরত গেলেন, কিন্তু রোহিঙ্গা সঙ্কট কি আরো জটিল হচ্ছে দিনাজপুরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষ, চালক-হেলপার নিহত মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ সখীপুরে বৃষ্টির জন্য অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা দক্ষিণ ভারতে কেন কাজ করেনি বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের নতুন আংশিক কমিটি বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসায় বিনিয়োগ সম্ভাবনা অন্বেষণে থাইল্যান্ডের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

সকল