সমঝোতা থেকে সরে আসছে ভারত, সরাবে না সৈন্য
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৭:১৬
সীমান্ত উত্তেজনা হ্রাস, সৈন্য প্রত্যাহারসহ ৫ দফায় চীনের সাথে সমঝোতা হওয়ার এক দিন পরই ভারত তা থেকে সরে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। ফলে লাদাখ সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমনের উদ্যোগটি ভণ্ডুল হয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কলকাতাভিত্তিক আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, চীনের সঙ্গে সীমান্ত বিতর্ক নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে মস্কোয় কূটনৈতিক স্তরে কথা শুরুর পরের দিনই লাদাখ সীমান্তের বাস্তব চিত্রটি বুঝতে শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে করেছেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। দু’দেশ পাঁচটি বিষয়ে একমত হলেও অতীতের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে লাদাখে কোনো ভাবেই সেনা প্রস্তুতিতে ঢিল দেওয়ার পক্ষপাতী নয় নরেন্দ্র মোদি সরকার। সূত্রের মতে, চীনের পক্ষ থেকে আস্থাবর্ধক পদক্ষেপ না করা পর্যন্ত ভারত নিজের অবস্থান থেকে এক পা-ও পিছিয়ে আসবে না।
খবরে বলা হয়, শুক্রবার দুপুরে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়ত, সেনাপ্রধান জেনারেল এমএম নরবণে, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আর কে এস ভাদৌরিয়া, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল কর্মবীর সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসেন রাজনাথ। প্রতিরক্ষা সূত্রে বলা হয়েছে, সম্প্রতি প্যাংগং লেকের দক্ষিণে ভারতীয় চৌকি দখলের চেষ্টায় চীনা সেনা যে গুলি চালিয়েছে, তার প্রেক্ষিতেই আজকের বৈঠকটি হয়। এই মুহূর্তে লাদাখের পরিস্থিতি ঠিক কী অবস্থায় রয়েছে, দু’দেশের সেনা কোথায়, কী অবস্থানে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রয়েছে, তা নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন সেনাপ্রধান। ভারতীয় সেনা কতটা প্রস্তুত রয়েছে তা যেমন শুক্রবার আলোচনা হয়েছে বৈঠকে, তেমনই চীন যদি অনমনীয় মনোভাব আগামী দিনেও চালিয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে আসন্ন শীতে কী ভাবে সীমান্তের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সম্ভব, তা নিয়েও প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে জানান নরবণে। সূত্রের মতে, রাজনাথকে জানানো হয়, প্রয়োজনে সিয়াচিনের মতো এখানেও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা জুড়ে সেনা সমাবেশ করে রাখার প্রস্তুতি শুরু করে দেয়া হয়েছে।
সূত্রের মতে, ধাপে ধাপে সেনা প্রত্যাহার করে সীমান্তে উত্তেজনা কমানোর প্রশ্নে বৃহস্পতিবার একমত হয়েছে দু’দেশ। কিন্তু শুক্রবার রাজনাথদের বৈঠকের মূল নির্যাস হলো, চীনের পক্ষ থেকে যত দিন না কোনো ভরসাযোগ্য আস্থাবর্ধক পদক্ষেপ করা হবে, তত দিন ভারতও সীমান্ত থেকে সেনা সরাবে না। সেনা সূত্রের মতে, চীনকে কোনো ভাবেই ভরসা করা যায় না। কারণ বিশ্বাস করেই প্যাংগং লেকের কাছে পাঁচ থেকে আট নম্বর গিরিশিখর খুইয়েছে ভারত। এই পরিস্থিতিতে লাদাখে সীমান্ত সংলগ্ন যে কৌশলগত সুবিধাজনক অবস্থানগুলিতে ভারতীয় সেনা এখন রয়েছে, তা ছিনিয়ে নেয়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছে চীন। সে কারণেই গত সপ্তাহে একটি চৌকি দখলে আক্রমণ শানাতে এসেছিল চীনা সেনা। ভারতীয় সেনা সতর্ক থাকায় প্রতিপক্ষ ফিরে যেতে বাধ্য হয়। তবে সীমান্তে দু’দেশের কম্যান্ডার পর্যায়ে যে বৈঠক বন্ধ রয়েছে, উত্তেজনা কমাতে তা ফের শুরু করার প্রশ্নে বিদেশ মন্ত্রণালয়র সিদ্ধান্তে সায় দিয়েছেন রাজনাথসহ প্রতিরক্ষা কর্তারা।
শুক্রবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও লাদাখ এবং চীনের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের বিষয়বস্তু সীমান্ত এলাকায় মোতায়েন সেনার রেশন সুষ্ঠুভাবে পৌঁছনো নিয়ে হলেও, সাম্প্রতিক চীন-ভারত সেনা সংঘাত নিয়ে জানতে চান এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ার। সূত্রের মতে, তিনি বৈঠকে বলেন, লাদাখের প্রকৃত চিত্রটি অনেকটাই ধোঁয়াঢাকা। সংসদীয় বৈঠকে উপস্থিত চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়তের কাছে তাই লাদাখের ছবিটি স্পষ্ট করার অনুরোধ করেন পাওয়ার। সূত্রের মতে, প্রতিরক্ষাকর্তারা জানান, পওয়ারের অনুরোধ তারা লিপিবিদ্ধ করেছেন। আগামী দিনে কমিটির সদস্যদের এ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানাবেন সেনাকর্তারা।
শুক্রবারের ওই সংসদীয় বৈঠকে তাৎপর্যপূর্ণ উপস্থিতি ছিল রাহুল গান্ধীর। লাদাখ প্রশ্নে একেবারে গোড়া থেকেই সরকারের নীতি, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে ক্রমাগত আক্রমণ শানিয়ে গিয়েছেন রাহুল। শুক্রবারও লাদাখ প্রশ্নে রাহুল টুইট করে বলেন, ‘‘লাদাখে এ বছরের মার্চ মাসের অবস্থানকে কেন্দ্র করে ভারত ও চীনের মধ্যে স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনার আলোচনা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ও ভারত সরকার আমাদের জমি থেকে চীনকে সরানোর দায়িত্ব নিতে নারাজ। চীন আমাদের যে জমি কেড়ে নিয়েছে, তা পুনর্দখলের পরিকল্পনা কবে হবে? না কি এটিও দৈবের হাতে ছেড়ে দেয়া হবে?’’
রাহুলের লাগাতার আক্রমণের জবাবে বিজেপি নেতাদের পাল্টা অভিযোগ ছিল, রাহুল দেশের প্রতিরক্ষা নিয়ে চিন্তিত হলেও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির পরপর এগারোটি বৈঠকে তিনি অনুপস্থিত থেকেছেন। শনিবার বৈঠকে উপস্থিত রাহুল চীন বা লাদাখ প্রশ্নে নীরব থাকলেও বৈঠকের বিষয়বস্তুর ভিত্তিতে তিনি সরকারের কাছে জানতে চান, একই সীমান্ত এলাকায় মোতায়েন জওয়ান ও অফিসারদের মধ্যে খাবারের গুণগত মানের পার্থক্য কেন করা হয়। বৈঠকে উপস্থিত সেনা কর্তারা অবশ্য ওই অভিযোগ খারিজ করে জানিয়েছেন, জওয়ানেরা মূলত গ্রামীণ এলাকা থেকে আসেন। গ্রামীণ খাদ্যাভ্যাসের কথা মাথায় রেখেই তাদের খাবার দেয়া হয়।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা