২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গালওয়ানের বদলা নিতেই কি চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করল ভারত?

ভারত টিকটক অ্যাপ নিষিদ্ধ করার পর দিন দিল্লির রাস্তায় বিক্রি হচ্ছে টিকটক লেখা টি শার্ট - ছবি : সংগৃহীত

ভারত সরকার সোমবার রাতে আচমকা টিকটক-সহ প্রায় ৬০টির মতো চীনা অ্যাপকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর এই সিদ্ধান্তের 'টাইমিং' ও যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস মনে করছে, প্রকাশ্যে ডেটা সিকিওরিটি লঙ্ঘনের কথা বলা হলেও সীমান্তে চীনের দখলদারির মোকাবিলা করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে - কিন্তু সেটা সরকার মুখে স্বীকার করতে পারছে না।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরাও অনেকেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, চীনা সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ভারত যে অভিযোগ তুলেছে একই ধরনের অভিযোগ ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ বা গুগলের মতো বহু মার্কিন সংস্থার বিরুদ্ধেও আছে।

ইতোমধ্যে বেজিংয়ে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও মঙ্গলবার জানিয়েছে, ভারতের এই সিদ্ধান্তে তারা বিচলিত এবং তারা পরিস্থিতির সব দিক ভালভাবে খতিয়ে দেখছে।

সোমবার রাতে ভারতে প্রেস ইনফর্মেশন ব্যুরোর এক টুইটে মোট ৫৯টি চীনা অ্যাপ এ দেশে নিষিদ্ধ করার কথা জানানোর পর থেকেই তা নিয়ে দেশ জুড়ে চলছে তুমুল হইচই।

হেলো, শেয়ারইট, উইচ্যাটের মতো অজস্র জনপ্রিয় অ্যাপ সেই তালিকায় আছে - তবে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ টিকটক নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েই।

ভারতে টিকটকের অন্তত ১২ কোটি গ্রাহক আছেন বলে মনে করা হয়, এবং বলিউড তারকা থেকে শুরু করে অজপাড়া গ্রামের তরুণ-তরুণীরাও এই অ্যাপটি ব্যবহার করে থাকেন।

শাসক দল বিজেপি বলছে, এই অ্যাপগুলো বন্ধ করার দাবি ছিল দীর্ঘদিন ধরেই।

বিজেপির জাতীয় কার্যসমিতির সদস্য ও থিঙ্কট্যাঙ্ক ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর ললিতা কুমারমঙ্গলমের কথায়, "আমি নিজেই বহুদিন ধরে টিকটক নিষিদ্ধ করার কথা বলে আসছি - এবং এই পদক্ষেপ আরও অনেক আগেই নেওয়া যেত।"

"সারা দুনিয়ার মতো ভারতেও ডেটা প্রিভেসি বা ডেটা সিকিওরিটির লঙ্ঘন একটা বিরাট ইস্যু, তা ছাড়া টিকটকের কন্টেন্টও অনেক ক্ষেত্রেই খুব কদর্য ও অশ্লীল বলে আমার ধারণা।"

"আমাদের দেশের নবীন প্রজন্মেরও বিরাট ক্ষতি করে দিয়েছে এই সব অ্যাপ", বলছেন কুমারমঙ্গলম।

তবে শুধু নৈতিকতা বা তথ্য নিরাপত্তা এর পেছনে আসল কারণ নয় বলে অনেকেরই ধারণা, কারণ সে ক্ষেত্রে অনেক আগেই অনায়াসে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত।

বরং লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় চীনা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার ঠিক দুসপ্তাহের মাথায় যেভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, তাতে দুটোর মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক আছে বলে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসও মনে করছে।

কংগ্রেসের জাতীয় মুখপাত্র ও সাবেক চিত্রতারকা খুশবু সুন্দর বলেন, "যখন এই পদক্ষেপটা নেওয়া হল সেই টাইমিংটা একেবারেই অবাঞ্ছিত বলে মনে করি - কারণ এর মাধ্যমে গালওয়ানে নিহত সেনাদের আমরা ফিরিয়ে আনতে পারব না।"

"প্রধানমন্ত্রী যখন বলেই দিয়েছেন চীনারা আমাদের ভূখন্ডে ঢোকেনি, তারপর আর চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করে কী লাভ?"

"পুরোটাই আসলে লোক দেখানো ... প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে শুরু করে সব মন্ত্রণালয়ের টেবিলেই তো চীনা পণ্যের ছড়াছড়ি - তা সে সামান্য একটা পেনই হোক বা মোবাইল ফোন।"

"এটা খুবই ছেলেমানুষি যখন সরকার বলার চেষ্টা করছে চীনের অনুপ্রবেশের শাস্তি হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি - আসলে তারা নিজেদেরই মিথ্যে বলছে", মন্তব্য খুশবু সুন্দরের।

কিন্তু সরকার যেটা বলছে, টিকটক-সহ এই সব অ্যাপের কি সত্যিই ভারতের সার্বভৌমত্ব বা প্রতিরক্ষাকে বিপন্ন করার ক্ষমতা আছে?

টেক ও সাইবার প্রযুক্তির নামী বিশেষজ্ঞ সুমন বন্দ্যোপাধ্যায় জবাবে বলছেন, "একটা দিক হল সার্কুলেশন অব মিডিয়া - সরকারের মতে এই সব অ্যাপের মাধ্যমে এমন কনটেন্ট ছড়ানো সম্ভব যাতে দেশে অসন্তোষ বা সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়াতে পারে, দেশবিরোধী প্রোপাগান্ডা চালানো হতে পারে।

"দ্বিতীয় দিকটা হল, মোবাইলে এই প্রতিটা সফটওয়্যারের ফোনকে ব্যবহার করার বিশেষ কিছু পার্মিশন (অনুমতি) থাকে। এখন যদি কোনো দেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থাও এই অ্যাপগুলোর মাধ্যমে কোনো ইউজারকে অ্যাকসেস করতে পারে, তাহলে তারা তাকে নিশানা করতে পারে।"

"তবে এর পরেই যে প্রশ্নটা ওঠে তা হল আজকাল স্মার্টফোনের স্ট্যান্ডার্ড সিকিওরিটির যে অবস্থা তাতে শুধু চীনা কোম্পানিগুলোকে কেন ভয়, আমেরিকান কোম্পানিগুলোকে কেন নয়?"

"এডওয়ার্ড স্নোডেনের ফাঁস করা ফাইল থেকে আমরা তো জানিই যে আমেরিকাও এই ধরনের জেনারেলাইজড সার্ভেইল্যান্স বা নজরদারি নিজের দেশে তো করেই, বিদেশেও করে", বলছিলেন সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়।

ফলে যেখানে পাবলিক ডোমেইনেই প্রমাণ আছে যে মার্কিন প্রশাসনও তাদের দেশের কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে ঠিক একই কাজ করে থাকে, সে ক্ষেত্রে ভারতের আপত্তি কেন শুধু চীনা কোম্পানিগুলোকে নিয়ে - বিশেষজ্ঞরা এই প্রশ্নও তুলছেন।

পাশাপাশি গত কয়েক বছরে টিকটকের সুবাদে যারা ভারতে রাতারাতি তারকায় পরিণত হয়েছেন - তারা ভক্তদের জন্য মেসেজ ছেড়ে রাখছেন, "বন্ধু, এখন থেকে আমাদের দেখা হবে ইনস্টাগ্রামে!" বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
‘এখন আমি কী নিয়ে বাঁচব’ যদি বন্ধু হও, সীমান্তে অহরহ গুলি কেন : ভারতকে ফারুক সাহারা মরুভূমির গরমের মতো অনুভূত হচ্ছে : সরকারকে দায়ী করে রিজভী মধুখালীর পঞ্চপল্লীতে ২ ভাইকে হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ শ্রীলঙ্কাভিত্তিক এয়ারলাইন্স ফিটসএয়ারের ঢাকা-কলম্বো সরাসরি ফ্লাইট চালু রোহিঙ্গা ইস্যুতে একসাথে কাজ করবে ঢাকা-ব্যাংকক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইলি হামলায় আহত শিশুর মুখে ২০০ সেলাই বিষখালীতে মৎস্য বিভাগের অভিযান : জেলে নিখোঁজ, আহত ২ দক্ষিণ এশিয়ার যে শহরগুলোর তাপমাত্রা এখন সর্বোচ্চ গাজীপুরে দাঁড়িয়ে থাকা কাভার্ডভ্যানে অটোরিকশার ধাক্কায় হতাহত ৫ চৌগাছায় সিদ কেটে স্বর্ণের দোকানে চুরি

সকল