২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

খেলা উন্মোচন করল বন্ধুত্বের আসল চিত্র

খেলা উন্মোচন করল বন্ধুত্বের আসল চিত্র - নয়া দিগন্ত

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের আসল চিত্রটি একটি খেলা উদোম করে প্রকাশ করে দিল। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে বড় মার্জিনে পরাস্ত হওয়ায় বাংলাদেশীরা আনন্দ করেছে। ভারতের পরজয়কে উৎসব করে রসিয়ে উদযাপন করেছে। বাংলাদেশী দর্শকরা প্রতিবেশীর পরাজয়ে এতটা উৎফুল্ল হওয়ার ঘটনা এবার প্রথম নয়। সবসময় সাধারণভাবে এটা দেখা যায়। শুধু খেলার ক্ষেত্রে নয়, দেশটির কোনো একটি দুরবস্থা হলে এ দেশে তার এমনই প্রকাশ হয়। মানুষের বাহ্যিক আচরণ তার সঞ্চিত অভিজ্ঞতা থেকে আসে। কাকে সে ভালোবাসবে, পছন্দ করবে, সেটা তার অভিজ্ঞতা থেকে আসা একান্ত নিজের সিদ্ধান্ত। এটি কখনো জোর করে আদায় করা যায় না।

ভারতের পরাজয় বাংলাদেশের বৃহত্তর সমাজে আনন্দের এমন ঢেউ তুলেছে যে, তার প্রতিক্রিয়া ভারতে হয়েছে। সেখানকার রাজনৈতিক নেতাদের একটা অংশ আগে থেকে বাংলাদেশীদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য ও অপমান করে কথা বলে। এবার সেটা আরো তীব্র হয়েছে। হোটেলে রুম বরাদ্দ দেয়া, হাসপাতালে চিকিৎসা সুযোগ দেয়ার মতো বিষয়গুলোতে, সুবিধা বন্ধ করার আলোচনা তারা করছেন। ভারতের পরাজয়ে কেন প্রতিবেশীরা উল্লাস করছে, তার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা না করে এর প্রতিশোধ নেয়ার মনোভাব তারা প্রকাশ করছে। মাছরাঙা টেলিভিশনে বাংলাদেশীদের এই আচরণ নিয়ে সাক্ষাৎকারভিত্তিক একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে ক্রিকেটভক্তরা জানাচ্ছেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটের বিষয়ে তাচ্ছিল্য ও বঞ্চনা করা এবং বিশ্ব ক্রিকেটে আইন কানুন নিজেদের পক্ষে রাখার নগ্ন অপচেষ্টার পাশাপাশি খেলা নিয়ে ভারতের দাদাগিরি কেউ পছন্দ করে না। এছাড়াও ভারতের পরাজয়ে বাংলাদেশে উচ্ছ্বাস প্রকাশের ৯০ শতাংশ কারণ অক্রিকেটীয়।

অনেকে এর একটি দীর্ঘ ফিরিস্তি দেন। বড় প্রতিবেশী হয়ে ভারত বাংলাদেশের প্রতি শোষণ, বঞ্চনা ও শত্রুতার নীতি অনুসরণ করে। সীমান্ত নদীর পানি প্রত্যাহার, ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে মরুকরণ, একচেটিয়া ব্যবসায় বাণিজ্যের সুযোগ গ্রহণ, অব্যাহত মুসলমানবিরোধী প্রচারণা চালায়। এ দেশের রাজনীতিবিদ ও সাধারণ নাগরিককে অন্যায়ভাবে আটক করে জেলে দেয়ার ঘটনা ঘটায়। সবচেয়ে বড় কষ্টের কারণ হচ্ছে, তাদের পছন্দের সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে নগ্নভাবে হস্তক্ষেপ করে। সীমান্তে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশীদের হত্যা করা হয়। যেখানে এরা সবসময় অঙ্গীকার করে হত্যা বন্ধ করা হবে। অন্য সব প্রতিশ্রুতির মতো তারা এটিও ভঙ্গ করে। ফেলানীর মতো কিশোরীকে হত্যা করে কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখার মতো নিষ্ঠুরতা দেখায়। প্রমাণ পাওয়ার পরও বিচারে খুনির শাস্তি হয় না। সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যাকে এক ধরনের উৎসাহ দেয়া হয়। একটি জাতির ওপর এভাবে শত্রুতা করার পর সেই জাতি যখন এর কোনো প্রতিকার পায় না তারা সুযোগ পেলে একটা হাসিঠাট্টা মশকরা করে, তা উপভোগ করবেই। এটুকু অন্তত ভারতের সহ্য করতে হবে। না হয় তাদের আচরণের পরিবর্তন ঘটাতে হবে।

পাকিস্তান কিংবা আফগানিস্তানের সাথে বাংলাদেশের খেলা হলে ভারতীয়রা বাংলাদেশকে সমর্থন করে না। এমন একটা অবস্থায় ভারতীয় দলের জন্য বাংলাদেশের সমর্থন প্রত্যাশা করা একেবারে অযৌক্তিক। খেলা ছাড়া অন্যান্য সিরিয়াস বিষয়েও বাংলাদেশের নাগরিকদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ভারতের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ হলে কিংবা নেপালের সাথে সীমান্তে ভারতীয়রা অপদস্থ হলে তেমন দেখা যায়। মালদ্বীপ শ্রীলঙ্কায় ভারতপন্থীরা পরাজিত হলেও তা আমরা দেখি। এমনকি চীনের সাথে সীমান্তে যখন কয়েক ডজন ভারতীয় প্রাণ হারাল তখনো এই লক্ষণ দেখা গেছে। সামাজিকমাধ্যমে খুশির বন্যা বয়ে গেছে। প্রতিবেশী ভারতের প্রতি সহানুভূতিশীল না হয়ে দূরের আগ্রাসী চীনাদের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শনের কারণটি কী, ভারতকে উপলব্ধি করতে হবে।

প্রতিবেশীরা যখন একে অপরের প্রতি এ ধরনের শত্রুর মানসিকতা পোষণ করছে, দু’টি দেশের সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা তখন বাগাড়ম্বর দিয়ে সেটাকে অব্যাহত ঢেকে রাখে। ভারতের সরকারপ্রধান ও বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা এ দেশে এসেই একটা কথাই বলেন, বাংলাদেশ তাদের অকৃত্রিম বন্ধু। এর সাথে ভারী ভারী বিশেষণও যোগ করেন। এটিকে তারা প্রতিবেশী সম্পর্কে অনন্য নজির বলেন, বৈশ্বিক রোলমডেল বলেন। নরেন্দ্র মোদি গর্ব করে এ ধরনের প্রতিবেশী সম্পর্ক অন্য দেশগুলোকে অনুসরণ করার আহ্বানও জানান। বাংলাদেশের মন্ত্রীরা আরো আগবাড়িয়ে বলেন ‘রক্তের সম্পর্ক’, লজ্জাশরমের মাথা খেয়ে আবার বলেন উভয় দেশের সম্পর্ক ‘স্বামী স্ত্রীর’। এই শঠতাপূর্ণ আচরণ জনগণের কষ্টকে আরো বাড়িয়ে দেয়, যা সুযোগ পেলেই তারা প্রকাশ করে। যা খেলার পরাজয় উদযাপন করে প্রদর্শন করছে।

অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী বাংলাদেশীদের এই আচরণকে ‘ভারতবিদ্বেষ’ বলছেন। বাংলাদেশীদের বংশধারায় পাকিস্তানপ্রীতি বহমান বলে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। এ দেশে চঞ্চলের মতো একটা শ্রেণী রয়েছে যারা সংখ্যালঘু কোটাকে যারপর নাই ব্যবহার করছেন। এই কার্ডকে ব্যবহার করে তারা দেশ থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা আদায় করে নিচ্ছে। আবার সাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শ প্রদর্শন করে প্রতিবেশী দেশের গুডবুকে থাকার কসরত করছে। অথচ নব্য এই অভিজাত হিন্দুদের সাথে, সাধারণ হিন্দুদের কোনো সম্পর্ক নেই। সংখ্যালঘু হওয়ায় হিন্দুরা নিপীড়নে ও উচ্ছেদের শিকার হয়েছে। এই শ্রেণী বঞ্চনার শিকার হিন্দুদের সাহায্য সহযোগিতা করা কিংবা বিপদ থেকে উদ্ধার করতে কখনো এগিয়ে আসে না। কিন্তু তাদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খায়, ধর্মের পরিচয় ব্যবহার করে সবসময় অযাচিত সুবিধা বাগিয়ে নেয়।

jjshim146@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement

সকল