২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


বিত্তবান ও কামারের গল্প

লেখক জয়নুল আবেদীন। - ছবি : নয়া দিগন্ত

লক্ষ্মী আর সরস্বতীর মতো বিত্ত আর চিত্তের সহ-অবস্থান সচরাচর চোখে পড়ে না। লক্ষ্মী আর সরস্বতীর মতোই বিত্ত যখন দরজায় এসে দাঁড়ায় চিত্ত তখন জানালা দিয়ে পালায়। সমসাময়িককালে মালয়েশিয়া ও নেপাল না গেলে বিষয়টি টের পেতাম না। যত দেশে ঘুরেছি এর মধ্যে অধিকতর বিত্তহীন দেশ নেপাল। দেশটিতে বিত্তের অভাব থাকলেও চিত্তের অভাব নেই। পুরু দেশটিই যেন হোলি, রঙ, নৃত্য আর আনন্দের জোয়ারে ভাসছে। কাঠমান্ডু এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে অপেক্ষমাণ ট্যুরিস্ট গাড়িতে চড়তেই দেখি, ড্রাইভারের সামনে দুলছে গাঁদাফুলের মালা। গাড়ি শহর এবং আবাসিক এলাকায় প্রবেশ করতেই দেখি প্রত্যেক বাড়ি, দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনের দেয়ালে, ওপরে, দরজা ও জানালার সামনে অসংখ্য গাঁদা ফুলের মালা। হোটেলে প্রবেশ করতেই দেখি- হোটেল একই প্রকারের মালায় মালায় সজ্জিত হয়ে আছে। ঝুলানো মালা ছাড়াও পিতলের বৃহৎ পাত্র পানি ভর্তি করে পানির ওপরে রাখা হয়েছে নানা বর্ণের গাঁদা ফুল।

পরদিন পোখারা যাওয়ার পথে গাঁদা ফুলের বহুমাত্রিক ব্যবহার হিসেবে নারী-পুরুষ, ছেলেমেয়ে, শিশু-কিশোর ও যুবক-যুবতীদের গলায়, বগলে, মাথায়, কোমরে এমনকি হাতের লাঠিতেও পেঁচানো দেখেছি গাঁদা ফুলের মালা। যতদূর জানি গাঁদার আদি নিবাস মেক্সিকো ও আফ্রিকা। এর ইংরেজি নাম মেরিগোল্ড। কাঁচা হলুদের মতো উজ্জ্বল রঙ ও সৌরভের কারণে রূপচর্চায় দিন দিন এর কদর বাড়ছে। বাত, আমাশয় ও অর্শ রোগে, কাটা থেঁতলা থেকে রক্তপাত বন্ধ করতে গাঁদা ফুলের তুলনা নেই। পিষে, পুড়ে, চূর্ণ করে ওষুধি হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। রূপচর্চায় ব্যবহার হয় তাজা ফুল। এর উজ্জ্বলতার জন্য নাকি দেব-দেবীর নির্দেশে এত বেশি বেশি করে গাঁদা ফুলের ব্যবহার জানার আগ্রহ হয়। জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম, দিওয়ালী উৎসব চলছে। হিন্দু ধর্মে বারো মাসে তের পার্বণ ছাড়াও চাঁদের পূর্ণ তিথি, অর্ধতিথি ও অমাবস্যা, মহাপুরুষদের জন্ম-মৃত্যু সব মিলিয়ে তিথি মুক্ত সাধারণ দিন খুঁজে পাওয়া খুবই কষ্টকর। পাহাড় দেয় পরিশ্রম আর উৎসব দেয় স্বস্তি- তাদের এক হাতে কর্ম এবং অপর হতে স্ফূর্তি ফুরসত নেই মোটেও। তাদের যথার্থই বলা হয় Nepal is the only Hindu Kingdom in the World, Nepal is one of the few countries in the world that has many festivals. So Nepal is called 'Home of Gods and Land of Festivals.'

ধর্ম বিশ্বাস থেকেই তাদের সব উৎসবের উৎপত্তি। তাদের মতে, জ্ঞানার্জন, লেখাপড়া, শীত, গ্রীষ্ম, শক্তি, বৃষ্টি, মাটির উর্বরতা, রোগবালাই ও বিপদাপদ সবকিছুর জন্য পৃথক পৃথক দেব-দেবী রয়েছে। তারা তুষ্ট হলে মানুষের কল্যাণ আসে আর বিরূপ হলে বিপত্তি সৃষ্টি হয়। তাই ভিন্ন ভিন্ন দেব-দেবীকে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে খুশি করার জন্য একটার পর একটা আনন্দ উৎসব লেগেই থাকে। এর মধ্যে যোগ হয়েছে সংস্কৃতি বিষয়ক উৎসবও। বর্ষবরণ ও বর্ষ বিদায়করণ, উৎসবগুলোর কোনটা ধর্মীয় আর কোনটা সংস্কৃতি নির্ভর, পার্থক্য করা কঠিন।

২০০৫ সালের নভেম্বর ১ম সপ্তাহে আমরা যখন নেপালে- তখন নেপালিরা দিওয়ালী জোয়ারে ভাসছিল। শুধু গাঁদা ফুল নয়- ফুলের সাথে মিলিয়ে গায়ে মেখেছে রঙ এবং পরেছে রঙিন কাপড়। হলুদ ও লাল কাপড়ে ছেয়ে গেছে দেশটা। রঙিন বস্ত্রবিহীন মহিলা খুঁজে বের করা দুষ্কর। সর্বাঙ্গে গাঁদা ফুলের মালা পেঁচিয়ে রঙিন বস্ত্র পরে শুধু হাঁটাহাঁটি করে না, নাচানাচিও করে। রঙিন বেশে দলবেঁধে ফুলের ডালা হাতে বাড়ি বাড়ি যায়, দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে সামনে গিয়ে ঢোল-তবলা-খঞ্জনীর তালে তালে নাচতে থাকে। এক বছরের শিশু থেকে আশি বছরের বৃদ্ধা সবাই নাচে, যে যেভাবে পারে সে সেভাবেই নাচে। কারো কণ্ঠে থাকে গানের ছন্দ আর মুখে থাকে হাসির ঝিলিক। সব মিলিয়ে এ এক অপরূপ দৃশ্য।

আমাদের বাস কাঠমান্ডু ভ্যালীর উঁচু পাহাড়টা ছাড়তেই সামনে আসে একঝাঁক শিশু-কিশোর ও যুবক-যুবতী। ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে দিতে বাধ্য হয়। গাড়ির সামনে খেমটা নাচ শুরু করে। কিশোর ও যুবতী মেয়েরা টাইটফিট মোটা জিনসের প্যান্ট, ভারি সুতি গেঞ্জি পরে হাতের কনুই ওপরের দিকে বাঁকা করে নাচে। বাস থামিয়ে যখন নাচে তখন যাত্রীরা নিজেদের সামাল দিতে পারে না। সাথে সাথে হাততালি দিতে শুরু করে। সেসব দৃশ্য রক্তমাংসের চোখে দেখাদেখি না হলে জড়বস্তুর তৈরি কলম কালি দিয়ে লেখালেখি করে বিশ্বাস করানো যাবে না। ড্রাইভার সহাস্যে পকেট থেকে ১০ টাকার একটা নোট খেমটাদের একজনের হাতে দিতেই হুড়মুড় করে একপাশে সরে যায়। শুধু গাড়ির সামনে নয়, বাড়ি প্রতিষ্ঠানেও একই চিত্র। কিছু দূর যাওয়ার পর আরেক দল, আবার থামিয়ে দেয় গাড়ি। একইভাবে নাচানাচি দেখে ১০ টাকা গুনে গুনে ড্রাইভার মুক্তি লাভ করে। এক সময় ড্রাইভারের ভাংতি টাকা ফুরিয়ে যায়। আমার নিকট থেকে পঞ্চাশ টাকা ভাংতি নিয়ে আবার দিতে শুরু করে।

পোখারা বাজারে ফল কিনতে গিয়ে এক দোকানের সামনে যুবক-যুবতীদের নাচতে দেখে থমকে যাই। অপলক তাকিয়ে রই মায়া মায়া মুখের অবিন্যস্ত নাচের দিকে। ডিশ এন্টির কল্যাণে- বিশ্বের কোন দেশের নাচ দেখা বাকি নেই। লক্ষ কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মিত নাচও দেখেছি, মনে রাখতে পারিনি। এক দিকে দেখি আরেক দিকে ভুলে যাই। পাহাড়ের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মেদবিহীন নেপালি মেয়েদের অবিন্যস্ত নাচ মন ও চোখ থেকে কখনো হারিয়ে যাবে না। যে দিওয়ালী সারা নেপালকে দিওয়ানা করেছিল, সে দিওয়ালী সম্পর্কে জানার জন্য ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে উঠলাম। আমাদের গাইডসহ নানাজনের কাছে জিজ্ঞেস করে অপরিষ্কার উত্তর পাই। পরিচ্ছন্ন ধারণা না পেয়ে পত্রপত্রিকায় খোঁজ নিতে শুরু করি। সমসাময়িক সাপ্তাহিক Asan Bazar, Life; দৈনিক ‘The Kathmandu Post', 'The Himalayan’ ও The Rising Nepal' পত্রিকায় সাধ্যমতো খুঁজেও ‘দিওয়ালী’ শব্দটা বের করতে পারলাম না। লেকসাইড থেকে Experience Nepal নামক একটি বই কিনে Festival of Nepal থেকে বিশটারও বেশি ফেস্টিভালের নাম পরিচয় পেয়েছি সেখানেও দিওয়ালী নাম নেই। মাস ও উৎসব তালাশ করতে গিয়ে অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে Dasain I Tihar এ দু’টো ফেস্টিভালের নাম পাওয়া যায়। লেখা আছে, 'Tihar is a five day festival that takes place either in October or November. This is celebrated by lighting lamp in the evening to honor the Goddess Laxmi, the Goddess of wealth and good-Luck.

Dasain উৎসব শুরু হয় অক্টোবর মাসের চাঁদ দেখা থেকে, চলে পূর্ণিমা পর্যন্ত। এটাই নেপালের সর্ববৃহত্তম উৎসব। ওদের শক্তিশালী দেবী দুর্গার উদ্দেশ্যে দসাইন পূজা করা হয়ে থাকে। সকল প্রকার অমঙ্গলনাশিনী দুর্গা তুষ্ট হলে অমঙ্গল নাশ হয়ে যায়। এ ফেস্টিভ্যালে পরিবার ও আত্মীয়স্বজন একত্রিত হয়। চাঁদের অষ্টম ও নবম দিনে দুর্গার উদ্দেশ্যে অনেকে জীবজন্তু উৎসর্গ করে। এর রক্ত যানবাহন ও যন্ত্রপাতিতে মাখা হয়। এতে সারা বছর ঠিকমতো চলে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আদালত পনের দিন ও অন্যান্য সরকারি অফিসে ন’দিন সরকারি ছুটি থাকে। উৎসবের প্রথম দিনকে বলা হয় ‘ঘটস্থাপনা’ (Ghatasthapana), দুর্গাদেবীর উদ্দেশ্যে একটা পবিত্র ঘটি (Kalash) স্থাপন করা হয়। ১০ দিন পর ঘটি ওঠানো হয়। উৎসবের প্রথম ৯ দিন বিভিন্ন মন্দির ঘুরে ঘুরে দুর্গাদর্শন করে বেড়ায়।

হিন্দু লুনার ক্যালেন্ডারের পঞ্চম মাসের চাঁদের প্রথম দিবসে Fathers Festival পালন করা হয়ে থাকে। ওই দিন ছেলেমেয়েরা তাদের মৃত পিতাকে স্মরণ করে। গুর্খা এলাকায় ভগবতী নদীর পাড়ে মিলিত হয়ে মৃত পিতার আত্মার মুক্তি কামনাসহ মিষ্টি বিতরণ করে।

শুধু মহিলাদের জন্যও পৃথক একটি উৎসব আছে। নাম ‘তেজ’ (Teej) তিন দিনের এ উৎসব চলাকালে সকল বিবাহিতা মহিলা হলুদ ও লাল কাপড় পরিধান করে। তারা শিবমন্দিরে গিয়ে স্বামীদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে। শেষ করে- বিগত জীবনে সংঘটিত ত্রটি-বিচ্যুতি ক্ষমা চেয়ে পবিত্র জীবনের উদ্দেশ্যে নদীতে স্নান করে ওঠে।

মধ্য সেপ্টেম্বরে পালন করা হয় ইন্দ্রযাত্রা। আকাশের দেবতা ইন্দ্র। তাকে খুশি রাখলে ঠিকমত মেঘ বৃষ্টিসহ সবুজ হয়ে উঠবে ফসলের মাঠ। সপ্তাহব্যাপী চলে এ উৎসব। আগস্টের পূর্ণিমা তিথিতে জন্ম শ্রীকৃষ্ণের। এ উৎসব উপলক্ষে রঙিন ছবি ও চিত্রকর্মে পথঘাট ছেয়ে যায়। তখন কৃষ্ণমন্দিরে সমবেত হয় পূজারি ও কৃষ্ণভক্তরা। ভক্তরা একটা গাভী সুন্দর করে সাজিয়ে এর শিংয়ে রঙিন কাপড়-জড়িয়ে মহাসমারোহে শহর প্রদক্ষিণ করে। এ পূজার নাম ‘গাইযাত্রা’।

বুদ্ধের জন্ম মাসে যে উৎসব হয় সে উৎসবের নাম গানলা (Gunla)। নেপালে মগা ক্যালেন্ডারের দশম মাসে এ উৎসব হয়। সমস্ত মাসই কাটে উৎসব ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে। ওই সময় তারা শম্ভুনাথ আশ্রমে শামিল হয়।
আগস্ট পূর্ণিমায় অপর একটি উৎসবের নাম জেনাই পূর্ণিমা। সেদিন খুব সকালে নদীতে স্নান করে কুম্ভেশ^র মন্দিরে প্রার্থনা করা হয়।

মে মাসের পূর্ণিমায় পালন করা হয় বুদ্ধযাত্রা। বৌদ্ধ ইতিহাসে ওই পূর্ণিমায় বৌদ্ধের জন্ম হয়েছিল এবং মৃত্যুও হয়েছিল একই পূর্ণিমায়। বৌদ্ধ পূর্ণিমা হিসেবে দিনটি বিশ্বখ্যাত।

উর্বরতা ও বৃষ্টির দেবতা মৎস্যেন্দ্রনাথ। সাদা ও লাল রঙের দু’টো মৎসেন্দ্রনাথ যার একটি কাঠমান্ডু এবং অপরটি পাট্টানে অবস্থিত। পাট্টানে প্রতি গ্রীষ্মকালে তিন মাসব্যাপী এর উৎসব হয়ে থাকে। মার্চ মাসের নতুন চন্দ্রদিন থেকে আট দিন পর্যন্ত কাঠমান্ডুতে মৎস্যেন্দ্রনাথের উৎসব হয়।

মে মাসের নতুন চন্দ্র দিবসে মাতৃদিবস পালন করা হয়ে থাকে। ওই দিন সব নেপালি উপহার সামগ্রীসহ মায়ের সাথে সাক্ষাৎ করে। মার মৃত্যু হলে কাঠমান্ডু থেকে আট কিলোমিটার দূরে মাতাতীর্থ নামক স্থান পরিদর্শনসহ মায়ের উদ্দেশ্যে দান দক্ষিণা করে।

এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি তাদের নববর্ষ। পরিবার পরিজনসহ বাড়িতে দিনটি উদযাপন করা হয়। কাঠমান্ডুর ভক্তপুরে ওই দিনটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপন হয়। সপ্তাহব্যাপী চলে এ উৎসব অনুষ্ঠান। ওই দিন রাস্তায় আল্পনা অঙ্কনসহ ‘শুভ নববর্ষ’ লিখে, স্বাগত জানানো হয় নতুন বছরকে।

ঘটিযাত্রা নামে একটি উৎসবে নেপালের রয়েল আর্মিরাও অংশ নিয়ে থাকে। রাজা ও রানী এ অনুষ্ঠানে সৈনিকদের অভিনন্দন করে থাকেন।

হোলি পূজার অপর নাম ‘রঙের উৎসব’। সেদিন রঙিন পোশাক পরিধান করে রঙ পাউডার মাখামাখি ছিটাছিটি হয়। বড় গামলায় রঙ নেয়া হয়। গামলা থেকে ছোট পাত্রে করে রঙ নিয়ে একজন অপরজনের গায়ে ছিটিয়ে দেয়। রঙিন পানি ভর্তি বেলুনের ছড়াছড়ি থাকে।

ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত হয় বৃহত্তর উৎসব শিবরাত্রি। ভারতসহ পৃথিবীর নানা দেশ থেকে হাজার হাজার লোক এ সময় কাঠমান্ডু পশুপতি নাথের মন্দির দর্শন করতে আসে। তাদের বিশ^াস, শিবরাত্রি থেকে শীতের বিদায় এবং গ্রীষ্মের শুরু হয়।

মাঘ সংক্রান্তিও হয়ে থাকে ফেব্রুয়ারি মার্চ মাসে। হিন্দু এবং বৌদ্ধ উভয় সম্প্রদায়ের লোকেরা দিনটিকে পালনার্থে পবিত্র নদী নারায়ণঘাট, দুলাল ঘাট এবং ফেরিঘাটে স্রান করে।

জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হয় বসন্তপঞ্চমী। এটা একটি রঙিন উৎসব। এ দিন ব্রহ্মা সরস্বতীদেবীকে তৈরি করেছেন। বিদ্যাদাত্রী সরস্বতী দেবী। সরস্বতী দেবী তুষ্ট হলে বিদ্যার্জন সুগম হয়। ওই দিন অভিভাবকরা রঙ বেরঙের পোশাক পরিয়ে পরিয়ে তাদের ছেলেমেয়েসহ সরস্বতী মন্দির দর্শনে যান।
এবার আসছি প্রবন্ধের শিরোনামে। এক বিত্তবান ব্যক্তির পাশের বাড়িতে বাস করত এক গরিব কামার। কামার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে। কামারের হ্যামারের ঘায়ের শব্দ সীমানা পেরিয়ে পৌঁছে যায় বিত্তবানের কানে। দিনে শব্দ আর রাতে তার মতোই কামার, কুমার, কুলিকামীনদের গান বাজনা। প্রায় প্রতি রাতেই তবল-ডগি খঞ্জনী, দোতারা হার্মোনিয়াম নিয়ে গানবাজনা চলে। কামার পরিবারের কারণে মানসিক যন্ত্রণায় আছে বিত্তবান। অসহ্য হয়ে বিত্তবান পরামর্শ নেয় এক প্রবীণের। প্রবীণের পরামর্শ মতো কাজ করতেই বন্ধ হয়ে যায় হ্যামারের ঘায়ের শব্দ ও রাতের নাচ-গান।

এদিকে এক ভোরে ঘুম ভাঙতেই কামারের বউ দেখে লাল কাপড়ের পুঁটলি। খুলেই দেখে টাকা আর টাকা। ডেকে তোলে কামারকে। একসাথে এত টাকা জীবনেও দেখেনি তারা। নিরাপত্তাহীন কুঁড়েঘরে এই টাকা রাখবে কোথায়? চোর-ডাকাত টের পেলে আর রক্ষে থাকবে না। নিরাপদ স্থান খুঁজতে গিয়ে একবার কাঁথার তলে, একবার বালিশের ভেতর এবার চুলার নিচে। নাহ্ কোথাও নিরাপদ নয়। পরিশেষে ঘরের মেঝে মাটি খুঁড়ে উপরে মাটি চাপা দিয়ে সমান করে রাখে। তাতেও নিরাপদ বোধ না হওয়ায় বিছানা বিছিয়ে বিছানার উপরে ঠায় বসে রয় কামার দম্পতি। সারাদিন কাজ-কাম বন্ধ। রাতে আসে বন্ধু-বান্ধব। কামার দম্পতি নানা অজুহাত দিয়ে বিদায় করে দেয়। এই টাকা দিয়ে কী করবে? চিন্তায় চিন্তায় কাজ-কাম, পাক-শাকসহ বন্ধ আহার-নিদ্রাও। কামার পরিবারের সুখ-শান্তি শেষ। অসুস্থ হয়ে পড়েছে কামার পরিবার। বুঝতে পারে, ‘কয়দিন আগেও কত আনন্দে ছিলাম আমরা- জীবন কত নির্ভয় ও সুন্দর ছিল। সব অশান্তির কারণ ঐ পুঁটলি।’ এক সকালে ভয়ঙ্কর পুঁটলিটা গঙ্গায় বিসর্জন দিয়ে আগের আনন্দময় জীবনে ফিরে আসে। (সময়কাল ০২.১১.০৫ সাল)

লেখক : আইনজীবী ও কথাসাহিত্যিক
E-mail: adv.zainulabedin@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement