২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রাজনীতিতে নৈতিকতার সঙ্কট

রাজনীতিতে নৈতিকতার সঙ্কট। - ছবি : নয়া দিগন্ত

গত ১ ফেব্রুয়ারি দেশের ছয়টি সংসদীয় আসনে উপনির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী পরাজিত প্রার্থীগণ নানা অনিয়মের অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদকর্মীরা যেসব সংবাদ সরবরাহ করেছেন; তাতে পরাজিত প্রার্থীদের অভিযোগের এসব যদি সত্য হয়, তবে বলতে হবে বিজয়ী হয়েছে নির্বাচনের দৃশ্যমান প্রক্রিয়া কিন্তু পরাজিত হয়েছে নীতি-নৈতিকতা। বিজয়ী হয়েছে অপনীতি। পরাজিত হয়েছে রাজনীতি।

বগুড়া-৪ আসনে আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমের মহাজোট প্রার্থীর সাথে তীব্র প্রতিদ্ব›দ্বী হিসেবে আবির্ভাবকে অনেকে খাটো করে দেখছেন। আওয়ামী ঘরানার একজন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেছেন হিরো আলমকে নিয়ে তার আলোচনা করতে রুচিতে বাধে। ক্ষমতাসীনদের একজন শীর্ষনেতা সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, হিরো আলমকে বিজয়ী করে সংসদকে খাটো করার অভিপ্রায়ে বিএনপি হিরো আলমকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এসব উক্তি বা মন্তব্য দলীয় নেতাকর্মীদের জন্য জনতুষ্টিবাদী হলেও কতটুকু মানবতাবাদী বা সৌজন্যমূলক তা বিবেচনার দাবি রাখে। অলিগলির হাইব্রিড নেতাদের মুখে এসব মেঠো বক্তৃতা মানায় কিন্তু কোনো শীর্ষনেতার এমন মন্তব্য অত্যন্ত দুঃখজনক।

উচ্চ আদালতের রায়ে যে হিরো আলম প্রার্থিতার যোগ্যতা অর্জন করেছেন তিনি কিভাবে সংসদকে খাটো করতে সংসদ সদস্য হবেন? হিরো আলমের চেহারা-ছবি এবং মুখের ভাষা তো সৃষ্টিকর্তার দান, সেটা তো তিনি পরিবর্তন করতে পারবেন না। তার লেখাপড়ার দৌড়ও বোধ হয় খুব বেশি নয়। কিন্তু তার মেধা, ধীশক্তি, অধ্যবসায়, সাহস, ধৈর্য ইত্যাদি তাকে অনেক দূরে এগিয়ে এনেছে। এতে তরুণ প্রজন্মের কাছে অনেক কিছু শিক্ষণীয় রয়েছে। তার হয়তো রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা, সহায় সম্পদ ইত্যাদির অভাব রয়েছে। তার প্রাডো জিপ নেই বা লাখ টাকার হাতঘড়ি নেই; কিন্তু তার দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, মাস্তানি, অসততা, কপটতা ইত্যাদির কোনো রেকর্ড নেই, যা অনেক নেতার মধ্যে থাকতে পারে বলে সমালোচকেরা মনে করে। হিরো আলমের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল অত্যন্ত সরল, কিন্তু চিত্তাকর্ষক। তিনি বলেছিলেন, এমপি হলে মাত্র সাত-আট মাস সময় পাওয়া যাবে। এ সময় তেমন কিছু করার সুযোগ নেই। তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাটি তিনি সমাধানের চেষ্ট করবেন। তার এ অঙ্গীকার জনগণ গ্রহণ করেছিল বলে মনে হয়। তাইতো মহাজোটের হেভিওয়েট প্রার্থীর সাথে মাত্র ৮৩৪ ভোটে হেরেছেন। এখন হিরো আলমকে খাটো করা মানে তাকে যে ১৯ হাজার মানুষ ভোট দিয়েছেন তাদের খাটো করা। তিনি নিজের মতো করে যা ভালোবাসেন তাই করেন। কিন্তু কারো ক্ষতি তো তিনি করেননি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার তৎপরতা কারো ভালো নাও লাগতে পারে। তিনি তো কাউকে জোর করেননি তা দেখতে বা তাকে সমর্থন করতে। তার কার্যকলাপ হয়তো আমাদের অনেকের ভালো লাগবে না। কিন্তু তাকে মানুষ হিসেবে সম্মানটুকু তো দিতে হবে। সরল বিশ্বাসে লক্ষ্যপানে তার এগিয়ে চলার অদম্য মনোবল ও আত্মবিশ্বাসকে আমাদের সম্মান করতে হবে।


আমাদের নৈতিকতার ঘাটতি আজ সর্বগ্রাসী হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাংবাদিকরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের ভোটদানের গোপনকক্ষে ‘ডাকাতের’ উপস্থিতি সম্পর্কে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের অনুপস্থিতিতে উকিল আব্দুস সাত্তারের পোলিং এজেন্টকে ভোট গ্রহণের কাজ করতে দেখা গেছে বলে সাংবাদিকরা জানিয়েছেন (প্রথম আলো ০২/০২/২৩)। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে বিএনপি সমর্থক ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসতে নিষেধ করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। বগুড়াতে হিরো আলম নির্বাচন কমিশনকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছেন, তাকে কারচুপির মাধ্যমে পরাজিত করানো হয়েছে। তার দাবি অনুযায়ী, কাহালু এলাকায় সবক’টি কেন্দ্রের ফলে তিনি এগিয়ে ছিলেন এবং নন্দীগ্রাম উপজেলার ৪৯টি কেন্দ্রের মধ্যে প্রথম ৩৯টি কেন্দ্রের ফল একটি একটি করে এসেছে যেখানে তিনি এগিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তী ১০টি কেন্দ্রের ফল দুই ঘণ্টা পরে একত্রে প্রকাশ করার সময় তাকে ৮৩৪ ভোট কম দেখিয়ে পরাজিত করানো হয়েছে।

হিরো আলম সেখানে চ্যালেঞ্জ দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে গণভোটের মাধ্যমে তার প্রাপ্য ভোটের হিসাব নিতে বলেছেন, তাতে তিনি জয়ী হবেন। তিনি বগুড়া-৪ আসনের ৪৫টি কেন্দ্রের ভোট পুনরায় গণনার আবেদন করেছেন। এসব অভিযোগ ছাড়াও ভোটারদের ভয় দেখানো, বিরোধীদের পোলিং এজেন্ট বের করে দেওয়া ইত্যাদি রুটিন অভিযোগ তো আছে। এ ছয় আসনের উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। সিইসির মতে, মাত্র ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। তবে ভিন্ন মতানুযায়ী প্রকৃত ভোটার উপস্থিতি ৫ থেকে ১০ শতাংশ ছিল বলে অনেকে মনে করেন। তবে উল্লেখযোগ্য কোনো দাঙ্গা-হাঙ্গামা বা খুন-খারাবির ঘটনা ছিল না। নির্বাচনে কোনো প্রতিযোগিতা গড়ে উঠতে পারেনি প্রকৃত বিরোধী দলের অংশগ্রহণ না থাকতে। নইলে বাংলাদেশে এ ধরনের নিরুত্তাপ নির্বাচন একটি অস্বাভাবিক ঘটনা। এ নির্বাচনের সবচেয়ে জঘন্য অনৈতিক দিকটি ছিল বৃহত্তর রাজনৈতিক ক‚টকৌশল সফল করার উদ্দেশ্যে একজন প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ক্ষমতাসীনদের সব কিছু করার প্রবণতা। এ প্রবণতায় আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী দলের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব প্রতিফলিত হয়েছে। নিশ্চয় এর পেছনে তাদের সুদূরপ্রসারী কোনো লক্ষ্য রয়েছে। নইলে একজন সাবেক বিএনপি নেতাকে সমর্থন থেকে শুরু করে শক্তি ও কৌশল সবকিছু প্রয়োগ করে চূড়ান্তভাবে জেতানো পর্যন্ত সব ছিল দৃশ্যমান। এ অবাধ তথ্যপ্রবাহের যুগে ক্ষমতাসীন দল এমন সব ঘটনা প্রবাহের অবতারণা করেছে যা কখনো গোপন রাখা সম্ভব নয়। তথাপি এসব কর্মতৎপরতা তারা পরিচালনা করেছেন নিশ্চয় সম্ভাব্য ঝুঁকি হিসেব কষেই। বিএনপি থেকে দলছুট নেতা উকিল আব্দুস সাত্তারকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়যুক্ত করতে আওয়ামী লীগের নিজের দলীয় এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। তাকে জেতানোর জন্য ক্ষমতাসীনরা সর্বশক্তি নিয়োজিত করেছেন। তাদের দলীয় সংসদ সদস্যসহ কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেন। তার পরেও বিএনপির আরেক বহিষ্কৃত স্থানীয় নেতা আবু আসিফ আহমেদ শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হন। এমতাবস্থায় হঠাৎ নির্বাচনের চার দিন আগে গত ২৭ জানুয়ারি আসিফ নিখোঁজ হন। জানা যায়, তাকে প্রথমে সরে দাঁড়াতে হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছিল। পরে তিনি সেদিন রাত ১১টায় বাসার বাইরে থেকে নিখোঁজ হন। সেই সাথে তার নির্বাচনী প্রচারণার প্রধান, সত্তরোর্ধ্ব মুসা মিয়াকে ডিবি পুলিশ উঠিয়ে নিয়ে যায় এবং পুরোনো একটি মামলায় গ্রেফতার হয়ে তিনি জেলে আবদ্ধ হন। আসিফের আরেক সমন্বয়ক এবং সম্পর্কে শ্যালক শাফায়াত সুমনও নিখোঁজ হন। আসিফের স্ত্রী মেহেরুন্নেছা মেহরিনের অভিযোগ, তার স্বামী নিখোঁজের পর বাসায় পুলিশ অযথা তল্লাশি করে হয়রানি করেছে। বাসার সামনে সাদা পোশাকধারী কয়েকজন লোক সারাক্ষণ অবস্থান করে। তারা বাসায় আগত লোকজনের ছবি ওঠায়, নানা কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করে ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলে। মেহেরুন্নেছা স্থানীয় থানা এবং নির্বাচন কমিশনে ই-মেইলে লিখিত অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি। ফলে আসিফের নির্বাচন পরিস্থিতি যা হওয়ার তাই হয়েছে। নির্বাচনের একদিন পর তিনি ফিরে আসেন। তবে গুম থেকে ফিরে আসা অন্যান্য ভিকটিমের মতো আসিফও মুখ খুলতে চান না। শুধু বলেন, চাপ নিতে পারছিলেন না বলে সরে গিয়েছিলেন। তবে তার বডি ল্যাংগুয়েজ এবং না বল ভাষা এক নীতিহীন গল্পের কথাই প্রকাশ করছে।

আসিফের নিখোঁজের ঘটনা আমাদের নষ্ট রাজনীতির প্রতিফলনের সাথে সাথে নির্বাচন কমিশনের নৈতিক অবস্থানকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, পরিস্থিতি দেখে মনে হয় সংসদ সদস্য প্রার্থী আসিফ লুকিয়ে রয়েছেন। একজন প্রার্থীর হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যাওয়া নির্বাচন কমিশন স্বাভাবিকভাবে নিয়েছেন। এ নিখোঁজ হওয়ার সমাধান না করে নির্বাচন সম্পন্ন করা আইনসিদ্ধ হলেও কতটা নৈতিক সেই প্রশ্ন উঠতে পারে। সারা জাতি যেখানে বুঝতে পারছিল একজন প্রার্থী কেন নিখোঁজ সেখানে; বিজ্ঞ নির্বাচন কমিশনার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন, প্রার্থী নির্বাচনের চাপ সইতে না পেরে নিজে লুকিয়ে রয়েছেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একজন প্রার্থী স্বেচ্ছায় আত্মগোপন করে থাকবেন সেটা এখনো বিশ্বাস করার সময় আসেনি। কিন্তু জোরপূর্বক নিখোঁজ হওয়ার পক্ষে যথেষ্ট উদাহরণ আমাদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে। কাজেই উপনির্বাচনে উকিল আব্দুস সাত্তার বিজয় লাভ করলেও এ প্রার্থী নিখোঁজের ঘটনায় জাতি হিসেবে আমরা সবাই পরাজিত হয়েছি। আমাদের পরের সভ্য প্রজন্ম হয়তো একদিন ঘৃণাভরে আমাদের এ রাজনৈতিক ইতিহাসের ঘটনা-দুর্ঘটনা পাঠ করবে। শুরু থেকে বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনার মধ্য দিয়ে বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠিত হলেও কখনো কখনো তারা বক্তব্য ও কর্তব্যের মাধ্যমে হঠাৎ হঠাৎ আশার আলো জাগিয়ে ছিলেন। অনেকে আশান্বিত হয়েছিলেন এবং আস্থা রাখতে চেয়েছিলেন। এমনকি বিগত গাইবান্ধা উপনির্বাচনে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়ে সিসিটিভির মাধ্যমে কারচুপি উন্মোচন করে আস্থার একটি পরিবেশ তৈরির পথ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু এই সদ্য সমাপ্ত ছয়টি আসনের উপনির্বাচনে মনে হয় সেই আস্থার কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেওয়া হয়েছে। কোনো কেন্দ্রে সিসিটিভির ব্যবস্থা না করে, দুর্বল প্রার্থীদের কোনো অভিযোগ কর্ণপাত না করে এবং একজন নিখোঁজ প্রার্থীর উধাও হওয়াকে আমলে না নিয়ে নির্বাচন সম্পাদন করে এই ইসি পুরো জাতিকে হতাশ করেছেন শুধু একটি পক্ষকে খুশি করার বিনিময়ে। ফলে বিরোধীদের আস্থায় এনে ইসি কিভাবে সামনের সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করবেন তাদের সেই পথ বা পদ্ধতি খুঁজে বের করতে হবে। নইলে তাদের দ্বারা সামনের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক এবং নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করার সামর্থ্য হবে একটি বড় প্রশ্ন। সেই সাথে এটাও সমালোচকরা বলতে চান যে, নির্বাচনীব্যবস্থা মূলত ভেঙে পড়েছে। এমনকি তা এমন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে যে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের দৃঢ় সদিচ্ছা থাকলেও তৃণমূলের নেতাকর্মীও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারণে তা হয়তোবা সম্ভব নাও হতে পারে। আর উল্লিখিত চক্র বা সিন্ডিকেট কেন নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের পুনরায় ক্ষমতায় আনতে চাইবে সেই উত্তর অনেকের জানা রয়েছে।

রাজনীতি হলো নীতির রাজা অর্থাৎ সর্বশ্রেষ্ঠ নীতি রাজনীতি। কিন্তু আমরা কি সেই নীতির ধারেকাছে আছি? এই তো কায়েক দিন আগে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশকে ভণ্ডুল করতে বা সেখানে লোকসমাগম কমাতে সম্ভাব্য সব ধরনের বাধা দেওয়া হয়েছে। পরিবহন ধর্মঘট, খেয়াঘাট বন্ধ, নৌকা ডুবানো, বিভাগীয় শহর থেকে জেলা শহরগুলোকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলা, সমাবেশে আগতদের মারধর, পুলিশ ও ছাত্রলীগ দিয়ে বাস থামিয়ে যাত্রীদের তল্লাশি করা, ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন চেক করে বিএনপি সমর্থক খুঁজে বের করা ইত্যাদি সবই করা হয়েছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের সমাবেশকে সফল করতে রাষ্ট্রযন্ত্রের সব সুযোগ সুবিধা কাজে লাগানো হয়েছে। এমনকি বিভিন্ন স্থান থেকে রেলগাড়ি পর্যন্ত ভাড়া করে লোক সমাগম করা হয়েছে। কোনো নীতির স্কেলে কি দু’দলের জন্য এ ধরনের দ্বিমুখী আচরণ উত্তীর্ণ হতে পারে? সম্প্রতি আরো রাজনৈতিক অনুষঙ্গ যুক্ত হয়েছে আন্দোলন সংগ্রামের ময়দানে। সেটা হলো পাল্টা প্রোগ্রাম।

বিরোধীপক্ষ যখন কোনো কর্মসূচি দেয় তখন সরকারি দল একই দিনে পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে ‘শান্তি সমাবেশ’ করে। এ পাল্টা কর্মসূচি কখনো দুই দলকে মুখোমুখি করে দিলে ভয়াবহ সংঘর্ষও ঘটে যেতে পারে বলে অনেকে মনে করেন। ফলে ‘শান্তি সমাবেশ’ অশান্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে যেকোনো মুহূর্তে। রাজনীতির মাঠে আন্দোলন সংগ্রামে যার যখন খুশি আইনসম্মত কর্মসূচি দেবে। কিন্তু বিরোধীদের তৎপরতা পাহারা দেওয়ার উদ্দেশ্যে পাল্টা কর্মসূচি একই দিনে পালন করা কতটুকু যৌক্তিক হতে পারে? তাহলে বিরোধীদের জ্বালাও-পোড়াও পাহারা দিতে কি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট নয়? আর গত এক বছর যাবৎ বিরোধী পক্ষ যেসব আন্দোলন সংগ্রামের কর্মসূচি পালন করেছে তাতে কি কোনো জ্বালাও পোড়ানোর মতো অঘটন ছিল? তবে পুলিশের গুলি ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মারধরে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী নিহত হয়েছে গত ৫-৬ মাসের আন্দোলন সংগ্রামে। নীতি-নৈতিকতার চরম অবমাননার প্রতিফলন ঘটেছে গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে। ২০ ডিসেম্বর গাজীপুরে বিএনপির এক ইউনিয়ন নেতা আলী আজম এবং ১৭ জানুয়ারি শরীয়তপুরে ছাত্রদলের এক কেন্দ্রীয় নেতা সেলিম রেজা মায়ের মৃত্যুতে কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে হাতকড়া ও ডাণ্ডাবেড়ি পরা অবস্থায়ই মায়ের জানাজার নামাজ পড়তে বাধ্য হন। এই দুটো ঘটনাও বোধ হয় আমাদের রাজনীতির ইতিহাসে একটি কালো দাগ হয়ে থাকবে। অন্য দিকে গায়েবি মামলা, ঘটনাস্থলে অনুপস্থিত থেকেও আসামি হওয়া, মামলার বাদির অজান্তে মামলা, মৃত ব্যক্তির আসামি হওয়া, হামলার শিকার হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে পুনরায় মার খাওয়া এবং একই ঘটনায় মামলার আসামি হওয়া ইত্যাদি অনৈতিক বিষয়সমূহ তো আমাদের রাজনীতির সংস্কৃতিতে স্থান করে নিচ্ছে। এসব দেখার কি কোনো অভিভাবক আমাদের নেই? আমরা রাজনীতি করতে গিয়ে নির্দ্বিধায় অসত্য বলছি। গতকালের বলা কথা আজই অস্বীকার করছি। অন্যদল বা ব্যক্তিকে ছোট করতে বা নিজেকে বড় করতে অবলীলায় অসত্য বলছি বা ভুলের আশ্রয় নিচ্ছি। অর্থাৎ অসত্যকে আমাদের রাজনীতির অনুষঙ্গ করে ফেলেছি। কিন্তু মহান সৃষ্টিকর্তা বলেছেন, ‘তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করোনা এবং জেনে-শুনে সত্য গোপন করোনা’ (সূরা বাকারা : ৪২)।

আসলে আমরা যদি আমাদের রাজনীতিতে নীতিনৈতিকতা ফিরিয়ে আনতে না পারি তবে আসছে সাধারণ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়ে পড়ব। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের পর আরো একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের ভার বহন করার সামর্থ্য দেশ ও জাতির নেই। একটি সংশোধিত নির্বাচন না হলে জাতি হিসেবে আমরা নুইয়ে পড়ব। এতসব উন্নয়ন-অগ্রগতি এবং গর্ব-অহঙ্কার সবই মুখ থুবড়ে পড়বে।

লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক
Email: maksud2648@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement
ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশু সুলতান মাহমুদকে বাঁচাতে সাহায্যের আবেদন গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি হামলায় নিহত ১৫ মুজিবনগরে ২ চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ, আহত ১৩ বাগেরহাটের রামপালে ট্রাকের চাপায় নিহত ৩ ফিলিস্তিনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব বিশ্ববিদ্যালয় বিক্ষোভে উত্তাল পূর্ব আফ্রিকায় প্রবল বৃষ্টি ও বন্যা, কমপক্ষে ১৫৫ জনের প্রাণহানি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রশ্নবিদ্ধ তথ্য প্রচারের নিন্দা ডিআরইউর ভয়াবহ দুর্ঘটনা, অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন উগ্র ইসরাইলি মন্ত্রী শেরে বাংলার সমাধিতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন হাত কাটা বন্দীর নেতানিয়াহুর সমালোচনা ইসরাইলের আলটিমেটাম, যা বলল হামাস

সকল