২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মিসরের আল সিসির ভারত সফর

মিসরের আল সিসির ভারত সফর। - ছবি : সংগৃহীত

গত আট বছরে আরব উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে ভারতের ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের সূচনা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ব্যক্তিগত উদ্যোগে। এই সম্পর্কের নতুন উদ্যম ভারতের পররাষ্ট্রনীতির পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে নিহিত। এসব স্তম্ভ উপসাগরীয় অঞ্চলের সাথে ভারতের শতাব্দীপ্রাচীন সভ্যতার সম্পর্কের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকে শক্তিশালী করে। সিন্ধু উপত্যকা ও দিলমুনের সভ্যতার (কুয়েত, বাহরাইন ও পূর্ব সৌদি আরবজুড়ে) মধ্যে বাণিজ্যিক সংযোগের সন্ধান পাওয়া যায়। সেই সম্পর্কের ভিত্তি ছিল সভ্যতা, দর্শন, বাণিজ্য, অভিন্ন সমৃদ্ধি ও পারস্পরিক বিশ্বাস।

প্রধানমন্ত্রী মোদি তার পূর্বসূরিদের তুলনায় আরব-উপসাগরীয় অঞ্চলের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে বেশি জোর দিয়েছেন। এর ফলে এই অঞ্চলে ভারতকে অভূতপূর্ব মাত্রায় সম্মান ও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক মন্থন এবং আর্থ-সামাজিক চ্যালেঞ্জগুলোও ভারতের বর্ধিত ভ‚মিকার ক্ষেত্র তৈরিতে অবদান রেখেছে। বছরের পর বছর ধরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ধীরে ধীরে এই অঞ্চল থেকে তার দৃষ্টি কিছুটা সরিয়ে নিয়েছে। এটি এই অঞ্চলের নিরাপত্তা অস্থিতিশীলতার কারণ যেমন রয়েছে তেমনি এটি তার জ্বালানি চাহিদার জন্য এই অঞ্চলের ওপর নির্ভরতা হ্রাসের কারণেও। আজ বিষয়টি আর এই অঞ্চলে আগের মতো আস্থা রাখতে সক্ষমতা হারিয়েছে। এই শূন্যতা নতুন খেলোয়াড়দের এই অঞ্চলে আরো সক্রিয় ভ‚মিকা পালনের মঞ্চ তৈরি করেছে। এই প্রেক্ষাপটে প্রথমবারের মতো ভারতকে আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রসারে বিশ্লেষকরা একটি বিশ্বাসযোগ্য ভ‚মিকা পালনকারী হিসেবে দেখতে শুরু করেছেন।

এবার ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথি হিসেবে মিসরের রাষ্ট্রপতি আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ভারতের ক‚টনৈতিক ভাষ্যকাররা এটিকে বৈদেশিক এক ঘাটতি পূরণের কৌশল হিসেবে দেখছেন। কূটনীতিকরা এমন একটি বিষয়ে জন্য অবশ্য বহু দশক ধরে অপেক্ষা করে আসছিল। জামাল আবদেল নাসেরের মৃত্যুর পর নয়াদিল্লির সাথে কায়রোর ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্কের ব্যবধান কমাতে ১৯৮০-এর দশক থেকে মিসরেরও অনেক ক‚টনৈতিক একইভাবে কাজ করেছেন বলে ভারতের ক‚টনীতিকরা মন্তব্য করেছেন।
ভারত ও মিসরের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের স্বর্ণযুগের চেতনা বাঁচিয়ে রাখতে দু’টি সুপরিচিত লবি কাজ করেছে। আরব বিশ্বের বৃহত্তম দেশে একটি ভারতীয় লবি সর্বজনীন ও সুপরিচিত। মিসরে অনেক ভারতীয় দর্শনার্থী কায়রো, লুক্সর বা আসওয়ানে বসবাস করেন। আর একটি লবি হলো ভারতীয় সঙ্গীত, চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতি।

এখানে একটি হাস্যকর বিষয়ে অবতারণা করছি। আমি ২০১৫ সালে মিসরের ওপর প্রামাণ্যচিত্র তৈরির কাজে গিয়েছিলাম। আমরা প্রায় ৮০টি পর্ব করছিলাম। পরবর্তী তিন বছর এগুলো বাংলাদেশের তিনটি চ্যানেলে প্রদর্শিত হয়। ঘটনার দিন কৃষি বিষয়ে ছবি ধারণ করার জন্য নীল নদের ওপারে গ্রামে অবস্থান করছিলাম। বিকেলে, আমি গাড়িতে অপেক্ষমাণ। ক্যামরা ক্রুরা ছবি তুলছে। ১৩-১৪ বছরের সাত-আটজন তরুণ উদগ্রীব হয়ে দেখছিল। ভিনদেশীদের দেখে তাদের ঔৎসুক্য বেড়ে গিয়েছিল। তারা ক্রুদের জিজ্ঞাসা করছিল আমরা কোত্থেকে এসেছি। আমাদের দেশের নাম বলায় তারা চিনতে পারছিল না। ক্রুদের একজন বলল ভারতের পাশে। ওরা জিজ্ঞেস করল অমিতাভ বচ্চনের দেশ? ক্রুদের একজন দুষ্টুমি করে বলল অমিতাভের বড় ভাই গাড়িতে বসে আছেন। আর যায় কোথায় সবাই ছুটে এসে আমাকে ঘিরে ধরে। তারা ক্রুদের কথা বিশ্বাস করে শুধু আমাকে দেখছিল। ওরা চায় আমি যেন তাদের বাড়িতে বেড়াতে যাই এবং কিছু নাশতাপানি খাই, তাহলে তারা খুব খুশি হবে ইত্যাদি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছিল। ক্রুরা এসে আমাকে চুপে ছেলেদের কথা বলে হাসল। আমি বিব্রত হয়ে কিছু না বলে ছেলেদের হ্যান্ডশেক করে বিদায় নিলাম।

অমিতাভ বচ্চন মিসরে খুবই জনপ্রিয়। কিছু দিন আগে বচ্চন মিসরে গিয়েছিলেন এবং অমিতাভ ফ্যান ক্লাবে বক্তব্য দিয়েছিলেন। সে ছবি ও লেখালেখি মিসরের পত্রিকায় ছেয়ে যায়। আবার শিল্পকলা, সঙ্গীত-সাহিত্য ও সংস্কৃতির জন্য আরব বিশ্বে মিসর অনন্য ভূমিকা পালন করে। কায়রোর তানুরা নৃত্য-শিল্পীদের পরিবেশনা আরব বিশ্বে সমাদৃত, এই নৃত্য ভারতেও অনেক পরিবেশিত হয়েছে। তুরস্কের রুমির সুফিনৃত্যের পর তানুরার অবস্থান। তানুরাও একধরনের সুফি নৃত্য, তবে এর ধরন পৃথক।

১৯৭০ সালে সোভিয়েত সহায়তায় আসওয়ান হাই ড্যাম সম্পন্ন হওয়ার পর, মিসরের জীবন ও অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫ বছরের প্রথম দশকে ভারত ও মিসরের মধ্যে যে উর্বর সম্পর্ক ছিল পরবর্তীকালে তা হ্রাস পায়। প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ উপলক্ষে মিসরের প্রেসিডেন্টের তিন দিনের সফর নয়াদিল্লি ও কায়রোর মধ্যে সেই সম্পর্কের প্রাণশক্তি পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
উপসাগরীয় দেশগুলো ভারতের অপরিশোধিত তেলের ৬০ শতাংশেরও বেশি সরবরাহ করে। আরব দেশগুলোর ওপর ভারত নির্ভরশীল। সিসির এই সফরে গুরুত্বপূর্ণ হলো কৌশলগত সামরিক বন্ধন।

প্রতিরক্ষা সহযোগিতা একটি নতুন ক্ষেত্র যা ভারতে সিসির বৈঠক থেকে উদ্ভূত হয়েছে। রাজস্থানে ভারতীয় ও মিসরীয় বিশেষ সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রথম যৌথ মহড়া কিছু দিন আগে সম্পন্ন হয়েছে। দুই দেশের বিমানবাহিনীও যৌথ কৌশলগত মহড়া চালিয়েছে। প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে মিসরীয় সেনাবাহিনীর একটি সামরিক কন্টিনজেন্টের অংশগ্রহণ, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সাথে পদযাত্রা, তাদের নিজ নিজ কমান্ডার-ইন-চিফ দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা, ভবিষ্যতের আন্তঃসংযোগের জন্য একটি শক্তিশালী বার্তা মনে করা হচ্ছে। মিসর ভারতের তৈরি যুদ্ধবিমান এবং হালকা অ্যাটাক হেলিকপ্টার কিনতে পারে বলেও শোনা যাচ্ছে।

আইএএফ, ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্স পাইলটরা ১৯৬০ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত মিসরীয় পাইলটদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। ২০১৫ সাল থেকে ২০১৭ সালে মিসরের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল সেদকি সোভির কৌশলগত সফর এবং ২০১৮ সালে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী শ্রীমতি নির্মলা সীতারামনের সফরসহ প্রতিরক্ষা প্রতিনিধিদের অনেক উচ্চ পর্যায়ে সফর নিয়মিত অব্যাহত রয়েছে। ২০২২ সালের ১৯ নভেম্বর প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সম্পর্কিত সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষরিত হয়। ভারতীয় বিমান বাহিনী ২৩ জুন থেকে ২২ জুলাই ২০২২ পর্যন্ত মিসরীয় বিমানবাহিনী অস্ত্র স্কুলের কৌশলগত নেতৃত্ব প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছিল। গত মাসে ১৪-২৭ জানুয়ারি ভারতে দুই দেশের মধ্যে বড় ধরনের মহড়াও শেষ করা হয়েছে। ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজগুলো মিসরীয় বন্দরগুলোতে নিয়মিত পোর্ট কল করে থাকে। মিসর নিয়মিতভাবে আইএএফ ও আইএন বিমানগুলোকে রাশিয়া, ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ট্রানজিট সুবিধা দিয়ে আসছে।

বিমান যোগাযোগ ও পর্যটনের মতো ক্ষেত্রের প্রসারের জন্য নয়াদিল্লিতে সিসি ভারতীয় ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ে সাথে বৈঠক তরে প্রচুর সম্ভাবনার ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এই সফরে এটি বড় এক অর্জন উভয় দেশের জন্য। তবে দুবাই এবং মালদ্বীপের মতো নতুন পর্যটন গন্তব্যগুলো ভারতীয় এবং মিসরীয় উভয়ে জন্য উপলব্ধি হওয়ায় উপেক্ষিত হয়েছিল। সিসি এই বছরের শেষের দিকে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতে ফিরে আসার কথা রয়েছে, তখন তিনি ও মোদি সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা করবেন।

সৌদি লেখক তুর্কি আল-হামাদ, মিসরীয় সরকারের নীতির ওপর তীব্র আক্রমণ করেছেন। তিনি মিসরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। অতীতের সাথে তুলনা করে বেকারত্ব, অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং সমাজের দ্বিধা সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। একটি ধনী দেশ যারা অন্যদের ঋণ দিয়েছে আজ তারা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের হাতে অনেকটা বন্দী। তিনি বলেন, ‘দুধ ও মধুর দেশে তিক্ত লোনা পানির স্রোত বইছে।’
তিনি সমালোচনা করে বলেন যে, রাষ্ট্রের ওপর সেনাবাহিনীর ক্রমবর্ধমান আধিপত্য, সেনাবাহিনীর হাতে অর্থনীতি পরিচালনা, সেনা অধীনস্থের প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেনাবাহিনীর প্রভাবশালীদের বিচরণ ছাড়া রাষ্ট্র যেন চলেই না। মিসরে বিনিয়োগের অগাধ সুযোগ থাকলেও স্থবির আমলাতন্ত্রের পরিবর্তনের কোনো লক্ষণ নেই।

সৌদি আরব ও তার উপসাগরীয় রাষ্ট্রের প্রতিবেশীরা মিসরীয় সম্পদ, বিশেষত সেনাবাহিনীর সম্পদ কিনতে চায়। যদিও আল-সিসি সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে বেশ কয়েকটি সম্পদ বিক্রি করেছেন, তবুও তিনি মিসরীয় সশস্ত্রবাহিনীকে আরো সম্পদ বিক্রির জন্য প্ররোচিত করতে বড় সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন, কারণ মিসরীয় সেনাবাহিনী, যা অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে, বিশ্বাস করে যে এসব সংস্থা ও সম্পদ কেবল সেনাবাহিনীর অন্তর্গত লাল রেখার মধ্যে পড়েছ যা অতিক্রম করা যায় না।

সংক্ষেপে বলতে গেলে, আল-সিসির শাসনের জন্য সৌদি ও উপসাগরীয় সমর্থন, সাধারণভাবে আগের মতো হবে না, কারণ বিগত বছরগুলোর তুলনায় এখন এর জন্য আলাদা প্রয়োজন রয়েছে, যেখানে মিসরীয় জনগণ একটি বিশাল মূল্য দিয়েছে। এখানে এখন ব্যক্তি-স্বাধীনতার অভাব এবং তাদের খাদ্য নিরাপত্তা হারানোর অবস্থানে রয়েছে। মধ্যবিত্তরা খরচ করতে ভয় পায়।

সৌদি আরব ২০১৩-১৫ সালের মধ্যে অভ্যুত্থান পরবর্তী সিসিকে ৪০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগে উপসাগরীয় অঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার করেছিল। মিসরও পর্যটন উন্নয়নের জন্য সৌদি আরবকে তার দু’টি দ্বীপ দিয়েছিল। এই দ্বীপ দু’টির কৌশলগত ভ‚মিকা ও অবস্থান উল্লেখযোগ্য। অভিযোগ ওঠে, ইসরাইল এই দু’টি দ্বীপে সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের চেষ্টা করে আসছে এবং একটি আরব দেশের সাথে সমঝোতা করেছে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটা বদলে গেছে এবং এই মুহূর্তে সৌদি আরবের সাথে মিসরের সম্পর্ক আগের মতো নেই।
বর্তমানে মিসরে ভারতীয় সম্প্রদায়ের সদস্য সংখ্যা প্রায় তিন হাজার ২০০, যাদের বেশির ভাগই কায়রোতে কেন্দ্রীভ‚ত। আলেকজান্দ্রিয়া, পোর্ট সাইদ ও ইসমাইলিয়ায় অল্প সংখ্যক পরিবার রয়েছে। ভারতীয়দের বেশির ভাগই হয় ভারতীয় সংস্থাগুলোতে নিযুক্ত বা বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থায় পেশাদার। প্রায় ৪০০ ভারতীয় শিক্ষার্থী মিসরে পড়াশোনা করছে, প্রধানত আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭৫ জন শিক্ষার্থী, বাকিরা আইন শামস মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (প্রায় ৮০ জন শিক্ষার্থী) এবং কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছে। ভারত ও মিসর, বিশ্বের প্রাচীনতম দু’টি সভ্যতা, প্রাচীনকাল থেকেই ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের ইতিহাস রয়েছে, যা ইতোপূর্বে বর্ণিত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট নাসের এবং প্রধানমন্ত্রী নেহরুর মধ্যে ব্যতিক্রমী বন্ধুত্ব ছিল যার ফলে ১৯৫৫ সালে দুই দেশের মধ্যে একটি বন্ধুত্ব চুক্তি হয়েছিল। উভয় দেশ বহুপক্ষীয় ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করেছে এবং উভয় দেশ জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। জানা যায়, কায়রো ও নয়াদিল্লির মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্বের উন্নয়নের জন্য এবং রাজনৈতিক, প্রতিরক্ষা, অর্থনৈতিক ও বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা বাড়ানোর একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হচ্ছে।

আরব বিশ্বের সাথে ভারতের দীর্ঘ দিনের শক্তিশালী সম্পর্ক থাকলেও ভারতের ক্ষমতাসীন দলের ক্রমবর্ধমান ইসলামোফোবিয়া সেই বন্ধুত্বকে বিপন্ন করতে পারে মর্মে বিশ্লেষকরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। ভারতে মুসলমানদের ওপর নির্যাতন নিয়ে আরব বিশ্বের অনেকেই উদ্বিগ্ন এবং বিজেপির দুইজন কর্মকর্তা ইসলামের নবী সা: সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করে এই ইস্যুতে ঘৃতাহুতি দিয়েছেন। ২০১৪ সালে হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে ইসলামোফোবিয়া বেগবান হয় বলে সমালোচকরা মনে করছেন। মিসরের সিসি রাবা স্কয়ারে ইসলামপন্থী জনতার ওপর গুলিবর্ষণ ও ট্যাংক চালিয়ে ২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট দুই হাজার ৬০০ বিক্ষোভকারীকে হত্যা করেছিল। ভারত সফরের পর অনেক সমালোচক নতুন করে এসব বিশ্লেষণ শুরু করছেন। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে মোদি প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রায়ই বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম মুসলিম সম্প্রদায়ে বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা নিয়ে নীরব থাকার অভিযোগ ওঠায় আরব বিশ্বের সাথে ভারতের ঐতিহাসিক সম্পর্ক নিয়ে নতুন কথাবার্তা শুরু হয়েছে। এমনি একসময়ে সিসির ভারত সফর ও কৌশলগত বিষয়গুলোকে দ্রুত সামনে এগিয়ে নেয়ার তাৎপর্য বিশ্লেষণ করার জন্য আরো সময়ে প্রয়োজন।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার


আরো সংবাদ



premium cement