০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`


দাবা বোর্ডে পুলিশের এসপি

-

প্রতি মাসেই বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের উদ্যোগে লেগে থাকে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট। কোনোটি হয় দাবা ফেডারেশনে, কোনটি অন্যত্র। এই আসরগুলোতে গ্র্যান্ডমাস্টার, আন্তর্জাতিক মাস্টার, ফিদে মাস্টার, ক্যান্ডিডেট মাস্টার, রেটিংধারী খেলোয়াড়সহ নানান ধরনের দাবা খেলোয়াড় অংশ নেন। তেমনি এক দাবাড়ু সরকার রোকনুজ্জামান। পেশায় তিনি পুলিশের এসপি অর্থাৎ পুলিশ সুপার। শখের বশেই উনার দাবা খেলা। এই খেলাটিকে ভীষণ পছন্দ করেন। তাই কর্মব্যস্ততার মধ্যেও দাবাকে ভুলতে পারেননি ৫২ বছর বয়সী এই সরকারি কর্মকর্তা। তাই সুযোগ পেলেই তথা পুলিশের হেডকোয়ার্টার থেকে অনুমতি মিললেই অংশ নেন। দাবা টুর্নামেন্টে। মগ্ন হয়ে যান দাবা বোর্ডে। এবার অংশ নিয়েছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়া দিবস উপলক্ষে আয়োজিত দাবা টুর্নামেন্টে। এভাবেই তিনি বছরে কয়েকটি টুর্নামেন্ট অংশ নেন। সেই সাথে বাংলাদেশ পুলিশ দাবা দলের হয়ে দ্বিতীয় বিভাগ লিগের নিয়মিত খেলোয়াড় তিনি।
পিরোজপুরের সন্তান রোকনুজ্জামানের দাবার সাথে সম্পৃক্ত হওয়া ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার পর। রোকনুজ্জামান জানালেন, ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার পর যে সময় ছিল সেই সময় আমি ঢাকার অনির্বাণ দাবা স্কুলে দাবা চর্চা শুরু করি। প্রশিক্ষণ নিতে থাকি। এর মাধ্যমে দাবার প্রতি ভালোবাসার জন্ম। তাই এখনো খেলে যাচ্ছি। ১৭৩৪ রেটিংধারী দাবাড়ুর দাবায় আছে বড় একটি সাফল্যও। আর তা হলো তিনি যখন বুয়েটে লেখাপড়া করতেন তখন বুয়েটের দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। বুয়েট দাবায় চ্যাম্পিয়ন হলেও তার মনে কখনো শখ জাগেনি আন্তর্জাতিক মাস্টার হওয়ার বা গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার। এর নেপথ্য উল্লেখ করে এই সরকারি কর্মকর্তা জানালেন, ‘আসলে এ ধরনের পর্যায়ে আসতে হলে পেশাদার খেলোয়াড় হতে হয়। লাগে স্পন্সরের সহযোগিতা। এগুলো পাওয়া সম্ভব ছিল না যে কারণে আমি সেদিকে অগ্রসর হয়নি। আমার লক্ষ্য ছিল লেখাপড়া শেষ করে চাকরিতে যোগ দেয়া। প্রতিষ্ঠিত দাবাড়ু হওয়া নয়।’ বুয়েটে শিক্ষাজীবন শেষে লম্বা সময়ের দাবার বাইরে ছিলেন এই সরকারি কর্মকর্তা। তার দেয়া তথ্য, ‘২০-২৫ বছর আমি দাবা থেকে দূরে ছিলাম। এরপর গত ২-৩ বছর হলাো আবার এই খেলার সাথে সম্পৃক্ত।’ ২০০৩ সালে পুলিশে চাকরি নেন রোকনুজ্জামান। তিনি যে সরকারি প্রতিষ্ঠানে, তিনি যে বাহিনীতে কর্মরত সেই বাংলাদেশ পুলিশ দাবা দল প্রিমিয়ার লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। বিদেশী গ্র্যান্ডমাস্টারদের এনে তারা দল গড়ে। বাংলাদেশের অন্যতম দাবাড়– জিএম নর্ম পাওয়া ফাহাদ রহমান এই পুলিশ দলের খেলোয়াড়। দাবা ফেডারেশনের পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশ দলের সক্রিয় ভূমিকার কারণেই ফাহাদের পক্ষে এই নর্ম অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। তবে পুলিশ দলের হয়ে দ্বিতীয় বিভাগে খেললেও এই দলের ব্যানারে প্রিমিয়ার খেলার স্বপ্ন পোষণ করেন না রোকনুজ্জামান। জানালেন, প্রিমিয়ারে খেলতে হলে বা পুলিশের মূল দলে খেলতে হলে যে ধরনের পেশাদারি হওয়া দরকার যে পেশাদার খেলা আমার খেলা উচিত সেটা আমি খেলতে পারছি না। আমার পক্ষে সেটা সম্ভবও নয়, তাই এখন যে ভাবে দাবা খেলছি, যে পর্যায়ে আছি এতেই আমি সন্তুষ্ট।
দাবা অন্তঃপ্রাণ এই রোকনুজ্জামানের দেশে নির্দিষ্ট কোনো প্রিয় খেলোয়াড় নেই। তার মতে, এই দেশে প্রত্যেকটি গ্র্যান্ডমাস্টার, আন্তর্জাতিক মাস্টার, ফিদে মাস্টার, ক্যান্ডিডেট মাস্টার সবাই আমার প্রিয়। তার মতে বাংলাদেশে অনেক দফা প্রতিভা আছে কিন্তু সঠিকভাবে তাদের পক্ষে পৃষ্ঠপোষক জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছে না। দুই সন্তানের জনক এই পুলিশ সুপার বাবা এই বয়সে দাবা খেললেন আর সন্তানরা এখনো দাবায় সম্পৃক্ত হননি। তবে তার আশাবাদ, ‘ছেলেরা ভবিষ্যতে দাবা খেলবে।’ যুক্তি দাঁড় করিয়ে বললেন, আমি ইন্টারমিডিয়েটের পর দাবা খেলা এসেছি, আমি চাইব আমার সন্তানরা ইন্টারমিডিয়েট পর্যায় শেষ করে এরপর দাবায় আসুক। এর আগ পর্যন্ত ভালোমতো লেখাপড়া করুক।
নিজে কোনো টাইটেল পাননি। ফিদেও হতে পারেননি এই নিয়ে তার কোনো আফসোস নেই। তার মতে, আমি সেভাবে পেশাদারি দাবাড়ু হতে পারব না। সে সময় সুযোগও আমার হবে না। তাই এ নিয়ে আমার কোনো আফসোসও নেই। শখের বশে একটু খেলছি, বছরের যে কয়টা খেলার সুযোগ পাই তাতে আমি সন্তুষ্ট। তবে পুলিশ দাবা দল নিয়ে বেশ আশাবাদী তিনি। পুলিশ দাবা দল আরো ভালো করবে এমনটাই প্রত্যাশা তার।


আরো সংবাদ



premium cement