১৯ মে ২০২৪, ০৫ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ ১৪৪৫
`


বিনাচিকিৎসায় হারিয়ে যাবেন বনি?

-

বাংলাদেশের বহু তারকা ফুটবলারের সময়ের আগেই ক্যারিয়ারের ইতি। তা হাঁটুতে পাওয়া মারাত্মক চোটের কারণে। আবার বহু উঠতি প্রতিভা অকালেই ঝরে গেছেন। তারাও শিকার হাঁটুর ইনজুরির। অর্থাভাবে এই উঠতি গরিব ফুটবলারদের পক্ষে ব্যয়বহুল হাঁটুর চিকিৎসা করা সম্ভব হয়নি। ২০০১ সালে অনূর্ধ্ব-১৪ বিমান কাপে ২৮ গোল করা নারায়ণগঞ্জের স্ট্রাইকার মাহাবুব এভাবেই কিছুদিন পরে ফুটবল থেকে হারিয়ে যান হাঁটুর ইনজুরিতে পড়ে। তখন চিকিৎসার জন্য ৪০ হাজার টাকা জোগাড় করা সম্ভব হয়নি চা দোকানির ছেলে নারায়ণগঞ্জের মাহাবুবের। এবার কি সেই পরিণতিই হতে যাচ্ছে যশোরের মৃত ট্রাক ড্রাইভারের ছেলে গোলরক্ষক সানোয়ার হোসেন বনির?
গত বছর সেপ্টেম্বরে অনূর্ধ্ব-১৭ বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপের আঞ্চলিক ফাইনালে হাঁটুতে আঘাত পান বনি। যশোরে অনুষ্ঠিত ম্যাচটি ছিল বেনাপোল পৌরসভা এবং নিজামপুর ইউনিয়নের মধ্যে। সে ম্যাচে গোল ঠেকাতে গিয়ে নিজামপুর ইউনিয়ন দলের এক ফুটবলারের বুটের আঘাত লাগে বনির বাম হাঁটুতে। সেই চোট নিয়েও ম্যাচের বাকিটা সময় মাঠে ছিলেন। নিজ এলাকার দল বেনাপোল পৌরসভাকে চ্যাম্পিয়ন করিয়েছেন। জয় ২-০ গোলে। এরপর গত ৯ মাস ধরে মাঠের বাইরে। বিনাচিকিৎসায় বাড়ির বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন। হয়তো এভাবেই শেষ হয়ে যাবে বনির জাতীয় দলে এবং বিদেশের মাঠে লালসবুজের প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন।
বেনাপোলের নূর হোসেন ফুটবল অ্যাকাডেমির খেলোয়াড় বনি। প্রতিভাবান গোলরক্ষক হিসেবে নাম দারুণ সুনাম। তবে আহত হয়ে বিছানায় পড়ার পর কোচ ছাড়া আর কেউ খোঁজ নেননি তার। দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে কথাটি বললেন উঠতি এই কিপার। যশোর জেলা হাসপাতালে প্রথমে চিকিৎসা নেন বনি। সেখানে ডাক্তার বলেছিলেন পুরোপুরি সুস্থ হতে হলে ঢাকায় গিয়ে হাঁটুতে অপারেশন করাতে হবে। এ জন্য ব্যয় হবে ৩-৪ লাখ টাকা। কিন্তু অর্থাভাবে তার পক্ষে ঢাকায় এসে চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। বনি জানান, যশোরে চিকিৎসা করাতেই আমার ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। এই চিকিৎসার টাকা জোগাড়ে বাড়ির ১০টি মুরগি, ৫টি হাঁস, টেলিভিশন, নতুন জিনিসপত্র এবং বড় বড় হাঁড়ি পাতিল বিক্রি করেছি। এখন আমার কাছে আর কোনো টাকা নেই, যা দিয়ে চিকিৎসা করাবো। ৬ ফুট ২ ইঞ্চি লম্বা এই দীর্ঘদেহী গোলরক্ষক তথ্য দেন, ডাক্তার আমাকে বলেছেন ২-১ এক মাসের মধ্যে হাঁটুতে অপারেশন করালে আমি আমার ফুটবলে ফিরতে পারব। অন্যথায় বিনা চিকিৎসায় আমার ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যাবে।
২০১৭ সালে বনি ঢাকা পাইওনিয়ার লিগে নুরুল ইসলাম ফুটবল অ্যাকাডেমির হয়ে খেলেন। ২০১৮ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ এর চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলে ডাকও পান বনি। পরে অবশ্য বাদ পড়েন বেশি বয়সের কারণে। দেশের বিভিন্ন স্থানে খ্যাপ খেলে ম্যাচ প্রতি ৩-৪ হাজার টাকা করে পেতেন। সে দিয়ে চলতো সংসার। এখন বিছানায় পড়ে থেকে বড় ভাইদের সাহায্যের ওপর চলতে হচ্ছে।
বনির কোচ ঢাকার ফুটবলের সাবেক স্ট্রাইকার সাব্বির আহমেদ পলাশ। তার মতে, দারুণ এক প্রতিভাবান গোলরক্ষক এই বনি। আমার মতে ভবিষ্যতের আমিনুল। ও কোনো আসরের সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার জেতা ছাড়া বাড়ি ফেরেনি। কিন্তু এখন তো দেখছি বিনাচিকিৎসায় ছেলেটির ক্যারিয়ারই বিকশিত হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যাবে। গরিব এই ছেলেটির পক্ষে তো ৩-৪ লাখ টাকা জোগাড় করা সম্ভব নয়।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল