বিশ্বের সর্বোত্তম শিক্ষক
- ড. আহসান হাবীব ইমরোজ
- ২৯ অক্টোবর ২০২০, ১৬:২৪
‘ইকরা’ (পড়)! মহাবিশ্বের মহান স্রষ্টা তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ ফেরেশতা জিবরাইল আমিনের মাধ্যমে বিশ্বের সর্বোত্তম মানুষ হজরত মুহাম্মাদ সা:-এর কাছে সর্বপ্রথম এই শব্দের মাধ্যমেই মানবতার মুক্তির যুগান্তকারী গ্রন্থের শুভ উদ্বোধন করেন।
৬১০ সালে মাহে রমজানের কোনো এক সুন্দর দিনে কাবা থেকে তিন কিলোমিটার দূরত্বে মরুময় আরবের জাবালে নূর বা আলোর পাহাড়ের অন্ধকার পাথুরে হেরাগুহায় এটি অবতীর্ণ হয়। ৯০০ ফিট উচ্চতায় এ গুহায় পৌঁছতে প্রায় ১৭৫০ স্টেপে একজন তাগড়া মানুষের ৪০-৪৫ মিনিট সময় লাগবে। যখন এই শব্দটিসহ কুরআনের পাঁচটি আয়াত নাজিল হয়, ঠিক তখনই শুরু হয়ে যায় মহানবী সা:-এর মহান শিক্ষা আন্দোলন।
‘পড়ালেখা করে যে গাড়িঘোড়া চড়ে সে’। ছোটবেলায় এ প্রবাদটি শুনে শুনেই আমরা বড় হয়েছি। এ রকম কী একটা গানও তখন কানে কানে বাজত। মনে হয় আমাদের গুরুজনেরা এটি বলতেন, যাতে করে আমাদের অবচেতন হৃদয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠার একটি আবেগ সৃষ্টি হয়। আর সেটি তারা চাইতেন সত্যিকার জ্ঞান, দক্ষতা এবং অবশ্যই সততার মাধ্যমে।
পরবর্তীকালে যখন সক্রেটিস থেকে আল্লামা ইকবাল, রবিঠাকুর ও মন্তেসরি পর্যন্ত প্রায় ৪০ জন মনীষীর শিক্ষা-সংজ্ঞা নিয়ে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করার সুযোগ পাই তখনো সেই তিনটি বিষয়; জ্ঞান, দক্ষতা এবং সততাকেই খুঁজে পেয়েছি। কিন্তু এখনকার চিত্রটা কেমন?
যেমন, বলা যায় খুব সাম্প্রতিক উদাহরণ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ডিজি হেলথের ড্রাইভার আবদুল মালেক আর অষ্টম শ্রেণী পাস ড্রাইভার নেই বরং সেই যেন ডিজি হেলথের মালিক বনে গেছে!
এ কথাটি লিখতে আমার খুব কষ্ট হয়েছে কিন্তু কী করার? যখন জাতীয় পত্রিকাগুলো লেখে একজন তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী হয়েও সে তার ২৭ জন নিকটাত্মীয়কে চাকরি দিয়েছে। সরকারি ড্রাইভার সংস্থার প্রেসিডেন্ট হিসেবে সে বহাল আছে ২৫ বছর ধরে। ঢাকাতে ১২ কাঠা করে জায়গার ওপর তার দু’টি ৭ তলা বিল্ডিং, যাতে আছে ২৪টি ফ্লাট।
১৫ কাঠা জায়গার ওপর ডেইরি ফার্ম আছে তুরাগে। ধানমণ্ডি হাতিরপুলে চার কাঠা জায়গায় ১০ তলা নির্মাণাধীন বিল্ডিং এবং বিভিন্ন জায়গায় আরো নামে বেনামে ২৪টি ফ্ল্যাট। বিভিন্ন ব্যাংকে ১০০ কোটি টাকা জমা আছে। পূর্ববর্তী দুই ডিজির সাহায্যে যেন সেই ছিল ছায়া ডিজি।
তখন তো মনে হয় রূপকথা আলিফ-লায়লার সেই ভয়ঙ্কর দৈত্য তার জাদুকরী চেরাগ হাতে দাঁড়িয়ে আছে ড্রাইভার আবদুল মালেকের পদপ্রান্তে একান্ত দাস হয়ে।
তবে চুনোপুঁটি আবদুল মালেকের লালনকারী বড় বড় ডিগ্রিওয়ালারা কিন্তু পরেছেন ভ্যানিশ জ্যাকেট। যার ফলে তাদের কখনো দেখা যাচ্ছে না। নিশ্চয়ই এই ভ্যানিশ জ্যাকেট আমার দেশের এক শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার। জানি না কেন এর পেটেন্ট দাবি করা হচ্ছে না!
তবে স্বীকার করতেই হবে আবদুল মালেকরা অষ্টম শ্রেণী পাস হলেও তাদের অনেক দক্ষতা আছে। না হলে নিজে দানকানা মাছ হয়েও কি করে দানবীয় নীলতিমির মতো বিশাল বপুওয়ালা ডিজি ও ঊর্ধ্বতনদের নাকে দড়ি দিয়ে ছাগলের মতো ঘুরায়!
হ্যাঁ এসব ডিজি, পাজিদের অনেক ডিগ্রি থাকলেও দক্ষতার ঘাটতি আছে আর সবচেয়ে বড় সমস্যা সততার। তাদের ক্ষুধার কাছে সাহারা মরুভূমিও নস্যি। কুচকুচে গলিজময় বুড়িগঙ্গাও তাদের চেয়ে পূত-পবিত্র।
সাময়িক বিত্ত-বৈভবে এরা হাবুডুবু খেলেও অসহায়-গরিব জনগণের আমানত হরণের অপরাধে দুনিয়াতেও পাবে তারা ধিক্কার আর আখেরাতে তাদের মধুর আলিঙ্গন করবে লেলিহান আগুনের সমুদ্র।
মাইকেল এইচ হার্ট মুহাম্মদ সা:-কে বিশ্বের সর্বকালের এক নাম্বার ব্যক্তি হিসেবে বাছাই করেছেন তাঁর ইহ ও পারলৌকিক উভয় জগতে সমভাবে সর্বোচ্চ সফলতার জন্য। তার ভাষায় : ংঁঢ়ৎবসবষু ংঁপপবংংভঁষ রহ নড়ঃয ঃযব ৎবষরমরড়ঁং ধহফ ংবপঁষধৎ ৎবধষসং.
তিনি ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সাফল্যের কথা বলেছেন।
অপর দিকে, আমরা যদি আমাদের সামগ্রিক জীবন পর্যালোচনা করি তাহলে অনেক স্তর পাবো; ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গন। আবার ব্যক্তিগত জীবনেও রয়েছে নানাদিকের বিস্তৃতি যেমন : জ্ঞানগত, দৈহিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক দিক। একজন মানুষকে সর্বাঙ্গীণ সফল হতে হলে এই সার্বিক ক্ষেত্রেই হতে হবে। অনেকেই আছেন বাইরে বিশাল নেতা কিন্তু পরিবারে জিরো! অনেকে ছিলেন জগতের স্টার কিন্তু এখন শুধু ছাই,ভস্ম।
সৌভাগ্যবশত আমার জন্ম হয়েছিল এক শিক্ষক পরিবারে। দাদা, বাবা, মা, মামা, চাচা এবং বৃহৎ পরিবারের ভাইবোন ও ভাবীদের ভেতর কমপক্ষে ডজন দেড়েক শিক্ষক আছেন।
এ ছাড়াও আমার পড়া পাঁচটি স্কুল, একটি কলেজ এবং পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষক। আমাদের প্রতিষ্ঠিত লাইটহাউসের সব শাখা বন্ধুদের গড়া শ’খানেক স্কুল, মাদরাসার কয়েক হাজার শিক্ষক যাদের ছোঁয়া, ছায়া, মায়া এবং দয়ায় এই আমির বেড়ে উঠেছি। সুতরাং আমার নিঃশ্বাসে, বিশ্বাসে এবং মিনিটে, সেকেন্ডে শিক্ষকরা।
তবে সতত সর্বদা যাকে মডেল হিসেবে খুঁজে পাই, যার আদর্শে প্রাণ জুড়াই তিনি হচ্ছেন নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা:।
এই প্রেক্ষাপটেই ভারতের এক হিন্দু অধ্যাপক, রামকৃষ্ণ রাও তার অনবদ্য বই ‘মুহাম্মদ দ্যা প্রফেট অব ইসলামে’ মন্তব্য করেন : যদি উদ্দেশ্যের মহত্ব, উপায়-উপকরণের স্বল্পতা এবং বিস্ময়কর ফল মানব প্রতিভা যাচাইয়ের তিনটি মানদণ্ড হয় তাহলে আধুনিক ইতিহাসের কোনো মানুষের সাথে হজরত মুহাম্মাদ সা:-এর তুলনা করার মতো ধৃষ্টতা কে দেখাতে পারে?’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা