২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজ

দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজ - উম্মেহানি বিনতে আবদুর রহমান - ফাইল ছবি

কুরআনের মৌলিক পরিভাষা ‘ইকামাতে দ্বীন’ আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া জানানোর পর বলা যায়Ñ মানবজাতির পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান তথা মহাগ্রন্থ আল কুরআনুল কারিমে যতগুলো পরিভাষা (আমলে সালেহ, তাজকিয়াতুন নফস, আকিমুস সালাহ, ইলাহ, রব, দ্বীন, ইবাদত ইত্যাদি) ব্যবহার করা হয়েছে, ‘ইকামাতে দ্বীন’ তন্মধ্যে অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ।
ছোট দুটি শব্দের একটি অর্থবোধক বাক্য
‘ইকামাতে দ্বীন’
প্রথম শব্দ ইকামাত মানে স্থাপন করা, প্রতিষ্ঠাকরণ, অধিষ্ঠিত করানো, কায়েম করা, অবস্থান ইত্যাদি।
দ্বিতীয় শব্দ দ্বীনের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ধর্ম, বিশ্বাস, আইন, জীবনবিধান ইত্যাদি। অতএব, ইকামাতে দ্বীনের অর্থ হচ্ছে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা বা কায়েম করা।
সূরা আশ শুরার ১৩ নম্বর আয়াতে ‘ইকামাতে দ্বীন’ সম্পর্কে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে ‘তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করো এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না’
এখন এই ‘দ্বীন’ কী? পবিত্র কুরআনে কয়েকটি অর্থে এই ‘দ্বীন’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, যেমন
১. বিচার দিবস/ প্রতিদান দিবসের মালিক (সূরা ফাতিহা-৩)
২. আনুগত্য/আত্মসমর্পণ/হুকুম মানা (সূরা আলে ইমরান-৮৩)
৩. বিধান বা পদ্ধতি (সূরা আলে ইমরান-৮৫)
৪. আইন/রাষ্ট্র/সমাজ ব্যবস্থা/বিচার ব্যবস্থার (সূরা নূর-২)
৫. জীবনের সব ক্ষেত্রে ওহির জ্ঞানানুসারে নিজেকে মহান রবের কাছে আত্মসমর্পণ করাকে বলা হয় ‘ইকামাতে দ্বীন’।
৬. ‘ইকামাতে দ্বীনের’ মূল মর্ম কথা কী?
আমরা আগেই বুঝেছি যে ইকামাতে দ্বীন অর্থ দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা/ কায়েম করা। যেমন

ক. নামাজের মাসয়ালা শিক্ষা করাকে নামাজ কায়েম বলে না বরং বাস্তবে কাতার সোজা করে নামাজের জন্য দাঁড়ানোকেই ‘ইকামাতে সালাহ’ বলে।

খ. জামা-কাপড় পরা সমাজে প্রতিষ্ঠিত আছে বলেই নিতান্ত পাগল ছাড়া নগ্ন মানুষ পাওয়া যায় না। এতে বোঝা যায়, মানুষ সমাজবদ্ধভাবে পোশাক পরাকে কায়েম করেছে।
এই ভূখণ্ডে মানুষের জীবনধারণ, আচার-অনুষ্ঠান, বিধি চলবে মহান রবের দ্বীন অনুযায়ী। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সব দেশে ব্যবসায়, অর্থনীতি, সংসদ ভবন, গণভবনসহ সার্বিক জীবনযাপন মহান আল্লাহ পাকের আইন ও রাসূল সা:-এর আদর্শ অনুযায়ী হচ্ছে না, বরং তা মানবরচিত মতবাদে চলছে। তাই বলা যায়, আমাদের সার্বিক জীবনে আল্লাহর দ্বীন কায়েম নেই। আমাদের কর্তব্য ছিল আল্লাহর দেয়া বিধান মোতাবেক জীবন পরিচালনা করা। কেননা, আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বলেছেন, ‘তিনি সেই মহান সত্তা যিনি তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন যেন তাঁকে সব দ্বীনের ওপর বিজয়ী করেন।’ (সূরা সফ-৯)

সৃষ্টজগতের কাজই হলো তার স্রষ্টার আইন ও বিধানকে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রীয়, অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক জীবনের পরিমণ্ডলে একচ্ছত্রভাবে মেনে নিয়ে জীবনযাপন করা। কিন্তু এর পরও দেখা যায় মানুষ জেনে-না জেনে সমাজবাদ-পুঁজিবাদ, মার্কসবাদ, ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ, নাস্তিক্যবাদ, সোসিওলিজমের মতো অসাড় মতবাদে হাবুডুবু খাচ্ছে। আমরা অনেকেই আছি যারা নামধারী ও ইসলামী লেবাস পরিহিত মুসলমান, পরিপূর্ণ দ্বীনসহ ইসলামে প্রবেশ করতে পারিনি। অথচ আল্লাহপাক বলেছেনÑ ‘তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না।’ (সূরা বাকারা-১০২)

পোশাক পরিচ্ছদে ইসলামিকতা নয়, কর্মেও ইসলামের ধারাবাহিক বাস্তবায়ন অত্যাবশ্যক। রব্বে কারিম বলেন, ‘আর মানুষের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা বলে আমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান এনেছি অথচ আদৌ তারা ঈমানদার নয়’ (সূরা বাকারা-৮)

আল্লøাহ ও পরকালের ওপর ঈমান আছে, নামাজ পড়ে, ইবাদতও করে, এরপরও আল্লাহ বলেন, ‘সে ঈমানদার নয়। কারণ নেফাকীযুক্ত ঈমানদার হচ্ছে মুনাফেক, আর পূর্ণ মুমিন হতে হলে মহান রবের পূর্ণ আনুগত্য করতে হবে।’ পূর্ণ আনুগত্য তো হবে যখন ‘ইকামাতে দ্বীন’ প্রতিষ্ঠিত হবে। আমাদের বিচার ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থাসহ সব পর্যায়ে দ্বীন ইসলামকে তথা আল্লাহর বিধিবিধানকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবেÑ রাব্বুল আরশিল আজিমের হুকুম অনুযায়ী সংসদ চালাতে হবে এবং সংবিধান রচিত হতে হবে। দ্বীন প্রতিষ্ঠার এ গুরুদায়িত্ব সব নবীকেই দেয়া হয়েছিল। এই দায়িত্ব প্রতিষ্ঠাকল্পেই আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ সা: মদিনাতুল মোনাওয়ারাকে সর্বপ্রথম ইসলামিক স্টেট হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে কুরআনের বিধান কায়েম করেছিলেন। পরবর্তীতে তাঁকে অনুসরণ করে ইসলামের মহান চার মনীষী ধাপে ধাপে খলিফা হিসেবে নিযুক্ত হন এবং এই চারজন উজ্জ্বল মানবনক্ষত্র রাষ্ট্রশাসনের অবিস্মরণীয় যে দৃষ্টান্ত রেখে যান, তা উম্মাহ আগেও কখনো প্রত্যক্ষ করেনি এবং ভবিষ্যতেও কখনো প্রত্যক্ষ করবে না। সুতরাং প্রশ্ন থেকে যায়, ইসলামী খেলাফত বা দ্বীন প্রতিষ্ঠার বিরতিহীন এ সংগ্রামের দায়িত্ব এখন বর্তমানের নয় কী?

কুরআনুল কারিম থেকে আজো যদি ত্যাগ-তিতিক্ষা, ন্যায়বিচার- মুয়ামালাত-মুয়াশারাত, উত্তম আদর্শ, জিহাদি প্রেরণা ও ঐক্যের শিক্ষা দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠা করা যায়, তাহলে ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক জীবনের প্রতিটি কেন্দ্র হবে কুরআনিক। তখন আর জালিমের লৌহদণ্ডে বসে মজলুমের চোখে সূর্যের আলো ক্ষীণ মনে হবে না, শিশু এবং নারীর যন্ত্রণাদগ্ধ আর্তনাদ শুনতে হবে না, দেখতে হবে না কোনো যুবককে অন্যায়ভাবে হত্যা করার দৃশ্য; আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আমাদের হৃদয়কে ইসলামের জন্য প্রশস্ত করে দিন, আমীন!

লেখক : শিক্ষার্থী, আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ


আরো সংবাদ



premium cement

সকল