মালা বেগমের স্বামী ভ্যানচালক নবিবর রহমানের আয়-রোজগার দিয়ে সংসার চলছিল না। এক বেলা খেলে আরেক বেলা খাবার জোটত না। সেখানে তিন ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার কথা ভাবা আকাশ কুসুম কল্পনা করার মতো। কিন্তু কথায় আছে যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে। মালা বেগম উত্তবাঞ্চলের দরিদ্রদের কমসংস্থান কর্মসূচির দ্বিতীয় পর্যায় থেকে সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রতিমাসে এখন ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা রোজগার করছেন। তার মতো অনেক নারী বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বামীর নুন আনতে পানতা ফুরার সংসারে সহযোদ্ধা হয়েছেন।
উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, পল্লী উন্নয়ন সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১২ সালে কিশোরগঞ্জ উপজেলায় উত্তবাঞ্চলের দরিদ্রদের কর্মসংস্থান কমসূচি নামে একটি প্রকল্প চালু হয়। এ প্রকল্প থেকে প্রথম পর্যায় ২৮৮ জন নারী-পুরুষ বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ নেয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ৬২৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৩২ জন, নারী ৭৮০ জন।
গত সোমবার নিতাই ইউনিয়নের ফরুয়া পাড়ায় গেলে দেখা যায়, ভ্যানচালক নবীবার রহমানের স্ত্রী তিন সন্তানের জননী মালা বেগম সেলাই মেশিনে বসে বাড়ির উঠানে কাজ করছিলেন। তার কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভাই বেশিক্ষণ আপনাদের সাথে কথা বলতে পারবো না। অনেক কাজ নেয়া আছে। কাজগুলো দুদিনের মধ্যে শেষ করতে হবে।’
তার স্বাবলম্বী হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘১০ বছর আগে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামীর সংসারে দেখি অভাব-অনটন আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে আছে। এর মধ্যেই তিন সন্তানের মা হয়েছি।
স্বামীর রোজগারে দিন কাটছিল না এক বেলা খেলে আরেক বেলা খাবার জুটত না। ভাবছিলাম বড় মেয়েটাকে প্রতিবেশীর লোকের সাথে ঢাকা পাঠিয়ে দিব। কিন্তু একদিন গ্রামের চৌকদারের কাছে জানতে পারলাম পল্লী উন্নয়ন অফিস থেকে সেলাই প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। সেখানে গিয়ে দু’মাস সেলাই প্রশিক্ষণ নিলাম। প্রশিক্ষণ শেষে অফিস থেকে একটি সেলাই মেশিন ও ১৫ হাজার টাকা সুদমুক্ত ঋণ দিয়েছে আমাকে। সেই থেকে আমার পথ চলা। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন প্রতিমাস নি¤œ ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা রোজগার করছি। তিন ছেলে-মেয়ে কিন্ডার গার্টেন স্কুলে পড়ালেখা করছে।’
এ রকম ভাবে ডাংগাপাড়া গ্রামের প্রশিক্ষণার্থী রুমা বেগম (এম্বডারী), পেয়ারী বেগম (নকঁশী কাথা), আরজিনা বেগম (শতরঞ্জি) ছহেরা বেগম, মোতাহারা বেগমরা ওই প্রকল্প থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের পরিবারের অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়েছেন।
রুমা বেগম বলেন, ‘ক্ষুদ্র শিল্পনগরী নামে খ্যাত সৈয়দপুর থেকে অনেক ব্যবসায়ী এসে নকঁশী কাঁথা, ব্যাগ ও শতরঞ্জির চাহিদা দিচ্ছে। এখন প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা আয় হচ্ছে।’
প্রকল্প ম্যানেজার এ এইচ এম রায়হান বলেন, ‘প্রকল্পের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হল বেকার নারী-পুরুষকে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ জনশক্তিরূপে গড়ে তোলা।
উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘প্রকল্পের মাধ্যমে এ উপজেলার বেকার সমস্যা ও দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনতে পারলেই এ প্রকল্পের লক্ষ্য উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হবে।’