১৬ মে ২০২৪, ০২ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫
`


মঙ্গল শোভাযাত্রাকে অসাম্প্রদায়িক বলা কি ঠিক?

সুশাসন
-


মোগল সম্রাট আকবরের শাসনামলে বাংলা সম্পূর্ণ কৃষিনির্ভর ছিল। তৎকালীন বাংলায় কর আদায় সহজ করার জন্য সম্রাট আকবরের নির্দেশে জ্যোতির্বিজ্ঞানী আমির ফতুল্লাহ সিরাজী চন্দ্র বর্ষপঞ্জিকে সৌর বর্ষপঞ্জিতে রূপান্তরিত করেন। এর ভিত্তিতে সম্রাট আকবর ৯৯২ হিজরি মোতাবেক ১৫৮৪ সালে হিজরি সৌর বর্ষপঞ্জির প্রচলন করেন। সম্রাট আকবর তার সিংহাসনে আরোহণের বছর থেকে এ পঞ্জিকা প্রচলনের নির্দেশ দেন। এজন্য ৯৬৩ হিজরি সাল থেকে বঙ্গাব্দ গণনা শুরু হয়। ৯৬৩ হিজরি সালের মহররম মাস ছিল বাংলা বৈশাখ মাস। এজন্য বৈশাখ মাস বঙ্গাব্দ বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস এবং ১ বৈশাখকে নববর্ষ ধরা হয়।
বঙ্গাব্দ প্রচলন পরবর্তী সুদীর্ঘকাল থেকে গ্রাম-বাংলায় ঐতিহ্যগতভাবে পহেলা বৈশাখ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এসব মেলায় আসবাবপত্রসহ গৃহস্থালি ও কৃষি কাজে ব্যবহৃত পণ্যের বিপুল সমারোহ দেখা যায়। এর বাইরে মেলায় মাটি, বাঁশ ও কাঠের তৈরি বিভিন্ন ধরনের খেলনা এবং বিভিন্ন ধরনের মিষ্টিজাতীয় খাবার যেমন জিলাপি, বাতাসা, কদমা, মুড়ি ও চিঁড়ার মোয়া, গুড় মিশ্রিত খই, খাজা, গজা এবং দেশীয় ফলফলাদি প্রভৃতির পসরা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। গ্রামীণ অর্থনীতি ক্রমে শহরমুখী হয়ে উঠলে পহেলা বৈশাখকে উপলক্ষ করে শহরের বিভিন্ন স্থানে এরূপ মেলার আয়োজন প্রত্যক্ষ করা যায়। এরূপ মেলায় উল্লিখিত খাবার ছাড়াও চটপটি, ফুসকা, বিভিন্ন ধরনের পিঠা, খিচুড়ি, বিরিয়ানি, বিভিন্ন ভর্তাসমেত পান্তা-ইলিশ প্রভৃতির সমারোহ পরিলক্ষিত হয়।

পহেলা বৈশাখকে উপলক্ষ করে দীর্ঘকাল যাবৎ আমাদের বাংলা অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা পুরনো পাওনার হিসাবনিকাশ চুকিয়ে নতুন হিসাব খোলার জন্য যে খাতার প্রচলন করেন সেটি হালখাতা নামে অভিহিত। হালখাতা উৎসবে ব্যবসায়ীরা তাদের দেনাদারদের মিষ্টিমুখ করার ব্যবস্থা রাখেন। ব্যবসায়ীরা সম্পূর্ণ বকেয়া পাওনা আদায়ের উদ্দেশ্যে এ উৎসবের আয়োজন করলেও দেনাদাররা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী দেনা পরিশোধ করে থাকেন। আর তাই নতুন করে হালখাতা খোলা হলেও অনেক ক্ষেত্রে তাতে পুরনো হিসাবের রেশ থেকেই যায়।
সুদীর্ঘকাল যাবৎ বাংলায় মুসলমান ও হিন্দুরা সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির সাথে বসবাস করলেও মাঝে মাঝে রাজনৈতিক কারণে তা বিঘ্নের ঘটনা ঘটেছে। বাংলার জনসাধারণ বাঙালি সংস্কৃতি ধারণ করলেও মুসলিম ও হিন্দুদের ধর্মীয় সংস্কৃতিতে ভিন্নতা রয়েছে। এ দেশের প্রধান ধর্মীয় গোষ্ঠী মুসলিমদের ধর্ম ইসলামে পৌত্তলিকতা অর্থাৎ মূর্তি পূজার কোনো স্থান নেই। মুসলিমরা এক আল্লাহে বিশ্বাসী এবং তাঁর কোনো প্রতিচ্ছবি নেই। হিন্দুরা বহু দেব-দেবীতে বিশ্বাসী এবং তারা এসব দেব-দেবীর মূর্তি বানিয়ে মূর্তির সামনে আরাধনা করে তার কৃপা প্রার্থনা করে।
বিগত শতকের অষ্টম দশকের শেষ বছর অর্থাৎ ১৯৮৯ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে ঢাকঢোল বাজিয়ে নেচে-গেয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা নামক একটি উৎসব পালিত হয়ে আসছে। শোভাযাত্রাটিতে শুরু হতেই যেসব প্রতীক ব্যবহৃত হয়ে আসছে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্যাঁচা, বাঘ, সিংহ, ময়ূর, ইঁদুর, হাতি, হাঁস, ষাঁড়, প্রজাপতি, সূর্য, বিভিন্ন ধরনের মুখোশ ও মঙ্গল প্রদীপ। এসব প্রতীকের প্রতিটি হিন্দু ধর্মীয় সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অপর দিকে মুসলিম ধর্মীয় সংস্কৃতির সাথে সম্পূর্ণরূপে সম্পর্কহীন।

হিন্দু ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী প্যাঁচা হলো ধনসম্পদ ও ঐশ্বর্যের দেবী লক্ষ্মীর বাহন। একই ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী দেবী দুর্গার বাহন হচ্ছে বাঘ ও সিংহ। ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী দেব সেনাপতি কার্তিকের বাহন হচ্ছে ময়ূর। হিন্দু ধর্মীয় দেবতা দুর্গার ছেলে গণেশের বাহন হচ্ছে ইঁদুর। ধর্মীয়শাস্ত্র মতে, গণেশের মুখাবয়ব হাতির সদৃশ। হিন্দু ধর্মীয় প্রথা ও বিশ্বাস অনুযায়ী হাঁস হচ্ছে বিদ্যাদেবী সরস্বতীর বাহন। হিন্দু ধর্মীয় দেবতা শিবের বাহন হলো ষাঁড়। হিন্দু ধর্মীয় রীতি ও সংস্কৃতি অনুযায়ী প্রজাপতি হলো বিয়ের দেবতা। হিন্দু ধর্মশাস্ত্রে সূর্যকে বলা হয় সৌরদেবতা। হিন্দু ধর্মীয় বিবরণ অনুযায়ী সূর্যই হলো একমাত্র দেবতা যার উপস্থিতি প্রতিদিন প্রত্যক্ষ করা যায়। শোভাযাত্রায় যেসব মুখোশ ব্যবহৃত হয় সেগুলো মানুষসহ দৈত্যদানব ও বিভিন্ন জীবজন্তুর প্রতিচ্ছবি। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মঙ্গল ও শুভ কামনায় প্রদীপ জ্বালিয়ে যে বিশেষ আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হয় সেটিকে বলা হয় মঙ্গলপ্রদীপ।

১৯৮৯ সাল-পূর্ববর্তী আমাদের বাংলাদেশের কোথাও মঙ্গল শোভাযাত্রা পালনের ঘটনা প্রত্যক্ষ করা যায়নি। ১৯৮৯ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট হতে যে মঙ্গল শোভাযাত্রার সূচনা সময় ও যুগের পরিক্রমায় বিভিন্ন জেলা শহরে এর বিস্তৃতি ঘটেছে। মঙ্গল শোভাযাত্রার যারা আয়োজক এবং এ শোভাযাত্রায় যারা অংশগ্রহণ করেন তারা সবসময় নিজেদের অসাম্প্রদায়িক এবং উৎসবটিকে সর্বজনীন দাবি করেন। কিন্তু প্রশ্ন দেশের বৃহত্তর ধর্মগোষ্ঠীর ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অনুপস্থিতিতে মঙ্গল শোভাযাত্রাইবা কেন এবং তথায় একটি বিশেষ ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় সংস্কৃতির দেবদেবীর বাহন হিসেবে ব্যবহৃত প্রাণীগুলোর প্রতীকের উপস্থিতিইবা কেন?
ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞার কারণে আমাদের দেশের মুসলিম জনগোষ্ঠী শূকর, কচ্ছপ, কুচে মাছ প্রভৃতির মাংস ভক্ষণ করে না। অনুরূপভাবে ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞার কারণে হিন্দু জনগোষ্ঠী গরুর গোশত ভক্ষণ করে না। আমাদের দেশে মুসলিম বা হিন্দু সম্প্রদায়ের কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কর্তৃক আয়োজিত কোনো সামাজিক বা পারিবারিক অনুষ্ঠানে অপর ধর্মাবলম্বীদের দাওয়াত করা হলে অনুষ্ঠানের আয়োজক খাবার পরিবেশনের সময় ধর্মীয় সংস্কৃতি যেন কোনোভাবে ব্যাহত না হয় সে বিষয়ে সচেষ্ট থকেন। মুসলমান ও হিন্দুদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অতীতে কখনো এক সম্প্রদায়ের লোক অপর সম্প্রদায়ের লোককে জোরপূর্বক নিজ ধর্মে নিষিদ্ধ এমন কিছু খেতে বাধ্য করেছে এমন দৃষ্টান্ত বিরল। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, এক সম্প্রদায়ের লোক যেটি ভক্ষণ করে না অন্য সম্প্রদায়ের উপস্থিতি বা প্রবেশ বারিত নয় এমন স্থানে এরূপ খাবার নিষিদ্ধ থাকবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের এক বড় অংশ নিজেদের অসাম্প্রদায়িক বলে দাবি করেন। কোনো এক বছর মঙ্গল শোভাযাত্রা সমাপ্ত হওয়া পরবর্তী চারুকলার ক্যান্টিন হতে শিক্ষক ও শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের একটি অংশের জন্য যে খাবার সরবরাহ করা হয় তা গরুর গোশতের তৈরি তেহারি ছিল এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের না জানিয়ে খাওয়ানো হয়েছে দাবি করে তারা ক্যান্টিনের মালিক ও ম্যানেজারকে বেধড়ক মারধর ও ক্যান্টিনের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। এ বিষয়ে চারুকলার ডিন ও মঙ্গল শোভাযাত্রার আহ্বায়কের ভাষ্য গরুর গোশতের তেহারি সরবরাহের প্রশ্নই ওঠে না, কারণ বিগত কয়েক বছর যাবৎ চারুকলার ক্যান্টিনে গরুর গোশত রান্না নিষিদ্ধ। এ প্রসঙ্গে ক্যান্টিন মালিক ও ম্যানেজারের নিকট জানতে চাওয়া হলে তারা বলেন, সেদিন ক্যান্টিনে হিন্দুদের জন্য মোরগ-পোলাও, মুসলিমদের জন্য গরুর গোশতের তেহারি এবং নিরামিষভোজীদের জন্য খিচুড়ি ও সবজির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ক্যান্টিন মালিক ও ম্যানেজারের ভাষ্য মতে, মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের সাথে সম্পর্কিত কিছু নেতা বিনা পয়সায় কয়েক শ’ খাওয়ার প্যাকেট নিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই এ অপবাদ, মারধর ও ভাঙচুর।

চারুকলা ইনস্টিটিউট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিষয়ে যারা অধ্যয়ন করেন তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলে বসবাস করেন। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য জগন্নাথ হল নামক একটি আবাসিক হল রয়েছে। এ হলটিতে হিন্দু ধর্মে নিষিদ্ধ গরুর গোশত কখনো রান্না করা হয় না। অপর দিকে এটিতে হিন্দু ধর্মে নিষিদ্ধ নয় এমন সব ধরনের প্রাণীর মাংসের রান্নার প্রচলন রয়েছে। অপরাপর আবাসিক হলগুলোতে প্রধানত মুসলিম শিক্ষার্থীদের বসবাস এবং এসব আবাসিক হলের ক্যান্টিন ও ডাইনিং হলে ইসলাম ধর্মে নিষিদ্ধ নয় এমন সব প্রাণীর গোশত রান্না হয়ে থাকে। কোনো হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থী এসব হলে বসবাস করতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী বাধা না থাকলেও সচরাচর কাউকে আগ্রহী হতে দেখা যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদে ও ইনস্টিটিউটে যেসব ক্যান্টিন রয়েছে এগুলোতে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের খাবার হিসেবে নিষিদ্ধ নয় গরুর গোশত রান্না ও পরিবেশনা বারিত নয়। চারুকলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ প্রতিষ্ঠান হয়ে থাকলে এখানকার ক্যান্টিনে গরুর গোশত রান্না এবং এটির পরিবেশনা বারিত হওয়ার কোনো অবকাশ নেই। চারুকলার ক্যান্টিন মালিক ও ম্যানেজার দাবি করেন ইনস্টিটিউটটির যেসব হিন্দু শিক্ষার্থী তাকে গরুর গোশতের তেহারি রান্নার জন্য মারধর ও তার ক্যান্টিন ভাঙচুর করেছে এর আগে তারাই তার ক্যান্টিনে তাদের জন্য শূকরের মাংস রান্না করতে বাধ্য করেছিল।

চারুকলার ডিন ও মঙ্গল শোভাযাত্রার আহবায়কের দাবি অনুযায়ী, প্রকৃতই চারুকলায় গরুর গোশত রান্না ও পরিবেশনা নিষিদ্ধ হয়ে থাকলে তা ইনস্টিটিউটটিতে অধ্যয়নরত হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় বিধানের প্রতি শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশে করা হয়েছে। ইনস্টিউটটিতে যে সংখ্যক হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে মুসলিম শিক্ষার্থীর সংখ্যা তাদের চেয়ে কম নয়। এমতাবস্থায় মুসলিম শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা ইনস্টিটিউটে অবস্থানকালীন নামাজ আদায় করতে চায় তাদের ধর্মীয় বিধান পালনে সহায়তায় ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ কি তথায় নামাজ আদায়ের জন্য কোনো পৃথক কক্ষের ব্যবস্থা করেছে? আর করে না থাকলে আমরা কি করে বলি ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ এবং ইনস্টিটিউটটিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা অসাম্প্রদায়িক?

পহেলা বৈশাখ যে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন গত প্রায় তিন দশক ধরে আমাদের দেশে চারুকলা ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থাপনায় চলে আসছে এটির আনুষ্ঠানিকতা পুরোপুরি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সংস্কৃতি ও বিশ্বাসের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এটি বাঙালি মুসলিম বা সর্বজনীন বাঙালি সংস্কৃতি নয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মতে শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়েছে অশুভ শক্তিকে বিনাশ করতে। তাই হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা অশুভ শক্তিকে তাড়াতে শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিনে তথা জন্মাষ্টমীতে প্রতি বছর বাংলাদেশে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শ্রীকৃষ্ণের জন্মকে উপলক্ষ করে মঙ্গল শোভাযাত্রা পালনের সাথে পহেলা বৈশাখ সর্বজনীনভাবে হিন্দুদের দেব-দেবীর বাহন হিসেবে খ্যাত বিভিন্ন পশুপাখির প্রতীক এবং অশুভ শক্তির বিনাশে দানবের প্রতীকী উপস্থাপনে মানুষসহ বিভিন্ন জীবজন্তুর বিকৃত মুখোশের ব্যবহারে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন দেশের প্রধান ধর্মাবলম্বী মুসলমানদের ধর্মবিশ্বাস ও সংস্কৃতির সাথে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নয়।
আমাদের দেশে বিগত বেশ কিছু বছর যাবৎ পহেলা বৈশাখকে উপলক্ষ করে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের মধ্যে নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী নতুন কাপড় পরিধান ও বাঙালি সংস্কৃতির সাথে সম্পর্কিত খাবারের আয়োজনের প্রচলন দেখা দিয়েছে। পৃথিবীর অন্যান্য জাতির মধ্যেও বছরের প্রথম দিন উৎসবমুখর পরিবেশে পালনের প্রচলন রয়েছে। আমাদের দেশের সরকারি কর্মচারীরা পহেলা বৈশাখ যাতে উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপন করতে পারে সে লক্ষ্যে সর্বশেষ ঘোষিত অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে বৈশাখী ভাতার প্রবর্তন করা হয়েছে। সরকারের এ পদক্ষেপটি ধন্যবাদার্হ্য। সরকারের পদাঙ্ক অনুসরণ করে গুটি কয়েক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বৈশাখী ভাতা চালু হলেও অধিকাংশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিক এটি দিয়ে অনীহ। এসব অনীহ প্রতিষ্ঠানের মালিক ভবিষ্যতে বৈশাখী ভাতা প্রদানে ব্যর্থ হলে তা যে শ্রমিক ও কর্মচারীদের অসন্তোষের কারণে শান্তিশৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বিঘেœর কারণ হয়ে দেখা দেবে সে প্রশ্নে কোনো সংশয় নেই।

পহেলা বৈশাখ আমাদের দেশের সব শ্রেণীপেশার মানুষের মধ্যে দেশে উৎপাদিত নতুন কাপড় পরিধান করার যে প্রবণতা তা দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। পহেলা বৈশাখে আমাদের দেশের নারীদের শাড়ি ও পুরুষদের মধ্যে পায়জামা-পাঞ্জাবি পরার প্রচলন অধিক। শাড়ি বাঙালি সংস্কৃতির অংশ হলেও পায়জামা-পাঞ্জাবির চেয়ে বাঙালি মুসলিম পুরুষদের জন্য লুঙ্গি ও ফতুয়া এবং বাঙালি হিন্দু পুরুষদের জন্য ধুতি ও ফতুয়ার সম্পর্ক নিবিড়তর। আমরা অবশ্যই উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ পালন করব। আর সেটি হতে হবে বাঙালি মুসলিম ও হিন্দু সংস্কৃতির সাথে সম্পর্কহীন সর্বজনীন বাঙালি সংস্কৃতির উৎসব। সে উৎসবে একান্তই যদি শোভাযাত্রা বের করতে হয় তাতে থাকবে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিভেদে কুলা, ডালা ও মাটির বাসন প্রভৃতিতে শুভনববর্ষ বাণী সংবলিত বার্তাবহন।
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
E-mail: iktederahmed@yahoo.com

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
মিরসরাইয়ে ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার ঢাকা মেডিক্যাল কেন্দ্রিক কোনো দালাল থাকবে না : বাহাউদ্দিন নাছিম বিদেশী সাহায্যপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলো দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর রংপুরে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ৩টি এলএমএনজি অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার দুবাইয়ে বিদেশীদের গোপন সম্পদের পাহাড়, তালিকায় ৩৯৪ বাংলাদেশীও ৫ কোটি টাকা আত্মসাতের দায়ে টিএমএসএস-এর সাবেক পরিচালকের জেল ও জরিমানা তজুমদ্দিনে ঢাকাগামী লঞ্চ থেকে ৩০০ কেজি পাঙ্গাসের পোনা আটক আওয়ামী লীগ কারো দয়া-দাক্ষিণ্য নিয়ে ক্ষমতায় আসেনি : নানক নির্বাচনের মাঝেই ইন্ডিয়া জোট নিয়ে কেন ‘সুর বদল’ মমতা ব্যানার্জীর? গঙ্গার পানির নায্য হিস্যা আদায়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে রংপুর খামারিদের মানববন্ধন

সকল