২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কাদের হাতে জাতির আলোর শিখা!

-

গত ১৯ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর মোঃ আবদুল হামিদ বলেন, ‘একজন উপাচার্যের মূল দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রমের তত্ত্বাবধান, পরিচালনা, মূল্যায়ন ও উন্নয়ন ঘিরে। কিন্তু ইদানীং পত্রিকা খুললে মনে হয়, পরিবার-পরিজন ও অনুগতদের চাকরি দেয়া এবং বিভিন্ন উপায়ে প্রশাসনিক ও আর্থিক সুযোগ-সুবিধা নেয়াই যেন কিছু উপাচার্যের মূল দায়িত্ব।’ (প্রথম আলো, ২০ নভেম্বর ২০২২) এ জন্য রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ। এতে যদি জাতির ‘আলোর মশাল বহনকারী’ ভাইস চ্যান্সেলররা শিক্ষা গ্রহণ করেন তবেই চ্যান্সেলরের ওই সত্য ভাষণ ফলপ্রসূ হবে।

গত কয়েক বছরে দেশের ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১২টিতে ভিসিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উপাচার্যের বিরুদ্ধে নিজের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়দের মধ্যে ৯ জনকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিধিবহির্ভূতভাবে নিয়োগদানের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। আত্মীয়দের মধ্যে রয়েছেন- ভিসির ছেলে, মেয়ে, শ্যালক, ভাতিজা ও শ্যালিকার ছেলে। মেয়েকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল ত্রুটিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় আর স্ত্রীকে সরাসরি অধ্যাপক পদে নিয়োগের প্রক্রিয়াটি আটকে দিয়েছে মন্ত্রণালয়। (প্রথম আলো, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২) পদ্মা-যমুনার মধ্যের একটি জেলায় অবস্থিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি তার মেয়াদ শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ আগে চুপিসারে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যান। তার বিরুদ্ধে শতাধিক অনিয়ম-দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অস্বচ্ছতার অভিযোগ উত্থাপন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। আপন ভাতিজি ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতিসহ ১০২টি পদে নানা অনিয়মে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। (নয়া দিগন্ত, ৬ মার্চ ২০২২)
দেশের উত্তরবঙ্গের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠের একজন সাবেক ভিসি তার দায়িত্বের শেষ দিনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ ১৩৮ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছিলেন যাদের মধ্যে তার মেয়ে ও জামাতাও নিয়োগ পেয়েছেন শিক্ষক হিসেবে। (ডেইলি স্টার, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২) ওই অঞ্চলেরই প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ২০১৯ সালে তিনটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১৩৫ জনকে নিয়োগ দেন যেগুলো ছিল পদের চেয়েও অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ। সেখানে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিজের শ্যালক, দুই ভাই, স্ত্রীর ফুফাতো ভাই, চাচাতো বোন, গৃহকর্মী ও গৃহকর্মীর স্বামীকে নিয়োগ দিয়েছেন ভিসি মহোদয়। স্বজনপ্রীতি ছাড়াও তার বিরুদ্ধে নীতিমালার বাইরে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। মেঘনা ও বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী একটি জেলার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারি বাড়ি ও গাড়ি ব্যবহার-সংক্রান্ত ভয়ানক আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে সাবেক এক ভিসির বিরুদ্ধে। তিনি বরাদ্দকৃত বাংলোতে বসবাস করেও মাসে ৬০ হাজার টাকা করে বাড়িভাড়া গ্রহণ করেছেন। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পাজেরো জিপ ঢাকায় ভিসির পরিবারের সদস্যদের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে, যদিও গাড়িটির ড্রাইভারের বেতন-ভাতা দেয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়টির কোষাধ্যক্ষের ভাষ্যমতে, আগেরকার ভিসিও এসব সুবিধা ভোগ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন অবশ্য এসবকে আর্থিক শৃঙ্খলাপরিপন্থী কাজ বলে আপত্তি তুলেছে। (প্রথম আলো, ২৬ জুলাই ২০২১) দক্ষিণ-পূর্ব কোণের একটি সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পিএসএর পাঁচটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। সেগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে অর্থ লেনদেন নিয়ে কথা হয়েছে বলে অভিযোগ এসেছে। গত বছরও বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে ১২ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের আপত্তি উপেক্ষা করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তার পছন্দ, ছাত্রলীগের নেতা ও কয়েকজন শিক্ষকের সুপারিশে এসব নিয়োগ দেয়া হয় বলে তখন অভিযোগ উঠে। অবশ্য উপাচার্য এসব অভিযোগকে তার ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন। (প্রথম আলো, ৬ মার্চ ২০২২)
ঢাকার পার্শ্ববর্তী একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়নে দেড় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল অস্বচ্ছভাবে। তখন তৎকালীন ভিসির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে ব্যাপক আন্দোলন হয়েছিল। (ডেইলি স্টার, ২৯ নভেম্বর ২০২২) একটি ছাত্র সংগঠনের তৎকালীন নেতাদের ফাঁস হওয়া ফোনালাপ থেকে এক কোটি টাকার বেশি ভিসি ছাত্র নেতাদের ঈদ উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন বলে জানা যায়। (নিউএজ, ১৮ সেপ্টম্বর ২০১৯) উত্তর দিকে যমুনা নদী এবং পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের মাঝের একটি জেলায় অবস্থিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, নিয়োগ ও প্রশাসনিক অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকরা। পদোন্নতিতে অনিয়ম, বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি রাজশাহীতে নিজ বাসায় পরিবারের ব্যবহারের জন্য রাখা, বেশির ভাগ সময় ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। (প্রথম আলো, ১৫ নভেম্বর ২০২২)
আর্থিক ও নিয়োগ-সংক্রান্ত ও অন্যান্য স্বার্থসংশ্লিষ্ট দুর্নীতির বাইরেও বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকজন ভিসির বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা এবং ছাত্রদের সাথে দলকানা প্রকৃতির আচরণের অভিযোগও রয়েছে বিস্তর! রাজধানীর পুরান ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয়টির একজন সাবেক ভিসি, উপাচার্যের বদলে যুবলীগের নেতৃত্ব গ্রহণ করাটাকেই বেশি পছন্দনীয় বলে জানিয়েছেন। তার সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্র সংগঠনের মাস্তানদের হাতে শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা বহুবার লাঞ্ছিত হলেও তিনি ব্যবস্থা নেননি। (প্রথম আলো, ৩২ এপ্রিল ২০২২) এমনকি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ ছাত্রকে পুলিশ বিভিন্ন মেস থেকে ছাত্রশিবির বলে গ্রেফতার করার পর কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই তিনি সে সব ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করেছিলেন। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি বিখ্যাত প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি একটি হলের প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত ছাত্রদের শায়েস্তা করার জন্য পুলিশ দিয়ে আক্রমণ করিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার উত্তর-পশ্চিমের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি তার এক হাজার ৪৪৭ দিনের কার্যকালের মধ্যে এক হাজার ২০৭ দিনই ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত ছিলেন। (ডেইলি স্টার, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২)

দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ সম্পর্কে বরাবরই একটি ছাত্র সংগঠনকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসার অভিযোগ উঠে আসছে। ক্যাম্পাসের ভেতরে সরকারের বিরোধী মতের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের অনেকবার মারধর করা হয়েছে। এমনকি নির্বাচিত ভিপিকে ছাত্রসংসদ ভবনে তার পছন্দের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা নির্দয়ভাবে পিটিয়েছে। ভিসি কোনোটিরই বিচার করেননি। সর্বশেষ ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নবনির্বাচিত ছাত্র নেতারা ভিসির সাথে অ্যাপয়েনমেন্ট নিয়ে সাক্ষাৎ করতে আসার পথে ক্যাম্পাসে বেদম প্রহারের শিকার হন প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্র সংগঠনের সন্ত্রাসীদের হাতে। ওই গুরুতর বিষয়টিতেও ভিসি ছিলেন নীরব!
রাষ্ট্রপতি আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও শিক্ষকদের দেখলে বা তাদের কথা শুনলেই শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসত; কিন্তু ইদানীংকালে কিছু উপাচার্য ও শিক্ষকের কর্মকাণ্ডে সমাজে শিক্ষকদের সম্মানের জায়গাটি ক্রমেই সঙ্কুচিত হয়ে আসছে।’ (প্রথম আলো, ২০ নভেম্বর ২০২২) প্রশ্ন হলো- এমনটি কেন হলো? গত ১৯ নভেম্বর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে অনুষ্ঠিত একটি সেমিনারে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘উপাচার্য পদে এমন ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া হয়, যিনি সবসময় তোয়াজ করেন। সরকারের বাধ্যবাধকতা বা আনুগত্যই হবে তার প্রধান পরিচয়। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে সব ধরনের অনিয়ম ঘটে।’ (প্রথম আলো, ২০ নভেম্বর ২০২২) কবি ও সিনিয়র সাংবাদিক সোহরাব হাসান লিখেছেন, ‘এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ উপাচার্য সরকারের কর্তাব্যক্তিদের তোয়াজ করতেই ব্যস্ত থাকেন। সরকারও সে রকম শিক্ষাবিদই চায়, যারা জি হুজুর করতে ও সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনটির অন্যায় আবদার মেনে নিতে অভ্যস্ত। অনেক উপাচার্যকে দেখেছি বিরোধী ছাত্র সংগঠনের আন্দোলন মোকাবেলা করতে সরকারি ছাত্র সংগঠনকে ব্যবহার করেছেন। সরকারি ছাত্র সংগঠনও তাদের স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ব্যবহার করবে, এটিই স্বাভাবিক।’ (প্রথম আলো, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২২) ডেইলি স্টার পত্রিকার সম্পাদক মাহফুজ আনাম লিখেছেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮ জন ভিসির মধ্যে ৩৯ জনই সরকারপন্থী শিক্ষক সমিতির বিভিন্ন পদ-পদবিতে ছিলেন। বাকিদের মধ্যে পাঁচজন ক্ষমতাসীন দলের সাথে সংশ্লিষ্ট।’ তার মতে, ‘ভিসি আসলে ক্যাম্পাসের এমন সব শক্তির কাছে বন্দী হয়ে পড়েন যাদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের কোনো সংযোগ নেই।’ (ডেইলি স্টার, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২)
মাহফুজ আনাম তার কলামে সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন- কিভাবে দলীয় আনুগত্য বিবেচনায় নির্বাচিত একজন ভিসি দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। এই ভিসিকে প্রথমেই সেই দলের সমর্থক শিক্ষকদের স্বার্থের ব্যাপারে যতœবান হতে হয়। তাদের চাকরি, পদোন্নতি, বদলি, বিভিন্ন ক্ষমতাসীন পদে পদায়ন, বৈদেশিক বৃত্তি, গবেষণা ছুটি, বাসস্থান বরাদ্দকরণ ইত্যাদি বিষয়ে অগ্রাধিকার দিতে হয় অন্যান্য শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ওপর। এটি করতে গিয়ে সুবিধার ভাগবাঁটোয়ারা নিয়ে সেই একই দলের সমর্থক শিক্ষকদের মধ্যে একাধিক গ্রুপ তৈরি হয়। তখন ভিসিকে নিজের সমর্থনের ভিত মজবুত রাখতে তাদের সুযোগ-সুবিধা আরো বাড়িয়ে দিতে হয়। ফলে ভিসিকে বিধিবহির্ভূত কার্যকলাপ করতে হয় যা তাকে আরো স্বেচ্ছাচারি করে তোলে। সবচেয়ে কঠিন যে কাজটি সেই ভিসিকে করতে হয় সেটি হলো- ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনকে পক্ষে রাখা। ছাত্র ভর্তি থেকে শুরু করে হলে সিট বরাদ্দ, ক্লাস টেস্ট ও বার্ষিক পরীক্ষায় পাস করানো, অপরাধমূলক কাজকর্মে পুলিশ থেকে নিরাপত্তা প্রদান, বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাড়তি সুবিধা প্রদান ও পূর্তকাজ বা নির্মাণকাজের ঠিকাদারি প্রদান ইত্যাদি করতে গিয়ে দলীয় আনুগত্যের ভিসিকে বিভিন্ন অনিয়ম এবং অবিচারে জড়িয়ে পড়তে হয়। ফলে ওই ভিসি দলীয় ট্যাগ লাগানো ছাত্রদের অপকর্মের বিরুদ্ধে কোনো শৃঙ্খলাজনিত পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হন। এমতাবস্থায় সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে আর ভিসির কোনো নৈতিক অবস্থান ধরে রাখতে পারেন না। (প্রাগুক্ত) তবে এসবের ব্যতিক্রমও আছে। কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসি অত্যন্ত সাহসিকতা ও ন্যায়নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি চাকরির জন্য ভিসির সাথে অসদাচরণ করে চাপ প্রয়োগ করলে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন- মেধার ভিত্তিতে চাকরি হবে। হুমকি ও চাপের মুখেও তিনি অন্যায়ের সাথে আপস করেননি। (প্রথম আলো, ৩০ নভেম্বর ২০২২)
ভিসিদের এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুদূরপ্রসারী প্রভাব দেশ ও জাতির ওপর পড়ছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আসল উদ্দেশ্য অর্জিত হচ্ছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘তা দেখলে বা শুনলে অনেক সময় আচার্য হিসেবে আমাকেও লজ্জায় পড়তে হয়।’ (প্রথম আলো, ২০ নভেম্বর ২০২২) ফলে ওয়ার্ল্ড র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়কে খুঁজেই পাওয়া যায় না। এমনকি এশিয়ান র‌্যাংকিংয়েও আমাদের দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েরই অবস্থা ভালো নয়। কারণ, আমাদের উচ্চ শিক্ষাব্যবস্থা নতুন জ্ঞানের উন্মেষ ঘটানো, নতুন নতুন উদ্ভাবনী, জ্ঞান-বিজ্ঞানে নতুন সংযোজন ইত্যাদি ক্ষেত্রে উল্লেøখযোগ্য কোনো অবদান তো রাখতে পারছে না; এমনকি দেশ ও জাতিকে জ্ঞান-বিজ্ঞানে কাক্সিক্ষত দিকনির্দেশনাও দেখাতে পারছে কি না তা হিসাব কষে দেখতে হবে!

তবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ‘কিছু কিছু অভিযোগের সত্যতা থাকলেও ঢালাওভাবে সব ভিসিকে নিয়ে মন্তব্য করা সমীচীন নয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের খুবই বরেণ্য শিক্ষকরা আছেন, যাদের উপাচার্য হিসেবে পেলে গর্ব অনুভব করতাম; কিন্তু তাদের অনেকেই এই প্রশাসনিক দায়িত্ব নিতে আগ্রহী হন না।’ (প্রথম আলো, ৩০ মার্চ ২০২২) এটিই জাতির জন্য ভাববার বিষয়। বরেণ্য ব্যক্তিত্বরা কেন ভিসি হতে চান না? এর মূল কারণ- ‘নতজানু হতে না চাওয়া বা দলীয় আনুগত্য মেনে নেয়ার মানসিকতা না থাকা’ বলেই সমালোচকরা মনে করেন। অর্থাৎ যারা ভিসি হিসেবে নিয়োগ পেয়ে স্বেচ্ছায় বা বাধ্য হয়ে অনৈতিক কাজে জড়াচ্ছেন, দলীয় আনুগত্যই কি তাদেরকে আত্মবিশ্বাস বা সাহস দিচ্ছে? তা না হলে একজন শিক্ষাবিদ কিভাবে অন্যায়-অবৈধ কাজে নিজেকে জড়াতে পারেন? জ্ঞান কি তাদেরকে শুধুই শিক্ষিত করেছে, মহান বা বিজ্ঞ করে তুলতে পারেনি?
কোনো দলের অনুগত থেকেও তো ন্যায়পরায়ণ, সৎ ও সাহসী থাকা সম্ভব। দেশ ও জাতির কল্যাণে এ ধরনের সৎসাহসী শিক্ষাবিদদেরই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পদটিতে বসাতে হবে। দলের আনুগত্য আর দলকানা এক নয়। দলকানারা ন্যায়-অন্যায়ের ধার ধারেন না। যোগ্যতার অভাবটি তারা আনুগত্য দিয়ে পূরণ করেন। আর যোগ্যরা দলের অনুগত থাকলেও অন্যায়ের সাথে আপস করেন না। এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের দেশের কর্ণধারদের ভাবতে হবে। দেশ পরিচালনাকারী নেতৃত্বকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কাদের হাতে আমরা জাতির ‘আলোক শিখা’ তুলে দেবো। কারা জাতির ‘আলোর মশাল’ বহন করার যোগ্যতা রাখেন।

লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক
Email: maksud2648@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement
মানিকগঞ্জে আগুনে পুড়ে যাওয়া মলিরানীর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বরেকর্ড ইন্দোনেশিয়ার নারী ক্রিকেটার রোহমালিয়ার ‘এখন আমি কী নিয়ে বাঁচব’ যদি বন্ধু হও, সীমান্তে অহরহ গুলি কেন : ভারতকে ফারুক সাহারা মরুভূমির গরমের মতো অনুভূত হচ্ছে : সরকারকে দায়ী করে রিজভী মধুখালীর পঞ্চপল্লীতে ২ ভাইকে হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ শ্রীলঙ্কাভিত্তিক এয়ারলাইন্স ফিটসএয়ারের ঢাকা-কলম্বো সরাসরি ফ্লাইট চালু রোহিঙ্গা ইস্যুতে একসাথে কাজ করবে ঢাকা-ব্যাংকক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইলি হামলায় আহত শিশুর মুখে ২০০ সেলাই বিষখালীতে মৎস্য বিভাগের অভিযান : জেলে নিখোঁজ, আহত ২ দক্ষিণ এশিয়ার যে শহরগুলোর তাপমাত্রা এখন সর্বোচ্চ

সকল