১৯ মে ২০২৪, ০৫ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ ১৪৪৫
`


‘অ্যা জার্নি বাই রেইপ’

-

বাংলাদেশে ধর্ষণ এখন যেন মহামারী, বিশেষত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয়। ধর্ষণ অতীতে ছিল সমাজে বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এমনকি শিক্ষকেরাও যে ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারেন, এটি আগে দেখা যেত না বললেই চলে। আর এখন নার্সারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি মাদরাসাÑ সব জায়গায় কিছু শিক্ষক ‘ধর্ষণ চর্চা’য় জড়িয়ে পড়ছেন। এমন একটি জঘন্য অপরাধ কিভাবে শিক্ষকদের মাঝে বিস্তার লাভ করল, তা পরিমল জয়ধরের লালসার দিকে তাকালে বোঝা যায়। ২০১১ সালে দেশবিখ্যাত ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক পরিমলের দ্বারা এক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হলে তা ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। তার কাছে ছাত্রীটি ব্যাচে কোচিং করত। পরিমল ছাত্রীটিকে ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হয়নি; তা মুঠোফোনে ধারণ করেছিল।
এরপর স্মরণ করা যেতে পারে ঢাকায় তেজগাঁওস্থ সিভিল অ্যাভিয়েশন স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক রতন কুমার পালের কুকীর্তি। ওই ঘটনাও ২০১১ সালের। তিনি বেশ কয়েক ছাত্রীর সাথে কখনো সুচতুরভাবে; কখনো বা জোরপূর্বক দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। অপকৌশলের মধ্যে রয়েছেÑ প্রশ্নপত্র ফাঁস, বিনা পয়সায় কোচিংয়ে পড়ানো, পরীক্ষায় ফেল করানোর ভয় ইত্যাদি। লম্পট রতন পাল ওই স্কুলের এক শিক্ষিকাকেও ধর্ষণের চেষ্টা করেছেন।
২০১৩ সালের কয়েকটি ঘটনা। কুষ্টিয়া আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হেলাল উদ্দিন পান্না। পরিমল স্টাইলে একাধিক ছাত্রীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক করে গোপন ক্যামেরায় ভিডিওচিত্র ধারণ করেন। কথিত প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছাড়াও অনেক নারীর সাথে অনৈতিক সম্পর্কের দৃশ্য গোপনে ভিডিও করেন। লালসা চরিতার্থ করতে ওই সব ভিডিও কাজে লাগান। তার এক প্রকৌশলী বন্ধুও এ অপকর্মের সঙ্গী ছিল।
কাপ্তাইয়ের এক স্কুলের শিক্ষক আবদুল কাদের একই বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিয়ান, উপজাতীয় এক তরুণীকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে ধরা পড়ে যান। এরপর অর্ধশত ছাত্রীকে তিনি যৌন নিপীড়ন করেছেন বলে চাঞ্চল্যকর ঘটনা বেরিয়ে আসে। এই দুশ্চরিত্র শিক্ষক ছাত্রীদের গায়ে হাত দিয়ে কথা বলতেন। শ্রেণিকক্ষে আপত্তিকর কথা বলতেন। অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রী তার লালসার শিকার হয়ে গর্ভবতী হলে ঘটনাটি ‘সমঝোতা’ করেছিলেন কাদের মাস্টার। চিৎমরম উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম থেকে দশম শ্রেণীর কমপক্ষে অর্ধশত ছাত্রী এই মাস্টারের যৌন নিপীড়নের শিকার।
ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের শহীদ বীর উত্তম আনোয়ার গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক তারক চন্দ্র মণ্ডল। এসএসসি পরীক্ষার্থী এক ছাত্রী তার উত্তর কাফরুলের তিনতলা বাসায় যায়। এখানে ধর্ষণের শিকার হয় ওই ছাত্রী। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক চন্দন কুমার পোদ্দার। কাজের মেয়েকে অনেক দিন ধরে ধর্ষণ করেন। লোকলজ্জার ভয়ে এ ঘটনা কাউকে বলেনি কিশোরীটি। কিন্তু দিনের পর দিন নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে গৃহকর্তার স্ত্রীকে তার স্বামীর অনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানায়। এরপর গৃহকর্মী ও কাজের মেয়ে থানায় অভিযোগ করে। তখন তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অপর দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের প্রভাষক মো: জহুরুল আনিস জুয়েল। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এবং প্রতারণা করে এক ছাত্রীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তা চলে দিনের পর দিন। এটি ২০১৪ সালের ঘটনা। মনিরুজ্জামান নামের আরেক ‘শিক্ষক’। তার কাছে প্রাইভেট পড়ত দশম শ্রেণীর এক ছাত্রী। একদিন ওই ব্যক্তি ছাত্রীকে ধর্ষণ করে তা ভিডিও করে রাখেন। পরে ভিডিও ফাঁস করার ভয় দেখিয়ে দিনের পর দিন পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে যান। একপর্যায়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে মেয়ে। তখন গাজীপুরের একটি ক্লিনিকে নিয়ে তার গর্ভপাত ঘটানো হয়। ২০১৪ সালে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আবদুল মোতালেব ওই এলাকার এক মেয়েকে বিয়ের কথা বলে ধর্ষণ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক দশকে অন্তত ২০টি যৌন নির্যাতনের ঘটনার অভিযোগ উঠেছে। ঢাবি শিক্ষক মাহমুদুর রহমান বাহালুল। তার বিরুদ্ধে ওঠে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করা ও যৌন হয়রানির অভিযোগ। অভিযোগ ওঠে, অন্তত ১০ ছাত্রী তার লালসার শিকার।
স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে ধর্ষণ এখন আছর করেছে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মাদরাসার শিক্ষকদের মধ্যেও। দেশব্যাপী আলোচিত ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা। তার লালসার শিকার হয় নুসরাত জাহান রাফি নামে এক ছাত্রী। তার বিরুদ্ধে রাফি যৌন হয়রানির অভিযোগ করে থানায় মামলা করে। মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়া হয় তাকে। শেষ পর্যন্ত রাফিকে তার নির্দেশে মাদরাসার ছাদে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হলো। এটা বাংলাদেশে এযাবৎকালের একটি বড় নিষ্ঠুর ও জঘন্য ঘটনা।
শিক্ষকদের দ্বারা ছাত্রীদের নানাভাবে যৌন হয়রানি নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা। পরিমল-সিরাজদের হাত থেকে সন্তানদের বাঁচাতে অভিভাবকেরা এখন উদ্বিগ্ন। সব সময় স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় কোচিংয়ে নিজে নিয়ে যান, নিয়ে আসেন এবং কখনো বা প্রতিষ্ঠানের ভবনের ভেতর বা বাইরে বসে থাকেন। শিক্ষকদের একাংশের কারণে তাদের মেয়েদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হবেÑ এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে? হ
হারুনুর রশিদ আরজু
arzufeni86@gmail

 


আরো সংবাদ



premium cement
ভারতের কোভ্যাক্সিনেও রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইসরাইল সরকারে ভয়াবহ দ্বন্দ্ব : নেতানিয়াহুকে গাঞ্জের পদত্যাগের আলটিমেটাম রাফায় ইসরাইলি হামলা, সরে যেতে বাধ্য হয়েছে ৮ লাখ ফিলিস্তিনি চেন্নাইকে বিদায় করে বেঙ্গালুরুর ‘অবিশ্বাস্য’ প্লে অফ মনের মিনার ভেঙে পড়েনি মার্কিন প্রশাসনের ‘বাকস্বাধীনতা’র মুখোশ শিগগিরই মাগুরায় রেললাইন চালু হবে : রেলমন্ত্রী সংসদ ভবনের সামনে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২ গ্রুপের সংঘর্ষে ছাত্রলীগকর্মী নিহত জুজুৎসুর সম্পাদকের যৌন নিপীড়নের তথ্য দিলো র্যা ব পানচাষীদের পরিশ্রমের ফসল জিআই স্বীকৃতি : প্রতিমন্ত্রী বগুড়ায় অবৈধ মজুদকৃত ১ লাখ ডিম উদ্ধার

সকল