১৮ মে ২০২৪, ০৪ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫
`


আতঙ্কের নাম ডেঙ্গু

-

তাসলিমা আক্তার রুমা। সম্পর্কে আমার খালা। খালার কোনো ছেলে নেই; তিন মেয়ে। বড় মেয়েটা ক্লাস সিক্সে পড়ে। মেজো মেয়ে ওয়ানে। আর ছোটটা কেবল প্লেতে। পরিবারের সবাইকে নিয়ে খালা থাকতেন রাজধানীর মিরপুরে। তিনি এখন শায়িত আছেন গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে। গত ৮ সেপ্টেম্বর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তিনি।
খালা তার ‘থাকার জায়গাটা বদল’ করতে সময় নিয়েছিলেন মাত্র সপ্তাহখানেক; এক শনিবার থেকে আরেক শনিবার পর্যন্ত। গত ৩১ আগস্ট হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকে। এর দু’দিন আগে তিনি আর তার ছোট বোন অর্থাৎ ছোট খালা গিয়েছিলেন শেওরাপাড়া একটি নার্সারিতে। সম্ভবত সেখান থেকেই জীবননাশী এডিস মশার আক্রমণের শিকার হন। এরপর যা হওয়ার তাই হলো। ক্রমেই শরীরের অবনতি হতে থাকে। সবশেষে, ৮ তারিখ সকালে রুমা খালা চলে যান না ফেরার দেশে। আর ছোট খালার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কোনোরকম বেঁচে আছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মতে, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চলতি বছরে এ পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যু ঘটেছে। আক্রান্ত তিন হাজার ৭১২ জন। প্রতিটি হাসপাতালেই কমবেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী রয়েছে। রাজধানীসহ সারা দেশেই ডেঙ্গু এখন প্রাণঘাতী আতঙ্কের নাম। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, ধানমন্ডি, কলাবাগান, সেগুনবাগিচা ও মন্ত্রিপাড়া এলাকার ৪৫ শতাংশ বাড়িতেই ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এ ছাড়া, ডিএসসিসি এলাকার গড়ে ৮ শতাংশ বাড়িতে এ লার্ভা পাওয়া গেছে।
সিটি করপোরেশনগুলো মশা নিধনে মাঝে মধ্যে তৎপর রয়েছে। ফগার মেশিন দিয়ে বিভিন্ন স্থানে ওষুধ ছিটানো হয়। তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা যথেষ্ট নয়। বাড়ি-ঘর থেকে নালা-নর্দমা সর্বত্র এ কার্যক্রম চলার পরও দিন দিন বেড়েই চলছে ডেঙ্গু মশার হামলা আর ডেঙ্গু রোগীদের সংখ্যা। কারণ, এ ব্যাপারে এখনো জনসচেতনতার যথেষ্ট অভাব রয়ে গেছে। ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেছেন, দু’তিন বছরের মধ্যে এ বছর ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি।
ডেঙ্গু ছড়ায় এডিস মশা। এ মশা জন্মাতে আবর্জনা বা অপরিচ্ছন্ন জলাশয়ের প্রয়োজন হয় না। পরিষ্কার পানিতেই এটা বংশবিস্তার করে। সাধারণত, বৃষ্টির জমে থাকা পানি থেকে এর জন্ম বেশি হয়। বর্ষাকাল এডিস প্রজননের উপযুক্ত মওসুম। বাড়িতে ফুলের টব, বালতি, ড্রাম, ডাবের খোসা, গাড়ির টায়ার অথবা অন্য কোনো পাত্রে যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে অবশ্যই।
শহরের কিছু বাসায় সার্বক্ষণিক পানি সরবরাহ নেই। সেসব বাসায় পানি মজুদ করে রাখা হয়। সেখান থেকেও এডিস মশার বংশ বিস্তার ঘটতে পারে। বাসা-বাড়িতে বিশেষ করে মেসে কিংবা হলে অনেকেই মশারি না টানিয়ে ঘুমাতে অভ্যস্ত। অলসতা না করে এ বদ অভ্যাস পরিহার করতে হবে। অথবা মশা মারার ব্যবস্থা রাখতে হবে। শহরে বা গ্রামে নিয়মিত ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধ ছড়িয়ে দিতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিষেধক এখনো তৈরি হয়নি। তাই আক্রান্ত হওয়ার আগেই প্রতিরোধ করতে হবে। আর ডেঙ্গু প্রতিরোধে সর্বাগ্রে সচেতনতা তৈরি করতে হবে সবার। এ ক্ষেত্রে সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচারণা চালানো যেতে পারে। এ ছাড়াও স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, মসজিদ এবং হাট-বাজারে সচেতনতামূলক অভিযান ফলদায়ক হতে পারে।
আসুন নিজেরা সতর্ক হই, অন্যকে সতর্ক করি। আর কারো প্রিয়জন যেন ডেঙ্গু জ্বরে না হারিয়ে যান। যারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত তাদের আশু সুস্থতা কামনা করছি। হ
লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়, কুষ্টিয়া


আরো সংবাদ



premium cement
আফগানিস্তানে নতুন করে ভারী বৃষ্টি ও বন্যায় ৫০ জনের মৃত্যু বগুড়ায় বন্ধু হত্যার ঘটনায় সৈনিক লীগ সভাপতি গ্রেফতার ইয়েমেনে তেলের ট্যাঙ্কারে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অলিম্পিকে ইকুয়েস্ট্রিয়ানে পদক জেতার আশা সৌদি আরবের ভালুকায় কারখানা শ্রমিকের মৃত্যু ইসরাইলের ব্যাপক ক্ষতি করেছে হিজবুল্লাহ, স্বীকার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ন্যায়বিচার পাওয়া প্রত্যেকের মৌলিক অধিকার : প্রধান বিচারপতি তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীকে চকলেট খাওয়ানোর প্রলোভনে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এবার কি যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটেনও ভারতীয় মশলা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে? গাইবান্ধায় চাচার ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেল ভাতিজির শিশুদের নিয়ে বিশ্বকাপের জার্সি উন্মোচন করলো আফগানিস্তান (ভিডিও)

সকল