২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অধ্যাপক এমাজউদ্দীন অনন্য রাষ্ট্রচিন্তক

এমাজউদ্দীন আহমদ
অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ - ছবি : সংগৃহীত

রাষ্ট্রবিজ্ঞান আর এমাজউদ্দীন আহমদ এক সমার্থক শব্দ। জীবনের ৫০টি বছর তিনি কাটিয়ে দিয়েছেন দেশ, সমাজ ও রাজনীতি নিয়ে গবেষণা ও চর্চায়। এই চর্চা ছিল তার মননে, মগজে। রাজনীতির লেখা মানে এমাজউদ্দীন আহমদ। রাজনীতির সুন্দর বক্তৃতা মানে এমাজউদ্দীন আহমদ। আর বাংলাদেশের রাজনীতির বিশ্লেষণ, এককথায় এ ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অনন্য! তুলনামূলক রাজনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, বাংলাদেশের রাজনীতি ও প্রশাসন বিষয়ে তাই তার বইয়ের সংখ্যাও কম নয়, ৫০টির বেশি।
না, তিনি আমাদের আর রাজনীতির কথা শোনাবেন না। তার থেকে পাওয়া যাবে না আর রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা। কোনো সংবাদপত্রের বিশেষ সংখ্যায় দেখা যাবে না তার রাজনৈতিক বিশ্লেষণ।

তিনি ৮৭ বছর বয়সে গতকাল শুক্রবার আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন পরপারে। মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি চলে গেছেন তাঁরই কাছে।
স্যার আমাকে খুব স্নেহ করতেন। তার লেখালেখির যেকোনো ভালো উদ্যোগে তিনি আমাকে ডাকতে ভুলতেন না। আমার প্রথম জীবনীগ্রন্থ ‘নন্দিত নেত্রী খালেদা জিয়া’র ভূমিকা তার লিখে দেয়া। এর পঞ্চম সংস্করণ হয়েছে। প্রতিটি সংস্করণে তিনি ভূমিকাটাও আপডেট করে দিতেন। তার এ ঋণ শোধ হওয়ার নয়। খুব খারাপ লাগছে তার মুখ থেকে আর ‘বাপু’ ডাকটি শুনব না। শুনব না- ‘বলো বাপু’, ‘বাপু এটা নিয়ে লিখো, এটা করে দাও’, ‘বাপু বাসায় এসো তোমার সাথে কিছু কথা আছে।’ তার চিরবিদায়ের এ মুহূর্তে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মহান আল্লাহর কাছে তার মাগফিরাত চাইছি। দয়াময় মেহেরবান আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুন,আমিন।

অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ এ উপমহাদেশের একজন খ্যাতিমান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। দেশবরেণ্য বুদ্ধিজীবী হিসেবে তিনি সারা দেশের মানুষের কাছে অত্যন্ত সম্মানীয়। দেশের কল্যাণ হোক সবসময় তিনি চেয়েছেন। দেশের রাজনীতির দুরবস্থা সবসময় তাকে ভাবিয়ে তুলত। তবে তিনি ছিলেন আশাবাদী মানুষ। বলতেন এবং তার প্রতিটি লেখায় উল্লেখ করতেন, ‘রাজনীতির এই অসুস্থতা শিগগিরই দূর হবে। দূর হবে সমাজজীবনে অগ্রহণযোগ্য শত উপসর্গ। আবারো এ সমাজে দেখা দেবে উজ্জ্বল আলোক রশ্মি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল তার প্রাণ। তিনি ছিলেন এ বিদ্যাপীঠের ছাত্র ও শিক্ষক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। যে কয়জন ভিসির সুখ্যাতি ও নামডাক, তিনি ছিলেন তাদের একজন। তার প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে ড. এমাজউদ্দীন আহমদ লিখেন, ‘এ সমাজে যা কিছু সুন্দর, যা কিছু গৌরবের তার সবকিছুতেই রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোঁয়া।’

গণতন্ত্রের প্রতি ছিল তার অগাধ শ্রদ্ধাবোধ। তাই তিনি বলতেন, ‘জাতীয় স্বার্থেই গণতন্ত্রের চর্চা প্রয়োজন।’ তিনি বলতেন, ‘রাজনৈতিক দলের চেয়ে শ্রেষ্ঠতর ও মহত্তর হলো জাতীয় স্বার্থ।’ তিনি আরো বলতেন, ‘দলীয় স্বার্থের কারণেই দেশে হিংসাত্মক কার্যক্রমের মাত্রা আজ উচ্চতর হয়েছে। কিন্তু সবাইকে বুঝতে হবে আমরা সবাই চাই, গণতন্ত্রের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।’ ক্ষমতাসীনদের প্রতি তার সব শেষ আহ্বান ছিলÑ ‘হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করে উদার হোন, মানুষের কথা ভাবুন, দেশের কথা ভাবুন। সংবাদপত্রকে, গণমাধ্যমকে তার সৃষ্টিশীল স্রোতধারায় এগিয়ে যেতে দিন।’

তার প্রথম নামাজে জানাজা কাঁটাবন বাজমে কাদেরিয়া জামে মসজিদে হয়েছে। খতিব জানালেন, এ মসজিদে তিনি নিয়মিত নামাজ পড়তেন। একটি নির্দিষ্ট জায়গায় বসতেন, তসবিহ-তাহলিল পড়তেন। এ মসজিদের লিজ তৎকালীন খালেদা জিয়া সরকারের কাছ থেকে তিনিই ব্যবস্থা করিয়ে দিয়েছিলেন। জানাজা নামাজ পড়ে শেষ বারের মতো তার অমায়িক চেহারাটি দেখলাম। সত্যিই পিতৃতুল্য একজন মানুষ ছিলেন তিনি। অভিভাবক বলতে যা বোঝায়, তিনি তা-ই ছিলেন। 
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।


আরো সংবাদ



premium cement
মিয়ানমারের জাতীয় গ্রন্থাগারে বাংলাদেশ দূতাবাসের বই অনুদান ক্ষমতায় যেতে বিএনপি বিদেশী প্রভুদের দাসত্ব করছে : কাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশু সুলতান মাহমুদকে বাঁচাতে সাহায্যের আবেদন গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি হামলায় নিহত ১৫ মুজিবনগরে ২ চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ, আহত ১৩ বাগেরহাটের রামপালে ট্রাকের চাপায় নিহত ৩ ফিলিস্তিনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব বিশ্ববিদ্যালয় বিক্ষোভে উত্তাল পূর্ব আফ্রিকায় প্রবল বৃষ্টি ও বন্যা, কমপক্ষে ১৫৫ জনের প্রাণহানি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রশ্নবিদ্ধ তথ্য প্রচারের নিন্দা ডিআরইউর ভয়াবহ দুর্ঘটনা, অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন উগ্র ইসরাইলি মন্ত্রী শেরে বাংলার সমাধিতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন

সকল