৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ডাকসু নির্বাচন নিয়ে কিছু কথা

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে কিছু কথা
ডাকসু ভবন - ছবি : সংগ্রহ

২৮ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ। একে দেশের মিনি পার্লামেন্ট বা দ্বিতীয় সংসদও বলা হয়ে থাকে। নব্বই-পরবর্তী বিভিন্ন সময় তফসিল ঘোষিত হলেও ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। ডাকসুর ইতিহাস হচ্ছে- প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এ জাতির বিপদের সময় কাণ্ডারির ভূমিকা পালন করেছে এটি।

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬ ছয় দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন, সর্বশেষ একাত্তরে আমাদের চূড়ান্ত মহান স্বাধীনতা অর্জনে ডাকসুর ভূমিকা অবিস্মরণীয়। জাতির দুর্যোগ মুহূর্তে ডাকসুর যুগান্তকারী ভূমিকার কথা সবাই জানি।

একটি দেশ সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন যোগ্য নেতৃত্ব। গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশ তেমন কোনো যোগ্য নেতা পেয়েছে কি? এ প্রশ্ন কেউ করলে তা কি খুব অমূলক হবে? অথচ ডাকসুর মাধ্যমে দেশ পেয়েছে অনেক যোগ্য নেতা। যোগ্য নেতা তৈরির আঁতুড়ঘর বলে পরিচিত সেই ডাকসু নির্বাচন দীর্ঘ ২৮ বছর অনুষ্ঠিত হয়নি। এতে দেশ যোগ্য নেতা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

স্বয়ং রাজনীতি যাদের অপেক্ষায় থাকে, সেই তরুণরা আজ রাাজনীতিবিমুখ। আর দলীয় যে রাজনীতি চলছে; তা স্পষ্ট অতি রাজনীতিকরণ ছাড়া কিছু নয়। এতে নেতার সংখ্যা অনেক বেশি। তবে যোগ্য নেতা হাতেগোনা কয়েকজন। একদল শিক্ষক দলীয় রাজনীতিকেই মুখ্য দায়িত্ব হিসেবে নিয়েছেন। ছাত্র-শিক্ষক মধুর সম্পর্ক দলীয় রাজনীতিতে ঘুরপাক খাচ্ছে। আজ গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডাকসুই পারে এ কাঁটা উপড়ে ফেলে শিক্ষক ও ছাত্রদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করতে। শুধু রাজনৈতিক অঙ্গনেই নয়; একাডেমিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও পিছিয়ে পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এমন অভিযোগ হরহামেশাই শোনা যায়।

১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ অনুযায়ী, সিনেটের ১০৪ সদস্যের মধ্যে পাঁচজন ছাত্র প্রতিনিধি থাকার কথা। সেখানে ছাত্রদের দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরার কেউ নেই। তৃতীয় বর্ষে উঠেও হলে সিটের ব্যবস্থা হয় না অনেকের। হলের ক্যান্টিনগুলোর খাবার মান নিয়ে কথা বলতেও এখন শিক্ষার্থীদের কোনো প্রতিনিধি নেই।

এমন পরিপ্রেক্ষিতে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। থাকবে জবাবদিহি। বন্ধ হবে লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি। সিনেটে ছাত্রদের সব দুঃখ-দুর্দশার কথা ধ্বনিত হবে ডাকসু নেতাদের কণ্ঠে। গবেষণা খাতে আসবে আমূল পরিবর্তন। সাংস্কৃতিক অঙ্গন ফিরে পাবে প্রাণচাঞ্চল্য। সর্বোপরি দেশ পাবে কিছু যোগ্য নেতা। যাদের হাতে গড়ে উঠবে স্বপ্নের বাংলাদেশ। এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


আরো সংবাদ



premium cement