১৫ মে ২০২৪, ০১ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলকদ ১৪৪৫
`


একটি নাম নয়, একটি প্রতিষ্ঠান

খালেদা জিয়া - ফাইল ছবি

খালেদা। পুতুল। বেগম খালেদা জিয়া। বেগম জিয়া। একেক জন একেক নামে তাকে উল্লেখ করেন। বেগম খালেদা জিয়া একটি নাম, একটি ইতিহাস। গহিনে শেকড়বিশিষ্ট এক বিটপী। শত ঝড়-ঝঞ্ঝা, সাইক্লোন-টাইফুন, জলোচ্ছ্বাস ও প্লাবনে নেতিয়ে পড়েন না- অটল অবিচল ধীর স্থির এবং ঋজু। অল্প বয়সে স্বামীহারা এক নারী। পতি যখন শহীদ হন বয়স তখন মাত্র ৩৬ বছর ৯ মাস ১৭ দিন (১৫-৮-১৯৪৫ থেকে ৩১-৫-১৯৮১)। স্রেফ এক অমোঘ টানে অল্প বয়সী বিধবা গৃহবধূ যিনি রাজনীতির ‘র’ও জানতেন না, দৃপ্ত কদম রাখলেন এ দেশের রাজনীতির কুটিল-জটিল-পিচ্ছিল মহাসড়কে। হাল ধরেন শক্ত ও মজবুত করে স্বামীর প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক সংগঠন-বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির।

কুটিল-পিচ্ছিল-জটিল সড়কে চলতে গিয়ে বারবার তিনি হয়েছেন অপদস্ত, নির্যাতিত ও বন্দী। কিন্তু অন্যায়-অনিয়ম-অবিচারের কাছে কখনো নত করেননি শির। সর্বাদাই দেশ ও জনমানুষের জন্য রয়েছেন তিনি অটল-অনড়-অবিচল। তাই ভূষিত হয়েছেন ‘দেশনেত্রী’ ‘আপসহীন নেত্রী’ অভিধায়। বেগম জিয়া বাংলাদেশের একাধারে তিনবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী; বৃহৎ একটি দলের প্রধান যিনি স্বাধীনতার ঘোষক এবং সফল রাষ্ট্রনায়কের সহধর্মিণী। হৃত গণতন্ত্র উদ্ধার বা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বাক-স্বাধীনতা, সংবাদপত্রসমেত মিডিয়ার স্বাধীনতা, জনগণের ভোটাধিকার আদায় এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আপসহীন নিরলস সংগ্রামী এক অনমনীয় ব্যক্তিত্ব তিনি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে অকুতোভয় সংগ্রাম করে যাওয়ার কারণে তিনি ভূষিত হয়েছেন ‘গণতন্ত্রের জননী’ উপাধিতে। রাজনীতিক রূপে তিনি অত্যধিক জনপ্রিয়।

যে কয়টি সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, তার পার্লামেন্টে পরাজিত হওয়ার নজির নেই। ১৯৯১ থেকে ২০০১ সালের নির্বাচনগুলোয় পাঁচটি করে আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। প্রত্যেকটি আসনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জনগণ তাদের প্রিয় নেত্রীকে বিজয়ী করেছে। ২০০৮ সালের প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনেও সর্বাধিক তিনটি আসনে (বিধি করা হয়েছে, জাতীয় সংসদের তিনটির বেশি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা যাবে না) বিপুল ভোটের ব্যবধানে জনগণ আবার বিজয়ী করেছে তাকে। ২৩টি আসনে (৪*৫=২০+৩) বিজয়ী অতুল ব্যক্তিত্ব তিনি, যা নজিরবিহীন নির্বাচনী ইতিহাসে। এই জনপ্রিয়তাই হারাম করে দিয়েছে প্রতিপক্ষের ঘুম। তার বিরুদ্ধপক্ষ সবসময়ে তৎপর তার মনোবল ও স্বাধীন সত্তাকে দুর্বল করতে নানা অপকৌশল ও কূটচাল প্রয়োগের অপকর্মে। কিন্তু হতে পারেনি কামিয়াব। শেষাবধি হয়েছেন তিনিই জয়ী। আর এই হীনমনোভাবে কারণে যত গা-জ্বালা ও মাথাব্যথা প্রতিপক্ষের।

খালেদার ব্যক্তিগত জীবনাচার নিয়ে করা হয়েছে অহেতুক দোষারোপ। অশালীন কদর্য কুরুচিপূর্ণ ভাষা প্রয়োগ করা হয়েছে তার প্রতি। অসত্য, অভব্য কালিমা লেপন করা হয়েছে তার চরিত্রে। বারবার কুৎসা রটনা করা হলো নানা প্রক্রিয়াতে। কিন্তু সব নীচতা সত্ত্বেও তিনি থেকেছেন নীরব-শান্ত।

বেগম জিয়ার রুচি, সামাজিক মর্যাদা, আভিজাত্য, পারিবারিক ঐতিহ্য এবং তার হিমালয়সম চরিত্র তাকে বিরত রেখেছে প্রতিপক্ষের পর্যায়ে অধঃপতিত হওয়া থেকে। তিনি কখনো কুরুচিপূর্ণ কিংবা কারো মর্যাদা বা সম্মানহানিকর কোনো শব্দ, বিশেষণ ও বাক্য উচ্চারণ করেননি। তিনি ধীর-স্থির-শান্ত ও স্বমহিমায় উজ্জ্বল এক রাজনৈতিক জোতিষ্ক। তার উচ্চারণ সুস্পষ্ট, মার্জিত, বলিষ্ঠ ও সুষমায় ভরা। উসকানিমূলক ও বালখিল্য কথাবার্তা থেকে তিনি মুক্ত। যেকোনো পরিবেশ পরিস্থিতি (অনুকূল ও ভয়ঙ্কর) মোকাবেলায় সর্বদা তিনি প্রস্তুত- দৃপ্ত ও সাহসী তার উচ্চারণ। সবাই জানে, তিনি আজ প্রতিহিংসার শিকার। বিবেচনায় নেয়া হয়নি- তার মর্যাদা, বয়স ও অসুস্থতাকে। সাবেক সরকারপ্রধান, বড় দলের প্রধান, বয়স্ক-অসুস্থ নারী এবং জনপ্রিয় নেত্রীকে রাখা হয়েছে পরিত্যক্ত স্যাঁতসেঁতে (খবরে প্রকাশ) জনপ্রাণীহীন নির্জন কারা প্রকোষ্ঠে।

খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে আইনজীবী, দলীয় নেতানেত্রী, সমর্থক এবং দেশবাসীকে বলেছেন, ‘ধৈর্য ধরুন, মনোবল অটুট রাখুন। অহিংসপন্থায় দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন চালিয়ে যান। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, জনগণের ভোটের অধিকার আদায়, বাক-স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং সুশাসন কায়েম করার লক্ষ্যে সংগ্রাম অব্যাহত রাখুন। সত্যের জয় একদিন হবেই হবে, ইনশা আল্লাহ। আপনাদের খালেদা কোনো অন্যায় করেনি। কোনো দুর্নীতি করেনি। অর্থ আত্মসাৎ বা তছরুপ করেনি। প্রতিহিংসা আর ষড়যন্ত্রের শিকার আমি।’


আরো সংবাদ



premium cement