২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ফ্রান্সে মহানবীর কার্টুন প্রচারের নিন্দায় ঐক্যবদ্ধ মুসলিমবিশ্ব

-

প্রিয় নবীকে অপমানের জেরে বিশ্বজুড়ে শুরু হয়েছে তুমুল প্রতিবাদ। মুসলিম দেশ ও সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মতবিরোধ থাকলেও মহানবীকে নিয়ে ফ্রান্সের সাম্প্রতিক আচরণের বিরুদ্ধে একসাথে সরব হয়েছে সবাই। গত শুক্রবার ফ্রান্সের কয়েকটি সরকারি ভবনে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর কার্টুন প্রদর্শন করা হয়। এর আগে, চলতি মাসের শুরুর দিকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইসলামকে সঙ্কটাপন্ন ধর্ম বলে বর্ণনা করেন।
দেশটির এমন আচরণে ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে মুসলিমদের মধ্যে। কুয়েত, কাতার, মিসর, আলজেরিয়া, জর্দান, সৌদি আরব, তুরস্ক তো বটেই, ম্যাক্রোঁর সমালোচনা করেছে ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্যও। গত কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে চলছে ফ্রান্স ও ম্যাক্রোঁবিরোধী ব্যাপক প্রচারণা। ফরাসি পণ্য বয়কটের ডাক রীতিমতো ভাইরাল। অনেক দেশেই রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা। মুখ খুলেছেন মুসলিম দেশের নেতারাও।
গত রোববার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান ফরাসি প্রেসিডেন্টকে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ বলে মন্তব্য করেছেন। সবধরনের ফরাসি পণ্য বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ফ্রান্সে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর কার্টুন প্রদর্শন ও মুসলিমবিরোধী অবস্থানের ঘটনায় মঙ্গলবার ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ইসলামবিরোধী অবস্থানের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, মুসলিমদের অবমাননা করা সুবিধাবাদী বাকস্বাধীনতার অপব্যবহারের শামিল।
ম্যাক্রোঁর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাতে গত সোমবার ইসলামাবাদে ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও।
এ ছাড়া পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী জাকারবার্গের কাছে লেখা এক চিঠিতে ইসলামবিদ্বেষী সবধরনের পোস্ট নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক প্রচারণা বন্ধে জাতিসঙ্ঘকে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ারও অনুরোধ জানিয়েছে দেশটি।
ইসলাম অবমাননার প্রতিবাদে রোববার তুমুল বিক্ষোভ হয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিরিয়াতে। এ সময় ফরাসি প্রেসিডেন্টের ছবি পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভ হয়েছে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে। সেখানেও বিক্ষোভকারীরা ফ্রান্সের পতাকা ও ম্যাক্রোঁর ছবিতে আগুন ধরিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। প্রতিবাদ থেকে বাদ পড়েনি ইসরাইলি নিপীড়নের শিকার ফিলিস্তিনও। গাজা উপত্যকায় ফরাসি প্রেসিডেন্টের ছবি পুড়িয়ে ইসলাম ধর্ম অবমাননার প্রতিবাদ জানিয়েছেন ফিলিস্তিনিরা। পাশাপাশি, ম্যাক্রোঁর ইসলামবিরোধী মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস।
মুসলিমদের প্রাণপ্রিয় নবীকে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে অপমান’-এর নিন্দা জানিয়েছে লেবাননের হিজবুল্লাহ। ইরাকে রাবা আল্লাহ নামে একটি দল এক বিবৃতিতে বলেছে, ফ্রান্সের কর্মকাণ্ডে বিশ্বের দেড় শ’ কোটি মুসলিম অপমানিত হয়েছে। দলটি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, তাদের সদস্যরা প্রয়োজনে যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রস্তুত রয়েছে।
মহানবী সা:-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে মরক্কোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জর্দানের ইসলামবিষয়ক মন্ত্রী মোহাম্মদ আল খালায়লেহ বলেছেন, নবীর অপমান কোনো ব্যক্তি স্বাধীনতার ইস্যু নয়, এটি সহিংসতা উসকে দেয়ার মতো অপরাধ। মঙ্গলবার প্রতিবাদ জানিয়েছে মহানবী সা:-এর জন্মস্থান সৌদি আরব। নবী কারীম সা:-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন এবং ইসলামকে সন্ত্রাসের সাথে সম্পর্কিত করার অপচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে দেশটি।
নিজ দেশেও সমালোচনার শিকার হচ্ছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। দেশটির বামপন্থী আনবাওড ফ্রান্স পার্টির প্রধান ও এমপি জ্যঁ-লিক মেল্যঁশ বলেছেন, ‘ম্যাক্রোঁ পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছেন। এরদোগানের বিবৃতিতে ফ্রান্সকে অবজ্ঞা, লাঞ্ছিত ও উপহাস করা হয়েছে। ম্যাক্রোঁর পরিকল্পনা কী? টুইট ছাড়া আর কী করার পরিকল্পনা করছেন তিনি?’
অবশ্য ইউরোপীয় কমিউনিটিতে বেশ কিছু সমর্থককে পাশে পাচ্ছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। রোববার ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৈদেশিক নীতির প্রধান জোসেফ বোরেল বলেছেন, এরদোগানের বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য।


তুরস্ককে ‘সঙ্ঘাতের এই বিপজ্জনক প্যাঁচ’ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সমালোচনার মধ্যে গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোতাকিসও ম্যাক্রোঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। গত রোববার তিনি বলেছেন, ফ্রান্সকে লক্ষ্য করে তুর্কি নেতৃত্বের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। এগুলো ধর্মীয় বিদ্বেষ বাড়াবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল