১৮ মে ২০২৪, ০৪ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫
`


রোহিঙ্গা প্রত্যর্পণে আন্তর্জাতিক তদারকি চান মাহাথির

-

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ বলেছেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তদারকিতে হওয়া উচিত, যাতে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফেরার পর শাস্তির মুখোমুখি না হয়। রোববার থাইল্যান্ডের ব্যাংককে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেছেন।
২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর পূর্বপরিকল্পিত দমনাভিযান জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৭ লাখেরও বেশি মানুষ। জাতিগত নিধনের ভয়াবহ বাস্তবতায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বড় অংশটি বাংলাদেশে পালিয়ে এলেও জাতিসঙ্ঘের হিসাবে ৪ লাখেরও বেশি মানুষ এখনো সেখানে থেকে গেছে। রাখাইনে থাকা অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। ২০১২ সালে রাখাইনে সহিংসতা শুরুর পর বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের জন্য স্থাপন করা হয় আইডিপি ক্যাম্প। তখন থেকেই এই ক্যাম্পে সহায়তা দিয়ে আসছে জাতিসঙ্ঘ। রোহিঙ্গা ও কামান জনগোষ্ঠীর প্রায় এক লাখ ২৮ হাজার সদস্য এসব ক্যাম্পে বসবাস করে। তবে তাদের চলাফেরায় কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে রেখেছে মিয়ানমার সরকার। ২০১৭ সালে এসব ক্যাম্প বন্ধ করার অঙ্গীকার করে মিয়ানমার সরকার। তবে সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। উল্টো অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতদের পরিস্থিতি দিনকে দিন আরো অবনতির দিকে গেছে। জাতিসঙ্ঘ এই সামরিক অভিযানকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ বলে আখ্যা দেয়।
মাহাথির জানান, ৩৪তম আসিয়ান সম্মেলনে তিনি রোহিঙ্গা সঙ্কটের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছেন। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেনারেল প্রায়ুথ চ্যান ও-চা। মাহাথির বলেন, আমি রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে কথা বলেছি। রোহিঙ্গা প্রত্যর্পণ রিপোর্টে অভিবাসী ও আশ্রয়প্রার্থীদের প্রতিক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আশ্রয়প্রার্থীদের মতো অবশ্যই বিবেচনায় নেয়া উচিত। কারণ তারা রাখাইনে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে আতঙ্কিত অবস্থার মধ্যে আছে।
মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করি রোহিঙ্গারা যখন মিয়ানমার ফিরে যাবে সেখানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তদারকি করবে এবং রাখাইন ও মিয়ানমারে যাতে তারা শাস্তির মুখোমুখি না হয় তা নিশ্চিত করবে।
মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির সাথে বৈঠকের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মাহাথির বলেন, তিনি আমার পাশে বসেছিলেন। বর্ণানুক্রমিকভাবে তিনি আমার পাশে বসেছিলেন এবং এমনকি খেয়েছেন। তবে সম্মেলনে সু চির সাথে কোনো ব্যক্তিগত কথোপকথন হয়েছে কি না তা জানা যায়নি।
মাহাথির বলেন, রাখাইন রাজ্য প্রসঙ্গে একমাত্র কথা বলেছে ইন্দোনেশিয়া। এই একটি বিষয় নিয়েই দেশটি কথা বলেছে। আমি অবশ্য সবসময়ের মতোই অনেক প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছি।
তিন বছরের বেশি ক্ষমতায় থাকব না
তাছাড়া নির্বাচন-পূর্ববর্তী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিন বছরের মধ্যে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াবেন বলে জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ। ক্ষমতা তুলে দেবেন পিকেআর পার্টির প্রেসিডেন্ট আনোয়ার ইব্রাহিমের হাতে। আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে সিএনবিসি’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে শনিবার তিনি সে কথাই আবার জানান দিয়েছেন।
মাহাথির ওই সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যতদূর মনে পড়ে, আমি একটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, আমি পদত্যাগ করব, যাতে আনোয়ার ইব্রাহিম আমার উত্তরসূরি হিসেবে ক্ষমতায় আসতে পারেন। তিনি বলেন, এই সরকারের জন্য তিনটি বছর প্রয়োজন। কারণ, মালয়েশিয়ার জাতীয় প্রবৃদ্ধির শতকরা ৮০ ভাগ থেকে ঋণ শতকরা ৫৪ ভাগে নামিয়ে আনতে এই সময় প্রয়োজন।
এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য তিনি কি ক্ষমতায় থেকেই যাবেন কি না? এমন প্রশ্নের উত্তরে মাহাথির বলেন, না। আমি তিন বছরের বেশি ক্ষমতায় থাকব না। ফেব্রুয়ারিতে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেছেন, তিনি দুই বছরের বেশি সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী হবেন না। এর মধ্য দিয়ে ড. মাহাথির মোহাম্মদের সাথে তার বোঝাপড়া যে পাকাপোক্ত তারই প্রকাশ পেয়েছে। তিনি স্বীকার করেছেন, ড. মাহাথিরকে যথেষ্ট সময় দেয়া উচিত অত্যন্ত কঠিন সময়ে কার্যকর সরকার পরিচালনার জন্য।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল