০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`


বিদেশী অবৈধ সুতা, কাপড়ের দাপটে মার খাচ্ছে দেশী বস্ত্র : মোহাম্মদ আলী খোকন, সভাপতি, বিটিএমএ

-

নয়া দিগন্ত : বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের কবলে পড়ে দেশের টেক্সটাইল খাতের বর্তমান অবস্থান কী?
মোহাম্মদ আলী খোকন : হাত বাড়ালেই বিদেশী কাপড় এবং সুতা পাওয়া যাচ্ছে। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধ পথে আনা সুতা-কাপড়েই চলছে দেশীয় বাজার। দামে সস্তা হওয়ায় বিদেশী কাপড়ের প্রতিই পাইকারি ক্রেতাদের ঝোঁক। কারণ, তুলা আমদানি করে দেশে উৎপাদিত সুতা কিংবা সুতা আমদানি করে উৎপাদিত কাপড়ের দাম সঙ্গত কারণেই একটু বেশি। এতে দেশী সুতা-কাপড় বেচা-বিক্রি এক রকম বন্ধ। স্থানীয় বাজারের জন্য উৎপাদিত সুতা-কাপড় অবিক্রীত পড়ে আছে গুদামে। অবিক্রীত এ দুই পণ্যের দাম অন্তত ১৫ হাজার কোটি টাকা। দীর্ঘ দিন ধরে এ অবস্থা চলার কারণে বাধ্য হয়ে এখন উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে সুতা-কাপড় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন উদ্যোক্তারা। ফলে বিদেশী অবৈধ সুতা-কাপড়ের দাপটে মার খাচ্ছে দেশীয় তাঁত ও বস্ত্রশিল্প।
শুল্কমুক্ত আমদানি সুবিধার অপব্যবহারের কারণে দেশে এক লাখের মতো তাঁতের মধ্যে অন্তত ৬০ শতাংশ এখন বন্ধ। রফতানিমুখী সুতা এবং কাপড় উৎপাদনের সাথে জড়িত মিলগুলোও চোরাইপথে আমদানি করা সুতার কারসাজিতে বিপদে পড়েছে। এসব কারণে উৎপাদন ক্ষমতার ৬০ শতাংশ কমিয়ে নিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে সংশ্লিষ্ট মিলগুলো। এ ছাড়া বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বন্ধ। অথচ তাদের বন্ড লাইসেন্স ব্যবহার করেও আমদানি চলছে। সাধারণত রোজার ঈদ সামনে রেখে সুতা ও কাপড় তৈরির মিলগুলো উৎপাদনমুখর থাকে। কিন্তু শুল্কমুক্ত আমদানির অপব্যবহারের কারণে এ বছর মিলগুলোর সব কার্যক্রম স্থবির। তিনি বলেন, দেশীয় বস্ত্রশিল্প রক্ষায় সরকার কঠোর না হলে বিদেশী বস্ত্রের বাজারে পরিণত হবে দেশ। হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হবে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক শৃঙ্খলা নষ্ট হবে।
নয়া দিগন্ত : এ বিষয়ে আপনাদের অবস্থান কী?
মোহাম্মদ আলী খোকন : এ পরিস্থিতির প্রতিকার চেয়ে এনবিআর এবং সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে চিঠি দিয়েছি আমরা। চিঠিতে পরিস্থিতির বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। এতে প্রকৃত ঘোষণার ভিত্তিতে সুতা ও কাপড় আমদানির পর খালাস, আমদানিপর্যায়ে সুতা-কাপড়ের বাস্তবভিত্তিক শুল্ক নির্ধারণ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া বন্ড সুবিধা অর্থাৎ শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা সুতা-কাপড়ের মোড়কে সুস্পষ্টভাবে লেখা থাকতে হবেÑ ‘রফতানি পণ্য তৈরিতে ব্যবহারের জন্য এবং বিক্রির জন্য নয়।’ আমদানিপর্যায়ে এ রকম কিছু পরিবর্তন আনার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে চিঠিতে।
নয়া দিগন্ত : গ্যাসের দাম বাড়লে কী ধরনের প্রভাব পড়বে?
মোহাম্মদ আলী খোকন : ২০১৪ সাল থেকে আমাদের গ্যাসের দাম বেড়েছে ১৫৭ শতাংশ। এখন যদি গ্যাসের দাম বাড়ায় তাহলে গত ছয় বছরে গ্যাসের দাম বাড়বে প্রায় ৪০০ শতাংশ। শিল্পে বাড়বে ১৩২ শতাংশ এবং ক্যাপটিভ পাওয়ারে বাড়বে ৯৬ শতাংশ। এতে আমাদের উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। কারণ, আমাদের নিজস্ব কোনো কাঁচামাল নেই। আমাদের আছে কেবল ক্যাপটিভ পাওয়ার ও জনশক্তি। এ দু’টির মূল্য এখন ঊর্ধ্বমুখী। গত এক বছরে জনশক্তির মূল্য বেড়েছে ১৫৭ শতাংশ। এ মুহূর্তে গ্যাসের দাম বাড়লে আমরা কী নিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করব। তিনি বলেন, আমাদের রফতানি আয়ের ৮৫ শতাংশই আসে টেক্সটাইল ও তৈরী পোশাক খাত থেকে। এখন এটাকে যদি গলা টিপে মেরে ফেলি তাহলে পুরো অর্থনীতিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর আমি বিপক্ষে নই। তবে আমাদের ১০ বছরের পরিকল্পনা দিতে হবে, গ্যাসের দাম কী পর্যন্ত বাড়বে। তাহলে সেভাবে শিল্পোদ্যোক্তা পরিকল্পনা করে শিল্প স্থাপন করতে পারে। কিন্তু হঠাৎ করে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়লে আমরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবো। আমরা সরকারকে আমাদের অবস্থানের কথা জানিয়েছি। দাম বাড়লে দেশের শিল্পগুলোর উন্নতিতে যেটুকু এগিয়ে ছিল, সেটা পিছিয়ে যাবে।
নয়া দিগন্ত : অবৈধ সুতা ও কাপড় বন্ধে করণীয় কী?
মোহাম্মদ আলী খোকন : মুক্তবাজার অর্থনীতিতে আমরা আমদানি বন্ধ রাখতে পারি না। তবে দেশের কোনো পণ্য বাঁচাতে আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক নির্ধারণ করতে পারে। আমদানি করা পণ্যের শুল্ক ফাঁকির বিপক্ষে আমরা। কিছু ব্যবসায়ীর নামে দেশের অর্থনীতির লুটেরা বন্ড সুবিধার আড়ালে পণ্য এনে সেই পণ্য রফতানি না করে দেশীয় বাজারে বিক্রি করছে। এভাবে তারা দেশীয় শিল্প ধ্বংস করছে। এতে এক দিকে তারা যে টাকা আয় করছে, সেটা বৈধভাবে দেখাতে পারছে না। এটা হয়ে যাচ্ছে কালো টাকা। দেশীয় কোনো ব্যাংকেও সেই টাকা রাখতে পারছে না। ফলে এ অর্থ বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। আমরা তাদের প্রতিকার চাই। এদের সাথে সরকারি কিছু লোক জড়িত। কেননা অবৈধ কোনো সম্পদের ভাগিদার না হলে কোনো ব্যক্তি একা সুযোগ নিতে পারে না। এর ভাগিদার আনেকেই আছে। মূল লোক ধরতে পারলে এদের সমূলে উৎখাত করা যাবে।
তিনি বলেন, বাজারে ভারত ও চীনের থ্রিপিস কিভাবে আসে? এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে কোনো তথ্য নেই। বাজারে ১০০ পিস চোরাই কাপড়ের মধ্যে ৭০ শতাংশ আসে বন্ডের মাধ্যমে। আর ৩০ শতাংশ আসে প্রতিবেশী দেশ থেকে চোরাইপথে। এটা তো দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে দিয়ে আসেই, আবার সীমান্ত হাট দিয়ে আসে। এটা বন্ধ করতে না পারলে এ শিল্পের বিপর্যয় ঠেকানো সম্ভব হবে না।
নয়া দিগন্ত : সামনে কী ধরনের বাজেট চান?
মোহাম্মদ আলী খোকন : সরকার বলছে, এবার ট্যাক্স-ভ্যাট বাড়বে না। আমরা শিল্পবান্ধব বাজেট চাচ্ছি। নগদ সহায়তা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের জন্য ১৬ শতাংশ আমাদের নগদ সহায়তা দিতে হবে। কারণ, আমরা যুক্তরাষ্ট্রে কোনো জিএসপি সুবিধা পাচ্ছি না। এটা দিলে এ দেশ থেকে রফতানি আয় বাড়বে। এতে সরকার এক দিকে বৈদেশিক মুদ্রা পাবে, তেমনি উৎসে করের নামে কোটি কোটি টাকা আয় করবে।
নয়া দিগন্ত : সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
মোহাম্মদ আলী খোকন : আপনাকেও ধন্যবাদ।


আরো সংবাদ



premium cement
রাঙ্গামাটিতে বজ্রপাতে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু গণতন্ত্র রক্ষায় নতুন করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে : মঈন খান পবিত্র ওমরাহ পালন করলেন মির্জা ফখরুল রাশিয়ার সাথে সংলাপ অব্যাহত রাখতে হবে : ম্যাক্রোঁ বাল্যবিবাহ ঠেকানোয় বিষপানে তরুণীর আত্মহত্যা মে মাসে দেশে বৃষ্টির সর্বকালের রেকর্ড ভাঙবে! দিল্লি বিমানবন্দরে বাংলাদেশী গার্মেন্টসের রফতানি বাড়ায় ভারতীয়দের আপত্তি উত্তর গাজায় পূর্ণ দুর্ভিক্ষের বিষয়ে হুঁশিয়ারি উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করতে জনগণের প্রতি রিজভীর আহ্বান প্রয়োজনে শুক্রবারও ক্লাস হবে : শিক্ষামন্ত্রী উখিয়ার ক্যাম্পে রোহিঙ্গা যুবককে গলা কেটে হত্যা

সকল