চাঁদের কণা হাঁটেন দুই হাতে ভর দিয়ে। দুই হাতে ভর দিয়ে হেঁটেই তিনি ইডেন কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেছেন প্রথম বিভাগে। তার সারা জীবনের ইচ্ছা ছিল একটি সরকারি চাকরির। সরকারি চাকরির জন্য অনেক চেষ্টাও করেছেন তিনি। কিন্তু কোথাও তার চাকরি হয়নি। এভাবে এখন তার বয়স হয়েছে ৩১ বছর। সরকারি চাকরির বয়স শেষ। তাই বাধ্য হয়ে তিনি গতকাল থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আমরণ অনশনে বসেছেন। তার ইচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করার।
মাত্র ৯ মাস বয়সে পোলিও আক্রান্ত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেন চাঁদের কণা। এরপর দুই হাতে ভর দিয়ে শুরু হয় তার জীবন চলা। প্রচণ্ড মনের জোরে চাঁদের কণা এসএসসি, এইচএসসি পাস করার পর রাজশাহী মাদার বক্স গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ থেকে অনার্স পাস করেন। এরপর তিনি ইডেন কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেন প্রথম বিভাগে।
চাঁদের কণার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার বিয়াড়া গ্রামে। তার বাবা আব্দুল কাদের। তার মা হাসনা হেনা সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন। কিন্তু অনার্সে প্রথম বর্ষ পড়ার সময় তিনি মারা যান। এরপর কঠিন হয়ে পড়ে চাঁদের কণার জীবন। কারণ তার মা ছিল সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। মায়ের মৃত্যুর পর তার বাবাও ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ। আর্থিক অনটন দেখা দিলেও চাঁদের কণা বন্ধ করেননি তার পড়ালেখা। একটি বেসরকারি টেলিভিশনে চাকরি নিয়ে তিনি ঢাকায় লেখাপড়া চালিয়ে যান।
উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি চাঁদের কণা কম্পিউটারসহ অনেক ধরনের কাজের দক্ষতা অর্জন করেছেন। বিশেষ করে রেডিও টিভিতে উপস্থাপনা, গ্রন্থনাসহ বিভিন্ন কাজে তার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা রয়েছে।
চাঁদের কণা আক্ষেপ করে বলেন, সবাই বলে শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। তাই আমি কারো ওপর নির্ভর না করে সারা জীবন মেরুদণ্ড সোজা করে নিজের মতো করে বাঁচতে এত কষ্ট করে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করলাম। কিন্তু আমার জীবনের দুঃখ তো ঘুচল না। অনেক ধরনের সরকারি চাকরির জন্য চেষ্টা করেছি। অথচ কোথাও চাকরি পেলাম না। এখন আমার বয়স শেষ। বাবা অসুস্থ। পরিবারে ছোট দুই ভাই লেখাপড়া করে।
চাঁদের কণা জানান, তিনি কারো ওপর নির্ভরশীল হতে চান না। তার সারা জীবনের বাসনা কেবল একটি সরকারি চাকরিই তাকে মুক্তি দিতে পারে তার জীবনের পঙ্গুত্বের বেদনা থেকে। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও তিনি সে চাকরি না পেয়ে বাধ্য হয়ে অনশন শুরু করেছেন।
চাঁদের কণা জানান, প্রতিবন্ধী কোনো সংস্থা থেকেও তিনি কোনো ধরনের সাহায্য সহযোগিতা পাননি এবং তিনি চেষ্টাও করেননি। কারণ তিনি নিজেই কাজ করে তার পড়ার খরচ চালিয়েছেন। তিনি কারো ওপর নির্ভরশীল হতে চাননি। তিনি চেয়েছিলেন একটি সরকারি চাকরি। ঢাকায় এসে অনশনে বসার আগে তিনি গ্রামের বাড়িতে বাস করতেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা