২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

এরেনা অব ভ্যালোর বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ : চ্যাম্পিয়ন অরিয়েন্টাল ফনিক্সের সাক্ষাতকার

-

অনুগ্রহ করে আপনার দলের সদস্যদের ও খেলোয়াড়দের নাম বলুন।
আমাদের দলের নাম Oriental Phoenix।

খেলোয়াড়দের বিবরণ :
আসাদুল্লাহ আল গালিব, Sugarkid নামে পরিচিত (দলীয় ম্যানেজার)
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, Deathly নামে পরিচিত (দলনেতা)
ফাহরাজ জামিন স্পর্শ, Beast নামে পরিচিত
নাফিস আহমেদ, MrCharming নামে পরিচিত
আবরার শাহরিয়ার সুবাত, Worthless নামে পরিচিত
ফারদিন হাসান, Pika Pika নামে পরিচিত
শেখ মতিউর রহমান, Sycen নামে পরিচিত

আমাদেরকে আপনাদের যাত্রা সম্পর্কে বলুন। গেমিং-এ কিভাবে এলেন? মোবাইল multiplayer online battle arena (MOBA) গেম খেলতে কিভাবে আগ্রহী হলেন?
উত্তর : অভিযাত্রাটি আমাদের জন্য সহজ ছিলো না। আমরা বিগত 4 বছর ধরে MOBA গেমস খেলছি। কিন্তু এই দলের সমন্বয়ে আমরা 2 বছর ধরে খেলছি। খেলাটির প্রতি আমাদের গভীর ভালোবাসা থেকে আমরা MOBA গেমস খেলি। আমরা লিগ অব লিজেন্ড (League of Legends), ওয়াইল্ড রিফ্ট (wild rift) প্রভৃতিসহ বিভিন্ন MOBA গেমস খেলে থাকি। আমরা ARENA OF VALOR-এর মতো 5v5 MOBA গেমস খেলতে স্বাচ্ছ্যন্দ বোধ করি। মাঝে-মাঝে MOBA গেমস বেশ খেলা কঠিন মনে হয়, কিন্তু প্রতিযোগী খেলোয়াড় হিসেবে আমরা সবসময় বড় টুর্নামেন্টগুলোর জন্য মুখিয়ে থাকি। বিগত দিনে আমরা এই টুর্নামেন্টের মতো এত বড় কোন টুর্নামেন্টে খেলিনি। অন্যান্য দেশে আরও বড় সুযোগ ও টুর্নামেন্টগুলো সবসময় আমাদের এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে। আমরা আশাবাদী যে আমরা একদিন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলবো।

আপনার ব্যক্তিগত জীবনে এমন কোন চ্যালেঞ্জ ছিলো যা আপনাকে এ জাতীয় টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার পথে কিংবা গেমিং ক্যারিয়ার শুরু করায় বাধা সৃষ্টি করেছিলো?
উত্তর : এটি সত্যি যে আমাদের অনেক ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়, কিন্তু সকল প্রশংসা আল্লাহর যে আমরা এ পরীক্ষায় উতরে গেছি। Sycen-এর অনেক শারীরিক সীমাবদ্ধতা ছিলো, কিন্তু খেলাটির প্রতি তার ভালোবাসা তাকে শক্তিশালী করে তুলেছে এবং সে টুর্নামেন্টে যোগ দিয়েছে। এই টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়ে আমরা যে আত্মত্যাগ করেছি তার ফলেই আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছি। এমনকি আমাদের দলের কোন স্পন্সর বা কোচ ছাড়াই আমরা এই সাফল্য পেয়েছি। আগে যেমনটা বলেছি, আমাদের প্রতিযোগিতামূলক ক্যারিয়ারে আমরা এই টুর্নামেন্টের মতো খুব বেশি টুর্নামেন্ট ও LAN খেলিনি, যার ফলে অনেকবারই আমরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু আমাদের দলের সদস্যদের পরস্পরের সাথে দৃঢ় বন্ধনের কারণেই আমরা বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছি।

esports আপনাদের ক্যারিয়ারকে কীভাবে বদলে দিয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর: খেলাটির প্রতি আমাদের গভীর ভালোবাসা থেকে আমরা MOBA গেমস খেলি। কিন্তু এই মুহূর্তে আমরা এর পেছনে সম্পূর্ণ আত্মনিয়োগ করতে পারবো না এবং এটিকে আমাদের ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে পারবো না, কারণ এখনও আমাদের সামনে খুব বেশি সুযোগ আসেনি। আমি বরং বলবো esports আমাকে একটি পরিবার দিয়েছে এবং আমি যা করতে চাই সেটি করার সক্ষমতা দিয়েছে। আমরা এখন গর্বভরে বলতে পারি যে আমরা esports খেলোয়াড় এবং আমরা বাংলাদেশকে সারাবিশ্বে প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছি।


MOBA গেমস ও ARENA OF VALOR চালিয়ে যাওয়ার জন্য আপনি কোথা থেকে উৎসাহ পান?
উত্তর : একসাথে খেললে আমরা কখনোই বিরক্ত হই না। আমরা আমাদের মতো করে সময় ব্যয় করতে পারি এবং এর ফলে আমাদের সার্বিক মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে। MOBA গেমসের জন্য অনেক ধরনের কৌশল, কর্মপন্থা, নিখুঁত পরিকল্পনা প্রভৃতি দরকার। আমরা নিজেরাই নিজেদের পরিকল্পনা তৈরি করি। আমরা যখন দেখি যে ARENA OF VALOR-এর মতো একটি MOBA গেম আমাদের মতো খেলোয়াড়দের সুযোগ করে দিচ্ছে যাতে আমরা আমাদের নিজস্ব গেমিং ক্যারিয়ার শুরু করতে পারি, এটি আমাদের বাড়তি অনুপ্রেরণা যোগায়।

বাংলাদেশের সর্বকালের সবচেয়ে বড় esports টুর্নামেন্ট জিতে কেমন লাগছে?
উত্তর : আমাদের টিম সত্যিই আনন্দিত, কারণ আমাদের সকল কঠোর পরিশ্রম সফল হয়েছে। ARENA OF VALOR বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশীপ আমাদের দেশে সর্বপ্রথম ও সবচেয়ে বড় LAN টুর্নামেন্ট। এটি ছিলো দারুণ এক অভিজ্ঞতা, এবং টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আমাদের দলের সবাই সত্যিই আনন্দিত।

টুর্নামেন্টে আপনাদের দলের সবচেয়ে বড় শক্তিমত্তা কি ছিলো?
উত্তর : টুর্নামেন্টে আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি ছিলো আমাদের দলনেতার কথা মেনে চলা, আমাদের পরিপক্কতা ও দলের সদস্যদের মধ্যকার বন্ধন।

টুর্নামেন্টে Yorozuya, WE Esports, MARTYRS প্রভৃতির মতো অনেক বড়-বড় নাম ও পুরনো দল ছিলো। এই দলগুলোর সাথে প্রতিযোগিতা করতে কেমন লেগেছে?
উত্তর : আমরা সবাই একটু স্নায়ুচাপে ভুগছিলাম কারণ যেকোনো দলই জিততে পারতো। Yorozuya-কে হারানো সম্ভবত আমাদের সেরা মুহূর্ত, কারণ তারা চ্যাম্পিয়নের মতোই খেলছিলো ও তাদের হারানো সহজ ছিলো না। যেকোনো পরিস্থিতিতে আমরা প্রতিটি খেলায় নিজেদের শান্ত রেখেছি এবং কম ভুল করেছি যার কারণে আমরা Yorozuya, WE Esports ও MARTYRS-এর মতো বড় বড় দলগুলোর সাথে জয় পেয়েছি। আমরা বাংলাদেশের শীর্ষ 8টি দলকে সম্মান করি এবং তারা আমাদের সমপর্যায়ের।

আপনি ও আপনার দলের অন্য সদস্যদের সম্পর্কে কিছু বলুন। আপনারা কীভাবে একসাথ হলেন? কোথায় মিলিত হয়েছিলেন?
উত্তর : এটি অনেক লম্বা গল্প। আমরা অনেকবার আমাদের টিমের সমন্বয় পরিবর্তন করেছি। কিন্তু গত 2 বছর, আমরা একই দলে একসাথে খেলছি। এর মধ্যে অনেক উত্থান-পতন হয়েছে কিন্তু এর ফলে আমরা আরও শক্তিশালী হয়েছি।

গ্র্যান্ড ফিনালের প্রথম ম্যাচটি Yorozuya-এর বিরুদ্ধে জিতে কেমন লেগেছিলো? তারা তর্কসাপেক্ষে বাংলাদেশের সেরা দল।
উত্তর : Yorozuya-এর বিরুদ্ধে খেলা আমাদের কাছে সম্পূর্ণ নতুন ব্যাপার ছিলো। ফাইনালে যাত্রার শুরুতে আমাদেরকে তাদের মোকাবেলা করতে হয়েছে। এর ২টি দিক ছিল। প্রথমত, আমরা যদি খেলাটিতে জিতি, সেক্ষেত্রে ট্রফি না জিতে আমরা বাড়ি যাচ্ছি না। কিন্তু আমরা হেরে গেলে, আমাদের মানসিক জোর কিছুটা কমে যেত। নিখুঁত হিসেব-নিকেশ ও সঠিক কৌশলে খেলার কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। Yorozuya পুরো খেলায় প্রাধান্য বিস্তার করে খেলেছে কিন্তু শেষের দিকে তারা একটি ভুল করে বসে এবং আমরা সে সুযোগটি নিই ও খেলা জিতে যাই।

WE Esports Armada আপনাদের দলকে চট্টগ্রাম শহর কোয়ালিয়ারের ফাইনালে হারিয়েছে, কিন্তু এবার আপনারা তাদেরকে 2-0-তে হারিয়েছেন। এর মধ্যে কি বদলেছে এবং জিতে আপনাদের কেমন লেগেছে আমাদের বলুন।
উত্তর: আমরা সবসময়ই বিশ্বাস করি যে প্রত্যাবর্তন রাজকীয় হয়। আমাদেরকে স্বীকার করতে হবে যে খেলায় কিছু সমস্যা ও ত্রুটির কারণে চট্টগ্রাম LAN ফাইনালে আমরা আমাদের 100% দিতে পারিনি। ওটা অপ্রত্যাশিত ছিলো, কিন্তু আমরা সেটিকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছি। এছাড়া আমরা একই প্রতিদ্বন্ধীর কাছে দুইবার হারি না।

গ্র্যান্ড ফিন্যালে’র চূড়ান্ত মুহূর্তগুলো সম্পর্কে কিছু বলুন। জেতার জন্য আপনাদের কি নির্দিষ্ট কোন কৌশল ছিলো? আপনারা কোন কোন বিষয় ও চালের উপর নজর দিয়েছেন?
উত্তর: চূড়ান্ত পর্যায়ে আমরা WE Esports Armada-এর মুখোমুখি হয়েছিলাম। সৌভাগ্যবশত আমরা যেহেতু তাদের একবার মোকাবেলা করেছি, আমরা তাদের কৌশল জানতাম এবং তাদের দুর্বল দিকগুলোতে নজর দিয়েছিলাম। তাদের দুর্বলতাগুলো নিয়ে আমরা কাজ করেছি, আমাদের পরিকল্পনা সঠিকভাবে কাজে লাগিয়েছি, এবং ফাইনাল জিতে নিয়েছি। আমাদের এক ও অদ্বিতীয় কর্মপন্থা ছিলো নিজের দলের সদস্যদের উপর আস্থা রাখা।

সার্বিকভাবে আপনার গেমিং কিংবা ARENA OF VALOR খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে মজার কিছু শেয়ার করতে চান?
উত্তর : ARENA OF VALOR সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ গেমগুলোর একটি। আমরা এত বেশি MOBA গেমস খেলেছি যে মাঝে-মাঝে আমরা কিছু শব্দ গুলিয়ে ফেলি, যেমন, “ড্রাগন”-কে “লর্ড” বলে ফেলা।”

আপনার ব্যক্তিগত ও গেমিং জীবনের স্মরণীয় কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চান?
উত্তর : টুর্নামেন্ট চলাকালে আমাদের সহযোদ্ধাদের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো সবচেয়ে আনন্দদায়ক ছিলো। আমরা প্রথমবারের মতো Sycen-এর সাথে পরিচিত হয়েছি, এবং দল হিসেবে আমরা একসাথে খেলা উপভোগ করেছি। জানুয়ারি’র শেষ দিকে বিজয়কে দল হিসেবে উদযাপনের জন্য আমরা একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি।

এই বিজয়ে আপনাদের দলের অনুভূতি কী? আপনাদের পরবর্তী পরিকল্পনা কী?
উত্তর: এই বিজয় আমাদের অনুপ্রেরণা, আত্মবিশ্বাস যুগিয়েছে এবং বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করার গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেছে। এখন আমাদের পরবর্তী পরিকল্পনা Asian Olympics ট্রফি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট জেতা। বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে আমরা কঠোর পরিশ্রম করবো।

Asian Olympics -এ ARENA OF VALOR আয়োজন করা হবে, আপনার দল কি এই বড় টুর্নামেন্টটিতে অংশ নিবে?
উত্তর : Asian Olympics অংশ নেওয়া আমাদের একটি স্বপ্ন। এই ‍টুর্নামেন্ট জেতায় আমাদের যাত্রা কেবল শুরু হলো। এই খেলাটির মাধ্যমে আমরা আমাদের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে চাই। আমাদের দেশে esports-এর বিকাশে এটিই আমাদের প্রথম পদক্ষেপ।

ARENA OF VALOR ভক্ত বা অপেশাদার esports দলগুলোর জন্য আপনাদের কোন বার্তা আছে?
উত্তর : esports গেম ও টুর্নামেন্টগুলোতে প্রতিদ্বন্ধীতার মানসিকতা নিয়ে অংশ নিন। আপনার নিজের দল তৈরি করুন এবং দেশের জন্য লড়ুন যাতে আপনি সারা বিশ্বে নিজের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন। আমাদের সহায়তার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। আপনারা নিরাপদে ও সুস্বাস্থ্যে থাকুন।


আরো সংবাদ



premium cement