২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়ে রাজউকের নতুন নির্দেশনায় জটিলতার শঙ্কা

পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়ে রাজউকের নতুন নির্দেশনায় জটিলতার শঙ্কা। - ছবি : সংগৃহীত

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আওতায় থাকা প্লট বা ফ্ল্যাটের জন্য কাউকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিতে বা আমমোক্তার নিয়োগ বা বাতিলের আগে রাজউকের অনুমোদন নেয়ার একটি নতুন নির্দেশনা কার্যকর করেছে রাজউক। আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্প, প্রাতিষ্ঠানিক প্লট, ফ্ল্যাটের বরাদ্দ গ্রহীতা, লিজ গ্রহীতাদের সকল প্লটের, ফ্ল্যাটের আমমোক্তার নিয়োগ ও বাতিলের উভয় ক্ষেত্রেই এটি কার্যকর করা হয়েছে ১ মার্চ থেকে।

রাজউকের আওতায় থাকা এ ধরনের প্লট বা ফ্ল্যাটের জন্য কাউকে আমমোক্তার করা হলে তা রেজিস্ট্রেশনের আগেই রাজউকের কাছ থেকে অনুমোদন নিয়ে করতে হবে। আগে এটি রেজিস্ট্রি অফিসেই করা যেত। রাজউক কর্মকর্তারা বলছেন যে ভূমি সংক্রান্ত জালিয়াতি রোধে এটি কার্যকর হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজউজের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘অনেক প্লট বা ফ্ল্যাটে আমমোক্তার নিয়োগ বা বাতিলের বিষয়টি রাজউককে অবহিত করা হয় না। ফলে বিভিন্ন জটিলতা তৈরি হয়। অনুমতি নিয়ে এটা করা হলে জালিয়াতি কমবে বলেই আমরা মনে করি।’

যদিও অনেকে মনে করছেন, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বা আমমোক্তার দেয়া বা বাতিলের অনুমোদনের জন্য আবেদন প্রক্রিয়ায় জটিলতা থাকায় নতুন নির্দেশনা বড় ধরণের জটিলতা তৈরি করতে পারে।

নির্দেশনায় যা বলা হয়েছে?
রাজউকের এ সংক্রান্ত অফিস আদেশে বলা হয়েছে আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্প, প্রাতিষ্ঠানিক প্লট, ফ্ল্যাটের বরাদ্দ গ্রহীতা, লিজ যারা গ্রহণ করবেন তাদের রাজউকের অনুমোদন নিতে হবে।

এ নির্দেশনা অনুযায়ী সব প্লট ও ফ্ল্যাটের জন্য আমমোক্তার নিয়োগ বা বাতিলের ক্ষেত্রে রাজউক থেকে আগে অনুমোদন নিয়ে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।

রাজউকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে নির্দেশনাটি মার্চ মাস থেকেই কার্যকর হয়েছে। ফলে এখন কেউ চাইলেই কাউকে আমমোক্তার করেই জমি বা ফ্ল্যাট অন্য কারো কাছে বিক্রি করতে পারবে না। আবার একবার কাউকে আমমোক্তার করা হলে তা বাতিল করার জন্যও রাজউকের অনুমতি লাগবে।

পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বা আমমোক্তার বিষয়টি কী?
পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বা আমমোক্তার নামা একটি সম্পূর্ণ আইনি দলিল, যার মাধ্যমে একজন আরেকজনের আইনি প্রতিনিধি হিসেবে প্লট বা ফ্ল্যাট ক্রয় বা বিক্রয় করতে পারেন।

স্ট্যাম্প অ্যাক্ট-১৮৯৯-এর ২(২১) উপ-ধারা অনুসারে যে দলিল দিয়ে কোনো ব্যক্তিকে অপর কোনো ব্যক্তির পক্ষে হাজির হয়ে কার্য সম্পাদন বা কোনো ডিক্রি, রেজিস্ট্রি সম্পাদন তত্ত্বাবধান ইত্যাদি বিষয়ক কার্যক্রম সম্পাদন করার ক্ষমতা দেয়া হয়।

অর্থাৎ কোনো ব্যক্তিকে কাজ করার ক্ষমতা প্রদান করা অর্থাৎ কোনো ব্যক্তিকে অন্য কোনো ব্যক্তির পক্ষে কোনো কাজ করে দেয়ার জন্য লিখিতভাবে ক্ষমতা প্রদান করাই হলো পাওয়ার অব অ্যাটর্নি।

শফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি অনেক বছর ধরে প্যারিসে বসবাস করে আসছিলেন। ২০২১ সালে এক নিকটাত্মীয়কে আমমোক্তার করে তার মাধ্যমে ঢাকায় তার পারিবারিক সম্পদ বিক্রি করেছিলেন তিনি।

শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ঢাকায় আসতে যেতে অনেক টাকা খরচ হতো। পরে আমার চাচাত ভাইকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি করে জমি বিক্রি করে টাকা নিয়েছি।’

তবে কোনো দায়িত্ব বা ক্ষমতা অর্পণের জন্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বা আমমোক্তারনামা করতে হলে তা লিখিত আকারে করতে হয় এবং এটি একটি আইনগত দলিল। এ দলিলের মাধ্যমে যাকে মোক্তার নিয়োগ করা হলো, তিনি মূল মালিকের পক্ষে কোনো সম্পত্তির দান, বিক্রি, হস্তান্তর, রক্ষণাবেক্ষণ, বন্ধক রাখা এবং খাজনা আদায়ের মতো কাজগুলো করে থাকেন।

সাধারণত মোক্তারনামা দু’প্রকার। একটি হচ্ছে সাধারণ মোক্তারনামা, যাকে আমমোক্তারনামা বলা হয়। আরেকটি হচ্ছে খাসমোক্তারনামা, যা বিশেষ ধরনের।

সাধারণত মোক্তারনামায় মোক্তারদাতার পক্ষে অনেক ধরনের ক্ষমতা দেয়া হয়। কিন্তু বিশেষ মোক্তারনামা সম্পাদন করতে হয় নির্দিষ্ট কাজের জন্য। যেসব আমমোক্তারনামা জমিজমা হস্তান্তরের সাথে জড়িত নয়, সেগুলো নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে নোটারি করে নিতে হয়। কিন্তু জমিজমা-সংক্রান্ত মোক্তারনামা অবশ্যই রেজিস্ট্রি করাতে হবে। না হলে এর আইনগত ভিত্তি থাকে না।

বিদেশে বসবাস বা অবস্থানরত কোনো ব্যক্তি কাউকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিতে চাইলে দূতাবাসের মাধ্যমে দলিলটি সম্পাদন ও প্রত্যয়ন করে পাঠানোর নিয়ম ছিল। এখন নতুন নিয়ম অনুযায়ী তাদের এটি করার আগে রাজউকের অনুমোদন নিতে হবে।

জটিলতার আশঙ্কা কেন?
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো: হাফিজুর রহমান খান বলছেন, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি অ্যাক্ট-২০১৫ অনুযায়ী একজনের পক্ষে আরেকজনকে কাজ করার আইনি অধিকার দেয়া হয়। আর রাজউকের নিয়ম হলো তাদের এ ধরণের কাজে অনুমোদন নেয়ার জন্য প্লট বা ফ্ল্যাট মালিককে সশরীরে এসে আবেদন করতে হয়। তাছাড়া রাজউক আইন অনুযায়ী পাওয়ার অব অ্যাটর্নি অনুমোদন ছাড়া দেয়া বা বাতিল করা হলে তা আইনসিদ্ধ হবে না।

তিনি বলছেন, ‘কিন্তু প্রশ্ন হলো এর বাস্তবিক একটা দিক আছে। ধরুন যিনি বিদেশে থেকে সম্পদ ক্রয় বা বিক্রয় করতে চান। কিংবা অনেক অসুস্থ বয়স্ক ব্যক্তি সম্পদ বিক্রি বা ক্রয় করবেন। তাদের পক্ষে রাজউকে সশরীরে উপস্থিত হয়ে এ ধরণের অনুমোদনের জন্য আবেদন করা অসম্ভব। ফলে নতুন করে জটিলতা তৈরি ও দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হবে।’

মো: হাফিজুর রহমান খান বলেন, ‘অনেকেই বিদেশে থাকেন যাদের বাবা হয়ত দেশে থাকেন। বাবার মৃত্যু হলে বিদেশে থাকা সন্তানদের অনেকে দেশে এসব সম্পদ রাখতে চান না। এখন নতুন নিয়ম তাদের বিপাকে ফেলবে কারণ শুধু পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেয়ার জন্যই তাদের সশরীরে আসতে হতে পারে।’

যদিও এর অন্য আরেকটি দিকও আছে বলে মনে করেন তিনি।

মো: হাফিজুর রহমান খান বলছেন, ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়ে অনেক জালিয়াতির ঘটনাও ঘটছে। এটিও সত্যি। ভুয়া আমমোক্তার তৈরি করে অনেকে এমন কাজ করে। তাই কাকে আমমোক্তার করা হচ্ছে তা রাজউককে আগে জানালে জালিয়াতির সুযোগ কমতে পারে। তাই বলা যায় নতুন নিয়মটি একদিকে জটিলতাও বাড়াতে পারে আবার জালিয়াতি কমাতেও ভূমিকা রাখতে পারে।’

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত পাবনায় ১০ কোটি টাকার অনিয়মে ৩ ব্যাংক কর্মকর্তা আটক জীবন্ত মানুষকে গণকবর আগ্রাসন ও যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃষ্টির জন্য সারা দেশে ইসতিস্কার নামাজ আদায় আরো ৩ দিনের হিট অ্যালার্ট তাপপ্রবাহ মে পর্যন্ত গড়াবে আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঢাকার ভূমিকা চায় যুক্তরাষ্ট্র বিদ্যুৎ গ্যাসের ছাড়পত্র ছাড়া নতুন শিল্পে ঋণ বিতরণ করা যাবে না মিয়ানমারে ফিরল সেনাসহ আশ্রিত ২৮৮ জন বিএনপি ক্ষমতায় যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে : কাদের

সকল