০৭ জুন ২০২৪, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৯ জিলকদ ১৪৪৫
`

চূড়ান্ত মৃত্যুদণ্ডের আগে ফাঁসির সেল নয়

হাইকোর্টের রায়
-

মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত (রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমার আবেদন নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত) হওয়ার আগে আসামিকে নির্জন সেল বা কনডেম সেলে বন্দী রাখা যাবে না বলে রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। গতকাল সোমবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো: বজলুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ যুগান্তকারী এ রায় ঘোষণা করেন।
আদালত রায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়া বলতে হাইকোর্ট বিভাগ, আপিল বিভাগ, আপিলের রিভিউ এবং রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন নিষ্পত্তি হওয়াকে বোঝানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন রিটকারী আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
রায়ে আদালত বলেছেন, কোনো ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্ত হওয়ার পূর্বে তাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি বলা যাবে না এবং তাকে কনডেম সেলে রাখা যাবে না। মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হবে তখন, যখন বিচার বিভাগীয় পদক্ষেপ হিসেবে হাইকোর্ট বিভাগ, আপিল বিভাগ ও রিভিউ এবং প্রশাসনিক পদক্ষেপ আছে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা। এই সব কিছু নিষ্পত্তি করেই একজন ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হবে। কেবল তখন একজন ব্যক্তিকে মৃত্যু সেলে বন্দী রাখা যাবে।
রায়ে আদালত আরো বলেছেন, কোনো বন্দীর যদি কোনো বিশেষ অসুবিধা থাকে, এটি হতে পারে শারীরিক কোনো অসুবিধা, সংক্রামক রোগ কিংবা কোনো যৌন সমস্যা তাহলে তাকে আলাদা করে রাখা যাবে। এই ক্ষেত্রে জেলে থাকা ওই ব্যক্তির মতামত নিতে হবে।
আদালত বলেছেন, রাষ্ট্রপক্ষ বলেছে নতুন জেলকোড তৈরি করা হচ্ছে। নতুন আইন হচ্ছে প্রিজন অ্যাক্ট। হাইকোর্ট বলছেন, রায়ের পর্যবেক্ষণ যেন নতুন আইনে প্রতিফলিত হয়, সেটা বিবেচনা করতে। রায়ে আদালত বলেছেন, এখন হাইকোর্টে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের জামিন আবেদন শুনানি হয় না। মৃত্যুদণ্ড ছাড়া অন্য আসামিদের বা অন্য দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের জামিন আবেদনের শুনানি হয় এবং তারা জামিন পেয়ে বেরিয়ে যান। কিন্তু মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলে তার আপিল শুনানির কোনো ব্যবস্থাপনা আমাদের হাইকোর্টে নেই। আদালত বলেছেন, অন্য আসামিদের মতো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদেরও জামিন আবেদন যেন হাইকোর্ট বিভাগে শুনানি করা হয় এবং জামিনও যেন মঞ্জুর করা হয়।

মৃত্যদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দীর বিষয়ে তথ্য চাইলে (সাংবাদিক, গবেষক) আইন অনুসারে তা দিতে কারাকর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রিকেও আইন অনুসারে তথ্য দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক রিপোর্টেও এসব আসামির তথ্য সন্নিবেশিত করতে বলা হয়েছে। রায়ে দুই বছরের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দীদের ক্রমান্বয়ে কনডেম সেল থেকে সরিয়ে সাধারণ কয়েদিদের সঙ্গে রাখার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
রায়ের পর রিটের পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, আদালত রায়ে সাগর-রুনি হত্যা মামলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেছেন, ১২ বছর ধরে সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত চলছে। এখনো তদন্ত শেষ হচ্ছে না। আমাদের দেশে ট্রায়াল পর্যায়ে বিচার শেষ হতে পাঁচ থেকে ১০ বছর সময় লাগে। সে জন্য রায়ের এক পর্যায়ে আদালত মন্তব্য করেন, এই ধরনের বিলম্ব যেখানে হয় সেখানে একজন কয়েদিকে ১৫ থেকে ২০ বছর যদি নির্জন সেলে বন্দী রাখা হয় সেটা হবে ডাবল পানিসমেন্ট।
আইনজীবী শিশির মনির বলেন, আসামির সাজা মূলত মৃত্যুদণ্ড। তার সাজা কিন্তু নির্জন কক্ষে বসবাস নয়। এটা ডাবল পানিসমেন্ট হয়ে যাচ্ছে, যা বাংলাদেশ সংবিধান বা আইন সমর্থন করে না। তিনি আরো বলেন, আদালত রায়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ সংক্রান্ত রায় উল্লেখ করেছেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার। আদালতের আহ্বানে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে এ বিষয়ে মতামত দেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী ও এস এম শাহজাহান। আইজি প্রিজন্সের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খন্দকার শাহরিয়ার শাকির।

শিশির মনির বলেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন নিষ্পত্তির পর জেল কোড অনুযায়ী ১৫ দিন সময় দিতে হবে। কিন্তু তাকে ১৫ থেকে ২০ বছর নির্জন সেল বা কনডেম সেলে বন্দী রাখার সুযোগ নেই।
এ দিকে রাষ্ট্রের শীর্ষ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেছেন, সরকারের সাথে আলোচনা করে রায়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত তিন কারাবন্দীর রিটের শুনানি নিয়ে ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে জেল কোডের ৯৮০ বিধি কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তাও জানতে চান উচ্চ আদালত।
রুলের পর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেছিলেন, জেল কোডের ৯৮০ বিধি চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। সেখানে বলা আছে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিদের পৃথকভাবে কনডেম সেলে রাখা হবে। ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন তিন কয়েদি। তারা হলেন- চট্টগ্রাম কারাগারের কনডেম সেলে থাকা সাতকানিয়ার জিল্লুর রহমান, সিলেট কারাগারে থাকা সুনামগঞ্জের আব্দুল বশির ও কুমিল্লা কারাগারে থাকা খাগড়াছড়ির শাহ আলম। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এসব আসামির আপিল হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করাই প্রধান চ্যালেঞ্জ : প্রধানমন্ত্রী ঈদগাঁওতে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্থদের প্রতি জামায়াতের সহায়তা দিনাজপুরে ঘর থেকে বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বোঝা হবেন না তো সাকিব! অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও প্রস্তুতির অভাব শেয়ার বাজারে ধস নামা নিয়ে তদন্ত চান রাহুল গান্ধী জাতীয় মহিলা হ্যান্ডবলে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ আনসার-ভিডিপি কোকো দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে এগিয়ে নিয়েছিলেন : মেজর হাফিজ বাংলাদেশ থেকে অভিবাসন নিরাপদ-সুশৃঙ্খল করতে ইতালি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : রাষ্ট্রদূত যবিপ্রবিতে ছাত্রলীগ সভাপতিসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা নিরাপদ খাবার যেভাবে নিশ্চিত করতে পারেন

সকল