১৫ মে ২০২৪, ০১ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলকদ ১৪৪৫
`


তারল্য সঙ্কট

আস্থা ফিরছে না পুঁজিবাজারে

-

বিক্রেতারা সক্রিয়
- মূলধন আরো ১৩ হাজার ৩১১ কোটি টাকা চলে গেছে
- তারল্য বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সহায়তার আশ্বাস
- ডিএসইএক্স সূচক থেকে খোয়া গেছে ১৬৩.৩৪ পয়েন্ট

অব্যাহত পতনে পুঁজিবাজারে বিক্রেতাদের আধিপত্য ও সক্রিয়তা বিরাজ করছে। যার কারণে বিক্রির চাপও রয়েছে। ক্রমাগত দরপতনের ফলে শেয়ার বিক্রির পর সেই অর্থ আর ফিরছে না। এতে তারল্য বা বাজার মূলধনে শুষ্কতা দেখা দিয়েছে। বাড়ছে তারল্য সঙ্কট। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ডিএসইএক্স সূচক থেকে খোয়া গেছে ১৬৩.৩৪ পয়েন্ট। ডিএসইতে ৮৭.২৭ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দরপতনের কবলে ছিল। শুধু গত সপ্তাহেই ঢাকা স্টকে তারল্য কমেছে ১ দশমিক ৯২ শতাংশ বা ১৩ হাজার ৩১১ কোটি টাকা। এ অবস্থায় পুঁজিবাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়াতে নীতি সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো: খুরশীদ আলম। এমন তথ্যই জানিয়েছে ব্রোকারেজ হাউজ মালিকদের সংগঠন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)।

বিগত সপ্তাহের লেনদেনের তথ্য থেকে বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায় সবগুলো খাতেই মূল্য কমেছে। শেয়ার বিক্রির চাপ অব্যাহত রয়েছে, কমেছে ডিএসইর সব ক’টি সূচকও। প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৬৩.৩৪ পয়েন্ট বা ২.৭৫ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ২৬.৩৮ পয়েন্ট বা ০.৪৪ শতাংশ। শরিয়াহ সূচক গেলো সপ্তাহে কমেছে ৩৮.৪৯ পয়েন্ট বা ২.৯৮ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ৬.৭৭ পয়েন্ট বা ০.৫২ শতাংশ। ডিএসই-৩০ সূচক কমেছে ৪৬.৬৩ পয়েন্ট বা ২.২৭ শতাংশ। তবে এটি তার আগের সপ্তাহে বেড়েছিল ৬.১৪ পয়েন্ট বা ০.৩০ শতাংশ।

সূচকের এই নিম্নমুখী প্রবণতার পাশাপাশি ডিএসইতে কমেছে লেনদেনের পরিমাণও। পুরো সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৬১ কোটি ৩০ লাখেরও বেশি শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ড হাতবদল হয়েছে এক হাজার ৯৭৫ কোটি ৭৫ লাখ ৭০ হাজার টাকায়। যেখানে আগের সপ্তাহে মোট ৬৫ কোটি ৭০ লাখের বেশি শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ড বিক্রি হয়েছিল এক হাজার ৯৮৫ কোটি ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকায়। লেনদেন কমেছে ৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। আর প্রতি কর্মদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ০.৪৭ শতাংশ বা ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। বিদায়ী সপ্তাহের প্রতি কর্মদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪৯৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৪৯৬ কোটি ২৮ লাখ টাকার শেয়ার। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে ৩৯৩টি কোম্পানির লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৩৫টির, কমেছে ৩৪৩টির বা ৮৭.২৭ শতাংশের এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৫টির। লেনদেনের বাহিরে ছিল ১৮টি কোম্পানির শেয়ার। ডিএসইর বাজার মূলধন গত সপ্তাহ শেষে ৬ লাখ ৭৯ হাজার ২২৯ কোটি টাকা। যেখানে আগের সপ্তাহের শেষে ছিল ৬ লাখ ৯২ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। কমেছে ১ দশমিক ৯২ শতাংশ।

অন্য দিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গেলো সপ্তাহে প্রধান সূচক সিএএসপিআই ২.২৬ শতাংশ বা ৩৮৩.৭৫ পয়েন্ট কমে ১৬ হাজার ৫৫৩.৪৪ পয়েন্টে, সিএসসিএক্স সূচক ২.১৩ শতাংশ বা ২১৬.৬৮ পয়েন্ট কমে ৯ হাজার ৯৫১.৪৩ পয়েন্টে এবং সিএসই-৩০ সূচক ০.৫২ শতাংশ বা ৬৭.১৬ পয়েন্ট কমে ১২ হাজার ৭০১.৮২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ৩১ কোটি ১৬ লাখ টাকা। সপ্তাহজুড়ে দুই কোটি ৭৯ হাজার ২৪২টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে ৯৭ কোটি ১৭ লাখ ৪৪ হাজার ৪১৪ টাকায়, যা আগের সপ্তাহে হয়েছিল ৬৬ কোটি ১ লাখ টাকা। গেলো সপ্তাহে সিএসইতে ৩১২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট লেনদেন হয়েছে। যার মধ্যে দাম বেড়েছে ৪৮টির, কমেছে ২৪৩টির ও দর অপরিবর্তিত রয়েছে ২১টির। বাজার লেনদেনে এ শ্রেণীর শেয়ারের আধিপত্য ছিল ৭৬.৮৪ শতাংশ, বি শ্রেণীর ১২.১৯ শতাংশ এবং এন শ্রেণীর ১০.৪৫ শতাংশ।

পুঁজিবাজার নিয়ে রয়েল ক্যাপিটালের পর্যালোচনা হলো, গেলো সপ্তাহে প্রধান সূচক ‘ডিএসইএক্স’ ২.৭৫ শতাংশ কমেছে। সব খাতে মূল্য হ্রাস পেয়েছে। বিক্রেতারা বেশির ভাগ দিন সক্রিয় ছিল এবং বাজারে আধিপত্য বিস্তার করেছিল। তারল্য সঙ্কটের ফলে শেষ পর্যন্ত বিনিয়োগকারীরা বাজারের প্রতি আস্থা ধরে রাখতে পারেনি। অন্য দিকে, গড় টার্নওভার ০.৪৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। আগামী সপ্তাহে বাজারের সূচক কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার পাশাপাশি কম পরিমাণে লেনদেন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement