২০ মে ২০২৪, ০৬ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫
`


বিলুপ্তির পথে কবি আল মাহমুদের স্মৃতি

কবি আল মাহমুদের কবর ও পৈতৃক ভিটার জীর্ণদশা : নয়া দিগন্ত -

আমাদের সম্মিলিত অবহেলা, উন্নাসিকতা ও দায়িত্বহীনতার কারণে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি ও মুক্তিযোদ্ধা আল মাহমুদের প্রাথমিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতি ও কবর আজ হারাতে বসেছে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি কবি ও সাংবাদিক আবদুল হাই শিকদার ও আমি কবির পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী ও ‘সোনালি কাবিন’-এর পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে আল মাহমুদ একাডেমি আয়োজিত অনুষ্ঠানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোড়াইলে কবি ও অধ্যাপক মহিবুর রহিমের সাথে আল মাহমুদের বসতভিটা, ঘরবাড়ি ও কবরস্থানে গিয়ে। কবির স্মৃতিবিজড়িত ঘরবাড়ির ভগ্নদশা ও বিলুপ্তপ্রায় কবর দেখে আমরা বিস্মিত, স্তম্ভিত ও হতবাক হতে হয়েছে! কবির পরিবার, শুভানুধ্যায়ী ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অবহেলায় আজকের এ অবস্থা মেনে নিতে পারিনি। 

বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান কবি, কথাশিল্পী ও ‘গণকণ্ঠ’-এর সম্পাদক আল মাহমুদ, জসীমউদ্দীন ও ফররুখ আহমদের পর সবচেয়ে বড় কবি হিসেবে তিনি বাংলা ভাষায় স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। ‘সোনালি কাবিন’-এর মতো অমর-কাব্যের স্রষ্টা এই কবির স্মৃতিময় স্থানগুলো এখন জাতীয় সম্পদ। কবির অনেক পঙ্ক্তি গণমানুষের স্মরণে উজ্জ্বল হয়ে আছে- 


ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ
দুপুর বেলার অক্ত
বৃষ্টি নামে, বৃষ্টি কোথায়? বরকতের রক্ত।
অথবা
আমার মায়ের সোনার নোলক হারিয়ে গেল শেষে
হেথায় খুঁজি হোথায় খুঁজি সারা বাংলাদেশে।
নদীর কাছে গিয়েছিলাম, আছে তুমার কাছে?
-হাত দিও না আমার শরীর ভরা বোয়াল মাছে।
বললো কেঁদে তিতাস নদী হরিণবেড়ের বাঁকে
শাদা পালক বকরা যেথায় পাখ ছাড়িয়ে থাকে।


কিংবা 
কবিতা তো কৈশোরের স্মৃতি। সে তো ভেসে ওঠা ম্লান
আমার মায়ের মুখ; নিম ডালে বসে থাকা হলুদ পাখিটি
পাতার আগুন ঘিরে রাতজাগা ভাই-বোন 
আব্বার ফিরে আসা, সাইকেলের ঘণ্টাধ্বনি- রাবেয়া রাবেয়া-
আমার মায়ের নামে খুলে যাওয়া দক্ষিণের ভেজানো কপাট!


বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, চিরায়ত বাংলার জনজীবন, নদীভাঙনমুখর জনপদ, রূপরসগন্ধময় প্রকৃতি, গণমানুষের বিশ্বাস, বাংলার সাংস্কৃতিক ঐহিত্য, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ভূমিকা ও জনসমাজের আলেখ্য নতুন এক কাব্যভাষায় তার কবিতা, কথাসাহিত্য ও গদ্যরচনায় প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। বাংলা ভাষায় এমন একজন দেশপ্রেমিক শক্তিশালী কবির জন্ম গর্বের বিষয়। কোনো সাহিত্যে এ রকম অপরিহার্য কবির জন্য এক শতাব্দীও অপেক্ষা করতে হয়ে। যে কবির কবিতায় সমগ্র বাংলাদেশ বাক্সময় হয়ে উঠেছে, যিনি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিত্ব করেন; তিনি দেশ ও ভাষার সম্পদ যেমন, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য তেমনি প্রেরণাদায়ক ব্যক্তিত্ব। এই মহান কবির স্মৃতি ও কবর সংরক্ষণ মানে দেশের জাতীয় ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্মারক রক্ষা করা; সেই সাথে কবির প্রতি জাতির দায় শোধ করা। 
এ বিষয়ে কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, ‘পৃথিবীর সব সভ্য জাতি তাদের প্রতিভার স্মৃতি সংরক্ষণের সব ধরনের সুব্যবস্থা করেছে। ইংল্যান্ড শেকসপিয়রের সম্মানে স্ট্রাটফোর্ড গ্রামটিকে আজ শেকসপিয়র সিটিতে পরিণত করেছে। শেলি, কিটস, বায়রন সবাইকে তারা সংরক্ষণ করেছে। ফ্রান্সের মতো শিল্পসচেতন দেশ এ ব্যাপারে একইভাবে এগিয়ে আছে। আয়ারল্যান্ডে ওয়াটারফোর্ড থেকে ডব্লিউ বি ইয়েটসের সøাইগো শহর প্রায় ৫০০ কিলোমিটার আজ আইরিশদের সাহিত্যতীর্থ।


 অন্য দিকে ডাবলিন যেন লেখকদের বেহেশত। সেখানে আছে জেমস জয়েস, বার্নার্ড শ, অস্কার ওয়াইল্ড, আইনস্টাইন, হ্যারল্ড পিন্টার- কতজনের কথা বলব। লেখক, কবি, মনীষীদের প্রতিটি স্মৃতি তারা সযতেœ ধরে রেখেছে। এ ক্ষেত্রে ইরান যেন পৃথিবীর মডেল। পুরো সিরাজনগরী সাজানো হয়েছে হাফিজের কবিতায় উল্লিখিত বৃক্ষ আর ফুল দিয়ে। একই রকম অবস্থা ফেরদৌসির তুস ও ওমর খৈয়ামের নিশাপুরে। অন্যদের বেলাও একই ব্যবস্থা। সংরক্ষণ ও উপস্থাপনের ক্ষেত্রে ইরান যে কতটা দরদি ও সচেতন তা যারা চোখে দেখেননি, তারা বুঝবেন না। পশ্চিম বাংলায় তো রবীন্দ্রনাথ নিয়ে ধুন্ধুমার কাণ্ড। কিন্তু তারা শরৎচন্দ্র, বিভূতিভূষণ, তারাশংকর এমনকি নজরুলের কথাও ভোলেননি। রাশিয়ায় টলস্টয়, চেখভ, তুর্গেনিভের সাথে মায়াকোভস্কি, ম্যাকসিম গোর্কিকেও নিয়েছে বুকের মধ্যে। কোথাও কোনো অসম্মান নেই সেখানে।’ 

কবি আরো বলেন, ‘দেশ, জাতি, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষার স্বার্থে; একজন মহান কবি প্রতি সম্মানে ও জাতীয় সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, কবির পরিবার ও ভক্তকুলকে অবিলম্বে এগিয়ে আসতে হবে ও জাতীয় ভূমিকা রাখতে হবে।’ 
পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হলে কবির মেজো সন্তান মীর মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার যে গোরস্থানে আল মাহমুদকে দাফন করা হয়েছে, সেটি তাদের দাদার ও নানার বংশের অর্থাৎ মীর ও মোল্লাবাড়ির পারিবারিক গোরস্তান ছিল। পরবর্তীকালে পৌর কর্তৃপক্ষ সেটি একুয়ার করে পাবলিক কবরস্থানে পরিণত করে। এখানেই আল মাহমুদের কবর দেয়া হয়। কিন্তু কিছু বাধার কারণে কবরটি বাঁধাই করা যাচ্ছে না। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের মহান সাহিত্যিক ও মুক্তিযোদ্ধা আল মাহমুদের জীবনের সব স্মৃতি ও কবরস্থান রক্ষায় আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা সময়ের দাবি।   

 


আরো সংবাদ



premium cement
কেমন ছিল রাইসির ব্যক্তিগত ও কর্মজীবন ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের অনুমতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী : ওবায়দুল কাদের রাইসির মৃত্যুতে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের শোক ঝালকাঠিতে চোর সন্দেহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা টানা চতুর্থবার প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জিতে ম্যান সিটির রেকর্ড ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক অবিলম্বে ১০ম ওয়েজবোর্ডে গঠনের দাবি বিএফইউজের হযরত পালনপুরী রহ:, জীবন ও কর্ম রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তে ইসরাইলের হাত! দ্বিতীয়বারের মত প্রিমিয়ার লিগের গোল্ডেন বুট জয় করলেন হালান্ড সাভারে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তা আহত, স্ত্রী নিহত

সকল