বাউফলের মৃৎসামগ্রী ইউরোপ আমেরিকার বাজারে
- নজরুল ইসলাম বাউফল (পটুয়াখালী)
- ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০৫, আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:০৬
বাউফলের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প সামগ্রী এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের বাজার দখল করেছে। বিগত কয়েক বছর ধরে ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার বেশ কয়েকটি বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে এখানকার মাটির তৈরি বিভিন্ন পণ্য। বর্তমানে প্লাস্টিক পণ্যের প্রভাবে এই শিল্প যখন বিলুপ্ত হওয়ার পথে, তখন কঠোর পরিশ্রম ও মণনশীলতা দিয়ে বাউফলের মাটির পণ্যকে বিশ্বমানের আধুনিক পণ্যে রূপ দিতে সক্ষম হয়েছেন বাউফলের মৃৎ শিল্পীরা।
সরেজমিন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার মদনপুরা ও কনকদিয়া ইউনিয়নের পালপাড়া পরিদর্শনকালে জানা যায়, করোনা মহামারীর ধাক্কা সামলে বর্তমানে মহাব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পের সাথে জড়িতরা। মৃৎপল্লী ঘুরে চোখে পড়েছে মাটির তৈরি বাহারি সব তৈজসপত্র এবং শোনা গেছে রঙ-বেরঙের খেলনার টুং টাং শব্দ। প্রতিযোগিতা চলছে দ্রুত সরবরাহের। বাহারি ডিজাইনের পণ্য ফিনিশিং শেষে চলছে প্যাকেজিং। কাগুজিরপুল ব্রিজের ঢালে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িতে লোড করা হচ্ছে মৃৎশিল্প ভর্তি ঝুড়ি। বাজার ধরতে গাড়িগুলো যাবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
বাউফলে আধুনিক মাটির পণ্য তৈরির দিকপাল ও একাধিক পুরস্কারপ্রাপ্ত বিশ্বেশ্বর পাল জানান, এখানকার মাটির পণ্য দেশ এবং বিদেশে নন্দিত। এ সব পণ্য বিদেশে রফতানির জন্য আড়ং, কোর দি জুট ওয়ার্কস ও ঢাকা হ্যান্ডিক্র্যাফটসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। তিনি বলেন, প্লাস্টিক পণ্যের প্রভাবে বংশানুক্রমিকভাবে চলে আসা এই শিল্প যখন হুমকির মুখে পড়েছে তখন আমরা আধুনিক ডিজাইনের পণ্য তৈরির জন্য কৌশল অবলম্বন করি। আশির দশকে ঢাকায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে বাউফলের মাটির পণ্যের মান দেখানো হয়। ওই সময় আড়ং কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হলে তারা বাউফলে তৈরি মাটির পণ্য দেখে মুগ্ধ হন। সেই থেকেই তাদের সহযোগিতায় এ শিল্পে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগতে শুরু করে। এরপর ঢাকা হ্যান্ডিক্র্যাফটের সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর থেকেই বাউফলে তৈরি নানা ধরনের মাটির পণ্য সরবরাহ শুরু হয়। তিনি বলেন, আমরা কঠোর পরিশ্রম ও মনোনশীলতা দিয়ে বাউফলের মাটির পণ্যকে বিশ্বমানের আধুনিক পণ্যে রূপ দিতে সক্ষম হয়েছি এবং এই শিল্পের সাথে জড়িতরা গর্বের অংশীদার হয়েছেন। বর্তমানে বাউফলের মাটির তৈরি নানা পণ্য এশিয়া মহাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
বাউফল পৌরসভার কাউন্সিলর ও একটি মৃৎ শিল্প কারখানার মালিক শংকর পাল জানান, প্রতি বছরই পণ্যের ডিজাইনে পরির্বতন আসে। ঢাকার বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নতুন ডিজাইন করে তাদের চাহিদাপত্র দেন। সে অনুযায়ী নতুন নতুন ডিজাইনের পণ্য তৈরি হয়। তিনি বলেন, বিগত বছরের তুলনায় এ বছর সবগুলো মাটির পণ্যেই নতুনত্ব এসেছে।
অপর মৃৎ শিল্পী শ্যামল পাল জানান, এ বছর ডিনার সেটে থাকছে প্লেট, গ্লাস, মগ, কারিবল, জগ, লবনদানি, সানকি (বাসন), কাপপিরিচ ও তরকারির বাটি। এ ছাড়াও নতুন ডিজাইনে তৈরি করা হয়েছে স্যুপ সেট। অন্যান্য পণ্যের মধ্যে নতুন ডিজাইনের কয়েলদানি, মোমদানি, ঘটি, ফুলদানি ও নানা ধরনের খেলনা ক্রেতাদের আলাদাভাবে আকৃষ্ট করবে। ডিনার সেট ছাড়াও আলাদা বিক্রির জন্য তৈরি করা হয়েছে মাটির প্লেট, গ্লাস, জগ, মগ ইত্যাদি। রাসায়নিক কোনো পদার্থের ছোঁয়া ছাড়াই তৈরি করা হয়েছে মাটির এসব পণ্য। তিনি আরো বলেন, পণ্যের গায়ে রঙ করা হয় পাহাড়ি গাছের রস দিয়ে।
মৃৎ শিল্প কারখানার মালিক শিল্পী বরুন পাল বলেন, এক সময় বাউফলের পালপাড়ায় জালের কাঠি, পুতুল, কলস, শিশুদের খেলনা ও রসের হাঁড়িসহ গ্রামবাংলায় ব্যবহার্য নানা ধরনের মাটিরসামগ্রী তৈরি হতো। ক্রমান্বয়ে প্লাস্টিকসামগ্রীর সাথে পাল্লা দিয়ে একই কাঁচামালে তৈরি হতে থাকে মোমদানি, অ্যাস্ট্রে, ফুলদানি, পায়ের গোড়ালি ঘষোনি (ঝামা), ডিনার সেট, মোমদানি, কয়েল দানি, টি সেট, হুক্কা, ভর্তার বাটি, ল্যাম্পসেট, মাটির মালা, ব্রেসলেট ও কানের দুলসহ আর্কষণীয় মাটির শোপিচ। আধুনিক ডিজাইনের এসব মাটির পণ্য তৈরি করে অনেক পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা