১৫ মে ২০২৪, ০১ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলকদ ১৪৪৫
`


চট্টগ্রামে সুপেয় পানি ও ক্ষুধা নিবারণের হাহাকার

বিকেল নাগাদ বাসাবাড়িতে ফিরেছে গ্যাস
-


বন্দর নগরী চট্টগ্রামে এমনিতেই গত প্রায় দেড় মাসের অধিক সময় ধরে ওয়াসার লবণাক্ত পানি সরবরাহ নিয়ে মানবিক বিপর্যয় চলছে। এর ওপর ঘূর্ণিঝড় মোখার অজুহাতে সবাইকে স্তম্ভিত করে দিয়ে নজিরবিহীনভাবে শনিবার রাত থেকে সম্পূর্ণ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে ভয়াবহ আরেক মানবিক বিপর্যয়ে ঠেলে দেয়া হয়। ফলে এক দিকে সুপেয় পানির হাহাকার, অন্য দিকে ক্ষুধা নিবারণে খাবারের হাহাকার মানুষের হৃদয়কে কাপিয়ে তুলেছে। আবার এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বৈদ্যুতিক চুলা, রাইস কুকার, কেরোসিনের স্টোভ এবং গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ীরা জনগণের পকেট কেটেছেন যেন প্রতিযোগিতা দিয়ে। এমন পরিস্থিতিতে চরম ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। ভুক্তভোগী অনেক নাগরিক আবার সিলিন্ডার ব্যবসায়ীদের অবিক্রীত সিলিন্ডার বিক্রির সুযোগ দিতেই এমন নজিরবিহীন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন।

ওয়াসার লবণ পানির সঙ্কট মহান রবের কৃপা (বৃষ্টিপাত) ছাড়া সুরাহা হবে না সেটা অনেকটা ধরেই নিয়েছেন। তাই মানুষও এখন প্রতীক্ষা করেন রহমতের বৃষ্টির। কিন্তু কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে টোটাল গ্যাস সরবরাহ বন্ধের ঘটনা চট্টগ্রামে নজিরবিহীন। এলএনজি চালু হওয়ার আগেও তো চট্টগ্রামে চাহিদার তুলনায় অর্ধেকের বেশি গ্যাস সরবরাহ আসতো জাতীয় সঞ্চালন লাইন থেকে। কিন্তু এলএনজি সংযুক্ত হওয়ার পর চট্টগ্রামের পুরো গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থা এর ওপর ঘোর বিপদ দেখছেন এখানকার নাগরিকরা। গ্যাস সঙ্কটকে পুঁজি করে খাদ্যের হাহাকারের পাশাপাশি সীমিত সংখ্যক গণপরিবহন এবং রিকশা রাস্তায় থাকলেও জনগণকে গুনতে হয়েছে কয়েকগুণ বাড়তি ভাড়া।
বেসরকারি চাকরিজীবী হুমায়ুন কবির এ প্রতিবেদকের কাছে দাবি করেন, চট্টগ্রামের গ্যাস সরবরাহ বেসরকারি খাত নির্ভর করে ফেলার মানে হলো সময়ে সময়ে নাগরিকদের জিম্মি করা হবে, আর রমরমা সিলিন্ডারের ব্যবসা চালানো হবে। রিকশা চালক ইলিয়াস আলী জানান, কেরোসিনের লিটার ২০০ টাকা চাওয়ায় শেষ পর্যন্ত রান্না করা খাবার খাওয়ার আশাই ছেড়ে দিয়েছেন। নির্ভর করছেন নিম্নমানের বিস্কুট-বনের ওপর।
এ দিকে গতকাল সোমবার দুপুরের পর থেকে কিছু কিছু এলাকায় গ্যাস সরবরাহ করা হতে থাকে এবং বিকেল নাগাদ অধিকাংশ এলাকায় গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হয়।

অবস্থান কর্মসূচি পালন : গ্যাস সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চট্টগ্রামস্থ কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্টিবিউশন কার্যালয়ের সামনে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের জনগণ এর ব্যানারে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়।
এ সময় বক্তারা বলেন, চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড। কিন্তু বন্দরনগরী চট্টগ্রামে জাতীয় গ্রিড থেকে গ্যাসের অংশীদারিত্ব একেবারেই নেই। ফলে মহেশখালীর ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ থাকার অজুহাতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যদি এভাবে কয়েক দিন পর পর প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয় বা পাইপে লিকেজ হয় তবে চট্টগ্রামের মানুষ দিনের পর দিন না খেয়ে থাকতে হবে। তাই এলএনজি নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে চট্টগ্রামকে জাতীয় গ্রিড থেকে গ্যাস সরবরাহ করতে হবে।
চট্টগ্রামের সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে সাংবাদিক বিপ্লব পার্থের সভাপতিত্বে অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন সৌরভ প্রিয় পাল, সাজ্জাদ হোসেন জাফর, রাসেল উদ্দিন, সাজ্জাদ হোসেন, মো: ফোরকান প্রমুখ।

ক্যাব নেতৃবৃন্দের কেজিডিসিএল এমডির সাথে সাক্ষাৎ
কেজিডিসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সাথে গতকাল সোমবার জরুরি সভা করে গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে গ্রাহকদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম ক্যাবের নেতৃবৃন্দ। ক্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার ক্ষয়ক্ষতি কমাতে বিগত দুই দিন ধরে চট্টগ্রাম মহানগরীর বাসাবাড়ী, সিএনজি স্টেশন ও শিল্প-কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেন কর্নফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি: (কেজিডিসিএল)। ফলে বাসাবাড়িতে খাবারের সঙ্কট প্রকট হয়ে যায়, খাবার কিনতে হোটেল রেস্তোরাঁয় ভিড় করলেও সেখানেও গ্যাস সরবরাহ না থাকায় নাকাল এবং বাড়তি টাকায় খাবার কিনতে বাধ্য হয়েছেন। এ সুযোগে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের মূল্যবৃদ্ধি করে ১২০০ টাকার সিলিন্ডার ৩ হাজার টাকার, রাইস কুকার, স্টোভ ও কেরেসিন তেলের দাম আকাশচুম্বী করে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী প্রচুর টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় বিভিন্ন গণপরিবহনও বাড়তি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

ক্যাব নেতৃবৃন্দ চট্টগ্রাম মহানগরে এলএনজি নির্ভর গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থার কারণে যেকোনো ভাবে আমদানিতে সঙ্কট হলেই চট্টগ্রামে গ্যাস সঙ্কট প্রকট হয়ে যায়। এ অবস্থায় বিকল্প ব্যবস্থায় গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ন্যাশনাল গ্রিড থেকে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার দাবি জানান। একই সাথে যেকোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা যেকোনো সঙ্কট মোকাবেলায় বিকল্প ব্যবস্থায় বাসাবাড়ি ও সিএনজি স্টেশনে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা এবং দেশীয় গ্যাসে চট্টগ্রামের হিস্যা নিশ্চিত করার দাবি জানান।
নেতৃবৃন্দ আরো ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন কর্নফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি: (কেজিডিসিএল) এর বসতবাড়িতে ৫ লাখ ৯৭ হাজার সংযোগ আছে, যেখানে গ্যাসের চাহিদা প্রায় দৈনিক ৫০ মিলিয়ন ঘনমিটার। ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকায় প্রতি পরিবারে ২ দিনে প্রায় ৪ হাজার টাকার মতো অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে বাধ্য হয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement
নির্বাচন-পরবর্তী রাজনীতি ও মানবাধিকার নিয়ে আলোচনা খাদ্য মূল্যস্ফীতির চক্রে নিম্ন আয়ের মানুষ স্বর্ণের অলঙ্কার বিক্রিতে মজুরি ৬ শতাংশ ফ্রান্সে কারা কর্মকর্তাদের হত্যা করে প্রিজনভ্যান থেকে আসামি ছিনতাই নিউ কালেডোনিয়ায় সহিংসতার পর কারফিউ, বন্ধ বিমানবন্দর থাইল্যান্ডের কারাগারে অনশনে থাকা তরুণীর মৃত্যু ভারতীয় পত্রিকার রিজার্ভ চুরির খবর মিথ্যা : বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধানমন্ত্রীর ছবি ব্যঙ্গোক্তি করে ফেসবুকে পোস্ট, যুবলীগ নেতা গ্রেফতার রাফা ক্রসিং বন্ধের জন্য মিসরকে দায়ী করল ইসরাইল দেশের মাটি ধরে রাখাই এখন অনেক কঠিন : কিয়েভ কুবি শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ

সকল