২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
দুই গ্রুপের মতবিরোধ

কেআইবির দুই বছরের কমিটি ৬ বছর

-


দেশে কৃষিবিদদের প্রধান ও মর্যাদাশীল সংগঠন কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি)। ২০১৭-১৮ কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে চার বছরেরও বেশি সময় হলো। কিন্তু দুই বছরের সেই কমিটি ছয় বছরের বেশি সময় ধরে আছে বহাল। ২০১৮ সালের ২৩ নভেম্বর ২০১৯-২০ মেয়াদি (দুই বছর) কমিটির নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভুয়া ভোটার অন্তর্ভুক্তির অভিযোগ এনে এক কৃষিবিদ আদালতের দ্বারস্থ হন। ভোট গ্রহণের ঠিক কয়েক ঘণ্টা আগে মধ্যরাতে উচ্চ আদালতের আদেশে এই নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এরপর কেটে গেছে চার বছরেরও বেশি সময়। কিন্তু নতুন করে আর ভোট গ্রহণ হয়নি। এতে কৃষিবিদদের অনেকেই হতাশ।
জানা যায়, কৃষিবিদরা বর্তমানে দু’টি ধারায় বিভক্ত। একটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক। অন্যটির নেতৃত্বে রয়েছেন আওয়ামী লীগের অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। ড. রাজ্জাক বাকৃবি (বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়, ময়মনসিংহ) এবং নাছিম শেকৃবি (শেরেবাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয়) বলয়ের নেতৃত্ব দেন বলে জানা যায়।
কেআইবির সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। এই নির্বাচনে সভাপতি হন কৃষিবিদ এ এম এম সালেহ। আর মহাসচিব নির্বাচিত হন কৃষিবিদ মো: খায়রুল আলম প্রিন্স। যদিও ওই নির্বাচন বয়কট করেন বিএনপি সমর্থিত কৃষিবিদদের সংগঠন অ্যাগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (অ্যাব)।


সভাপতি এ এম এম সালেহ ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মারা যাওয়ার পর সিনিয়র সহসভাপতি অধ্যাপক ড. মো: শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন। তিনি বর্তমানে শেরেবাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কেআইবির সভাপতি এবং মহাসচিবের দায়িত্বে থাকা দু’জনই বাহাউদ্দিন নাছিমের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে যে কার্যনির্বাহী কমিটি রয়েছে তার মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৮ সালে। ওই বছরের ২৩ নভেম্বর কেআইবির ২০১৯-২০ মেয়াদি কার্য নির্বাহী কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ছিল। কিন্তু ভোট গ্রহণের আগের রাতে উচ্চ আদালতে ড. আজিজুল ইসলাম নামে এক কৃষিবিদের রিটের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। ওই নির্বাচনে বাহাউদ্দিন নাছিম মনোনীত দু’টি এবং ড. আব্দুর রাজ্জাক ও আব্দুল মান্নান মনোনীত দু’টি পরিষদ অংশ নেয়। মূলত ওই সময় থেকেই কৃষিবিদদের মধ্যে দু’টি ধারার প্রভাব বলয় সৃষ্টি হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সারা দেশে প্রায় ৪০ হাজার কৃষিবিদ রয়েছেন। তাদের কেউ শেকৃবি ও কেউ বাকৃবি ধারায় বিভক্ত।


প্রশাসক নিয়োগ করে নির্বাচনের নির্দেশ
জানা যায়, ২০১৯-২০ মেয়াদি কার্য়নির্বাহী কমিটি নির্বাচন স্থগিত হওয়ার বছর দেড়েক পর ইমরান হোসেন খান নামে একজন কেআইবি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আদালতের শরণাপন্ন হন। হাইকোর্ট নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির কার্যক্রম বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সমাজসেবা অধিদফতরকে নির্দেশনা দেন। কেআইবি সমাজসেবা অধিদফতরের নিবন্ধনপ্রাপ্ত সংগঠন। হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩ নভেম্বর সমাজসেবা অধিদফতর অফিস আদেশ জারি করে। এতে বলা হয় ‘...নির্দেশনার ভিত্তিতে স্বেচ্ছাসেবী সমাজ কল্যাণ সংস্থাগুলো রেজিস্ট্রেশন ও নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ ১৯৬১-এর ৯(১) ধারা মোতাবেক সংস্থার কার্যনির্বাহী পরিষদ বাতিল করা হলো এবং ৯(২) ধারা মোতাবেক পরিচালক (মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক), বিভাগীয় পরিচালকের কার্যালয়, ঢাকাকে প্রশাসক নিয়োগ করা হলো।’
অফিস আদেশে প্রশাসককে সর্বশেষ কমিটির কাছ থেকে দায়িত্বভার গ্রহণ করে কেআইবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কার্যনির্বাহী কমিটির সব কর্তৃত্ব ও যাবতীয় দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেয়া হয়। একই সাথে কেআইবির বিধি মোতাবেক সম্ভাব্য দ্রুতসময়ের মধ্যে নিবাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নির্বাচিত কমিটির কাছে দায়িত্বভার হস্তান্তরের জন্য বলা হয় সমাজসেবা অধিদফতরের অফিস আদেশে।


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এরপর কেআইবি সভাপতি অধ্যাপক ড. মো: শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া হাইকোটের আদেশের বিপক্ষে উচ্চ আদালতে আপিল করেন। গত ২৫ জানুয়ারি কেআইবি সভাপতির আপিল আবেদন খারিজ করে দেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ।
এ বিষয়ে কেআইবি সভাপতি অধ্যাপক ড. মো: শহীদুর রশীদ ভূঁইয়াকে বারবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে সংগঠনের মহাসচিব খায়রুল আলম প্রিন্স নয়া দিগন্তকে জানান, আদালতে রিটের কারণে ২০১৮ সালে নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। মামলাজনিত কারণেই নির্বাচন দেয়া যাচ্ছে না।


হাইকোর্টের রায়ের আলোকে সমাজসেবা অধিদফতর কর্তৃক প্রশাসক নিয়োগ, সভাপতির আপিল এবং সর্বশেষ আপিলের রায় অনুযায়ী প্রশাসকের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর প্রসঙ্গে মহাসচিব বলেন, আপিল রায় এবং প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি জানা নেই। এটা আমাদের কাছে আসেনি।
যা বলছে সমাজসেবা অধিদফতর
এ বিষয়ে সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামালকে বারবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরিচালক (কার্যক্রম) মো: সাব্বির ইমাম নয়া দিগন্তকে বলেন, আদালতের রায়ের আলোকে আমরা কেআইবিতে ঢাকা বিভাগীয় পরিচালককে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছি। তার সাথে কথা বলে বিস্তারিত তথ্য নেয়ার কথা জানান তিনি।
কেআইবির প্রশাসক নিয়োগ পাওয়া মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বর্তমানে ভারতে সফরে রয়েছেন। হোয়াটসঅ্যাপে তার সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি জানান, হাইকোর্টের রায়ের পর সমাজসেবা অধিদফতর আমাকে প্রশাসক নিয়োগ দেয়। এরপর কেআইবির পক্ষ থেকে সভাপতি আপিল করেন। আপিলের রায় এসেছে। আমি অধিদফতরের ডিজিকে দায়িত্ব গ্রহণ করাসহ পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনার দিকনির্দেশনা চেয়ে চিঠি দেই। আমি ইন্ডিয়াতে আসার দ্ইু তিন দিন আগে এই চিঠির রিপ্লাই পাই। আমাকে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। ইন্ডিয়াতে আসার আগে দায়িত্বটা নিতে পারিনি।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement