২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অনিয়মের মধ্যে চলছে নৌযান

লক্কড়ঝক্কড় নৌযানের ফিটনেস ও রুট পারমিট দেয়া হচ্ছে অহরহ দুর্ঘটনায় যাচ্ছে প্রাণ
-

অনিয়মের মধ্যে চলছে নৌযান। নৌযানের রুট পারমিট ও সময়সূচি বন্ধ থাকার পরেও আদালতের রায় উপেক্ষা করে লক্কড়ঝক্কড় নৌযানের ফিটনেস ও রুট পারমিটের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায়ই ঘটছে নৌদুর্ঘটনা। দেশে অনিবন্ধিত নৌযানের সংখ্যা কতÑ এমন কোনো পরিসংখ্যানও কারো জানা নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নৌপথে সঠিক নজরদারির অভাব ও যুগোপযোগী আইন না থাকায় দুর্ঘটনা রোধ করা যাচ্ছে না।
বিআইডব্লিউটিএর তথ্য মতে, গত ১০ বছরে ২৫টি দুর্ঘটনায় অন্তত ৪৫০ লঞ্চযাত্রীর মৃত্যু ঘটেছে। কিন্তু দেশীয় নৌযান ও হাওর-বাঁওড় অঞ্চলের ট্রলার ডুবির তথ্য নেই তাদের কাছে। প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ জাতীয় নৌ দুর্ঘটনায় এক হাজারের কাছাকাছি যাত্রী প্রাণ হারান বলে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সূত্রে জানা গেছে। শুধু ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের হিসাবেই ২০২০ সালে এ সংখ্যা ছিল ৭০০ জনের বেশি।
নৌপরিবহন অধিদফতরের জারি করা সবশেষ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, কোনো নৌযানের দৈর্ঘ্য ২০ মিটারের বেশি হলেই সেটিকে সার্ভে সনদ নিতে হবে। এ ছাড়া ১২ জনের বেশি যাত্রী পরিবহনকারী বা ১৬ হর্স পাওয়ারের বেশি শক্তির ইঞ্জিনচালিত নৌযানের জন্যও সার্ভে সনদ বাধ্যতামূলক। কিন্তু বাস্তবে দেশে এমন কয়েক লাখ নৌযান রয়েছে, যেগুলো কোনো ধরনের নিবন্ধন, সার্ভে ও রুট পারমিট ছাড়াই অবাধে চলছে।
দেশে অনিবন্ধিত নৌযানের সংখ্যা কতÑ এমন কোনো পরিসংখ্যানও নেই কারো কাছে। ২০১৬ সালে নৌযান শুমারির উদ্যোগ নেয়া হলেও এ সংস্থার সেই প্রকল্পটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি। এসবের মধ্যে বালুবাহী জাহাজ (বাল্কহেড), ট্রলার ও স্পিডবোট রয়েছে। নৌপরিবহন অধিফতরের তথ্য মতে, দেশে নিবন্ধিত নৌযানের সংখ্যা মাত্র ১৪ হাজারের মতো। বাকিগুলো নৌপুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ, নৌপরিবহন অধিদফতর বা স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলছে।
জানা গেছে, ঢাকা-আমতলী (সবুজবাগ ফেরিঘাট) রুটে অনিয়মের মধ্যে চলছে একটি নৌযান। এই রুটে এমভি সুন্দরবন-৭, এমভি ইয়াদ-১, এমভি তরঙ্গ-৭ তিনটি লঞ্চের অনুকূলে একটি যৌথ রুট পারমিট সময়সূচি জারি করা আছে। এ ছাড়াও উক্ত নৌপথে রুট পারমিট সময়সূচি, অনুমোদন প্রদান না করার বিষয়ে বিজ্ঞ আদালতে দায়েরকৃত দেওয়ানি মোকদ্দমা (৩২৫/২০১২ দেওয়ানি আপিল নং ৪৮২/২০১৬) এবং দেওয়ানি মোকদ্দমা ১৩০/২০২১ মামলাগুলোর নিষেধাজ্ঞাও আদালতের রায়ে বলা আছে। অত্র আদেশে বলা হয় বাদির কোম্পানির জাহাজ যে রুটে চলমান, সেই রুটে অন্য কোনো জাহাজ কোম্পানিকে চলাচলের জন্য যেন অবৈধভাবে অনুমোদন প্রদান না করা হয়। এ ব্যাপারে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তার পরেও আদালতের রায় উপেক্ষা করে বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিট্রা বিভাগের পরিচালক আদালতের রায় অমান্য করে মেসার্স হাজী ইকবাল হোসেন শিপিং লাইনসের পক্ষে এমভি শতাব্দী বাঁধন নৌযানের অনুকূলে রুট পারমিটের অনুমোদন দেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা-আমতলী নৌপথে নবনির্মিত এমভি শতাব্দী বাঁধন (এম ২৫৫০০) যার স্বত্বাধিকারী মেসার্স হাজী ইকবাল হোসেন শিপিং লাইনস লঞ্চের অনুকূলে ঈদ স্পেশালের নাম করে ২৭ এপ্রিল থেকে ১০ মে পর্যন্ত রুট পারমিট অনুমোদন দেয়া হয়। যদিও অনুমোদন স্মারকে স্পষ্ট উল্লেখ্য রয়েছে, ঈদ স্পেশাল রুট পারমিট সময়সূচি উল্লেখিত নৌপথে চলাচলকারী লঞ্চের নিয়মিত সার্ভিসের পরে এই নৌপথে রেগুলার সার্ভিস হিসেবে গণ্য হবে না। তার পরেও টাকার বিনিময়ে পরে আবারো ঈদ স্পেশালের নামে ১৫ মে পর্যন্ত রুট পারমিট ও সময়সূচি প্রদান করা হয়েছে। গত ১৬ মে নতুন করে আবার শতাব্দী বাঁধন নৌযানের অনুকূলে আগামী এক মাসের সময়সূচি মেয়াদ বর্ধিত করা হয়েছে।
ঢাকা-আমতলী রুটের মেসার্স ই-আলী শিপিং লাইনসের এমভি তরঙ্গ-৭ লঞ্চের মালিক হাফিজুর রহমান বলেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও বিআইডব্লিউটিএ লঞ্চটির রুট পারমিট ও সময়সূচি অনুমোদন দিয়েছে। ওই সময়সূচি অনুমোদন দেয়ায় আমাদের এই রুটে চলাচল করা তিনটি লঞ্চই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়াও বর্তমানে ওই নৌপথে যাত্রী যাতায়াত কমে যাওয়ায় আমাদের প্রতি ট্রিপে লস হচ্ছে। এমন সময় এমভি শতাব্দী বাঁধন লঞ্চের অনুকূলে জারিকৃত সময়সূচি দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে নৌ নিট্রা বিভাগের পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, আদালত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আমি আদালতের কাছে জবাব দিবো। নোটিশ আমি আইনের মাধ্যমে আদালতের কাছে দেয়ার চেষ্টা করব।
প্রতি বছর মে মাসে নৌনিরাপত্তা সপ্তাহ পালন করে সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর। তাদের হিসাব অনুযায়ী, দেশের মোট যাত্রী সংখ্যার ৩৫ শতাংশ নৌপথে চলাচল করে। মোট পণ্যের ৭০ শতাংশ ও তেলজাত দ্রব্যের ৯০ শতাংশ নৌপথে পরিবহন করা হয়। অন্য একটি হিসাব থেকে জানা যায়, প্রতি বছর প্রায় ৯ কোটি মানুষ দেশের নৌপথে যাতায়াত করে। নানা যৌক্তিক কারণেই নৌপথ জনপ্রিয়, সহজলভ্য ও আরামদায়ক। সংস্থাটির গবেষণায় দেখা যায়, ৫৪ দশমিক ২ শতাংশ দুর্ঘটনার কারণ মুখোমুখি সংঘর্ষ। অতিরিক্ত বোঝাইয়ের কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ। এছাড়া ঝড়ের কবলে পড়ে ১০ দশমিক ৪ শতাংশ। আর বাকি দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে নৌযানের নকশা ও ইঞ্চিনের ত্রুটিসহ বিভিন্ন অনিয়ম রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement
দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না : কাদের আশুলিয়ায় বাঁশবাগান থেকে নারী পোশাক শ্রমিকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার মিয়ানমারের কর্মকর্তারা ফেরত গেলেন, কিন্তু রোহিঙ্গা সঙ্কট কি আরো জটিল হচ্ছে দিনাজপুরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষ, চালক-হেলপার নিহত মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ সখীপুরে বৃষ্টির জন্য অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা দক্ষিণ ভারতে কেন কাজ করেনি বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের নতুন আংশিক কমিটি বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসায় বিনিয়োগ সম্ভাবনা অন্বেষণে থাইল্যান্ডের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান ট্রাম্পের বিচার নিয়ে বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট চুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত, ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত

সকল