২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সপ্তাহের শেষ দিনও উত্থানে পুঁজিবাজার

বেড়েছে সূচক ও লেনদেন
-

সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক বেড়েছে ১৬ দশমিক ২৬ পয়েন্ট। এর মধ্যে বেক্সিমকো গ্র“পের দুই কোম্পানির মধ্যে বেক্সিমকো লিমিটেড বাড়িয়েছে ১২ দশমিক ২৩ পয়েন্ট আর বেক্সিমকো ফার্মা বাড়িয়েছে ৩ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট। এ নিয়ে চলতি সপ্তাহের পাঁচ দিনই সূচক বেড়েছে। গত বছরের শেষ প্রান্তিকে পুঁজিবাজারে ক্রমাগত দরপতন হতে থাকলেও চলতি বছরের শুরুটা হয়েছে ঝলমলে। তিন সপ্তাহের ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে সূচক কমেছে কেবল দুই দিন, বেড়েছে বাকি ১৩ দিন।
সংশোধন কাটিয়ে সূচকে চাঙ্গাভাব ফেরার পর যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, সেটি হলো সূচক লাফ দিচ্ছে না, বাড়ছে অল্প অল্প করে। লেনদেনও বাড়ছে ধীরে ধীরে। ২০২০-এর মাঝামাঝি থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত পুঁজিবাজারে সূচকের যে ব্যাপক উত্থান হয়েছিল সেখানে বেক্সিমকো গ্র“পের, বিশেষ করে বেক্সিমকো লিমিটেডের উত্থান ছিল সবচেয়ে বেশি।
তবে বেক্সিমকো গ্র“পের কোম্পানিগুলোর অক্টোবর ও নভেম্বর থেকে দর হারাতে শুরু করে। গত এক বছরের সর্বোচ্চ দরের তুলনায় এই কদিনে ২২ শতাংশের বেশি দর হারায় বেক্সিমকো লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মা দর হারায় প্রায় ২৫ শতাংশ, আইএফআইসি ব্যাংক প্রায় ২০ শতাংশ আর শাইনপুকুর সিরামিকস দর হারায় ৩৫ শতাংশের বেশি। ১৮৭ টাকা থেকে পড়তে পড়তে ১৪৪ টাকায় নেমে আসা বেক্সিমকো লিমিটেড ঘুরে দাঁড়ায় বুধবার। সে দিন শেয়ারদর বাড়ে সাত টাকা ৬০ পয়সা। পরদিন বাড়ে আরো আট টাকা ৭০ পয়সা। অন্য দিকে বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ারদর বুধবার বাড়ে তিন টাকা ৪০ পয়সা, পরের দিন তা বাড়ে আরো চার টাকা ৭০ পয়সা।
এই দুই দিনে গ্রুপের আরেক কোম্পানি শাইনপুকুর সিরামিকসের দরে যোগ হয়েছে দুই টাকা বা ৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ। তবে আইএফআইসি ব্যাংক এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে একটি দরে। অন্য দিকে লেনদেন শুরুর পরেই অভিহিত মূল্যের চেয়ে নিচে নেমে যাওয়া বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক দর হারিয়েছে সাড়ে ৯ শতাংশ।
সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে সূচক বাড়লেও বেশির ভাগ শেয়ারের দর অবশ্য কমেছে। সব মিলিয়ে বেড়েছে ১৬২টি কোম্পানির দর, কমেছে ১৭৪টির। অপরিবর্তিত ছিল বাকি ৪২টির দর।
লেনদেনও খানিকটা কমেছে। দিন শেষে হাতবদল হয়েছে এক হাজার ৬০১ কোটি ২০ লাখ ২৬ হাজার টাকা। আগের দিন হাতবদল হয়েছিল এক হাজার ৭৩৫ কোটি ৫৭ লাখ ৪১ হাজার টাকা। এ দিন বিবিধ খাতের বেক্সিমকো লিমিটেড ছাড়াও লেনদেনে ৫০ শতাংশের বেশি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাতের ৫৮ শতাংশ।
প্রধান খাতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সাধারণ বীমা খাতের শেয়ারদর। এই খাতের ৬৬ শতাংশ কোম্পানির দর বেড়েছে। ব্যাংক খাতের ৩৪ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে। একই হারে বেড়েছেও। আর্থিক খাতের শেয়ারদর বেড়েছে ৩১ শতাংশ। খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের ৬০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে, কমেছে ৩৫ শতাংশের।
বেক্সিমকো লিমিটেড ও বেক্সিমকো ফার্মা ছাড়া তৃতীয় কোম্পানি হিসেবে সূচকে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে লিন্ডে বিডি। এই কোম্পানিটি যোগ করেছে ২ দশমিক ৪১ পয়েন্ট।
সূচক সবচেয়ে বেশি বাড়িয়েছে এই ১০টি কোম্পানি : সূচক বৃদ্ধিতে ইতিবাচক অবদান রেখেছে স্কয়ার ফার্মা, কেয়া কসমেটিকস, এসিআইও। সূচকে এই তিন কোম্পানির অবদান ছিল ৪ দশমিক ৪৫ পয়েন্ট। এর বাইরে ট্রাস্ট ব্যাংক শূন্য দশমিক ৮২ পয়েন্ট, উত্তরা ব্যাংক শূন্য দশমিক ৬৬ পয়েন্ট, বিকনফার্মা শূন্য দশমিক ৬১ পয়েন্ট ও সোনালী পেপার শূন্য দশমিক ৫৯ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে। সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচকে যোগ করেছে ২৪ দশমিক ৮১ পয়েন্ট।
অন্য দিকে সূচক সবচেয়ে বেশি কমিয়েছে ওয়ালটন। কোম্পানিটির অর্ধবার্ষিক আয় কমে যাওয়ার পর শেয়ারদর ৩ দশমিক ৭ শতাংশ কমায় সূচক কমে গেছে ২০ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা গ্রামীণফোন ৩ দশমিক ৬৮ পয়েন্ট এবং লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট সূচক কমিয়েছে ৩ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট। তিতাস গ্যাস, ফরচুন সুজ, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল, আইসিবি, ব্র্যাক ব্যাংক, জিপিএইচ ইস্পাত, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকও সূচক কমিয়েছে। সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানিই সূচক কমিয়েছে ৩৬ দশমিক ৪৫ পয়েন্ট।
যে ১০টি কোম্পানির দর সবচেয়ে বেশি বেড়েছে, তার মধ্যে আটটি ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানি, একটি নতুন তালিকাভুক্ত, একটি জেড ক্যাটাগরির।
যে কোম্পানি লভ্যাংশ দেয় না, সেগুলো জেড ক্যাটাগরিতে থাকে, যেসব কোম্পানি ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেয়, সেগুলো ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানি আর যেসব কোম্পানি ১০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি লভ্যাংশ দেয়, সেটি ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানি। লেনদেনে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে কেয়া কসমেটিকসের ১০ শতাংশ। সাত টাকার শেয়ার বেড়ে হয়েছে সাত টাকা ৭০ পয়সা। ২০২০ সালের জন্য এক শতাংশ লভ্যাংশ দেয়া এই কোম্পানিটি ২০২১ সালের জন্য এখনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি।
ইউসিবি তাকওয়া গ্রোথ ফান্ড আসছে : দেশের পুঁজিবাজারে আসছে ইউসিবি তাকওয়া গ্রোথ ফান্ড। ফান্ডটির লক্ষ্যমাত্রা ৩৫ কোটি টাকা। এটির অভিহিত মূল্য হবে ১০ টাকা। এই ফান্ডের খসড়া প্রসপেক্টাস অনুমোদন দিয়েছে শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কমিশন সভা শেষে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম এ তথ্য জানান।
জানা গেছে, বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সভাপতিত্বে গতকাল অনুষ্ঠিত বিএসইসির কমিশন সভায় এটি অনুমোদন পেয়েছে।
মোহাম্মদ রেজাউল করিম জনান, ফান্ডটির লক্ষ্যমাত্রা ৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান ইউসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট পাঁচ কোটি টাকা দেবে, যা ফান্ডটির প্রাথমিক আকারের ১৪ দশমিক ২৮ শতাংশ। বাকি ৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগকারীদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ফান্ডটির অভিহিত মূল্য ধরা হয়েছে ১০ টাকা। ফান্ডটির সম্পদ ব্যবস্থাপক হিসেবে রয়েছে ইউসিবি অ্যাসেট ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানি। আর ট্রাস্টি ও কাস্টডিয়ান হিসেবে থাকছে সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং ব্র্যাক ব্যাংক।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল