ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ব্যবসায়ীকে অপহরণ
৫ লাখ টাকার মুক্তিপণ দাবি গ্রেফতার ৫- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০২ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
ডিবি পুলিশ পরিচয়ে লুৎফুর রহমান নামে এক ব্যবসায়ীকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে অপহরণ করে একটি চক্র। পরে ওই ব্যবসায়ীর ছেলেকে ফোন দিয়ে চক্রের সদস্যরা জানায়, ‘তোমার বাবাকে আমরা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আটক করেছি। বর্তমানে তিনি আমাদের জিম্মায় ঢাকার মিন্টো রোডের ডিবি অফিসে আছেন। আমাদের টাকা দিলে তোমার বাবাকে ছেড়ে দেবো।’ শুধু তাই নয়, ব্যবসায়ীকে উপর্যুপরি মারধর ও বৈদ্যুতিক শক দেয়ার একটি ভিডিও ধারণ করে পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেয়। মুক্তিপণ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা না পেলে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় চক্রটি। এই চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। গ্রেফতারকৃতরা হলোÑ রিপন সরদার, আহমেদুল কবির খান কাজল, মোসলেম উদ্দিন বাপ্পি, মোহাম্মদ আসলাম ও রশিদ চাকলাদার। তাদের কাছ থেকে দু’টি ডিবি জ্যাকেট, দু’টি খেলনা পিস্তল, একটি হ্যান্ডকাফ, ১১টি মোবাইল ফোন, একটি প্রাইভেট কার ও ২৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
র্যাব জানায়, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর বেশভূষা ধারণ করে এই চক্রটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অপহরণ, ছিনতাই, ডাকাতি, হত্যা ও খুনসহ নানা অপরাধ করছিল। নিজেদের ডিবি পুলিশের সদস্য হিসেবে উপস্থাপন করতে ডিবির জ্যাকেটের মতো জ্যাকেট ব্যবহার, ওয়াকিটকি ও অস্ত্র বহন করত। এ ছাড়া নিজেদের ডিবি পুলিশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে ডিবির স্টিকার তৈরি করে তা মাইক্রোবাস বা বিভিন্ন গাড়িতে ব্যবহার করছিল।
জানা গেছে, গত ২৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় পিস্তলসহ লুৎফুর রহমান নামে এক ব্যবসায়ীকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ছয়-সাতজন জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। গাড়িতে উঠানোর পর লুৎফুর রহমানের চোখ-মুখ বেঁধে ফেলা হয়। এ সময় তার কাছে থাকা মোবাইল ও টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরে গাড়ির ভেতরে ওই ব্যবসায়ীকে উপর্যুপরি কিল-ঘুষি মারতে থাকে। অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে লুৎফুরকে বলা হয়Ñ তোকে মুন্সীগঞ্জ বিলে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে এসেছি, আমাদেরকে ১০ লাখ টাকা না দিলে তোকে জানে মেরে ফেলব। ভুক্তভাগী তাদের কাছে প্রাণভিক্ষা চান। পরদিন রাতে অপহৃত ব্যবসায়ীকে একটি বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ফোন করে তার ছেলেকে বলা হয়Ñ তোমার বাবাকে আমরা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আটক করেছি। বর্তমানে তোমার বাবা আমাদের ঢাকার মিন্টো রোডের ডিবি অফিসে আছে। আমাদেরকে টাকা দিলে আমরা তোমার বাবাকে ছেড়ে দেবো।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে র্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, জিম্মি ব্যবসায়ী লুৎফুরকে তুলে নেয়ার পর মোসলেম উদ্দিন বাপ্পির বাসায় নিয়ে উপর্যুপরি মারধরসহ বৈদ্যুতিক শক দেয়া হয়। এ সময় পরিবারের পক্ষ থেকে পাঁচ লাখ টাকা দিতে রাজি হয়। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ভুক্তভোগীর ছেলে বিকাশ ও নগদের মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে এক লাখ টাকা পাঠান। পরে আরো টাকার জন্য পুনরায় চোখ-মুখ বেঁধে নির্যাতন করে সেই ভিডিও পরিবারকে পাঠানো হয়। মুক্তিপণ দেয়া না হলে তাকে (লুৎফুর) মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারটি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। পাশাপাশি র্যাব-১-কে বিষয়টি জানায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে অপহরণকারী চক্রের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়।
তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে, তারা একটি অপহরণকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য। পরস্পর যোগসাজশে ডিবি পরিচয়ে দীর্ঘ দিন নারায়ণগঞ্জ ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ মানুষকে হয়রানি করত। বিশেষ করে সাধারণ মানুষকে টার্গেট করে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে প্রাণনাশের হুমকি, শারীরিক নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায় করে আসছিল তারা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা