২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রণোদনার ঋণ কেন্দ্রীভূত না করে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণের নির্দেশ

-

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় চালু রাখতে চলতি মূলধনের জোগান দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে সুদহারে ভর্তুকি দিয়ে কম সুদে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। ব্যাংকগুলো বৃহৎ ও সেবা খাতে ঋণ কর্মসূচির শতভাগ এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণ বিতরণের কর্মসূচির ৭৫ শতাংশ অর্জনও করেছিল বিদায়ী বছরে। কিন্তু প্রণোদনার ঋণ নিয়ে অপব্যবহার ও কয়েকটি বড় ব্যবসায়ী গ্রুপের বড় অঙ্কের ঋণ দিয়ে ঋণকে কেন্দ্রীভূত করার স্বয়ং অভিযোগ উঠেছে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এ অভিযোগের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সতর্ক করা হয়েছে। একই সাথে ঋণ কেন্দ্রীভূত না করে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ঋণ বিতরণের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে হ৯ম পৃ: ১-এর কলামেএমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদেরকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রণোদনার ঋণ অপব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে কিছু ব্যবসায়ী গ্রুপের বিরুদ্ধে। জালজালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে তা ভিন্ন খাতে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। কেউ কম সুদের এ ঋণ নিয়ে অন্য ঋণ পরিশোধ করছেন। কেউ চলতি মূলধন হিসেবে ব্যবহার না করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহার করেছেন। কেউ কেউ আবার তা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছেন। কেউবা কিনেছেন জমি ফ্ল্যাট। আবার কারো বিরুদ্ধে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির নামে অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে। আবার কোনো কোনো ব্যবসায়ী প্রকৃত অর্থেই ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তাদের নামে ঋণ মঞ্জুর করেও ছাড় করেনি কিছু কিছু ব্যাংক। এভাবে প্রণোদনার ঋণে জালজালিয়াতি করার অভিযোগ পেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকগুলোকে গত ২৫ জুলাই এক চিঠির মাধ্যমে সতর্ক করে দিয়ে ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীকে নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জারি করে নতুন এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিদ্যমান নির্দেশনায় প্রণোদনার তহবিল থেকে সবশ্রেণীর ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের চলতি মূলধনের যোগান দেয়ার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক অভিযোগ পেয়েছে কোনো কোনো ব্যবসায়ী গ্রুপের বেশি মাত্রায় ঋণ দেয়া হয়েছে। অনেক প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ঋণ পাচ্ছেন না। চলতি অর্থবছরের জন্য প্রদত্ত বিনিয়োগ সুবিধা স্বল্প সংখ্যক গ্রাহকদের মধ্যে কেন্দ্রীভূত না করে ক্ষতিগ্রস্ত অধিক সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে আলোচ্য সুবিধা নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়া হলো। একই সাথে ঋণ বা বিনিয়োগের সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরে ক্ষতিগ্রস্ত যে সব প্রতিষ্ঠান এ প্যাকেজের আওতায় এখনো সুবিধা প্রাপ্ত হয়নি সেসব প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিনিয়োগ দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হলো।
প্রসঙ্গত গেল বছরে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ২০ হাজার কোটি টাকার ঋণ দেয়ার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ব্যাংকগুলো ১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিতে পেরেছে। আর সেবা ও বৃহৎ খাতে ৪৩ হাজার কোটি টাকার ঋণের লক্ষ্যমাত্রার পুরো অর্থই বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। এ হিসাবে ৫ শতাংশ হিসেবে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ১৫ হাজার কোটি টাকার ঋণের বিপরীতে জনগণের করের অর্থে সরকার ভর্তুকি দেবে ৭৫০ কোটি টাকা। এবং ৪৩ হাজার কোটি টাকার ঋণের ওপর সাড়ে ৪ শতাংশ হিসেবে সরকার ভর্তুকি দেবে এক হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা। সবমিলে জনগণের করের অর্থে সরকার এক বছরে ব্যবসায়ীদের পেছনে ভর্তুকি দিতে হবে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা।


আরো সংবাদ



premium cement